সৌদি আরবে তেল শোধনাগারের ওপর ড্রোন হামলা কিসের ইঙ্গিত
সৌদি আরবে চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন
দিয়ে দুটি তেল শোধনাগারের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। দুটি শোধনাগারই
রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল কোম্পানি আরামকোর পরিচালনাধীন।
অন্তত দশটি
ড্রোন ব্যবহার করে আবকাইক শোধনাগার এবং খুরাইস তেলক্ষেত্রের ওপর আক্রমণ
চালানো হলে এগুলোতে আগুন ধরে যায়, তবে সবশেষ খবরে সৌদি কর্মকর্তারা বলেছেন
দুটি স্থাপনাতেই আগুন নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে।
ইয়েমেনের হুতি
বিদ্রোহীরা বলছে, তারাই এ আক্রমণে চালিয়েছে এবং ভবিষ্যতে সৌদি আরবের ওপর
তাদের আক্রমণের আওতা আরো সম্প্রসারিত করা হবে।
হুতি বিদ্রোহীদের সাথে ইয়েমেনে সৌদি-নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের ২০১৫ সাল থেকে যুদ্ধ চলছে।
সৌদি
আরবের সরকারি প্রেস এজেন্সি জানায়, শনিবার ভোর চারটার দিকে
রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল কোম্পানি আরামকোর নিরাপত্তা দল - আবকাইক ও খুরাইসের
দুটি স্থাপনায় ড্রোন আক্রমণের ফলে সৃষ্ট আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে।
কারা এ আক্রমণের পেছনে আছে, বা এতে কতটা ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে সৌদি কর্মকর্তারা কোন মন্তব্য করেন নি।
সৌদি তেল স্থাপনার ওপর ড্রোন হামলা হয়েছে |
কিন্তু ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের একজন মুখপাত্র
আল-মাসিরা টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, তারা ১০টি ড্রোন ব্যবহার করে এই আক্রমণ
চালিয়েছেন, এবং ভবিষ্যতে আরো আক্রমণ চালানো হতে পারে।
২০১৫ সাল
থেকেই ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সাথে সৌদি-নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের লড়াই
চলছে, এবং গত কয়েক মাসে হুতি বিদ্রোহীরা সৌদি আরবের ভেতরে সামরিক
ঘাঁটিগুলোর ওপর অনেকগুলো ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
আবকাইকে
আক্রান্ত তেল শোধনাগারটি বিশ্বের বৃহত্তম এবং সেখান থেকে একশ কিলোমিটার
দূরের খুরাইস হচ্ছে সৌদি আরবের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেলক্ষেত্র।
খুরাইসে
বিশ্বের মোট চাহিদার ১ শতাংশ তেল উৎপন্ন হয়, আর আবকাইক তেল শোধনাগার
বিশ্বের সরবরাহের ৭ শতাংশ তেল যোগান দেবার ক্ষমতাসম্পন্ন।
এ আক্রমণে ক্ষতির পরিমাণ কত তার ওপর নির্ভর করে - আগামী সোমবার আন্তর্জাতিক বাজার খুললে তেলের দামের ওপর এর কী প্রভাব পড়বে।
ড্রোন হামলা
বিবিসির
প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক সংবাদদাতা জনাথান মার্কাস বলছেন, সর্বসাম্প্রতিক এই
হামলা থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে যে সৌদি আরবের তেল স্থাপনাগুলো হুতি
বিদ্রোহীদের দিক থেকে কৌশলগত হুমকির মুখে রয়েছে।
হুতিদের ড্রোন
আক্রমণ চালানোর দক্ষতা যেভাবে বাড়ছে তাতে এই বিতর্কটা আবার নতুন করে সামনে
চলে আসছে যে তাদের এই সক্ষমতা অর্জনের পেছনে কারা আছে।
তারা কি
বাণিজ্যিক পর্যায়ের বেসমারিক ড্রোনকে অস্ত্র ব্যবহারের উপযোগী করে
নিয়েছে, নাকি ইরানের বড়ধরনের সহায়তা তাদের পেছনে রয়েছে - এটাও একটা
প্রশ্ন।
মি: মার্কাস বলছেন, মি: ট্রাম্প সম্ভবত এর জন্য ইরানের
দিকেই সন্দেহের আঙুল তুলবেন, কিন্তু ড্রোন হামলার পেছনে ইরানের হাত কতখানি
তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
সৌদি বিমান বাহিনী কয়েক
বছর ধরে ইয়েমেনে লক্ষ্যবস্তুর ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে । এখন দেখা যাচ্ছে
অনেকটা সীমিত সক্ষমতার হলেও হুতিদের হাতেও পাল্টা হামলা চালানোর ক্ষমতা
তৈরি হয়েছে।
জনাথান মার্কস বলছেন, শক্তিধর মুষ্টিমেয় কিছু দেশের কাছেই একমাত্র সশস্ত্র ড্রোন পরিচালনার সক্ষমতা আছে - এমন দিন শেষ হয়ে গেছে।
ড্রোন প্রযুক্তি এখন আমেরিকা থেকে চীন, ইসরায়েল এবং ইরান,এমনকী হুতি
থেকে শুরু করে হেযবোল্লাদের হাতেও পৌঁছে গেছে, যদিও প্রযুক্তির মানের
হেরফের রয়েছে।
হুতি কারা?
ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেন সরকার এবং সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে লড়াই করছে।
ইয়েমেনে
যুদ্ধ চলছে ২০১৫ সাল থেকে। হুতিদের হামলার কারণে প্রেসিডেন্ট আবদ্রাববু
মনসুর হাদি রাজধানী সানা থেকে পালিয়ে যান ২০১৫ সালে।
প্রেসিডেন্ট
হাদির পেছনে রয়েছে সৌদি আরবের সমর্থন এবং হুতি বিদ্রোহীদের হঠাতে সৌদি আরব
ওই অঞ্চলের কিছু দেশ নিয়ে গঠিত একটি জোটে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এই
জোট ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে প্রায় প্রতিদিন বিমান হামলা
চালায়। হুতিরাও সৌদি আরবকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে।
হুতি
গোষ্ঠির একজন সামরিক মুখপাত্র মি: সারিয়া আল মাসিরাকে বলেছেন, সৌদি
লক্ষ্যবস্তুর ওপর তাদের আক্রমণ ''আরও বাড়বে এবং সৌদি আগ্রাসন ও অবরোধ
অব্যাহত থাকলে অতীতের তুলনায় এসব হামলা তাদের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ
হয়ে দাঁড়াবে''।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট নিয়মিত ইয়েমেনে হুতিদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালাচ্ছে |
No comments