তিন দিন পর সচল আশুলিয়া মহাসড়ক
সাভারের আশুলিয়ায় সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে গত সোমবার থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত টানা ৫৪ ঘণ্টা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা। গতকাল দুপুর ১টার দিকে যৌথবাহিনীর আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এর আগে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা দফায় দফায় অবরোধকারী শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করেন। পরে দুপুর ১টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কারখানা মালিককে আটক করে পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে কারখানার সামনে অবস্থান নেয়। সোমবার সকাল ৯টার দিকে পাওনাদী পরিশোধের দাবিতে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কটি অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা। এই অবরোধের কারণে পার্শ্ববর্তী বাইপাইল আব্দুল্লাহপুর সড়ক ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছিলো। যানজটের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছিল ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক। আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বার্ডস গ্রুপের মালিককে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনরত শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন। এরপর সড়কটি যান চলাচল শুরু হয়েছে। অবরোধকারী শ্রমিকরা জানায়, আমরা টানা ৫৪ ঘণ্টা ধরে সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছি পাওনা পরিশোধের জন্য। কিন্তু কোনো পক্ষই আমাদের সঙ্গে কথা বলেনি। বুধবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয় বার্ডস গ্রুপের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যানজটের কারণে তাকে কারখানায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। রাস্তা ফাঁকা করতে হবে। এমন খবরে আমরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেছি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার লে-অফ করা বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকদের সার্ভিস বেনেফিট ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার দিন ধার্য করা ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ কোনো ধরনের পাওনাদী পরিশোধ না করে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এমনকি তিন মাস সময় চেয়ে কারখানার গেটে একটি নোটিশও সাঁটিয়ে দেন। সকল শ্রমিক পাওনাদী পাওয়ার আশায় সকালে কারখানায় গেলে নোটিশে আরও তিন মাস সময় চাওয়ার বিষয়টি দেখতে পায় শ্রমিকরা। এ সময় উত্তেজিত হয়ে সকল শ্রমিক নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বুড়িরবাজার রোড এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। অবরোধের টানা ৫৪ ঘণ্টা পর মালিককে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে সড়ক ছেড়ে দেয় শ্রমিকরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্ডস গ্রুপের এক শ্রমিক বলেন, আমাদের চুক্তির দিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিশ্বাসযোগ্য লোকজন ছিলেন। কিন্তু সেই চুক্তিও ভঙ্গ করেছে মালিকপক্ষ। ফলে আমরা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমাদের অনেক শ্রমিক চাকরি না পেয়ে গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। তারা বকেয়া পাওনাদীর জন্য গ্রাম থেকে আশুলিয়ায় এসেছেন। কিন্তু এখানে থাকা খাওয়ার কোনো জায়গা না থাকায় আমরা গত দুইদিন খেয়ে না খেয়ে রাস্তায় অবস্থান করি। এদিকে টানা তিন দিন পর নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক, বাইপাইল, আব্দুল্লাহপুর সড়ক ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটে আটকে থাকা হাজার হাজার যানবাহন সীমিত আকারে চলাচল শুরু করেছে। বিকাল নাগাদ যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে? আসবে বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগ। সকালে বাইপাইল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অবরোধের কারণে পার্শ্ববর্তী বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সবমিলিয়ে ৩ সড়কে প্রায় ৩০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজটের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক। এসব সড়কে বেশির ভাগই মালবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ব্যাংক ও স্বল্প সংখ্যক যাত্রীবাহী বাস রয়েছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানায়, চুক্তিমতো শ্রমিকদের বেতনের টাকা পরিশোধ করলেও ৩০শে সেপ্টেম্বর সার্ভিস বেনেফিটসহ ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানে আরও তিন মাস সময় চেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি। নির্ধারিত টাকা পরিশোধ না করায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এদিকে শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ না করলেও শ্রমিক নেতাদের প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা উৎকোচ হিসেবে প্রদান করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। অবরোধকারী শ্রমিকরা আরও জানায়, কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের পাওনা পরিশোধের তারিখ দিয়ে সেই তারিখ আবার পরিবর্তন করে ৩ মাস সময় বর্ধিত করেছে। এরইমধ্যে মালিক পক্ষের লোকজন কারখানার বিভিন্ন মেশিনারিজ ও ঝুটসহ মূল্যবান মালামাল বিক্রি করে দিয়েছে। এখনো কোটি কোটি টাকার মেশিন ভেতরে রয়ে গেছে। সেখানে আমাদের পাওনা মাত্র ২৬ কোটি টাকা। আমাদের বেতন পরিশোধের নির্দিষ্ট তারিখ দেয়ায় আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে আশুলিয়ায় এসেছিলাম। এখানে আমাদের থাকা-খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় রোদে পুড়ে এবং বৃষ্টিতে ভিজে মহাসড়কেই অবস্থান করেছি। অনেকেই ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে এখানে এসেছি। শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, একজন লোকের জন্য আমরা ছয়-সাত হাজার শ্রমিক তিন দিন ধরে রাস্তায়। সড়ক অবরোধের কারণে গাড়ি বন্ধ থাকায় আটকে পড়া পরিবহনে থাকা কাঁচামালসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা রাস্তা অবরোধ করে রাখতে চাই না। অবিলম্বে বার্ডস গ্রুপের মালিক মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করে আমাদের পাওনা পরিশোধ করা হোক। ঢাকা জেলা পুলিশের সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. শাহীনুর কবির বলেন, পুলিশ বিজিবি, র?্যাব ও সেনাবাহিনীর চেষ্টায় সড়কটিতে যান চলাচল শুরু হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ট্রাফিক পুলিশ কাজ শুরু করছে। কিছু সংখ্যক কারখানা ব্যতীত সকল কারখার উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল।
No comments