দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদেই আমাদের এই আন্দোলন: সিটিজি টাইমস ডটকমের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে আল্লামা শাহ আহমদ শফী
সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত নাম
হেফাজতে ইসলাম ও আল্লামা শাহ আহমদ শফী। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের
নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে রাসূল (সা.) ও ইসলাম অবমাননার
খবর প্রকাশিত হওয়ার পর হেফাজতে ইসলামের প্রতিবাদ কর্মসূচী
প্রিন্ট
ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ সকলের নজরে আসে। ইসলাম ও রাসূল অবমাননার সাথে
জড়িত ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ব্যাপক জনসমাগমে
বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদী অবস্থান, মানববন্ধন, উপজেলা পরিষদ ঘেরাও এবং
স্মারকলিপি প্রদানসহ হেফাজতে ইসলামের বেশ কিছু কর্মসূচী পালিত হয়েছে।
ইতিমধ্যেই হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে দাবী আদায় না হলে আগামী ৬ এপ্রিল
দেশের সকল জেলা থেকে ঢাকা অভিমুখী লংমার্চ ও মহাসমাবেশ কর্মসূচী ঘোষণা করা
হয়েছে এবং এই লক্ষ্যে সংগঠনটির ব্যাপক প্রস্তুতিও চোখে পড়ছে।
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে ইসলাম অবমাননায় অভিযুক্ত ব্লগারদের শাস্তির দাবীতে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন নিয়ে বিরোধী পক্ষের কেউ কেউ রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং সংগঠনটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তুলছেন। এ নিয়ে বিস্তারিত কথা হয় হেফাজতে ইসলামের আমীর ও দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সাথে।
দেশের উলামা-মাশায়েখদের মধ্যে সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত প্রবীণ এই আলেম হেফাজতে ইসলাম ছাড়াও উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে রয়েছেন। উপমহাদেশের অন্যতম বিখ্যাত ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলূম হাটহাজারী’র মহাপরিচালকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি দীর্ঘ দিন ধরে। বাংলাদেশ ক্বওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) এবং বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বেও তিনি রয়েছেন।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী ১৯৩০ খ্রীস্টাব্দে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া থানাধীন পাখিয়ার টিলা নামক গ্রামে এক অভিজাত সম্ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী আলেম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে দারুল উলূম হাটহাজারীতে অধ্যাপনা শেষে আরো উচ্চতর শিক্ষার্জনের জন্য ১৯৫১ইং সালে ইসলামী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দে ৪ বৎসর অধ্যাপনা করেন। এরপর তিনি দারুল উলূম হাটহাজারীতে শিক্ষতায় যোগদান করেন এবং বিগত ২৭ বছর ধরে মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্রের সাথে দীর্ঘ দিন যুক্ত থাকার কারণে সারাদেশে তাঁর রয়েছে লক্ষ লক্ষ ছাত্র, মুরীদ, ভক্ত ও খলীফা। ক্বওমী ধারার ৪০ হাজার মাদ্রাসার প্রায় প্রত্যেকটির শিক্ষকতা ও পরিচালকের পদে রয়েছে তাঁর অগণিত ছাত্র। এছাড়াও তাঁর শত শত খলীফা বা প্রতিনিধির মাধ্যমে আরো লক্ষ লক্ষ ভক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দেশের সর্বত্র এবং বহির্বিশ্বের অনেক স্থানেই। দেশের উলামা-মাশায়েখ এবং ইসলামী রাজনীতির সাথে জড়িত শীর্ষ আলেমদের মধ্যে সমবয়সী দুই একজন ছাড়া প্রায় সকলেই তাঁর ছাত্র, মুরীদ অথবা ভক্ত। তাই ইসলাম ও মুসলমানদের যে কোন সংকটে আল্লামা শাহ আহমদ শফী’র আহ্বানে পারস্পরিক মতভেদ থাকলেও সকলেই ছুটে যান তাঁর কাছে। ব্যক্তি জীবনে তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে কখনো জড়াননি। তবে ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের প্রয়োজনে সাড়া দিতেও কখনো দেরী করেন না। এ কারণে বহুধাবিভক্ত ইসলামী নেতৃবৃন্দের ঐক্যের প্রতীকও বলা হয় আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে। সব মিলিয়ে আল্লামা শাহ আহমদ শফী’র দেশে-বিদেশে আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ কারণে শক্তিশালী কোন সাংগঠনিক কাঠামো ছাড়াও তাঁর আহ্বানে লক্ষ কোটি মানুষকে জীবনবাজি রেখে সাড়া দিতে দেখা যায়। যা সত্যিই বিস্ময়কর।
(২৮ মার্চ) বৃহস্পতিবার সিটিজি টাইমস ডটকমে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে খোলামেলা কথা বলেন এই দেশ বরেণ্য আলেম।
প্রশ্নঃ হেফাজতে ইসলাম গঠন করার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু বলুন।
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা, নীতি-আদর্শ, কৃষ্টিকালচার, সঠিক ধর্মীয় বিধিবিধান ও অনুশাসনের সুরক্ষা এবং ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মোকাবিলায় ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার সম্মিলিত কর্মপন্থা নির্ধারণ ও পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যেই ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারী হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামের সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও নীতিকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে। আমি আবারও স্পষ্ট করছি, আমাদের সকল কর্মসূচীই শুধুমাত্র ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থসংশ্লিষ্ট, দেশাত্মবোধক, শান্তিপূর্ণ এবং অরাজনৈতিক।
প্রশ্নঃ ব্লগারদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিলেন কেন?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ দেখুন, আমাদের আন্দোলন ঢালাওভাবে সব ব্লগ বা ব্লগারের বিরুদ্ধে নয়। আমরা জানি, সাধারণ মুসলমান, ছাত্র-শিক্ষক ও বিভিন্ন পেশাজীবির অনেকেই ব্লগ লিখে থাকেন। আলেম ও মাদ্রাসা ছাত্রদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্লগার রয়েছেন। আমাদের প্রতিবাদী আন্দোলন কেবলমাত্র সেসব ব্লগারের বিরুদ্ধে, যারা মুক্ত চিন্তা ও বাকস্বাধীনতার আড়ালে কোটি কোটি মানুষের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, প্রিয় নবী রাসূল (সা.), পবিত্র কুরআন ও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে জঘন্য কুৎসা ও অবমাননায় জড়িত। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ছাড়াও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে এবং সভ্যতা-ভব্যতা ও গণতন্ত্রের কোন মাপকাঠিতেই এমন কুৎসা ও অবমাননা মেনে নেওয়া যায় না। ওরা ইসলামের এমন জঘন্য অবমাননা করেছে, যা পশ্চিমা বিশ্বের কোন অমুসলিমের মুখেও কখনো শোনা যায়নি। সুস্থ বিবেকের কোন মুসলমানের পক্ষে এসবের সম্পূর্ণটা পড়ে দেখার সাধ্যও নাই। শুরু থেকেই আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিষ্ঠা, ইসলাম বিরোধী নারী নীতি ও ধর্মহীন শিক্ষানীতির বিরোধীতা করে আসছি। অথচ কয়েক বছর যেতে না যেতেই বর্তমান সরকারের গৃহীত এসব নীতির মারাত্মক কুফল শুরু হয়ে গেছে।
প্রশ্নঃ হেফাজতে ইসলামের চলমান আন্দোলনের দাবী নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তি শোনা যায়। এ ব্যাপারে একটু বলবেন?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ আমরা জনসমাবেশ, সাংবাদিক সম্মেলন ও পত্রিকায় বিবৃতি দেওয়ার মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের দাবীসমূহ বার বার তুলে ধরেছি। আমাদের প্রধান দাবী হচ্ছে, সংবিধানে আল্লাহ্্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুণঃস্থাপন এবং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুরক্ষা ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে ধর্মঅবমাননার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর আইন পাশ। পাশাপাশি ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন ব্লগ ও সাইটে মহান আল্লাহ্, রাসূল (সা.), ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেসব অবমাননাকর জঘন্য কটূক্তিকর প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে, সেসব বন্ধ করে বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্লগ, ব্লগার ও পোস্টদাতাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা। পাঠ্য বইয়ের সকল ধর্মঅবমাননাকর মন্তব্য ও উদ্ধৃতির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে অবিলম্বে সংশোধনী প্রকাশ। সকল অনাচার, ব্যভিচার ও অশ্লীলতা এবং নাটক-সিনেমায় ব্যক্তিজীবনে ধর্মীয় নিদর্শন তথা দাড়ি-টুপি, হিজাব ও ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে অবমাননা রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দান। শিক্ষার সকল স্তরে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা ইত্যাদি। আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি যে, আমাদের সকল দাবীই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরী এবং সকল নাগরিকই এতে একমত পোষণ করবেন বলে আশাবাদি। সরকার দেশ, জনগণ ও মুসলমানদের স্বার্থে আমাদের ন্যায্য দাবীসমূহ মেনে নিলেই চলমান আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়। আমরা বার বারই বলে আসছি, আমরা ক্ষমতার অংশ হতে চাই না। জনসাধারণের ঈমান-আক্বিদা ও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদেই আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচী।
প্রশ্নঃ সংবিধান সংশোধনের ফলে যে ধর্ম নিরপেক্ষতা ফিরে এসেছে, এ ব্যাপারে আপনার অবস্থান কি?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ ইসলাম ও রাসূল অবমাননা বিরোধী চলমান আন্দোলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উত্থাপিত ১৩ দফা দাবীর প্রথম দাবীই হচ্ছে সংবিধানে আল্লাহ্্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুণঃস্থাপন এবং কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী সকল আইন বাতিল করতে হবে। অবশ্যই প্রতিটি মানুষ কোন না কোন ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাসী। ধর্মনিরপেক্ষতার মানেই হচ্ছে নাস্তিকতা। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ নাগরিকই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি ও সঙ্গত কারণেই এই দেশকে মুসলিম দেশ বলতে হবে। আর ইসলামী আইনে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব ধর্মীয় রীতি পালন ও নিরাপত্তা বিধানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সুতরাং আমরা মনে করি, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে মূলতঃ এই দেশকে ধর্মহীন তথা নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যার স্পষ্ট আলামত ইতিমধ্যেই আমরা দেখতে পাচ্ছি।
প্রশ্নঃ চলমান আন্দোলনের এবং হেফাজতে ইসলামের সর্বশেষ লক্ষ্য কি?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ চলমান আন্দোলনে আমরা ১৩টি দাবী উত্থাপন করেছি। ইসলাম ও মুসলিম জীবনধারা নিরাপদ রাখা এবং সঠিক পথে পরিচালিত করাই এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য। ঈমান-আক্বিদা ও ইসলাম বিরোধী কোন তৎপরতা বা প্রতিকূলতা দেখা না দিলে মুসলমানদের মাঝে সঠিক ইসলামী বিধি-বিধান ও শান্তি-শৃঙ্খলাপূর্ণ আচরণের প্রচার এবং শিরক, বিদআতসহ সকল ধর্মীয় কুসংস্কার সম্পর্কে মুসলমানদেরকে সতর্ক করার মধ্যেই হেফাজতে ইসলামের তৎপরতা সীমাবদ্ধ থাকবে।
প্রশ্নঃ ৬ই মার্চ লংমার্চে কত লোক জমায়েতের সম্ভাবনা আছে?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ প্রস্তুতি কমিটি ও সমন্বয় প্রতিনিধি দল বর্তমানে দেশব্যাপী সফর ও জেলা কমিটির সাথে বৈঠক সূচী শেষ করছেন। মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদা রক্ষার জন্য অপরিহার্য দাবী ছাড়াও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা, সম্প্রীতি ও নৈতিকতা রক্ষার জন্য হেফাজতে ইসলাম যে ডাক দিয়েছে, তাতে যে পরিমাণ সাড়া মিলছে, আমরা স্পষ্ট আশাবাদী, সরকার কোন ধরণের বাঁধা সৃষ্টি না করলে অন্ততঃ ৫০ লাখ লোকের জমায়েত হবে, ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্নঃ এ কর্মসূচি বানচাল হলে কিংবা বাধা দিলে কি করবেন?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ আমরা আগে থেকেই সতর্ক করে আসছি যে, ঈমান-আক্বীদা রক্ষার আমাদের অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ লংমার্চে বাঁধা দিলে আমরা সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে লাগাতার হরতাল বা অবস্থান ধর্মঘটের মত কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হব। তবে আমরা এখনো আশাবাদী, সরকার লংমার্চ কর্মসূচী পালনের আগেই আমাদের ন্যায দাবীসমূহ পূরণ করে ওলামা-মাশায়েখ ও ৯০ ভাগ মুসলমানের বিশাল জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ প্রশমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে। আমাদের জোরালো আশাবাদী হওয়ার কারণ হচ্ছে, বর্তমান মহাজোট সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, তারা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ করবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমার দুই বার বৈঠক হয়েছে। তখনও তিনি বার বার এই প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেছিলেন। যদিও সরকার তার প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থাশীল হওয়ার মত কোন কাজ এখনো পর্যন্ত করেনি।
প্রশ্নঃ জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সম্পর্কের গুঞ্জণ শোনা যাচ্ছে। এর সত্যতা কতটুকু?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ হেফাজতে ইসলামের মূল সেøাগান হচ্ছে, দ্বীনি ও ইসলাহী একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত কখনো কোন রাজনৈতিক বা কোন দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যায়, এমন কোন দাবী বা কর্মসূচী দেয়নি। ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাকারী নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহীতার বিরুদ্ধে আমাদের চলমান আন্দোলনেও আমরা যে ১৩টি দাবী উপস্থাপন করেছি, তার মধ্যে কোন রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট দাবীর অস্তিত্ব খুঁজে পাবেন না। আমাদের দাবী ও প্রতিবাদ কর্মসূচী একান্তই ঈমান-আক্বীদা, ইসলাম ও নৈতিকতা সংশ্লিষ্ট।
যখন হেফাজতে ইসলামের নায্যদাবীতে সারাদেশ উত্তাল, তখন ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগার ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা তাদের অন্যায় অবস্থানের স্বপক্ষে কোন যুক্তি খুঁজে না পেয়ে হেফাজতে ইসলাম ও আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও জঙ্গীবাদের কল্প নাটক সাজিয়ে বিষোদ্গার মূলক বক্তব্য রাখছেন। অথচ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও দেশী-বিদেশী পরিদর্শনকারীসহ দেশের কোটি কোটি তাওহিদী জনতা দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং হেফাজতে ইসলামের রাজনীতি মুক্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও দাবী সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ প্রায় প্রতিদিনই আমাদের সাথে দেখা করছেন, আমাদের পড়ালেখার পরিবেশ, শৃঙ্খলা, শান্তিপূর্ণ অবস্থান এবং হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচীর ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তাঁরা সকলেই আমাদের অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ নীতির ব্যাপারে প্রশংসা করছেন। সুতরাং বিষয়টা এভাবে ভাবুন, যারা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্্ ও আল্লাহ্্র রাসূলের অবাধ্য হয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে পারছে, তারা তাদের অপতৎপরতার প্রতিবন্ধক প্রতিবাদি ওলামা-মাশায়েখ ও হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিষোদ্গার বা অপপ্রচারে লিপ্ত হওয়াটা স্বাভাবিক। আমি মনে করি, তাদের অপতৎপরতাকে ঢাকার জন্য যত মিথ্যাচার ও অপপ্রচারই তারা করুক, দেশের ইসলামপ্রিয় জনতা এতে মোটেও বিভ্রান্ত হবে না। সাধারণ মানুষ এটা সহজেই উপলব্ধি করতে পারছেন। আমি আপনাদের মাধ্যমে সমালোচনাকারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, তারা প্রমাণ করে দেখাক, হেফাজতে ইসলাম ও ওলামা-মাশায়েখের কোন কোন দাবীর সাথে জামায়াত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
বিভিন্ন মিডিয়া, টিভি টকশোতে হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কথা যা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। জামায়াত থেকে আমরা অর্থ নিচ্ছি বলে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, টাকা-পয়সা নিলে জামায়াত থেকে কেন, ক্ষমতাসীন বা ইসলাম বিদ্বেষী মহল থেকেও তো নিতে পারতাম। আমরা ইসলামবিরোধী আগ্রাসন রোধ করার লক্ষ্যে আল্লাহ্র উপর ভরসা করে ময়দানে নেমেছি। দলমত নির্বিশেষে সকল মুসলমান আমাদের সমর্থন করছেন। ইনশাআল্লাহ ইসলাম ও মুসলিম জীবনধারা নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবেই।
প্রশ্নঃ আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সঙ্গে আপনার সখ্যতার কথা শোনা যায়। এ বিষয়ে একটু বলবেন?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ যদি সত্যি সত্যিই এমন কিছু শুনে থাকেন, তবে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। মুসলমান; এই পরিচয়ে লক্ষ কোটি মানুষের সাথে আমার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু শুধু আওয়ামীলীগ, বিএনপি বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের নেতা বা সমর্থকের পরিচয়ে কারো সাথে সখ্যতা বা সংশ্লিষ্টতার কথা কেউ বলতে পারবে না। আমার পুরো জীবনটাই কেটেছে কুরআন-হাদীস ও ইসলামী শিক্ষার প্রচার-প্রসার, ঈমান-আক্বীদা রক্ষা, শিরক-বিদআত এবং ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারী পরিদর্শনে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রায়ই সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা, প্রতিনিধি দল ও বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব এসে থাকেন, অনেকে ব্যক্তি জীবনে সঠিক ইসলামী অনুশাসন পালনে দিক-নির্দেশনা লাভ অথবা দোয়া নেওয়ার জন্য আসেন। আমাদের অরাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে সকলেই অবগত।
প্রশ্নঃ ব্লগারদের শাস্তি হলে হেফাজতে ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে যাবে না সক্রিয় থাকবে?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ আমি উপরেও উল্লেখ করছি, মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা ও কৃষ্টিকালচারের হেফাজত এবং এর বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মোকাবিলায় ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার সম্মিলিত কর্মপন্থা নির্ধারণ ও পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যেই ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারী হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়। হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপের জোরালো প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। ইতঃপূর্বেও নতুন প্রবর্তিত ধর্মহীন শিক্ষানীতি, হিজাব পালনে নারীদের বাধ্য করা যাবে না বলে হাইকোর্টের রায়, ফতোয়া বিরোধী হাইকোর্টের রায়, রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি প্রতিষ্ঠা, সংবিধান থেকে আল্লাহ্্র উপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতি তুলে দেওয়া, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহ্্ বাদ দেওয়ার চেষ্টা, ঢালাও ভাবে আলেম-ওলামা ও ক্বওমী মাদ্রাসার সাথে জঙ্গীবাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অপপ্রচার, ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের চেষ্টা, দাড়ি-টুপীধারীদের নিগ্রহ, হাইকোর্টে কোরআন সংশোধনের জন্য মামলা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ্, রাসূল, কুরআন ও ইসলাম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য ও বিবৃতির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও সম্মিলিত প্রতিবাদী কর্মসূচী পালন করেছি। কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি সফল হয়েছি, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে পুরো সফলতা না পেলেও বাধাগ্রস্ত করতে পেরেছি। সবচেয়ে বড় যেই অর্জন সেটা হচ্ছে, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে আমরা জোরালো এই বার্তা পৌঁছাতে পেরেছি যে, দেশের উলামা-মাশায়েখ ও ইসলামপন্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ছোটখাটো মতভেদ থেকে থাকলেও ইসলামের মৌলিক আক্বিদা-বিশ্বাস ও কৃষ্টিকালচারের উপর কোন আঘাত আসলে, সেক্ষেত্রে আমরা দ্রুত সময়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পড়ি এবং আমাদের অরাজনৈতিক কর্মসূচীর পক্ষে দলমত নির্বিশেষে বিশাল জনগোষ্ঠির জোরালো সমর্থন রয়েছে। সুতরাং যখনই ইসলাম ও মুসলমানদের আক্বীদা-বিশ্বাস ও কৃষ্টিকালচারের উপর আঘাত আসবে, তখনই হেফাজতে ইসলাম তৎপর ভূমিকা রাখবে। আমি জোরালো আশাবাদি, হেফাজতে ইসলামের অরাজনৈতিক এই আন্দোলন দেশের উলামা-মাশায়েখগণ স্থায়ীভাবে অব্যাহত রাখবেন।
প্রশ্নঃ ভবিষ্যতে দেশের কোন রাজনৈতিক সংকটে হেফাজতে ইসলাম ভূমিকা রাখবে কিনা?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ হেফাজতে ইসলাম মৌলিক অরাজনৈতিক নীতিমালা তথা ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদির বাইরে কোন রাজনৈতিক ভূমিকায় জড়াবে না।
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে ইসলাম অবমাননায় অভিযুক্ত ব্লগারদের শাস্তির দাবীতে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন নিয়ে বিরোধী পক্ষের কেউ কেউ রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং সংগঠনটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তুলছেন। এ নিয়ে বিস্তারিত কথা হয় হেফাজতে ইসলামের আমীর ও দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সাথে।
দেশের উলামা-মাশায়েখদের মধ্যে সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত প্রবীণ এই আলেম হেফাজতে ইসলাম ছাড়াও উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে রয়েছেন। উপমহাদেশের অন্যতম বিখ্যাত ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলূম হাটহাজারী’র মহাপরিচালকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি দীর্ঘ দিন ধরে। বাংলাদেশ ক্বওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) এবং বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বেও তিনি রয়েছেন।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী ১৯৩০ খ্রীস্টাব্দে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া থানাধীন পাখিয়ার টিলা নামক গ্রামে এক অভিজাত সম্ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী আলেম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে দারুল উলূম হাটহাজারীতে অধ্যাপনা শেষে আরো উচ্চতর শিক্ষার্জনের জন্য ১৯৫১ইং সালে ইসলামী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দে ৪ বৎসর অধ্যাপনা করেন। এরপর তিনি দারুল উলূম হাটহাজারীতে শিক্ষতায় যোগদান করেন এবং বিগত ২৭ বছর ধরে মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্রের সাথে দীর্ঘ দিন যুক্ত থাকার কারণে সারাদেশে তাঁর রয়েছে লক্ষ লক্ষ ছাত্র, মুরীদ, ভক্ত ও খলীফা। ক্বওমী ধারার ৪০ হাজার মাদ্রাসার প্রায় প্রত্যেকটির শিক্ষকতা ও পরিচালকের পদে রয়েছে তাঁর অগণিত ছাত্র। এছাড়াও তাঁর শত শত খলীফা বা প্রতিনিধির মাধ্যমে আরো লক্ষ লক্ষ ভক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দেশের সর্বত্র এবং বহির্বিশ্বের অনেক স্থানেই। দেশের উলামা-মাশায়েখ এবং ইসলামী রাজনীতির সাথে জড়িত শীর্ষ আলেমদের মধ্যে সমবয়সী দুই একজন ছাড়া প্রায় সকলেই তাঁর ছাত্র, মুরীদ অথবা ভক্ত। তাই ইসলাম ও মুসলমানদের যে কোন সংকটে আল্লামা শাহ আহমদ শফী’র আহ্বানে পারস্পরিক মতভেদ থাকলেও সকলেই ছুটে যান তাঁর কাছে। ব্যক্তি জীবনে তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে কখনো জড়াননি। তবে ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের প্রয়োজনে সাড়া দিতেও কখনো দেরী করেন না। এ কারণে বহুধাবিভক্ত ইসলামী নেতৃবৃন্দের ঐক্যের প্রতীকও বলা হয় আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে। সব মিলিয়ে আল্লামা শাহ আহমদ শফী’র দেশে-বিদেশে আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ কারণে শক্তিশালী কোন সাংগঠনিক কাঠামো ছাড়াও তাঁর আহ্বানে লক্ষ কোটি মানুষকে জীবনবাজি রেখে সাড়া দিতে দেখা যায়। যা সত্যিই বিস্ময়কর।
(২৮ মার্চ) বৃহস্পতিবার সিটিজি টাইমস ডটকমে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে খোলামেলা কথা বলেন এই দেশ বরেণ্য আলেম।
প্রশ্নঃ হেফাজতে ইসলাম গঠন করার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু বলুন।
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা, নীতি-আদর্শ, কৃষ্টিকালচার, সঠিক ধর্মীয় বিধিবিধান ও অনুশাসনের সুরক্ষা এবং ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মোকাবিলায় ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার সম্মিলিত কর্মপন্থা নির্ধারণ ও পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যেই ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারী হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামের সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও নীতিকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে। আমি আবারও স্পষ্ট করছি, আমাদের সকল কর্মসূচীই শুধুমাত্র ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থসংশ্লিষ্ট, দেশাত্মবোধক, শান্তিপূর্ণ এবং অরাজনৈতিক।
প্রশ্নঃ ব্লগারদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিলেন কেন?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ দেখুন, আমাদের আন্দোলন ঢালাওভাবে সব ব্লগ বা ব্লগারের বিরুদ্ধে নয়। আমরা জানি, সাধারণ মুসলমান, ছাত্র-শিক্ষক ও বিভিন্ন পেশাজীবির অনেকেই ব্লগ লিখে থাকেন। আলেম ও মাদ্রাসা ছাত্রদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্লগার রয়েছেন। আমাদের প্রতিবাদী আন্দোলন কেবলমাত্র সেসব ব্লগারের বিরুদ্ধে, যারা মুক্ত চিন্তা ও বাকস্বাধীনতার আড়ালে কোটি কোটি মানুষের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, প্রিয় নবী রাসূল (সা.), পবিত্র কুরআন ও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে জঘন্য কুৎসা ও অবমাননায় জড়িত। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ছাড়াও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে এবং সভ্যতা-ভব্যতা ও গণতন্ত্রের কোন মাপকাঠিতেই এমন কুৎসা ও অবমাননা মেনে নেওয়া যায় না। ওরা ইসলামের এমন জঘন্য অবমাননা করেছে, যা পশ্চিমা বিশ্বের কোন অমুসলিমের মুখেও কখনো শোনা যায়নি। সুস্থ বিবেকের কোন মুসলমানের পক্ষে এসবের সম্পূর্ণটা পড়ে দেখার সাধ্যও নাই। শুরু থেকেই আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিষ্ঠা, ইসলাম বিরোধী নারী নীতি ও ধর্মহীন শিক্ষানীতির বিরোধীতা করে আসছি। অথচ কয়েক বছর যেতে না যেতেই বর্তমান সরকারের গৃহীত এসব নীতির মারাত্মক কুফল শুরু হয়ে গেছে।
প্রশ্নঃ হেফাজতে ইসলামের চলমান আন্দোলনের দাবী নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তি শোনা যায়। এ ব্যাপারে একটু বলবেন?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ আমরা জনসমাবেশ, সাংবাদিক সম্মেলন ও পত্রিকায় বিবৃতি দেওয়ার মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের দাবীসমূহ বার বার তুলে ধরেছি। আমাদের প্রধান দাবী হচ্ছে, সংবিধানে আল্লাহ্্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুণঃস্থাপন এবং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুরক্ষা ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে ধর্মঅবমাননার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর আইন পাশ। পাশাপাশি ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন ব্লগ ও সাইটে মহান আল্লাহ্, রাসূল (সা.), ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেসব অবমাননাকর জঘন্য কটূক্তিকর প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে, সেসব বন্ধ করে বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্লগ, ব্লগার ও পোস্টদাতাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা। পাঠ্য বইয়ের সকল ধর্মঅবমাননাকর মন্তব্য ও উদ্ধৃতির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে অবিলম্বে সংশোধনী প্রকাশ। সকল অনাচার, ব্যভিচার ও অশ্লীলতা এবং নাটক-সিনেমায় ব্যক্তিজীবনে ধর্মীয় নিদর্শন তথা দাড়ি-টুপি, হিজাব ও ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে অবমাননা রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দান। শিক্ষার সকল স্তরে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা ইত্যাদি। আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি যে, আমাদের সকল দাবীই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরী এবং সকল নাগরিকই এতে একমত পোষণ করবেন বলে আশাবাদি। সরকার দেশ, জনগণ ও মুসলমানদের স্বার্থে আমাদের ন্যায্য দাবীসমূহ মেনে নিলেই চলমান আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়। আমরা বার বারই বলে আসছি, আমরা ক্ষমতার অংশ হতে চাই না। জনসাধারণের ঈমান-আক্বিদা ও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদেই আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচী।
প্রশ্নঃ সংবিধান সংশোধনের ফলে যে ধর্ম নিরপেক্ষতা ফিরে এসেছে, এ ব্যাপারে আপনার অবস্থান কি?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ ইসলাম ও রাসূল অবমাননা বিরোধী চলমান আন্দোলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উত্থাপিত ১৩ দফা দাবীর প্রথম দাবীই হচ্ছে সংবিধানে আল্লাহ্্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুণঃস্থাপন এবং কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী সকল আইন বাতিল করতে হবে। অবশ্যই প্রতিটি মানুষ কোন না কোন ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাসী। ধর্মনিরপেক্ষতার মানেই হচ্ছে নাস্তিকতা। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ নাগরিকই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি ও সঙ্গত কারণেই এই দেশকে মুসলিম দেশ বলতে হবে। আর ইসলামী আইনে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব ধর্মীয় রীতি পালন ও নিরাপত্তা বিধানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সুতরাং আমরা মনে করি, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে মূলতঃ এই দেশকে ধর্মহীন তথা নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যার স্পষ্ট আলামত ইতিমধ্যেই আমরা দেখতে পাচ্ছি।
প্রশ্নঃ চলমান আন্দোলনের এবং হেফাজতে ইসলামের সর্বশেষ লক্ষ্য কি?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ চলমান আন্দোলনে আমরা ১৩টি দাবী উত্থাপন করেছি। ইসলাম ও মুসলিম জীবনধারা নিরাপদ রাখা এবং সঠিক পথে পরিচালিত করাই এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য। ঈমান-আক্বিদা ও ইসলাম বিরোধী কোন তৎপরতা বা প্রতিকূলতা দেখা না দিলে মুসলমানদের মাঝে সঠিক ইসলামী বিধি-বিধান ও শান্তি-শৃঙ্খলাপূর্ণ আচরণের প্রচার এবং শিরক, বিদআতসহ সকল ধর্মীয় কুসংস্কার সম্পর্কে মুসলমানদেরকে সতর্ক করার মধ্যেই হেফাজতে ইসলামের তৎপরতা সীমাবদ্ধ থাকবে।
প্রশ্নঃ ৬ই মার্চ লংমার্চে কত লোক জমায়েতের সম্ভাবনা আছে?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ প্রস্তুতি কমিটি ও সমন্বয় প্রতিনিধি দল বর্তমানে দেশব্যাপী সফর ও জেলা কমিটির সাথে বৈঠক সূচী শেষ করছেন। মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদা রক্ষার জন্য অপরিহার্য দাবী ছাড়াও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা, সম্প্রীতি ও নৈতিকতা রক্ষার জন্য হেফাজতে ইসলাম যে ডাক দিয়েছে, তাতে যে পরিমাণ সাড়া মিলছে, আমরা স্পষ্ট আশাবাদী, সরকার কোন ধরণের বাঁধা সৃষ্টি না করলে অন্ততঃ ৫০ লাখ লোকের জমায়েত হবে, ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্নঃ এ কর্মসূচি বানচাল হলে কিংবা বাধা দিলে কি করবেন?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ আমরা আগে থেকেই সতর্ক করে আসছি যে, ঈমান-আক্বীদা রক্ষার আমাদের অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ লংমার্চে বাঁধা দিলে আমরা সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে লাগাতার হরতাল বা অবস্থান ধর্মঘটের মত কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হব। তবে আমরা এখনো আশাবাদী, সরকার লংমার্চ কর্মসূচী পালনের আগেই আমাদের ন্যায দাবীসমূহ পূরণ করে ওলামা-মাশায়েখ ও ৯০ ভাগ মুসলমানের বিশাল জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ প্রশমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে। আমাদের জোরালো আশাবাদী হওয়ার কারণ হচ্ছে, বর্তমান মহাজোট সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, তারা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ করবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমার দুই বার বৈঠক হয়েছে। তখনও তিনি বার বার এই প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেছিলেন। যদিও সরকার তার প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থাশীল হওয়ার মত কোন কাজ এখনো পর্যন্ত করেনি।
প্রশ্নঃ জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সম্পর্কের গুঞ্জণ শোনা যাচ্ছে। এর সত্যতা কতটুকু?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ হেফাজতে ইসলামের মূল সেøাগান হচ্ছে, দ্বীনি ও ইসলাহী একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত কখনো কোন রাজনৈতিক বা কোন দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যায়, এমন কোন দাবী বা কর্মসূচী দেয়নি। ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাকারী নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহীতার বিরুদ্ধে আমাদের চলমান আন্দোলনেও আমরা যে ১৩টি দাবী উপস্থাপন করেছি, তার মধ্যে কোন রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট দাবীর অস্তিত্ব খুঁজে পাবেন না। আমাদের দাবী ও প্রতিবাদ কর্মসূচী একান্তই ঈমান-আক্বীদা, ইসলাম ও নৈতিকতা সংশ্লিষ্ট।
যখন হেফাজতে ইসলামের নায্যদাবীতে সারাদেশ উত্তাল, তখন ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগার ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা তাদের অন্যায় অবস্থানের স্বপক্ষে কোন যুক্তি খুঁজে না পেয়ে হেফাজতে ইসলাম ও আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও জঙ্গীবাদের কল্প নাটক সাজিয়ে বিষোদ্গার মূলক বক্তব্য রাখছেন। অথচ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও দেশী-বিদেশী পরিদর্শনকারীসহ দেশের কোটি কোটি তাওহিদী জনতা দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং হেফাজতে ইসলামের রাজনীতি মুক্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও দাবী সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ প্রায় প্রতিদিনই আমাদের সাথে দেখা করছেন, আমাদের পড়ালেখার পরিবেশ, শৃঙ্খলা, শান্তিপূর্ণ অবস্থান এবং হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচীর ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তাঁরা সকলেই আমাদের অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ নীতির ব্যাপারে প্রশংসা করছেন। সুতরাং বিষয়টা এভাবে ভাবুন, যারা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্্ ও আল্লাহ্্র রাসূলের অবাধ্য হয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে পারছে, তারা তাদের অপতৎপরতার প্রতিবন্ধক প্রতিবাদি ওলামা-মাশায়েখ ও হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিষোদ্গার বা অপপ্রচারে লিপ্ত হওয়াটা স্বাভাবিক। আমি মনে করি, তাদের অপতৎপরতাকে ঢাকার জন্য যত মিথ্যাচার ও অপপ্রচারই তারা করুক, দেশের ইসলামপ্রিয় জনতা এতে মোটেও বিভ্রান্ত হবে না। সাধারণ মানুষ এটা সহজেই উপলব্ধি করতে পারছেন। আমি আপনাদের মাধ্যমে সমালোচনাকারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, তারা প্রমাণ করে দেখাক, হেফাজতে ইসলাম ও ওলামা-মাশায়েখের কোন কোন দাবীর সাথে জামায়াত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
বিভিন্ন মিডিয়া, টিভি টকশোতে হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কথা যা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। জামায়াত থেকে আমরা অর্থ নিচ্ছি বলে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, টাকা-পয়সা নিলে জামায়াত থেকে কেন, ক্ষমতাসীন বা ইসলাম বিদ্বেষী মহল থেকেও তো নিতে পারতাম। আমরা ইসলামবিরোধী আগ্রাসন রোধ করার লক্ষ্যে আল্লাহ্র উপর ভরসা করে ময়দানে নেমেছি। দলমত নির্বিশেষে সকল মুসলমান আমাদের সমর্থন করছেন। ইনশাআল্লাহ ইসলাম ও মুসলিম জীবনধারা নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবেই।
প্রশ্নঃ আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সঙ্গে আপনার সখ্যতার কথা শোনা যায়। এ বিষয়ে একটু বলবেন?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ যদি সত্যি সত্যিই এমন কিছু শুনে থাকেন, তবে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। মুসলমান; এই পরিচয়ে লক্ষ কোটি মানুষের সাথে আমার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু শুধু আওয়ামীলীগ, বিএনপি বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের নেতা বা সমর্থকের পরিচয়ে কারো সাথে সখ্যতা বা সংশ্লিষ্টতার কথা কেউ বলতে পারবে না। আমার পুরো জীবনটাই কেটেছে কুরআন-হাদীস ও ইসলামী শিক্ষার প্রচার-প্রসার, ঈমান-আক্বীদা রক্ষা, শিরক-বিদআত এবং ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারী পরিদর্শনে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রায়ই সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা, প্রতিনিধি দল ও বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব এসে থাকেন, অনেকে ব্যক্তি জীবনে সঠিক ইসলামী অনুশাসন পালনে দিক-নির্দেশনা লাভ অথবা দোয়া নেওয়ার জন্য আসেন। আমাদের অরাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে সকলেই অবগত।
প্রশ্নঃ ব্লগারদের শাস্তি হলে হেফাজতে ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে যাবে না সক্রিয় থাকবে?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ আমি উপরেও উল্লেখ করছি, মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা ও কৃষ্টিকালচারের হেফাজত এবং এর বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মোকাবিলায় ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার সম্মিলিত কর্মপন্থা নির্ধারণ ও পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যেই ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারী হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়। হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপের জোরালো প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। ইতঃপূর্বেও নতুন প্রবর্তিত ধর্মহীন শিক্ষানীতি, হিজাব পালনে নারীদের বাধ্য করা যাবে না বলে হাইকোর্টের রায়, ফতোয়া বিরোধী হাইকোর্টের রায়, রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি প্রতিষ্ঠা, সংবিধান থেকে আল্লাহ্্র উপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতি তুলে দেওয়া, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহ্্ বাদ দেওয়ার চেষ্টা, ঢালাও ভাবে আলেম-ওলামা ও ক্বওমী মাদ্রাসার সাথে জঙ্গীবাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অপপ্রচার, ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের চেষ্টা, দাড়ি-টুপীধারীদের নিগ্রহ, হাইকোর্টে কোরআন সংশোধনের জন্য মামলা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ্, রাসূল, কুরআন ও ইসলাম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য ও বিবৃতির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও সম্মিলিত প্রতিবাদী কর্মসূচী পালন করেছি। কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি সফল হয়েছি, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে পুরো সফলতা না পেলেও বাধাগ্রস্ত করতে পেরেছি। সবচেয়ে বড় যেই অর্জন সেটা হচ্ছে, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে আমরা জোরালো এই বার্তা পৌঁছাতে পেরেছি যে, দেশের উলামা-মাশায়েখ ও ইসলামপন্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ছোটখাটো মতভেদ থেকে থাকলেও ইসলামের মৌলিক আক্বিদা-বিশ্বাস ও কৃষ্টিকালচারের উপর কোন আঘাত আসলে, সেক্ষেত্রে আমরা দ্রুত সময়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পড়ি এবং আমাদের অরাজনৈতিক কর্মসূচীর পক্ষে দলমত নির্বিশেষে বিশাল জনগোষ্ঠির জোরালো সমর্থন রয়েছে। সুতরাং যখনই ইসলাম ও মুসলমানদের আক্বীদা-বিশ্বাস ও কৃষ্টিকালচারের উপর আঘাত আসবে, তখনই হেফাজতে ইসলাম তৎপর ভূমিকা রাখবে। আমি জোরালো আশাবাদি, হেফাজতে ইসলামের অরাজনৈতিক এই আন্দোলন দেশের উলামা-মাশায়েখগণ স্থায়ীভাবে অব্যাহত রাখবেন।
প্রশ্নঃ ভবিষ্যতে দেশের কোন রাজনৈতিক সংকটে হেফাজতে ইসলাম ভূমিকা রাখবে কিনা?
আল্লামা শাহ আহমদ শফীঃ হেফাজতে ইসলাম মৌলিক অরাজনৈতিক নীতিমালা তথা ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদির বাইরে কোন রাজনৈতিক ভূমিকায় জড়াবে না।
No comments