নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির সবজি ও মাছের দর বাড়ছেই
ঘন ঘন হরতাল। অস্থির কাঁচা বাজার। লাফিয়ে
বাড়ছে সব পণ্যের দামই। হরতালে খুচরা বাজারে পড়েছে ব্যাপক প্রভাব। হরতালের
কারণে কাঁচা পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকায় আসছে কম। চালকরা ভয়ে গাড়ি নিয়ে বেরুতে
চায় না। আগে কাঁচমালের গাড়ি বললে ছেড়ে দিতো।
এখন ভাঙচুর ও
অগ্নিসংযোগ করে। বললেন, কাওরান বাজার কাঁচামাল সমিতির সভাপতি মো. ফারুক।
তিনি আরও বলেন, হরতালের সময় ভাড়াও দূরের গাড়িতে ৫-৬ হাজার টাকা বেশি নেয়।
আগে ঠাকুরগাঁও থেকে ১৮ হাজার টাকায় আসলেও এখন লাগে বড় গাড়িতে ২২ হাজার
টাকা। ফলে হরতাল হলে কিছু কিছু পণ্যে কেজিতে পাইকারি বাজারে ৩ থেকে ১০ টাকা
বাড়ে। তাদের করার কিছু থাকে না। তা খুচরা বাজারে এসে ৫-১৫ টাকা বৃদ্ধি
পায়। আবার কিছু পণ্যে দ্বিগুণও হয়ে যায়। লেবুর হালি (এলাচি) ৬০ টাকা। এক
মাস আগেও এই লেবু ছিল ২০-৩০ টাকা। কাঁচা মরিচ ১৫-২০ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে
৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি কাওরান বাজারে এই মরিচ ১৬ থেকে ২০
টাকায় কেনা যাচ্ছে- বললেন ব্যবসায়ী আলী হোসেন। সরবরাহ কম তাই দাম বাড়ছে
কাঁচা মরিচের। ঊবর্ধমুখী চালের দামের সঙ্গে এবার সবজি ও মাছের দরও বাড়ছে।
প্রকারভেদে মাছের কেজিতে ২৫ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এক মাস আগে দেশী
কৈ মাছের কেজি ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এখন তা ১০০ টাকা বেড়ে ৫০০-৬৫০ টাকায়
বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাস মাছের কেজি ২৫ টাকা বেড়ে ১৪০-১৭০ টাকা কেজি হয়েছে।
বাগদা চিংড়ি মাছ ১৫০ টাকা বেড়ে ৮০০ টাকা। যাত্রাবাড়ীর মতলব ফিস এজেন্সির
স্বত্বাধিকারী আবদুল জব্বার জানান, হাওরের মাছ কমে যাওয়ায় এখন দাম বেশি।
বর্ষার আগে দাম কমার আর সম্ভাবনা নেই। ব্যবসায়ীদের দাবি ঘন ঘন হরতাল,
রাস্তায় বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি এবং বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাপনায় সরকারের
দর্বল অবস্থার জন্য এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম
বৃদ্ধি ও পরিবহন খরচ বাড়ায় অন্যতম কারণ বলে তারা মনে করছেন। মূল্যবৃদ্ধিতে
নাভিশ্বাস উঠেছে স্বল্পআয়ের মানুষের। তাদের দাবি সব সরকারের সময়ই যাতে
হরতাল বন্ধ হয়। ক্রেতাদের বক্তব্য হলো সরকার বাজার মনিটরিং করছে না। খাদ্য
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খান জানিয়েছেন, তিন কারণে চালের দাম বেড়ে
গেছে। সরকারি মহলে চাল রপ্তানির কথা ওঠার পর থেকেই মিলাররা দাম বাড়িয়ে
দেন। এছাড়া শৈত্যপ্রবাহের থেকে তৈরি হওয়া কুয়াশার কারণে মিলাররা ধান শুকাতে
পারেননি। ফলে চাল ভাঙাতে পারেননি তারা। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে
যাওয়ার কারণে গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে চালের দাম বেড়ে গেছে বলে
মনে করছি। তবে বর্তমানে চালের বাজার অনেকটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। মোটা
চালসহ সব ধরনের চালের দাম খুচরা পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকারে প্রায় দুই মাস আগে
বেড়েছে কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১১ টাকা। ৩৬ টাকার নাজিরশাইল এখন ৪৬-৪৮ টাকা দরে
বিক্রয় হচ্ছে। একই রকম মিনিকেটে ৩৭ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ টাকা। মোটা
চাল ২৬-২৭ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৩৪ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দাম চড়া। দাম
কমতে পারে। বৈশাখ মাসে নতুন চাল আসলে। তার আগে নয়। গতকাল রাজধানীর পাইকারি ও
খুচরা বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে। কমেছে পিয়াজ, আদা, আমদানিকৃত মসুর
ডাল, চিনি ও নতুন আলুর দাম।
No comments