সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে by সাজেদুল হক
এ এক অদ্ভুত সময়। এখন জীবনের মূল্য সবচেয়ে
কম। এমনকি বৃক্ষের চেয়েও। বৃক্ষ নিধনের জন্য শোকের মাতম চলছে। তবে মানুষের
জন্য কোন শোক নয়। প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে মানুষ। বেশিরভাগই রাষ্ট্রীয়
বাহিনীর গুলিতে।
কখনও কখনও সরকারবিরোধীদের আগুনে, বোমায়।
শহরের বন্দর ফেরিয়ে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামে গ্রামে। বুলেট আঘাত হানছে
নির্জন পল্লীতে। মানবতার এ দুঃখী সময়ে পুরো বাংলাদেশই যেন আজ এক উত্তপ্ত
কড়াই। যে কড়াইয়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন ১৬ কোটি মানুষ। প্রতিনিয়ত জ্বলছেন তারা।
সংঘাতের রাজনীতি অবশ্য বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। তবে ২৮শে ফেব্রুয়ারির পর যা
হচ্ছে তা একেবারেই নতুন। থবাম হবস এমন এক সমাজের কথা বলেছেন যেখানে
মানুষের জীবন ছিলো বর্বর ও সংক্ষিপ্ত। সে পরিস্থিতির উত্তোরণে রাষ্ট্র নামক
প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছিলো। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রে এখন রাষ্ট্রীয়
বাহিনীগুলোই ট্রিগার হ্যাপী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তাদের সর্বোচ্চ পর্যায়
থেকে দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সর্বত্র অস্থিরতা আর আতঙ্ক।
প্রশ্ন একটাই- কি হচ্ছে? কি হচ্ছে? কি হচ্ছে? কি হচ্ছে? অবস্থাদৃষ্টে মনে
হচ্ছে এ প্রশ্নের উত্তর কারও কাছেই নেই। তবে সংকটের সমাধান যাদের হাতে তারা
লিপ্ত রয়েছেন বাহাসে। বাংলাদেশের গত তিন দশকের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ
নিশ্চিতভাবেই দুই নেত্রীর হাতে। কখনও কখনও তাদের সমালোচনায় মুখর হয়েছি
আমরা। কিন্তু তাতে তাদের কিছুই আসে যায়নি। গত কিছু দিনে দুই নেত্রী বিতর্কে
জড়িয়েছেন রাষ্ট্রের সবচেয়ে স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান সেনা বাহিনীকে নিয়ে।
রাজনীতিতে সেনা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও নতুন করে আলোচনা হচ্ছে। যদিও এ
আলোচনাও বাংলাদেশে নতুন নয়। দুই নেত্রীর সংলাপ নিয়েও আলোচনা চলছে সর্বত্র।
রাজনৈতিক বিষয়ে হাইকোর্টকেও রুল দিতে দেখা গেছে। তবে সংলাপ বটিকাতেই সব
সমস্যার সমাধান আছে তা মনে করছেন না পর্যবেক্ষকরা। আবদুল মান্নান ভূঁইয়া
এবং আবদুল জলিল দুই জনই এখন প্রয়াত। তাদের সংলাপের কথা কেউই ভুলেননি। সেসময়
প্রথমদিন সংলাপ শেষে দুই বন্ধু যখন বেরিয়ে আসলেন সাংবাদিকরা জানতে
চেয়েছিলেন কি নিয়ে আলোচনা হয়েছে? হাস্যজ্বল মান্নান ভূঁইয়া বলেছিলেন, সকল
বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সে সংলাপের ব্যর্থতা ডেকে এনেছিলো ওয়ান ইলাভেন। তাই
দুই নেত্রীর সংলাপের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন তাদের মধ্যে সমঝোতা। যে সমঝোতা
পর্দার আড়ালেও হতে পারে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সরকার পতনের
আন্দোলন শুরু করলেও সবাই জানেন তাদের মূল ইস্যু তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের দুঃখজনক মৃত্যু প্রেসিডেন্ট প্রশ্নে সমঝোতার
একটি পথ খুললেও ক্ষমতাসীনরা সে পথ মাড়াচ্ছেন না। বরং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা
বাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারেন এমন গুঞ্জণও ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে অতিদ্রুতই
সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে দুই নেত্রীকে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মত
স্পর্শকাতর ইস্যুরও আশু সমাধান জরুরি। না হয় আমাদের হবস কথিত সমাজেই ফিরে
যেতে হবে। যার পরিনতি কারও জন্যই ভালো হবে না। দুই নেত্রীর জন্যতো নয়ই।
No comments