জাতিসংঘে ইউনূসের সফল দৌত্যে চিন্তায় নয়াদিল্লি

বাংলাদেশের মাটিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়ন রুখতে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে ক্ষোভ বাড়ছে সাউথ ব্লকে। সে কারণে মুহাম্মদ ইউনূস চাইলেও জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে বৈঠক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এড়িয়ে গিয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর। তবে মোদীর সঙ্গে বৈঠক না হলেও আমেরিকার সিলমোহর নিয়ে সফল ভাবেই আন্তর্জাতিক দৌত্য সারলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। যা দিল্লির আশঙ্কা বাড়িয়েছে।

সাধারণ সম্মেলনে নিজে বক্তৃতা দেওয়ার পাশাপাশি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন, বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইউনূস। পাশাপাশি, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট, বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রধান এবং এডিবি-র শীর্ষকর্তার সঙ্গেও আলাদা করে আলোচনা হয়েছে তাঁর। এই সব আলোচনার মূল সূর একটাই। শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের সরকারি নেতৃত্বের প্রতি পশ্চিমি দুনিয়া এবং আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন এবং সহযোগিতা থাকবে ভবিষ্যতে। যে সহায়তার কৌশলগত, বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক ভূমিকা রয়েছে। এক কথায়, ভারতের প্রতি দ্বিপাক্ষিক নির্ভরতার জায়গা সঙ্কুচিত করাই এই মুহূর্তে ইউনূস সরকারের লক্ষ্য কি না, সেই প্রশ্নও উঠে আসছে কূটনৈতিক মহলে।

সাউথ ব্লকের চিন্তা বাড়িয়ে নিউ ইয়র্কে ইউনূসের দৌত্য তালিকা প্রসারিত হয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গেও। সূত্রের খবর, সার্ক-কে জাগিয়ে তোলা ও বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করা নিয়ে কথা হয় ইউনূস-শরিফের। কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, বিদেশ মন্ত্রক গত ১০০ দিনে কাজকর্মের খতিয়ানে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ না রাখলেও এই মুহূর্তে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্কের কৌশল রচনাই মোদী সরকারকে অগ্রাধিকারের মধ্যে রাখতে হবে।

পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বার্তা থেকে স্পষ্ট, বাংলাদেশ এখন তার নীতির কেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামীকে আরও বেশি করে রাখতে চাইছে। যা স্বস্তির নয় নয়াদিল্লির কাছে। আপাতত দু’টি বিষয় স্পষ্ট। এক, এই অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক বৈধতা পেয়ে গিয়েছে সে দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মধ্যে। দুই, ঢাকার সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক আগামী দিনে এগোলে তা নিয়ন্ত্রণ করার মতোকূটনৈতিক অস্ত্র এখনও ভারতের হাতে নেই। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতা দিয়েছেন ইউনূস। এই বার্তাই তিনি দিতে চেয়েছেন, ক্ষমতার বদল হলেও তাঁকে শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা ঠিক নয়। বাংলাদেশের জাতিসত্তার স্বকীয়তাতেই তিনি বিশ্বাসী।

সূত্র- আনন্দবাজার

mzamin

No comments

Powered by Blogger.