গুনাহ মাফের জন্য ইস্তেগফার করুন

ইস্তেগফার’ শব্দের অর্থ কৃত পাপকর্মের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহর অসংখ্য মহান গুণাবলির একটি হলো ক্ষমা। আল্লাহ তাআলা ‘গাফুরুর রাহিম’ অর্থাৎ তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু। মানবজাতি আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া লাভ করে রমজান মাসে পাপমোচন লাভ করে সৌভাগ্যবান হতে পারে। যদি কোনো বান্দা ভুলবশত অতি ঘোরতর গুনাহের কাজ করে; এবং সেই ব্যক্তি যদি কায়মনোবাক্যে সিজদায় রত হয়ে তওবা-ইস্তেগফার করে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা ভিক্ষা চায়, তাহলে আল্লাহ সেসব ইমানদার লোকদের ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি, যে তওবা করে, ইমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচলিত থাকে।’ (সূরা তাহা, আয়াত: ৮২) মানবজাতিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে, ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবুলকারী।’ (সূরা নাসর, আয়াত: ৩) রমজান মাসে সিয়াম সাধনা রোজাদারের সামনে পাপমুক্তির পথ অবারিত করে দেয়। এ মাসের প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত বা ক্ষমাপ্রাপ্তির এবং তৃতীয় দশক দোজখ থেকে নাজাত বা মুক্তি লাভের জন্য নির্ধারিত। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘এ মাসে চারটি কাজ অবশ্যকরণীয়। দুটি কাজ এমন যে তার দ্বারা তোমাদের প্রতিপালক সন্তুষ্ট হন। অবশিষ্ট দুটি এমন, যা ছাড়া তোমাদের কোনো গত্যন্তর নেই। চারটির মধ্যে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করা এবং অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা—এ দুটি কাজ আল্লাহর দরবারে অতি পছন্দনীয়।
তৃতীয় ও চতুর্থ হলো জান্নাত লাভের আশা করা ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনা করা। এ দুটি এমন বিষয়, যা তোমাদের জন্য একান্ত জরুরি।’ (ইবনে খুজাইমা) মাহে রমজানের মধ্যবর্তী মাগফিরাতের দশকে ইবাদত-বন্দেগি করে রোজাদার মুমিন-মুসলমানরা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতি মুহূর্তে ক্ষমা লাভে ধন্য হতে থাকে। এ জন্য রোজার দিনে ইবাদতের সময়, চলাফেরায়, কাজের ফাঁকে, শয়নে-স্বপনে, রাত্রি জাগরণে, দিবা-নিশি রোজাদারদের মহান সৃষ্টিকর্তার সমীপে কায়মনোবাক্যে মাগফিরাত চাওয়া বা ইস্তেগফার করা অবশ্যকর্তব্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে রোজা আদায় করল, সে পূর্বে কৃত গুনাহ মার্জনা করিয়ে নিল।’ (বুখারি ও মুসলিম) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা দিনে ও রাতে গুনাহ করে থাকো আর আমি সব গুনাহ ক্ষমা করতে পারি। অতএব, তোমরা আমার কছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব।’ (মুসলিম) আল্লাহ তাআলা মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য নফসের মধ্যে খারাপ চাহিদা রেখে দিয়েছেন। তবে তার মধ্যে ভালো ও মন্দের প্রবণতাও দিয়েছেন। মানুষের মধ্যে বিবেক ও নফস উভয়ই সৃষ্টি করেছেন। বিবেক তাকে ভালো কাজের দিকে উদ্বুদ্ধ করে। অন্যদিকে নফস তাকে মন্দ কাজের দিকে আকৃষ্ট করে। এ কারণে স্বভাবগতভাবে মানুষের মন গুনাহের দিকে আকৃষ্ট থাকে। পাপের দিকে আকৃষ্ট এ নফসকে বলা হয় ‘নফসে আম্মারা’।  এ নফসই মানুষের কাছে গুনাহকে মজাদার করে উপস্থাপন করে। ফলে মানুষের খারাপ কাজ করতে ভালো লাগে।গুনাহের শুরুতে যতই মজা লাগুক; কিন্তু পরে তার ক্ষতি প্রকাশ পায় বা অন্তর্জ্বালা শুরু হয়। গুনাহের মজা সামান্য সময়ের জন্য; আর এর অবশ্যম্ভাবী ক্ষতি হয় দীর্ঘস্থায়ী।
গুনাহখাতা মাফের পদ্ধতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যখন তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করে, তখন তারা তোমার কাছে এলে ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে এবং রাসুলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইলে তারা আল্লাহকে পরম ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু হিসেবে পাবে।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৪) আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘বলো: হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আজ-জুমার, আয়াত : ৫৩) রমজান মাসের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিবস ও রজনীতে আল্লাহর জিকির, তওবা, ইস্তেগফার ও ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকা বাঞ্ছনীয়। কেননা আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্যই দুনিয়াতে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীবরূপে পাঠিয়েছেন। তিনি শয়তানও সৃষ্টি করেছেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য, যে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। সে সর্বক্ষণ মানুষকে অসৎ পথে পরিচালনায় সচেষ্ট থাকে। শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ যত পাপই করুক না কেন, অনুতপ্ত হয়ে এবং ভবিষ্যতে কখনো পাপ না করার দৃঢ়সংকল্প নিয়ে ইস্তেগফার করলে আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা করবেন। যখন মাহে রমজানের কদরের রাত হয়, তখন ক্ষমা প্রার্থনাকারীকে আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘কিন্তু সীমালঙ্ঘন করার পর কেউ তওবা করলে ও নিজেকে সংশোধন করলে আল্লাহ তার প্রতি ক্ষমাপরবশ হবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৩৯) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,‘যারা ইমান আনে ও পরে কুফরি করে, আবার ইমান আনে আবার কুফরি করে; অতঃপর তাদের কুফরি প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায়, আল্লাহ তাদের কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদের কোনো পথে পরিচালিত করবেন না।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩৭) তাই আসুন, মাগফিরাতের দশকে কান্নাভেজা কণ্ঠে আমরা আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে মোনাজাত ও ক্ষমা প্রার্থনা করি, ‘হে আল্লাহ! মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা ও ইবাদতের বরকতে আমাদের গুনাহখাতা মাফ করে দিন এবং জীবনে কৃত ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিন!
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক।
dr.munimkhan@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.