নাবালিকা বলে...
‘মা জোর করে বিয়ে দিলে মরে যাবো।
আত্মহত্যা করবো। তবুও বিবাহিত হেলালকে বিয়ে করবো না।’ গ্রাম পুলিশের বাড়িতে
আশ্রয় নিয়ে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র লাকী তার ক্ষোভের কথা বললো। সে জানায়, মা
সিদ্ধান্ত না পাল্টালে মৃত্যুই হবে আমার একমাত্র পথ।
মৌলভীবাজার
সদর উপজেলার গিয়াসনগর মাঝপাড়া গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার মেয়ে সাকী ও লাকী।
দু’মাস আগে মারা যান তাদের পিতা সোনা মিয়া। লাকী জানান, তার পিতার মৃত্যুর
পরদিন বাড়িতে হাজির হন সম্পর্কীয় চাচাতো ভাই দু’সন্তানের জনক হেলাল আহমদ।
তার মা আমিনা বেগমের প্রশ্রয়ে থাকা হেলালের দৃষ্টি পড়ে দুই বোনের মধ্যে
অপেক্ষাকৃত সুন্দরী লাকী বেগমের ওপর। এক পর্যায়ে লাকী বেগমকে বিয়ে করার
বিনিময়ে সংসারের দায়িত্ব নিতে চায় হেলাল। কিন্তু অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী লাকি
ও তার বড় ভাই মোহন মিয়া (১৮) এর বিরোধিতা করে। লাকী জানায়, এতে তার মা
থেমে না থেকে ভেতরে ভেতরে নানা ফন্দি করেন। সমপ্রতি মোহন স্থানীয় এক মামলায়
আসামি হয়ে জেলে যায়। আমিনা বেগম লাকীকে জানান, তার ভাইকে ছাড়িয়ে আনতে হলে
তাকে কোর্টে যেতে হবে। কোর্ট ম্যারেজের উদ্দেশ্যে গত ২৫শে মার্চ লাকীকে
নিয়ে যান আমিনা বেগম ও হেলাল কোর্টে। সেখানে তাকে না বুঝতে দিয়ে কিছু কাগজে
সই নেন তার মা। লাকী জানায়, এক পর্যায় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে প্রবেশের সময়
তাকে কানে কানে বলেন ম্যাজিস্ট্রেট জিজ্ঞাসা করলে যেন বলে তার বয়স ১৮। তখন
লাকী তার মা ও কথিত চাচাতো ভাইয়ের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারে। লাকী জানায়,
ম্যাজিস্ট্রেট দেখেই বলেন, না ওর বয়স ১৮ হয়নি। ফলে সেখানে আর কোর্ট ম্যারেজ
হয়নি। কিন্তু বাড়ি এসে তার মা প্রতিবেশীদের নিকট মিথ্যা প্রচার করে তার
মেয়ে লাকীর বিয়ে হয়ে গেছে বলে। লাকীকে ২৬শে মার্চ সন্ধ্যায় তার মা বলেন
কোর্ট ম্যারেজ হয়ে গেছে এখন স্থানীয় কাজীকে দিয়ে বিয়ে পড়ানো হবে সন্ধ্যায়।
লাকী এর প্রতিবাদ করলে তাকে ঘরে আটকিয়ে রাখে তার মা। রাতে জানালা দিয়ে
পালিয়ে আসে লাকী গাড়ির নিচে পড়ে আত্মহত্যার পণ করে। এ সময় গিয়াসনগর ইউপির
সদস্য আমান আলীর মেয়েজামাই জনৈক করিম তাকে দেখে থামায় এবং তার বাড়িতে নিয়ে
রাখে। পরের দিন ইউপি মেম্বারের মধ্যস্থতায় লাকীর পিতার মামাতো ভাই একই
ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ করম উল্লার বাড়িতে রাখা হয়। সেখান থেকে নিয়ে আসার
জন্য লাকীর মা ও কথিত চাচাতো ভাই হেলাল কয়েক বার চেষ্টা করেছে এবং তার
সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেছে। করম উল্লা জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি আমার
দায়িত্ব পালন করছি। মেয়েটিকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি। তিনি জানান, গ্রামের
অনেক তরুণ যুবক এমনকি লাকীর সহপাঠীরাও তার মায়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে তাকে
এত কম বয়সে বিয়ে না দিতে। কিন্তু সে তার সিদ্ধান্তে অনড়। কথা হয় একই
গ্রামের লাকীর সহপাঠী কলি আক্তার, লাকীর বড় বোন সাকীসহ কয়েক জনের সঙ্গে।
তারা বলেন, বিষয়টি জানার পর তারা নানাভাবে বুঝিয়েছেন লাকীর মাকে। তিনি
তাদের কথা শুনতে চান না। তার এক কথা লাকীকে বিয়ে দিলে হেলাল সংসারের হাল
ধরবে। লাকীর সহপাঠী কলির পিতা মো. রাজু জানান, জানার পর থেকেই আমরা
নানাভাবে তার মাকে এ পথ থেকে সরাতে চেষ্টা করেছি। বলেছি বিয়ের বয়স হলে আমরা
চাঁদা তুলে মেয়েকে বিয়ে দেবো। কিন্তু তিনি আমাদের কথা শুনতে চান না। এদিকে
গ্রাম পুলিশ করম উল্লার বাড়িতে বসে গতকাল লাকী জানায়, তার মা সিদ্ধান্ত না
পাল্টালে সে মরে যাবে তবুও বিবাহিত ৪০ বছর বয়সী হেলালকে বিয়ে করবে না।
No comments