বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া অনিবার্য -সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত
সংসদের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতের জন্য উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিশংসনের (অপসারণ) ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া ‘অনিবার্য’ বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেছেন, ‘সংসদের কাছে সকল বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে সার্বভৌম সংসদ হয় না। সংসদের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতের জন্যই সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা অনিবার্য।’ গতকাল সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিত এ কথা বলেন। ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে ছিল। পরবর্তীতে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমান বলে এই অনুচ্ছেদ বাতিল করেন। পরে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ কাছে দেয়া হয়। ১৯৭২ সালের সংবিধানে ‘বিচারকদের পদের মেয়াদ’ শীর্ষক ৯৬ অনুচ্ছেদে ২ দফায় বলা হয়েছে ‘প্রমাণিত ও অসাদচরণ বা অসামর্থ্যরে কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত প্রেসিডেন্টের আদেশ ব্যতীত কোন বিচারককে অপসারিত করা যাইবে না।’ বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়ার পক্ষে দীর্ঘদিন ধরেই এমপিরা দাবি জানিয়ে আসছেন। বিগত মহাজোট সরকারের সময়ে ২০১২ সালে তৎকালীন স্পিকার ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের একটি রুলিংকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে হাইকোর্টের একজন বিচারপতিকে অপসারণের দাবি সংসদে তোলেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। ওই সময় বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি করেন বেশ কিছু সংসদ সদস্য। সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর সময়ে এ নিয়ে আলোচনা উঠলেও ৯৬ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন করা হয়নি। গত ২৬শে জুন সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আইন কমিশনও একই সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন জমা দেয়। গতকাল সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘পত্র-পত্রিকা এবং কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে শুনেছি ৯৬ অনুচ্ছেদ আগের মতো ফিরিয়ে আনা হবে। ৭২-এর সংবিধানে যেসব মৌলিক অবস্থান ছিল তার মধ্যে এটি অন্যতম।’ ‘রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গ সংসদের কাছে দায়বদ্ধ। প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী বানায় সংসদ। আবার তাদের তাড়ায়ও সংসদ। তেমনি বিচার বিভাগের দায়বদ্ধতাও সংসদের কাছে থাকা উচিত। কিন্তু একধরনের ভাব আছে-বিচার বিভাগের আবার জবাবদিহিতা কি?’ তিনি বলেন, ‘সামরিক ঘোষণা দিয়ে ৯৬ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করা হয়েছিল। পরে ৫ম সংশোধনী বাতিল করে উচ্চ আদালতের রায় দিল। কিন্তু এটি ঠিক রেখে দিলো। সব যদি অবৈধ হয় তাহলে এটাওতো অবৈধ। বলা হলো সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করা হবে। আজ অবধি একটিও গঠন হয়নি।’ নবম সংসদে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীতে গঠিত বিশেষ কমিটির এই কো-চেয়ারম্যান বলেন, ‘সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীতে এটা আসলে স্বাভাবিক ছিল। তাহলে এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতো না। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। ভেতরে-বাইরে বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। তারপরও ‘বেটার লেট দ্যান নেভার’। তিনি আরও বলেন, ‘এটি একটি সেটেলড ইস্যু। এনিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। পৃথিবীর দেশে দেশে যেখানে সার্বভৌম সংসদ আছে সেখানে বিচারবিভাগ সংসদের কাছে দায়বদ্ধ।’ রাষ্ট্র পরিচালনায় সমন্বয় থাকার জন্য ৯৬ অনুচ্ছেদের সংশোধনী প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
No comments