গতকাল ১০ জনসহ নয় দিনে নিহত ২০৭, আহত দেড় হাজার
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান ও স্থল হামলার প্রতিবাদে গতকাল ফ্রান্সের স্ট্রসবুর্গ এলাকায় বিক্ষোভ। এএফপি |
আবার রক্তাক্ত গাজা। আবার লাশের সারি, গাজায় স্বজন হারানোর বেদনায় কান্না আর আর্তনাদের শব্দ। সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার পর গত মঙ্গলবার থেকেই আবার ফিলিস্তিনে নির্বিচারে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। গতকাল বুধবার বেপরোয়া হামলায় অন্তত ১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে নয় দিনে নিহতের সংখ্যা ২০৭ জনে দাঁড়াল। অবশ্য গাজায় কেবল হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হচ্ছে বলে ইসরায়েল দাবি করছে। খবর বিবিসি, আল-জাজিরা, এএফপি ও রয়টার্সের। এদিকে গত মঙ্গলবার গাজা থেকে ছোড়া রকেট হামলায় এক ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি হামলার জবাবে নয় দিন ধরে গাজা থেকে ছোড়া রকেটে এই প্রথম কোনো নিহতের ঘটনা ঘটল। হামাসের ওয়েবসাইটে বলা হয়, বুধবার হামাসের অন্তত চারজন জ্যেষ্ঠ নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামাস-শাসিত গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি জানায়, নতুন করে শুরু হওয়া হামলায় অন্তত ৩০টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। হামলা হয়েছে হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা মাহমুদ জহর, জামিলা শান্তি, ফাতি হামাস ও ইসমাইল আসকারের বাড়িতে। গাজার চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানান, বুধবার হামলায় কমপক্ষে ১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। নিহতদের মধ্যে পাঁচ মাসের এক শিশুও রয়েছে। হামলায় হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা মাহমুদ জহরের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার জরুরি বিভাগের কর্মকর্তা আশরাফ আল-কুদরার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, গাজার রাফা শহরের একটি বাড়িতে হামলায় দুজন নিহত হন। রাফায় পৃথক হামলায় এক তরুণ নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ওই তরুণ কট্টরপন্থী সংগঠন ইসলামিক জিহাদের সদস্য। কুদরা জানান, রাফা ছাড়া খান ইউনিস এলাকায় পৃথক হামলায় আরও দুজন নিহত হয়েছেন। হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাড়ি লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, এসব হামলায় কোনো নেতার হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর বুধবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২০৭-এ পৌঁছেছে। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৩০ জনে। হতাহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। এদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। ইসরায়েল বলছে, গাজার কট্টরপন্থী সংগঠনগুলোর রকেট হামলার জবাবে ‘অপারশেন প্রটেক্টিভ এজ’ অভিযানের আওতায় বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। গাজা থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে এ পর্যন্ত অন্তত এক হাজার রকেট ছোড়া হয়েছে।
এতে এক ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হন চারজন। ইসরায়েলি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার গাজা থেকে ছোড়া একটি রকেট ইরেজ সীমান্ত ক্রসিংয়ের কাছে আঘাত হানে। এতে ওই ইসরায়েলি নিহত হন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, নতুন করে হামলা শুরুর আগে গতকাল গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। বুধবার ভোর পাঁচটায় ওই বাসিন্দাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বলা হয়। গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে হাজার হাজার বাসিন্দাকেও নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। বিমান থেকে প্রচারপত্র ফেলে ও রেকর্ড করা বার্তা প্রচার করে ফিলিস্তিনিদের সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা গাজার দুটি শহরের বাসিন্দাদের সতর্কবার্তা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, মঙ্গলবার থেকে নতুন অভিযানে গাজায় ৯৬টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ শুরু করার পর প্রথম আট দিনে গাজায় এক হাজার ৭৫০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলের প্রায় একতরফা সামরিক অভিযান বন্ধ করতে প্রতিবেশী মিসর গত মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করে। মিসরের ওই প্রস্তাব অনুমোদন করে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। সাময়িকভাবে হামলাও বন্ধ করে ইসরায়েলি বাহিনী। কিন্তু হামাস যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ করে জানায়, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এই প্রস্তাব আনা হয়েছে। এটি ‘আত্মসমর্পণের’ সমতুল্য। হামাস পূর্ণাঙ্গ কোনো চুক্তি ছাড়া রকেট হামলা বন্ধ করবে না। এরপর আবার গাজায় হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েল। ইইউর পর্যবেক্ষক পাঠানোর প্রস্তাব: ইসরায়েল-গাজা সীমান্ত ক্রসিংয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর প্রস্তাব তুলেছে ফ্রান্স। দুই পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লঁরা ফ্যাবিয়াস গতকাল এই প্রস্তাব দেন। চলতি সপ্তাহে ওই প্রস্তাব নিয়ে ব্রাসেলসে ইইউ নেতাদের আলোচনা হতে পারে।
No comments