নিয়ম ভেঙে নারীদের পা ধোয়ালেন পোপ
পোপ হিসেবে দায়িত্ব পালনের শুরুতেই
গীর্জার প্রচলিত রীতি ভাঙলেন পোপ ফ্রান্সিস। বৃহস্পতিবার খ্রিষ্টানদের
পবিত্র দিন হলি থার্সডে উপলক্ষে রোমের একটি কিশোর সংশোধন কেন্দ্রের
অনুষ্ঠানে ১০ কিশোরের পাশাপাশি দুই কিশোরীর পা ধুইয়ে তিনি চুমু খেয়েছেন।
এতো
দিন এ ধরনের অনুষ্ঠান কেবল পুরুষদের জন্যই প্রযোজ্য ছিল। এর আগে কোন পোপই
নারীদের পা ধোয়ানোর মতো কাজ করেননি। তাই ফ্রান্সিসের এ কাজের সঙ্গে সঙ্গে
শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। রক্ষণশীল ও প্রকৃতিবাদীরা ফ্রান্সিসের উদাহরণকে
‘প্রশ্নবিদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেছেন। অবশ্য মুক্তমনারা একে গির্জার আরেকটি
অর্জন হিসেবেই দেখছেন। ক্যাসাল ডেল মার্মো নামে কিশোর সংশোধনাগারের
বাসিন্দাদের মধ্যে মুসলমান ও সনাতন খ্রিস্টানরাও ছিল। তাদের সবার বয়স ১৪
থেকে ২১ বছরের মধ্যে। তাদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে পোপ বলেন, যিশুও
ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার সন্ধ্যায় তার সেবা ও ভালবাসার প্রতীকস্বরূপ শিষ্যদের পা
ধুয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, এটা একটা প্রতীক, একটা চিহ্ন। তোমাদের পা ধুইয়ে
দেয়া মানে আমি তোমাদের সেবায় নিয়োজিত। যিশুর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পরস্পরকে
সেবা করার আহ্বান জানিয়ে পোপ বলেন, আমি আমার মন থেকে তোমাদের সেবা করি।
একজন যাজক ও বিশপ হিসেবে তোমাদের সেবা করা আমার কর্তব্য। অবশ্য এর আগেও
ফ্রান্সিস বিভিন্ন জেলখানা, হাসপাতাল, ধর্মশালায় নারীদের পা ধুয়ে দিয়েছেন।
ভ্যাটিকানের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ৭৬ বছর বয়সী ফ্রান্সিস পাথরের
মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে একটি রূপার পাত্র থেকে ১২ জন কিশোর-কিশোরীর পায়ে
পানি ঢালেন। তারপর একটি তোয়ালে দিয়ে তাদের পা মুছে উবু হয়ে পায়ে চুমু খান।
যিশু ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগে তার ১২ জন দূতের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন, যার অনুকরণে
প্রতি বছর হলি থার্সডের একটি অনুষ্ঠানে ১২ জন যাজকের পা ধুয়ে দেন
দায়িত্বরত পোপ। এটি সাধারণত রোমের জন ল্যাটারান প্রাসাদে অনুষ্ঠিত হয়।
এবারই প্রথম কোনো কিশোর সংশোধনাগারে আচারটি পালন করলেন নতুন পোপ ফ্রান্সিস,
পাশাপাশি ১০ জন কিশোরের সঙ্গে দুজন কিশোরীর পায়ে চুমু খেলেন। এর আগে কোনো
পোপ পুরুষপ্রধান এ অনুষ্ঠানে নারীদের পা ধুয়ে দেননি বা পায়ে চুমু খাননি।
রক্ষণশীলরা ফ্রান্সিসের এ কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও মুক্তমনারা একে ইতিবাচক
হিসেবেই দেখছেন। তাদের মতে, ধর্মচর্চায় যে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন ভেদাভেদ
নেই, সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে তা-ই প্রমাণ করেছেন পোপ ফ্রান্সিস।
No comments