জরুরিভিত্তিতে গঠনমূলক সংলাপ দরকার: নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন্স
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র মনোনীত নতুন
রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট এ দেশে গণতন্ত্র ও
মানবাধিকার-সম্পর্কিত সাম্প্রতিক ধারা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কথা
আবারও তুলে ধরেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সিনেট পররাষ্ট্র সম্পর্ক কমিটির সম্মুখে বার্নিকাট বলেন, ‘বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির সংসদীয় নির্বাচন নিঃসন্দেহে ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে জরুরিভিত্তিতে গঠনমূলক সংলাপে অংশগ্রহণ করা দরকার, যা আরও প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে।’ বার্নিকাট ড্যান মজীনার স্থলাভিষিক্ত হবেন।
আজ ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
শুনানিতে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, রাজনৈতিক সহিংসতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বার্নিকাট। তাঁর নিয়োগ চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশে জবাবদিহির প্রসার এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্র শক্তিশালী করার প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করতে কঠিন পরিশ্রম করার ঘোষণা দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাংলাদেশে শ্রম অধিকার ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা এখনো অগ্রাধিকার গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে এসব বিষয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন বার্নিকাট। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় নানা বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ঘোষণা দেন তিনি।
নিয়োগ চূড়ান্ত হলে সরকার, সুশীল সমাজ ও সব শ্রেণির বাংলাদেশির সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে বিস্তৃত ও ন্যায়সংগত অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করে—এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করার কথা জানান সিনেট কমিটিকে।
মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাটের পুরো বক্তব্য.........
যুক্তরাষ্ট্র সিনেট পররাষ্ট্র সম্পর্ক কমিটির সম্মুখে
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত-মনোনীত
মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাটের বক্তব্য
চেয়ারম্যান মহোদয় এবং কমিটির সদস্যগণ, আজ আপনাদের সামনে আসতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করে আমার ওপর যে বিশ্বাস ও আস্থা অর্পণ করেছেন তার জন্য আমি তাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।
চেয়ারম্যান মহোদয়, আমি আমার বোন ও তার স্বামী ক্যাথরিন ব্লুম হোয়াইট ও লুথার হোয়াইটকে এবং তৃতীয় শ্রেণী হতে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুদের অন্যতম টমাস ডার্বিকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। আমি ও আমার বোন টমাস ডার্বির সংগে জার্সি শোর এলাকায় বড় হয়েছি। আমার দুই ছেলে সুমিত নিকোলস ও সুনীল ক্রিস্টোফার উপমহাদেশে জন্মগ্রহণ করে এবং তাদের পিতা অলিভিয়ের বার্নিকাটের মতো পুরো বিশ্বকে নিজের শ্রেণীকক্ষ হিসেবে আখ্যায়িত করে। গত তিন দশকে, পাঁচটি ভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে আটটি রাষ্ট্রে আমেরিকান জনগণের সেবা করার মতো সম্মানজনক সুযোগ হয়েছে আমার।
আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি রাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্রকে সেবা প্রদানের জন্য মনোনীত হওয়া একটি সম্মানের বিষয়। জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম রাষ্ট্র ও তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র বাংলাদেশ তার নমনীয়, ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। প্রতি বছর প্রায় ৬ শতাংশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ একটি মধ্য আয়ের রাষ্ট্র পরিণত হওয়ার আকাংখা পোষণ করে এবং বর্ধমান গুরুত্ব বহনকারী বাণিজ্যিক অংশীদার ও যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের গন্তব্যস্থল। প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলা ভারত ও সদ্য উন্মুক্ত হতে চলা বার্মার মাঝে কৌশলগত অবস্থানে অবস্থিত বাংলাদেশ, যার ফলে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ্য সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত অবস্থানে অবস্থিত এদেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাংলাদেশে শ্রম অধিকার ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা এখনো উচ্চ প্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় হিসেবে বিবেচ্য। রানা প্লাজা ভবন ধ্বস বা তাজরীন ফ্যাশনস্ কারখানা অগ্নিকান্ডের মতো হূদয়বিদারক ঘটনা আর না ঘটে সেটা বাংলাদেশীদের নিশ্চিত করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহায়তায় বাংলাদেশ তার পোশাক খাতের রূপান্তরে অগ্রগতি সাধন শুরু করেছে। আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে আমি বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার উন্নয়ন ও শ্রমঅধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা আরো জোরদার করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টাসমূহকে সক্রিয়ভাবে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবো বলে আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি তার অর্থনীতির পরিধির বাইরেও বিস্তৃত যখন দেশটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ জাতিসংঘ সহস্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনের দিকে এগিয়ে চলেছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটা গত আড়াই দশকব্যাপী এক সাফল্য গাঁথা হিসেবে পরিচিত এবং এই সাফল্য অর্জনে বাংলাদেশকে সহায়তা করায় যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের পর এশিয়াতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র সহায়তার সর্ববৃহত্ গ্রহীতা। দেশটি প্রেসিডেন্টের তিনটি প্রধান উন্নয়ন উদ্যোগ: বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও ফিড দ্য ফিউচারের ক্ষেত্রে প্রাধিকার প্রাপ্ত রাষ্ট্র। মানবপাচার মোকাবেলায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের হুমকি হ্রাসের ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সংগে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত হানার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে আমি এই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব উদ্যোগগুলোকে অব্যাহত রাখতে কাজ করার সুযোগের জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। একইসংগে, আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে সন্ত্রাসবিরোধী, সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা, শান্তিরক্ষা এবং মাদক ও অস্ত্র পাচার মোকাবেলাসহ নিরাপত্তা জোরদার ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতার অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে কাজ করতে আমি আগ্রহী।
কখনো কোনো মতপার্থক্য দেখা দিলে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের মধ্যকার শক্তিশালী সম্পর্ক আমাদের সেটা নিয়ে খোলামেলা ও স্পষ্টভাবে আলোচনার সুযোগ দেয়। এই প্রেক্ষিতে, আমরা লক্ষ্য করেছি যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সম্পর্কিত সামপ্রতিক ধারা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বেগ অব্যাহত রয়েছে। ৫ই জানুয়ারির সংসদীয় নির্বাচন নিঃসন্দেহে ত্রুটিপূর্ণ ছিলো এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে গঠনমূলক সংলাপে অংশগ্রহণ করা দরকার যা আরো প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, রাজনৈতিক সহিংসতা ও নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের অভিযোগ বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে, আমি বাংলাদেশে জবাবদিহিতার প্রসার এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্র শক্তিশালী করার প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করতে কঠিন পরিশ্রম করবো।
আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে, আমি সরকার, সুশীল সমাজ ও সকল শ্রেণীর বাংলাদেশীর সংগে কাজ করবো যাতে সবচেয়ে বিস্তৃত ও ন্যায়সঙ্গত অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করে এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়। আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে আমি আন্তরিকভাবে মানবাধিকার ও বৈচিত্রতার প্রতি শ্রদ্ধা, সুশীল সমাজের প্রসারের সুযোগ, সহিংসতা দ্বারা কলঙ্কিত নয় এমন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক মতপার্থক্যের আলোচনা এবং একটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থা দ্বারা আইনের শাসনের প্রতি অনুগত হওয়া সহ শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে তুলে এমন নীতির প্রচারণা করবো। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে যারা নৃশংসতা চালিয়েছিলো তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে তবে, সেই বিচারকার্য সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী হতে হবে। চিত্তাকর্ষক কাজ করা বাংলাদেশী সুশীল সমাজ প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনভাবে কাজ অব্যাহত রাখার অধিকার ও নিজ মতামত উন্মুক্তভাবে তুলে ধরার অধিকারকে সমর্থন করা আমরা অব্যাহত রাখবো। একইসংগে আমরা স্বীকৃতি জানাই যে এই এসব প্রতিষ্ঠানসমূহ যে কোনো প্রগতিশীল গণতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রামীন ব্যাংকের অব্যাহত কার্যকরিতা নিশ্চিত করতে ও এর অনন্য প্রশাসনিক কাঠামো সংরক্ষণ করতেও আমরা সরকারকে উত্সাহিত করছি।
যে কোনো চীফ অব মিশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো বিদেশে আমাদের কর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। গত জানুয়ারি মাসের নির্বাচনের প্রাক্কালে ও তার পরবর্তী সময়ব্যাপী আমাদের ঢাকাস্থ দূতাবাস নিরাপত্তা বাহিনী ও সহযোগিদের সংগে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে যাতে কর্মী ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে সেটা উচ্চ প্রাধিকার বিশিষ্ট একটি বিষয় হয়ে থাকবে।
চেয়ারম্যান মহোদয়, দক্ষিণ এশিয়ায় আপনার গভীর আগ্রহ এবং আমাদের সরকার সেই মহাদেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজ অবস্থান পুনরায় সমন্বিত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে আমি আপনার সংগে, কমিটির সংগে ও কংগ্রেসের অন্যান্য সদস্যদের সংগে বাংলাদেশ ও ঐ অঞ্চলব্যাপী আমেরিকার স্বার্থের অগ্রগতির জন্য কাজ করার সুযোগকে স্বাগত জানাই। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা এক অগাধ সম্মানের বিষয় হবে।
আমি আপনাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে সম্মানিত বোধ করবো।
যুক্তরাষ্ট্র সিনেট পররাষ্ট্র সম্পর্ক কমিটির সম্মুখে বার্নিকাট বলেন, ‘বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির সংসদীয় নির্বাচন নিঃসন্দেহে ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে জরুরিভিত্তিতে গঠনমূলক সংলাপে অংশগ্রহণ করা দরকার, যা আরও প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে।’ বার্নিকাট ড্যান মজীনার স্থলাভিষিক্ত হবেন।
আজ ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
শুনানিতে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, রাজনৈতিক সহিংসতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বার্নিকাট। তাঁর নিয়োগ চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশে জবাবদিহির প্রসার এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্র শক্তিশালী করার প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করতে কঠিন পরিশ্রম করার ঘোষণা দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাংলাদেশে শ্রম অধিকার ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা এখনো অগ্রাধিকার গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে এসব বিষয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন বার্নিকাট। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় নানা বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ঘোষণা দেন তিনি।
নিয়োগ চূড়ান্ত হলে সরকার, সুশীল সমাজ ও সব শ্রেণির বাংলাদেশির সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে বিস্তৃত ও ন্যায়সংগত অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করে—এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করার কথা জানান সিনেট কমিটিকে।
মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাটের পুরো বক্তব্য.........
যুক্তরাষ্ট্র সিনেট পররাষ্ট্র সম্পর্ক কমিটির সম্মুখে
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত-মনোনীত
মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাটের বক্তব্য
চেয়ারম্যান মহোদয় এবং কমিটির সদস্যগণ, আজ আপনাদের সামনে আসতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করে আমার ওপর যে বিশ্বাস ও আস্থা অর্পণ করেছেন তার জন্য আমি তাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।
চেয়ারম্যান মহোদয়, আমি আমার বোন ও তার স্বামী ক্যাথরিন ব্লুম হোয়াইট ও লুথার হোয়াইটকে এবং তৃতীয় শ্রেণী হতে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুদের অন্যতম টমাস ডার্বিকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। আমি ও আমার বোন টমাস ডার্বির সংগে জার্সি শোর এলাকায় বড় হয়েছি। আমার দুই ছেলে সুমিত নিকোলস ও সুনীল ক্রিস্টোফার উপমহাদেশে জন্মগ্রহণ করে এবং তাদের পিতা অলিভিয়ের বার্নিকাটের মতো পুরো বিশ্বকে নিজের শ্রেণীকক্ষ হিসেবে আখ্যায়িত করে। গত তিন দশকে, পাঁচটি ভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে আটটি রাষ্ট্রে আমেরিকান জনগণের সেবা করার মতো সম্মানজনক সুযোগ হয়েছে আমার।
আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি রাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্রকে সেবা প্রদানের জন্য মনোনীত হওয়া একটি সম্মানের বিষয়। জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম রাষ্ট্র ও তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র বাংলাদেশ তার নমনীয়, ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। প্রতি বছর প্রায় ৬ শতাংশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ একটি মধ্য আয়ের রাষ্ট্র পরিণত হওয়ার আকাংখা পোষণ করে এবং বর্ধমান গুরুত্ব বহনকারী বাণিজ্যিক অংশীদার ও যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের গন্তব্যস্থল। প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলা ভারত ও সদ্য উন্মুক্ত হতে চলা বার্মার মাঝে কৌশলগত অবস্থানে অবস্থিত বাংলাদেশ, যার ফলে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ্য সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত অবস্থানে অবস্থিত এদেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাংলাদেশে শ্রম অধিকার ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা এখনো উচ্চ প্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় হিসেবে বিবেচ্য। রানা প্লাজা ভবন ধ্বস বা তাজরীন ফ্যাশনস্ কারখানা অগ্নিকান্ডের মতো হূদয়বিদারক ঘটনা আর না ঘটে সেটা বাংলাদেশীদের নিশ্চিত করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহায়তায় বাংলাদেশ তার পোশাক খাতের রূপান্তরে অগ্রগতি সাধন শুরু করেছে। আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে আমি বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার উন্নয়ন ও শ্রমঅধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা আরো জোরদার করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টাসমূহকে সক্রিয়ভাবে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবো বলে আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি তার অর্থনীতির পরিধির বাইরেও বিস্তৃত যখন দেশটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ জাতিসংঘ সহস্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনের দিকে এগিয়ে চলেছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটা গত আড়াই দশকব্যাপী এক সাফল্য গাঁথা হিসেবে পরিচিত এবং এই সাফল্য অর্জনে বাংলাদেশকে সহায়তা করায় যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের পর এশিয়াতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র সহায়তার সর্ববৃহত্ গ্রহীতা। দেশটি প্রেসিডেন্টের তিনটি প্রধান উন্নয়ন উদ্যোগ: বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও ফিড দ্য ফিউচারের ক্ষেত্রে প্রাধিকার প্রাপ্ত রাষ্ট্র। মানবপাচার মোকাবেলায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের হুমকি হ্রাসের ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সংগে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত হানার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে আমি এই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব উদ্যোগগুলোকে অব্যাহত রাখতে কাজ করার সুযোগের জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। একইসংগে, আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে সন্ত্রাসবিরোধী, সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা, শান্তিরক্ষা এবং মাদক ও অস্ত্র পাচার মোকাবেলাসহ নিরাপত্তা জোরদার ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতার অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে কাজ করতে আমি আগ্রহী।
কখনো কোনো মতপার্থক্য দেখা দিলে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের মধ্যকার শক্তিশালী সম্পর্ক আমাদের সেটা নিয়ে খোলামেলা ও স্পষ্টভাবে আলোচনার সুযোগ দেয়। এই প্রেক্ষিতে, আমরা লক্ষ্য করেছি যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সম্পর্কিত সামপ্রতিক ধারা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বেগ অব্যাহত রয়েছে। ৫ই জানুয়ারির সংসদীয় নির্বাচন নিঃসন্দেহে ত্রুটিপূর্ণ ছিলো এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে গঠনমূলক সংলাপে অংশগ্রহণ করা দরকার যা আরো প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, রাজনৈতিক সহিংসতা ও নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের অভিযোগ বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে, আমি বাংলাদেশে জবাবদিহিতার প্রসার এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্র শক্তিশালী করার প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করতে কঠিন পরিশ্রম করবো।
আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে, আমি সরকার, সুশীল সমাজ ও সকল শ্রেণীর বাংলাদেশীর সংগে কাজ করবো যাতে সবচেয়ে বিস্তৃত ও ন্যায়সঙ্গত অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করে এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়। আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে আমি আন্তরিকভাবে মানবাধিকার ও বৈচিত্রতার প্রতি শ্রদ্ধা, সুশীল সমাজের প্রসারের সুযোগ, সহিংসতা দ্বারা কলঙ্কিত নয় এমন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক মতপার্থক্যের আলোচনা এবং একটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থা দ্বারা আইনের শাসনের প্রতি অনুগত হওয়া সহ শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে তুলে এমন নীতির প্রচারণা করবো। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে যারা নৃশংসতা চালিয়েছিলো তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে তবে, সেই বিচারকার্য সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী হতে হবে। চিত্তাকর্ষক কাজ করা বাংলাদেশী সুশীল সমাজ প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনভাবে কাজ অব্যাহত রাখার অধিকার ও নিজ মতামত উন্মুক্তভাবে তুলে ধরার অধিকারকে সমর্থন করা আমরা অব্যাহত রাখবো। একইসংগে আমরা স্বীকৃতি জানাই যে এই এসব প্রতিষ্ঠানসমূহ যে কোনো প্রগতিশীল গণতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রামীন ব্যাংকের অব্যাহত কার্যকরিতা নিশ্চিত করতে ও এর অনন্য প্রশাসনিক কাঠামো সংরক্ষণ করতেও আমরা সরকারকে উত্সাহিত করছি।
যে কোনো চীফ অব মিশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো বিদেশে আমাদের কর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। গত জানুয়ারি মাসের নির্বাচনের প্রাক্কালে ও তার পরবর্তী সময়ব্যাপী আমাদের ঢাকাস্থ দূতাবাস নিরাপত্তা বাহিনী ও সহযোগিদের সংগে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে যাতে কর্মী ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে সেটা উচ্চ প্রাধিকার বিশিষ্ট একটি বিষয় হয়ে থাকবে।
চেয়ারম্যান মহোদয়, দক্ষিণ এশিয়ায় আপনার গভীর আগ্রহ এবং আমাদের সরকার সেই মহাদেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজ অবস্থান পুনরায় সমন্বিত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে আমি আপনার সংগে, কমিটির সংগে ও কংগ্রেসের অন্যান্য সদস্যদের সংগে বাংলাদেশ ও ঐ অঞ্চলব্যাপী আমেরিকার স্বার্থের অগ্রগতির জন্য কাজ করার সুযোগকে স্বাগত জানাই। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা এক অগাধ সম্মানের বিষয় হবে।
আমি আপনাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে সম্মানিত বোধ করবো।
No comments