ছিনতাইয়ের ফাঁদ যখন শিশু by পিয়াস সরকার
ফুটফুটে
শিশু নোমান। বয়স মাত্র ৮ মাস। নোমান ছিল আরেক শিশু ১২ বছর বয়সী রোকনের
কোলে। শুক্রবার রাত ৮টা। মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ার শপিং মলের বিপরীতে
প্রিন্স প্লাজার সামনে জটলা। এর মাঝে দেখা যায়, রোকন ও শিশু নোমানকে ঘিরে
আছে সবাই। রোকনকে অনেকেই মারছিল। মারের কারণে ভীত হয়ে যায় কোলের শিশুটি।
থেমে থেমে কান্নায় চোখ ভেজাচ্ছিলো। প্রিন্স প্লাজার সামন থেকে রাস্তা পার
হচ্ছিলেন দুই নারী।
রাস্তার ডিভাইডারে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। রোকন নোমানকে কোলে নিয়েই দুজনের পাশে দাঁড়িয়ে যায়। এরপর কৌশলে ভ্যানিটি ব্যাগের ভেতর থেকে বের করে নেয় পার্স। ঘটনাটি দেখেন জয়নুল আবেদীন নামে আরেকজন পথচারী। তবে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না ব্যাগ থেকে কিছু বের করে নিয়েছে কিনা। তিনি দ্রুত দুই নারীর কাছে গিয়ে ব্যাগের সব ঠিক আছে কিনা নিশ্চিত হতে বলেন। তখন তারা দেখেন একজনের পার্স নেই। আবার দ্রুত রাস্তা পার হন জয়নুল। দেখা যায়, বাচ্চা কোলে নিয়েই রোকন রিকশায় বসে আছে। যানজট থাকায় সহজেই ধরে ফেলেন জয়নুল। চুরি যাওয়া পার্সে ছিলো ২টি মোবাইল ও প্রায় ৭ হাজার টাকা।
এরপর রোশানলে পড়ে শৈশবে ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়া রোকন। হাতে নাতে ধরা পড়ে পিটুনির শিকার হয় সে। তবে কোলের শিশুর কারণে অনেকেই থামিয়ে দিচ্ছিলেন তাদের। মহিলা তার পার্স নিয়ে চলে যান। রোকন বারবার একই কথা বলে সকাল থেকে না খেয়ে থাকার কারণেই ছিনতাই করতে বাধ্য হয়েছে। কান্না করতে করতে সরল স্বীকারোক্তি রোকনের। এরই মাঝে প্রশ্ন ছোঁড়েন সবাই। কোলে থাকা শিশুটি কার?
রোকন জানায়, ওই শিশুটি তার বোনের ছেলে। কিন্তু চেহারা ও পোশাকের সঙ্গে কোনো মিল পাওয়া যায়নি। রোকনের কাছে বোনের মোবাইলফোন নম্বর চাইলে সে বলে মুখস্ত নেই। অন্য কারো নম্বর চাইলেও দিতে পারে না। তখনই সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। উৎসুকদের ধারণা, রোকন শিশুটি চুরি করেছে। অবশ্য অন্য কেউ কোলে নিলেই কেঁদে উঠছিলো নোমান। কিন্তু রোকনের কোলে গেলেই থেমে যাচ্ছে কান্না।
এবার আর দেরি না করে খবর দেয়া হয় পুলিশে। ঠিক তখনই চিত্র পাল্টে যায়। রোকনকে বাঁচানোর চেষ্টায় উঠেপড়ে লাগে দুই ব্যক্তি। তাদের ভাষ্য, রোকন ওই দুজনের পরিচিত। বাচ্চা তার বোনেরই। তবে কেউ দিতে পারছিলো না বাচ্চার মা বা বাবার মোবাইল নম্বর। মোহাম্মদপুর থানার উপ পরিদর্শক সানাউল হক ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় হুট করেই রোকনকে বাঁচাতে চাওয়া দুই ব্যক্তি ও রিকশা চালক সেখান থেকে সটকে পড়ে।
পুলিশ আসার সঙ্গে সঙ্গে রোকন সেই একই উত্তর দেয়। সে জানায় নোমান তার ভাগ্নে। এতক্ষণ বারবার প্রশ্ন করলেও বাড়ির ঠিকানা বলছিল না সে। শুধু বলছিল জেনেভা ক্যাম্পে থাকে। উপ পরিদর্শক সানাউল হক রোকনকে নিয়ে নোমানের বাড়িতে যান। সেখানে পাওয়া যায় নোমানের মাকে। তার নাম জোসনা বেগম। শিশুটি দীর্ঘ সময় পর পায় তার নিরাপদ স্থান মায়ের কোল। এই সময় প্রায় শতাধিক ক্যাম্পের লোকের ভিড় জমে যায়। জোসনা কোনোভাবেই শিশুটির সঙ্গে তার ছবি তুলতে দেননি। একবার ছবি তোলার চেষ্টা করতেই রীতিমতো ক্ষেপে যান।
কিন্তু শিশুটিকে নিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা শুনেও স্বাভাবিক লাগে সেই নারীকে। ভাবটা এমনই ছিল যেন, তিনি জানতেন। তার একমাত্র কোলের শিশুটিকে নিয়ে ভাই ছিনতাইয়ে নেমেছে। গতকালও জেনেভা ক্যাম্পে সরজমিন ঘুরে আসল ঘটনার তথ্য মিলে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই রোকন শৈশব থেকে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। কয়েকবার চুরি করে ধরাও খায়। একেক সময় একেক কৌশল অবলম্বন করে সে। ভাগ্নে নোমান জন্ম নেয়ার পর তাকে কোলে নিয়ে ছিনতাইয়ের অভিনব কৌশল গ্রহণ করে।
জেনেভা ক্যাম্প বাসিন্দাদের একজন বলেন, কয়েকদিন আগে এক নারীর ব্যাগ চুরি করার সময় ধরা পড়ে। তখন সে দাবি করে, না খেয়ে আছে দুজন। ভাগ্নের দুধ কেনার টাকা নেই। এভাবে ছলছাতুরির আশ্রয় নিয়ে সেই নারীর কাছ থেকে ১ হাজার টাকা আদায় করে নেয় রোকন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাসিন্দা আরো বলেন, কোলে বাচ্চা থাকায় অনেকেরই সন্দেহ হয় না। আর ধরা খেলেও বাচ্চাকে নিয়ে মিথ্যা বলে সহানুভূতি পায়।
আসলেই কী অভাবের তাড়নায় দিন কাটছে তাদের? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, রোকনের বোন জামাই মাংসের দোকানে কাজ করেন। আর্থিক অবস্থা খুব ভালো না হলেও না খেয়ে থাকতে হয় না। এটি মূলত অর্থ উপার্জনের একটি উৎস।
আরো জানা যায়, ছিনতাইয়ের সময় তার সঙ্গে থাকে আরো ২ থেকে ৩ জন। রোকন ছিনতাই করার পরপরই তা আরেকজনের হাতে দিয়ে দেয়। আর রিকশা কিংবা সিএনজি চালিত অটোরিকশার মাধ্যমে দ্রুত সটকে পড়ে ঘটনাস্থল থেকে। এছাড়া বিপদ থেকে রক্ষা করাও তাদের কাজ।
ছিনতাই করা মোবাইল কিংবা দামি জিনিস নিয়ে দ্রুত ঢুকে পড়ে ক্যাম্পে। নিরাপদ স্থানে আসার আগেই খুলে ফেলে সিমকার্ড। এরপর বেশ কিছুদিন লুকিয়ে রাখার পর সেই মোবাইল ফোন বিক্রি হয় পুরাতন মোবাইলের দোকানে। শিশু নিয়ে ছিনতাইয়ের বিষয়টি একেবারে নতুন একটি কৌশল। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ক্যাম্পে অনেক উপায়ে ছিনতাই বা মাদকের কারবার চললেও ছিনতাইয়ের এই ‘ট্রেন্ড’ একেবারেই নতুন। এমন ৪ থেকে ৫টি শিশু রয়েছে যাদের নিয়ে বিভিন্ন সময় ছিনতাই মিশনে নামে বড়দের একটি সক্রিয় গ্রুপ।
রাস্তার ডিভাইডারে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। রোকন নোমানকে কোলে নিয়েই দুজনের পাশে দাঁড়িয়ে যায়। এরপর কৌশলে ভ্যানিটি ব্যাগের ভেতর থেকে বের করে নেয় পার্স। ঘটনাটি দেখেন জয়নুল আবেদীন নামে আরেকজন পথচারী। তবে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না ব্যাগ থেকে কিছু বের করে নিয়েছে কিনা। তিনি দ্রুত দুই নারীর কাছে গিয়ে ব্যাগের সব ঠিক আছে কিনা নিশ্চিত হতে বলেন। তখন তারা দেখেন একজনের পার্স নেই। আবার দ্রুত রাস্তা পার হন জয়নুল। দেখা যায়, বাচ্চা কোলে নিয়েই রোকন রিকশায় বসে আছে। যানজট থাকায় সহজেই ধরে ফেলেন জয়নুল। চুরি যাওয়া পার্সে ছিলো ২টি মোবাইল ও প্রায় ৭ হাজার টাকা।
এরপর রোশানলে পড়ে শৈশবে ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়া রোকন। হাতে নাতে ধরা পড়ে পিটুনির শিকার হয় সে। তবে কোলের শিশুর কারণে অনেকেই থামিয়ে দিচ্ছিলেন তাদের। মহিলা তার পার্স নিয়ে চলে যান। রোকন বারবার একই কথা বলে সকাল থেকে না খেয়ে থাকার কারণেই ছিনতাই করতে বাধ্য হয়েছে। কান্না করতে করতে সরল স্বীকারোক্তি রোকনের। এরই মাঝে প্রশ্ন ছোঁড়েন সবাই। কোলে থাকা শিশুটি কার?
রোকন জানায়, ওই শিশুটি তার বোনের ছেলে। কিন্তু চেহারা ও পোশাকের সঙ্গে কোনো মিল পাওয়া যায়নি। রোকনের কাছে বোনের মোবাইলফোন নম্বর চাইলে সে বলে মুখস্ত নেই। অন্য কারো নম্বর চাইলেও দিতে পারে না। তখনই সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। উৎসুকদের ধারণা, রোকন শিশুটি চুরি করেছে। অবশ্য অন্য কেউ কোলে নিলেই কেঁদে উঠছিলো নোমান। কিন্তু রোকনের কোলে গেলেই থেমে যাচ্ছে কান্না।
এবার আর দেরি না করে খবর দেয়া হয় পুলিশে। ঠিক তখনই চিত্র পাল্টে যায়। রোকনকে বাঁচানোর চেষ্টায় উঠেপড়ে লাগে দুই ব্যক্তি। তাদের ভাষ্য, রোকন ওই দুজনের পরিচিত। বাচ্চা তার বোনেরই। তবে কেউ দিতে পারছিলো না বাচ্চার মা বা বাবার মোবাইল নম্বর। মোহাম্মদপুর থানার উপ পরিদর্শক সানাউল হক ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় হুট করেই রোকনকে বাঁচাতে চাওয়া দুই ব্যক্তি ও রিকশা চালক সেখান থেকে সটকে পড়ে।
পুলিশ আসার সঙ্গে সঙ্গে রোকন সেই একই উত্তর দেয়। সে জানায় নোমান তার ভাগ্নে। এতক্ষণ বারবার প্রশ্ন করলেও বাড়ির ঠিকানা বলছিল না সে। শুধু বলছিল জেনেভা ক্যাম্পে থাকে। উপ পরিদর্শক সানাউল হক রোকনকে নিয়ে নোমানের বাড়িতে যান। সেখানে পাওয়া যায় নোমানের মাকে। তার নাম জোসনা বেগম। শিশুটি দীর্ঘ সময় পর পায় তার নিরাপদ স্থান মায়ের কোল। এই সময় প্রায় শতাধিক ক্যাম্পের লোকের ভিড় জমে যায়। জোসনা কোনোভাবেই শিশুটির সঙ্গে তার ছবি তুলতে দেননি। একবার ছবি তোলার চেষ্টা করতেই রীতিমতো ক্ষেপে যান।
কিন্তু শিশুটিকে নিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা শুনেও স্বাভাবিক লাগে সেই নারীকে। ভাবটা এমনই ছিল যেন, তিনি জানতেন। তার একমাত্র কোলের শিশুটিকে নিয়ে ভাই ছিনতাইয়ে নেমেছে। গতকালও জেনেভা ক্যাম্পে সরজমিন ঘুরে আসল ঘটনার তথ্য মিলে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই রোকন শৈশব থেকে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। কয়েকবার চুরি করে ধরাও খায়। একেক সময় একেক কৌশল অবলম্বন করে সে। ভাগ্নে নোমান জন্ম নেয়ার পর তাকে কোলে নিয়ে ছিনতাইয়ের অভিনব কৌশল গ্রহণ করে।
জেনেভা ক্যাম্প বাসিন্দাদের একজন বলেন, কয়েকদিন আগে এক নারীর ব্যাগ চুরি করার সময় ধরা পড়ে। তখন সে দাবি করে, না খেয়ে আছে দুজন। ভাগ্নের দুধ কেনার টাকা নেই। এভাবে ছলছাতুরির আশ্রয় নিয়ে সেই নারীর কাছ থেকে ১ হাজার টাকা আদায় করে নেয় রোকন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাসিন্দা আরো বলেন, কোলে বাচ্চা থাকায় অনেকেরই সন্দেহ হয় না। আর ধরা খেলেও বাচ্চাকে নিয়ে মিথ্যা বলে সহানুভূতি পায়।
আসলেই কী অভাবের তাড়নায় দিন কাটছে তাদের? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, রোকনের বোন জামাই মাংসের দোকানে কাজ করেন। আর্থিক অবস্থা খুব ভালো না হলেও না খেয়ে থাকতে হয় না। এটি মূলত অর্থ উপার্জনের একটি উৎস।
আরো জানা যায়, ছিনতাইয়ের সময় তার সঙ্গে থাকে আরো ২ থেকে ৩ জন। রোকন ছিনতাই করার পরপরই তা আরেকজনের হাতে দিয়ে দেয়। আর রিকশা কিংবা সিএনজি চালিত অটোরিকশার মাধ্যমে দ্রুত সটকে পড়ে ঘটনাস্থল থেকে। এছাড়া বিপদ থেকে রক্ষা করাও তাদের কাজ।
ছিনতাই করা মোবাইল কিংবা দামি জিনিস নিয়ে দ্রুত ঢুকে পড়ে ক্যাম্পে। নিরাপদ স্থানে আসার আগেই খুলে ফেলে সিমকার্ড। এরপর বেশ কিছুদিন লুকিয়ে রাখার পর সেই মোবাইল ফোন বিক্রি হয় পুরাতন মোবাইলের দোকানে। শিশু নিয়ে ছিনতাইয়ের বিষয়টি একেবারে নতুন একটি কৌশল। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ক্যাম্পে অনেক উপায়ে ছিনতাই বা মাদকের কারবার চললেও ছিনতাইয়ের এই ‘ট্রেন্ড’ একেবারেই নতুন। এমন ৪ থেকে ৫টি শিশু রয়েছে যাদের নিয়ে বিভিন্ন সময় ছিনতাই মিশনে নামে বড়দের একটি সক্রিয় গ্রুপ।
No comments