ট্রাম্প পয়েন্টে বৃটিশ রাজনীতি by লুক ম্যাকগি
বলা
হয়ে থাকে, যার পক্ষে সেরা আইনজীবীরা আছে ব্রেক্সিট ঠিক তার পরিকল্পনা মতোই
হবে। তাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বেরিয়ে আসার দিন যত ঘনিয়ে আসছে
দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকারকে তত বেশি সময় আদালতে দিতে হচ্ছে।
গত বুধবার স্কটল্যান্ডের সর্বোচ্চ আদালত জনসন সরকারের পার্লামেন্ট স্থগিতের
আদেশকে বেআইনি ঘোষণা করে রায় দিয়েছে। এতে বলা হয়, পার্লামেন্টকে অযৌক্তিক
উদ্দেশ্যে কোণঠাসা করার লক্ষেই এমন স্থগিতাদেশ দিয়েছে সরকার।
এর অর্থ হচ্ছে, আদালত মনে করে চুক্তির মধ্য দিয়ে হোক বা চুক্তিহীন হোক আগামী ৩১শে অক্টোবরই ব্রেক্সিট সমপাদনের জন্য পার্লামেন্ট স্থগিত করে দিতে চেয়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী। আগামী মঙ্গলবার লন্ডনের সর্বোচ্চ আদালতে এ মামলার শুনানি হবে। সেখানে থাকা ৯ বিচারপতির মধ্যে বেশিরভাগ যদি স্কটিশ রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেন তাহলে এটি হতে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত বরিস জনসনের জন্য সবথেকে বড় পরাজয়।
এ ছাড়া আদালতে আরেকটি পরাজয়ের পথে আছে জনসন সরকার। বৃটেনের সবথেকে ছোটো অংশ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের কাছে ব্রেক্সিট কোনো খেলা না। বৃটেনের চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট বিখ্যাত গুড ফ্রাইডে শান্তিচুক্তির লঙ্ঘন কিনা এ প্রশ্নে বৃহসপতিবার নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের একটি আদালত রায় দিয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার এটি আবারো আদালতে উঠতে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে সেদিনই এই মামলা মিটে যাবে। বৃটেনের অংশ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের অবস্থান ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র আয়ারল্যান্ডের পাশেই। ফলে চুক্তিবিহীনভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এলে বৃটেনের এই অংশের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের সীমান্তে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
তবে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে তা গুড ফ্রাইডে শান্তি চুক্তির লঙ্ঘন হবে এমন দাবি মানতে নারাজ বৃটিশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, উভয় রাষ্ট্র এই সীমান্তে যেকোনো ধরনের সংঘর্ষ এড়িয়ে চলবে। তবে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের পর আইনগতভাবে এটি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেটি এখনো সপষ্ট নয়। এখন আগামী মঙ্গলবার দুই আদালতে যে রায় দেয়া হবে তার একটি বা দুটিই সরকারের বিরুদ্ধে যেতে পারে। কিন্তু রায় যা-ই হোক না কেন, জনসন সরকারের বিরুদ্ধে যে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে তা ক্রমাগত বাড়তে থাকবে বলেই ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে সত্যিকারের রায় নির্ধারণ করবে জনগণের আদালত। এটি এখন অনেকটাই সপষ্ট যে বৃটেন একটি সাধারণ নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। বেশির ভাগই মনে করেন একমাত্র একটি নির্বাচনই পারে ব্রেক্সিটকে বিলম্বিত করতে। আমরা জানি যে, জনসন সরকারের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা এমন একটি টিকিট ব্যবহার করতে চান যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামেপর খেলার ধরন থেকে খুব বেশি আলাদা না। শেষ পর্যন্ত যদি ব্রেক্সিট বিলম্বিত করতে আইনগতভাবেই বরিস জনসনকে চাপ দেয়া হয় তাহলে তিনি বলবেন, আমি ব্রেক্সিটের জন্য সবকিছু চেষ্টা করেছি কিন্তু অন্য রাজনীতিবিদরা আমাকে তা করতে দেয়নি। আইনজীবী, প্রশাসন এবং বিচারপতিরা আমাকে থামিয়ে দিয়েছে। কথাগুলো পরিচিত লাগছে না?
স্কটল্যান্ডের আদালতে পার্লামেন্ট স্থগিতাদেশকে বেআইনি ঘোষণা করার পর জনসন সরকারের এক মন্ত্রী জাতীয় টেলিভিশনে বলেন, বিচারকদের পক্ষপাতমূলক রায় নিয়ে দেশের অনেক মানুষ এখন প্রশ্ন করতে শুরু করেছে। আমি না দেশের অনেক মানুষই এখন বলছে বিচারকরা পক্ষপাতদুষ্ট। পরোক্ষভাবে বিতর্কিত ইস্যুগুলোতে কথা বলার এমন ধরনকে ডনাল্ড ট্রামেপর সমর্থকরা অবশ্যই বুঝতে পারবে।
পরদিন বৃটেনের কিছু সংবাদপত্র আরো একধাপ এগিয়ে গিয়ে বিচারকদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি দুর্বল বলে আখ্যায়িত করলো। ২০১৬ সালে যখন বিচারকরা একটি গণভোটের জন্য রায় দিয়েছিলেন তখনো এই সংবাদপত্র বিচারকদের জনগণের শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। বর্তমানে বৃটেনের রাজনীতি যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে তা অনেকটা হওয়ারই কথা ছিল। ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটের ৩ বছর পরও ইইউ থেকে বৃটেনের বেরিয়ে যেতে ব্যর্থতা দেশটির বিষাক্ত রাজনৈতিক তর্ককে আরো বিভক্ত করে দিয়েছে। কিছু কিছু ব্রেক্সিটপন্থি তাই ব্রেক্সিট নিয়ে এত বেশি উৎসাহী হয়ে উঠছেন যে, একটি চুক্তির ভিত্তিতে ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তারা অপেক্ষা করতে পারছেন না। আবার অন্যরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্রেক্সিট বন্ধে কাজ করে যাচ্ছে।
বরিস জনসনকে এখনি বৃটেনের ডনাল্ড ট্রামপ আখ্যা দেয়া ঠিক হবে না। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের দিকে তাকালে দেখা যায়, তিনি সবসময়ই ডানপন্থি পপুলিস্টদের থেকে উদার আন্তর্জাতিকতাবাদী রাজনীতির কাছাকাছি ছিলেন। তবুও তার বিরোধীরা তাকে ট্রামেপর সূত্র ধরে যে আক্রমণ করছেন তা তাদের জন্য কার্যকরী। বরিস জনসনকে ট্রাম্পের সঙ্গে যেভাবে তুলনা করা হচ্ছে তা হয়ত সত্যি না। কিন্তু ব্রেক্সিট নিয়ে বিতর্ক এখন এতই বিষাক্ত হয়ে উঠেছে যে এই পরিস্থিতিকে ট্রামেপর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করাই যায়। এভাবে দেখলে, বৃটেন এখন একটি ট্রামপময় সময় পার করছে।
(সিএনএন থেকে অনূদিত)
এর অর্থ হচ্ছে, আদালত মনে করে চুক্তির মধ্য দিয়ে হোক বা চুক্তিহীন হোক আগামী ৩১শে অক্টোবরই ব্রেক্সিট সমপাদনের জন্য পার্লামেন্ট স্থগিত করে দিতে চেয়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী। আগামী মঙ্গলবার লন্ডনের সর্বোচ্চ আদালতে এ মামলার শুনানি হবে। সেখানে থাকা ৯ বিচারপতির মধ্যে বেশিরভাগ যদি স্কটিশ রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেন তাহলে এটি হতে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত বরিস জনসনের জন্য সবথেকে বড় পরাজয়।
এ ছাড়া আদালতে আরেকটি পরাজয়ের পথে আছে জনসন সরকার। বৃটেনের সবথেকে ছোটো অংশ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের কাছে ব্রেক্সিট কোনো খেলা না। বৃটেনের চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট বিখ্যাত গুড ফ্রাইডে শান্তিচুক্তির লঙ্ঘন কিনা এ প্রশ্নে বৃহসপতিবার নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের একটি আদালত রায় দিয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার এটি আবারো আদালতে উঠতে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে সেদিনই এই মামলা মিটে যাবে। বৃটেনের অংশ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের অবস্থান ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র আয়ারল্যান্ডের পাশেই। ফলে চুক্তিবিহীনভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এলে বৃটেনের এই অংশের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের সীমান্তে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
তবে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে তা গুড ফ্রাইডে শান্তি চুক্তির লঙ্ঘন হবে এমন দাবি মানতে নারাজ বৃটিশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, উভয় রাষ্ট্র এই সীমান্তে যেকোনো ধরনের সংঘর্ষ এড়িয়ে চলবে। তবে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের পর আইনগতভাবে এটি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেটি এখনো সপষ্ট নয়। এখন আগামী মঙ্গলবার দুই আদালতে যে রায় দেয়া হবে তার একটি বা দুটিই সরকারের বিরুদ্ধে যেতে পারে। কিন্তু রায় যা-ই হোক না কেন, জনসন সরকারের বিরুদ্ধে যে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে তা ক্রমাগত বাড়তে থাকবে বলেই ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে সত্যিকারের রায় নির্ধারণ করবে জনগণের আদালত। এটি এখন অনেকটাই সপষ্ট যে বৃটেন একটি সাধারণ নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। বেশির ভাগই মনে করেন একমাত্র একটি নির্বাচনই পারে ব্রেক্সিটকে বিলম্বিত করতে। আমরা জানি যে, জনসন সরকারের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা এমন একটি টিকিট ব্যবহার করতে চান যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামেপর খেলার ধরন থেকে খুব বেশি আলাদা না। শেষ পর্যন্ত যদি ব্রেক্সিট বিলম্বিত করতে আইনগতভাবেই বরিস জনসনকে চাপ দেয়া হয় তাহলে তিনি বলবেন, আমি ব্রেক্সিটের জন্য সবকিছু চেষ্টা করেছি কিন্তু অন্য রাজনীতিবিদরা আমাকে তা করতে দেয়নি। আইনজীবী, প্রশাসন এবং বিচারপতিরা আমাকে থামিয়ে দিয়েছে। কথাগুলো পরিচিত লাগছে না?
স্কটল্যান্ডের আদালতে পার্লামেন্ট স্থগিতাদেশকে বেআইনি ঘোষণা করার পর জনসন সরকারের এক মন্ত্রী জাতীয় টেলিভিশনে বলেন, বিচারকদের পক্ষপাতমূলক রায় নিয়ে দেশের অনেক মানুষ এখন প্রশ্ন করতে শুরু করেছে। আমি না দেশের অনেক মানুষই এখন বলছে বিচারকরা পক্ষপাতদুষ্ট। পরোক্ষভাবে বিতর্কিত ইস্যুগুলোতে কথা বলার এমন ধরনকে ডনাল্ড ট্রামেপর সমর্থকরা অবশ্যই বুঝতে পারবে।
পরদিন বৃটেনের কিছু সংবাদপত্র আরো একধাপ এগিয়ে গিয়ে বিচারকদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি দুর্বল বলে আখ্যায়িত করলো। ২০১৬ সালে যখন বিচারকরা একটি গণভোটের জন্য রায় দিয়েছিলেন তখনো এই সংবাদপত্র বিচারকদের জনগণের শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। বর্তমানে বৃটেনের রাজনীতি যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে তা অনেকটা হওয়ারই কথা ছিল। ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটের ৩ বছর পরও ইইউ থেকে বৃটেনের বেরিয়ে যেতে ব্যর্থতা দেশটির বিষাক্ত রাজনৈতিক তর্ককে আরো বিভক্ত করে দিয়েছে। কিছু কিছু ব্রেক্সিটপন্থি তাই ব্রেক্সিট নিয়ে এত বেশি উৎসাহী হয়ে উঠছেন যে, একটি চুক্তির ভিত্তিতে ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তারা অপেক্ষা করতে পারছেন না। আবার অন্যরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্রেক্সিট বন্ধে কাজ করে যাচ্ছে।
বরিস জনসনকে এখনি বৃটেনের ডনাল্ড ট্রামপ আখ্যা দেয়া ঠিক হবে না। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের দিকে তাকালে দেখা যায়, তিনি সবসময়ই ডানপন্থি পপুলিস্টদের থেকে উদার আন্তর্জাতিকতাবাদী রাজনীতির কাছাকাছি ছিলেন। তবুও তার বিরোধীরা তাকে ট্রামেপর সূত্র ধরে যে আক্রমণ করছেন তা তাদের জন্য কার্যকরী। বরিস জনসনকে ট্রাম্পের সঙ্গে যেভাবে তুলনা করা হচ্ছে তা হয়ত সত্যি না। কিন্তু ব্রেক্সিট নিয়ে বিতর্ক এখন এতই বিষাক্ত হয়ে উঠেছে যে এই পরিস্থিতিকে ট্রামেপর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করাই যায়। এভাবে দেখলে, বৃটেন এখন একটি ট্রামপময় সময় পার করছে।
(সিএনএন থেকে অনূদিত)
No comments