‘সংবিধান, নির্বাচন ও গণতন্ত্র’ প্রসঙ্গে আবুল মনসুর আহমদ by ইমরান মাহফুজ

১৯৭২ সালে সংবিধান রচনার পর আবুল মনসুর ‘সংবিধানের বিধানিক ত্রুটি’ প্রসঙ্গে অসাধারণ একটি বিষয় হাজির করেছেন। তিনি লিখছেন- ডেমোক্রেসি, সোশ্যালিজম, ন্যাশনালিজম ও সেক্যুলারিজম- এই চারটিকে আমাদের রাষ্ট্রের মূলনীতি করা হয়েছে। এর সবক’টির আমি ঘোরতর সমর্থক। কিন্তু আমার মত এই যে, এর কোনোটাই সংবিধানে মূলনীতিরূপে উল্লিখিত হওয়ার বিষয় নয়। গণতন্ত্র ছাড়া আর বাকি সবক’টিই সরকারি নীতি-রাষ্ট্রীয় নীতি নয়। দেশে ঠিকমতো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেই আর সব ভালো কাজ নিশ্চিত হওয়া যায়। জাতীয়তাবাদ, সমাজবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা সবই জনগণের জন্য, সুতরাং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য, কল্যাণকর। নিরংকুশ গণতন্ত্রই সে কল্যাণের গ্যারান্টি। গণতন্ত্র নিরাপদ না হলে এর একটাও নিরাপদ নয়। বাস্তবেও তাই। গণতন্ত্র যথাযথ চর্চা হয়নি বলে বহুমাত্রিক সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে আমাদের। রাজনৈতিক দলেও গণতন্ত্রহীনতা, দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা, কখনো কখনো সামরিক শাসন, রাজনৈতিক সরকারের একক কর্তৃত্ব। সংবিধান সংশোধন হয়েছে নিজেদের স্বার্থে

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পতনের পর সংবিধান, নির্বাচন ও গণতন্ত্র- এই ৩টি বিষয়ের আলোচনা নতুন গতি পেয়েছে। কারণ, বিদ্যমান সংবিধান ইচ্ছামতো ব্যবহারে স্বৈরাচার তার বৈধতা তৈরি করেছিল। এর মাঝে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা থেকে ‘সংবিধান সংস্কার’ সবচেয়ে বেশি আলোচিত।
এ প্রসঙ্গে সামনে এসেছে প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও  রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আবুল মনসুর আহমদের চিন্তা। বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্তের মধ্যে যারা রাজনীতিকে উপজীব্য করে ইতিহাস রচনা করেছেন, আবুল মনসুর তাদের প্রথম সারির একজন। তার বহুল পঠিত রচনা ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইয়ে বাংলাদেশের ‘সংবিধান, নির্বাচন ও গণতন্ত্র’ বিষয়ে অনেক অমীমাংসিত বিষয়ে মীমাংসার ইঙ্গিত রয়েছে। যা ৫৪ বছরেও সমাধান হয়নি বলে বারবার সামনে আসছে। আর সাধারণ মানুষ ‘বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্নে’ রক্ত দিয়ে যাচ্ছেন।

১৯৭২ সালে সংবিধান রচনার পর আবুল মনসুর ‘সংবিধানের বিধানিক ত্রুটি’ প্রসঙ্গে অসাধারণ একটি বিষয় হাজির করেছেন। তিনি লিখছেন- ডেমোক্রেসি, সোশ্যালিজম, ন্যাশনালিজম ও সেক্যুলারিজম- এই চারটিকে আমাদের রাষ্ট্রের মূলনীতি করা হয়েছে। এর সবক’টির আমি ঘোরতর সমর্থক। কিন্তু আমার মত এই যে, এর কোনোটাই সংবিধানে মূলনীতিরূপে উল্লিখিত হওয়ার বিষয় নয়। গণতন্ত্র ছাড়া আর বাকি সবক’টিই সরকারি নীতি-রাষ্ট্রীয় নীতি নয়। দেশে ঠিকমতো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেই আর সব ভালো কাজ নিশ্চিত হওয়া যায়। জাতীয়তাবাদ, সমাজবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা সবই জনগণের জন্য, সুতরাং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য, কল্যাণকর। নিরংকুশ গণতন্ত্রই সে কল্যাণের গ্যারান্টি। গণতন্ত্র নিরাপদ না হলে এর একটাও নিরাপদ নয়।

বাস্তবেও তাই। গণতন্ত্র যথাযথ চর্চা হয়নি বলে বহুমাত্রিক সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে আমাদের। রাজনৈতিক দলেও গণতন্ত্রহীনতা, দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা, কখনো কখনো সামরিক শাসন, রাজনৈতিক সরকারের একক কর্তৃত্ব। সংবিধান সংশোধন হয়েছে নিজেদের স্বার্থে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে নির্বাচন এবং ভেঙে পড়েছে সংবিধান, বছরের পর বছর আশাহত গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা। যেন কেউ দেখার নেই!

রাজনৈতিক নেতারা স্বপ্ন দেখিয়ে কেবল ধোঁকা দিয়েছে। আর সেটার শুরু স্বাধীনতার পর থেকেই। আবুল মনসুর আহমদের কলমে উঠে এসেছে সে নির্মম সত্য। তিনি লিখছেন- ‘১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও কয়েকটি আসনে নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। আবুল মনসুর আহমদের পর্যবেক্ষণ হলো, ‘তিনশ’ পনের সদস্যের পার্লামেন্টে জনা-পঁচিশেক অপজিশন মেম্বার থাকলে সরকারি দলের কোনোই অসুবিধা হতো না। বরঞ্চ ওইসব পার্লামেন্টারিয়ান অপজিশনে থাকলে পার্লামেন্টের সৌষ্ঠব ও সজীবতা বৃদ্ধি  পেতো।...বাংলাদেশের পার্লামেন্ট পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের একটা ট্রেনিং কলেজ হয়ে উঠতো। আর এসব শুভ পরিণামের সমস্ত প্রশংসা পেতেন শেখ মুজিব।’

অনেক আশার নেতা কাজ করলেন হতাশার। অথচ গণতান্ত্রিক চর্চার অন্যতম উপাদান পার্লামেন্ট নির্বাচন। আর সেটা নিয়েই বানচাল। তারা ভুলে গেছে গণতন্ত্র কেবল সংবিধানে রাখার বিষয় নয়, চর্চার বিষয়। আবুল মনসুর পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন- ‘নির্বাচন জনগণের রাজনৈতিক বিদ্যালয়। নেতারা ও নির্বাচন প্রার্থী সে বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তারা ছাত্রদের সুশিক্ষার বদলে কুশিক্ষা দিবেন না। যা নিজেরা বুঝেন না, ছাত্রদের তা বোঝাবার চেষ্টা করবেন না। নিজেরা যাতে বিশ্বাস করেন না, ছাত্রদের তা বিশ্বাস করতে বলবেন না। যদি করেন, তবে তার কুফল শুধু ছাত্ররাই ভুগবে না, শিক্ষকদেরও ভুগতে হবে।’

আমাদের সর্বনাশ সেই থেকে শুরু। বিশ্বাসের ঘরেই চুরি। আর সুন্দরের চর্চা বাদ দিয়ে সংকটের রাজনীতি চর্চা করেই যাচ্ছেন নেতারা। আর যখনই প্রয়োজন হয়েছে নির্দ্বিধায় আবুল মনসুর সত্য উচ্চারণ করেছেন পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদকে। তিনি প্রায় দেড় দশক আগে লিখেছিলেন- দেশের হতভাগ্য মানুষ প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে গণতন্ত্রের পাঠ নিচ্ছে বিভিন্ন গণতন্ত্রের গুরু ও ওস্তাদদের কাছ থেকে। পাঠ তারা নিয়েই যাচ্ছে, কিন্তু পাস করতে পারেনি। আদু ভাইয়ের মতো একই ক্লাসে পড়ে রয়েছে। তবে অন্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে গণতন্ত্রের বাঙালি তালবেলামদের পার্থক্য এখানে যে স্কুল-মাদ্রাসায় ছাত্ররাই পাস বা ফেল করে, এ ক্ষেত্রে ফেল করছেন শিক্ষকেরাই বেশি (প্রথম আলো, ২রা সেপ্টেম্বর ২০১০)।
আসলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররা ফেল করে; লেখক বলছেন রাজনীতির পাঠশালায় গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে শিক্ষকরা ফেল করেছে। আবুল মনসুর আহমদের কলামে শেখ মুজিবের ফেলের নমুনা পেলাম। এই সত্য জাতির জন্য অত্যন্ত বেদনার। এমন অনেক ঐতিহাসিক চিত্র পাবো তার রচনায়। বইটি ১৯২০ সাল থেকে ১৯৭০ দশকের মধ্যবর্তী সময়ের অসামান্য দলিল বলা যায়।
আবুল মনসুর আহমদের রাজনীতির যাত্রা আরও অনেকের মতো শুরু হয়েছিল কৃষক-প্রজা সম্মেলনে অংশ নেয়ার মধ্যদিয়ে। পরে তারা সবাই মুসলিম লীগের রাজনীতিতে এগিয়েছেন। তবে তারা যে পাকিস্তান চেয়েছিলেন, বাস্তবে তা পূরণ হয়নি। বাঙালি মধ্যবিত্তের মোহমুক্তি ঘটতে বেশি দেরি হলো না। আবারও সংগ্রাম লড়াইয়ের গল্প। পাওয়া না পাওয়ার রাজনীতি। কিন্তু থেমে থাকেননি আবুল মনসুর। কথা বলেছেন, লিখেছেন, সুযোগমতো প্রয়োগ করেছেন- কখনো আইনজীবী, কখনো সাহিত্যিক বা সাংবাদিক হিসেবে, আবার কখনো রাজনৈতিক হিসেবে।

যেমন রাজনীতির অভিভাবক হিসেবে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করেছেন। যদিও এখনো ধর্মের ব্যবহার যাচ্ছেতাইভাবে হচ্ছে। ‘বেশি দামে কেনা কম দামে বেচা আমাদের স্বাধীনতা’ শিরোনামের একটি বইয়ের পর্ব ‘ধর্ম শাসিত রাষ্ট্র, না রাষ্ট্র শাসিত ধর্ম’। সেখানে তিনি নির্মহ সত্য বলছেন। ‘যারা ধর্মের দ্বারা রাষ্ট্র শাসন করিতে গিয়াছেন, পরিণামে তাঁরা ধর্মকেই রাষ্ট্রের দ্বারা শাসন করাইয়াছেন। ধর্ম-শাসিত রাষ্ট্র সম্ভব হইলে ভালোই হইতো। কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষা এই যে, তা সম্ভব নয়। ইতিহাসের এ শিক্ষা অগ্রাহ্য করিয়া যারা রাজনীতিতে ধর্মকে টানিয়া আনিতে চান, তারা ধর্ম ও রাজনীতি উভয়কেই অনিষ্ট করিতেছেন।’
এর কারণ কি? ব্যাখ্যা পরের অংশে দিচ্ছেন নিজেই এইভাবে- ‘ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে অনেকগুলো মৌলিক পার্থক্য আছে। তার মধ্যে প্রধান পার্থক্যটি এই যে, রাষ্ট্র চলে শক্তিতে, ধর্ম চলে ঈমানে। অর্থের সঙ্গে পরমার্থের, দেহের সাথে আত্মার, শক্তির সঙ্গে নীতির যা সম্পর্ক, রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্কও তাই। কাজেই যারা রাষ্ট্রের ও ধর্মের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘটাইতেই চান, তারা আসলে পাহলোয়ানের সঙ্গে ঋষি দরবেশকে পাঞ্জা লড়িতে বলেন, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে মোহাম্মদ আলী ক্লের সঙ্গে বক্সিং লড়িতে বলেন। এমন প্রতিযোগিতা স্পষ্টতই অসঙ্গত।’

আবুল মনসুর আহমদ এ ধরনের অনেক রূঢ় সত্য উচ্চারণ করেছেন বহু প্রসঙ্গে। সমাজের বৈষম্য নিরসনে বাহাত্তরের সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তার ব্যবহার যথাযথ হয়নি বলে আমাদের বঞ্চনা। কথা ছিল আইনের চোখে সবার সমতা নিশ্চিত হবে। বাস্তবে তা ঘটেনি। আর তা ঘটেনি বলে বাংলাদেশের ‘ভোটবঞ্চিত তারুণ্য’ অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফেললো ৩৬ জুলাই। আষাঢ়-শ্রাবণে এমন প্লাবন দেশে আর হয়নি। এ যেন নজরুলের উষার দুয়ারে আঘাত হেনে রাঙা প্রভাত আনার ছন্দময় বিপ্লব। এইভাবে পাল্টে যায় চেনা দুনিয়া। যার পূর্বাভাস পাঠ্য বইয়ে থাকে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠশালায় থাকে না বিপ্লব। তবে ইতিহাসের পাঠ ভুলে গেলে পদে পদে হোঁচট খায় জনতা। তবে সমাজ জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখে-  রাজনীতি। ব্যক্তি রাজনীতিতে যুক্ত থাকুন আর না-ই থাকুন, রাজনীতি তার পিছু ছাড়ে না।
এই প্রেক্ষাপটে চেনা রাজনীতির বাইরেও ভবিষ্যতের শাসন ও প্রশাসনব্যবস্থা নিয়ে অনেক কিছু আলোচিত হচ্ছে। কখনো গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে কখনো পত্রিকার পাতায় দেখা যায়। দেশভাগের পর পাকিস্তান রাষ্ট্রে প্রথম সংবিধান পেতে সময় লাগে নয় বছর। কার্যকর ছিল মাত্র দুই বছর।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দ্রুত সময়ে সংবিধান পাওয়া যায়। ১৯৭২ সালের ১০ই এপ্রিল গণপরিষদের যাত্রা। বিল গৃহীত হয়েছিল ৪ঠা নভেম্বর। কার্যকর হয়েছিল ওই বছরের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে। দুই একটি বিতর্কছাড়া গত ৫২ বছরে এই সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করা হয়েছে ১৭ বার অনাদরে (পড়ুন নিজেদের স্বার্থে)। আবারো সংস্কার/পরিবর্তনের দাবি উঠেছে শাসনব্যবস্থার দিকনির্দেশক এই সংবিধানের। যে শাসন করবে, সেই শাসিত হয়েছে। এর কারণ- এই সংবিধানের অস্পষ্টতা ও পরস্পর সাংঘর্ষিক ধারা-উপধারায়।
এ প্রসঙ্গে আবুল মনসুর আহমদের বই থেকে উদ্ধৃত করে আকবর আলি খান বলেছিলেন, বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কে আবুল মনসুর আহমদের চূড়ান্ত সমাধান হলো সংবিধান গণতান্ত্রিক হতে হবে। তিনি লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের শাসনতান্ত্রিক সংবিধান রচনার সময়েও আমি বলিয়াছিলাম, পাকিস্তানে ইসলাম রক্ষা না করিয়া গণতন্ত্র রক্ষার ব্যবস্থা করুন। গণতন্ত্রই ধর্মের গ্যারান্টি। বাংলাদেশের সংবিধান রচনার সময় আমি বলিয়াছিলাম, বাংলাদেশের সমাজবাদের কোনো বিপদ নাই। যত বিপদ গণতন্ত্রের, গণতন্ত্রকে রোগমুক্ত করুন, সমাজবাদ অবশ্যই সুস্থ হইয়া যাইবে।’

‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ লেখার সঙ্গে একমত পোষণ করে খান আরও বলেন, ‘আমি একটু বিস্মিত হয়ে গেছি, বেশ কিছু দিন ধরেই এ কথাগুলো বলে আসছি। আমি মনে করেছি, এগুলো আমার বক্তব্য। দেখলাম, আমি আবুল মনসুর আহমদের বক্তব্যই প্রচার করছি। আমাদের সংবিধানে চারটি স্তম্ভ আছে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা। আমার বক্তব্য হলো, যে দেশে গণতন্ত্র নেই, সে দেশে টেকসইভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা চালু করা সম্ভব নয়।’
এইভাবে আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা আড়ালে থেকে গেছে। আলাপ হয়েছে ‘ফরজ’র পরিবর্তে ‘নফল’ নিয়ে। সংশোধনী ও তার বাতিলকরণে উচ্চ আদালত ও জাতীয় সংসদ মুখোমুখি অবস্থানে গেছে অনেকবার এবং এতে স্পষ্ট হয়েছে রাজনৈতিক বিভক্তি। বলা যায়- অমীমাংসিত রক্তের সংবিধান। আমরা যেন কয়েকটা বিষয় নিয়ে দশকের পর দশক ঘুরপাক খাচ্ছি। বেরোনোর পথ পাচ্ছি না। দুলছি সরল দোলকের নামে জটিল দোলকে।

যুক্তফ্রন্ট সরকারের সময় থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের সময়েও আবুল মনসুর সংবিধান নিয়ে যথাযথ ভুল ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রশ্ন তুলেছিলেন। যার অধিকাংশ আজও অমীমাংসিত। আবুল মনসুর আহমদের রাজনীতিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে বা গ্রন্থাগারে হয়নি। হয়েছিল মাঠে-ঘাটে, সংবাদপত্রের টেবিলে ও মানুষ পাঠে। বছরের পর বছর লেগে থেকে অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে।
‘কালচার’ সূত্রে আবুল মনসুর আহমদ নিজের মতো করে সমাজ রাষ্ট্রকে ব্যাখ্যা করেছেন। চিন্তা করেছেন ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য সব কিছু নিয়ে এবং ওই সময়কার পরিস্থিতি বদলাতে হবে, সে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে গেছেন তিনি। এইভাবে ইতিহাসে স্বতন্ত্র ভাবনায় অবদান রেখে গেছেন এই রাষ্ট্রচিন্তক। আমরা আমাদের প্রয়োজনে তার চিন্তা ব্যবহার করে সংকট কাটাতে পারি। পারি তার চিন্তা চর্চায় নিজেদের ‘বেশি দামে কেনা’র সমাজ কাঠামো বদলাতে। না হলে গণতন্ত্রহীনতায় আমাদের আবারো রক্ত দিতে হবে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.