বানিয়াচংয়ের জলাবদ্ধতা দেখার কেউ নেই by মখলিছ মিয়া
বানিয়াচং
সদরের প্রধান সড়ক ও বাজারগুলোতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে সামান্য
বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। হালকা বৃষ্টি হলেও সড়কে পানি জমে চলাচলে
চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। আর একটু ভারি বর্ষণ হলে তো বাজারসহ বিভিন্ন
রাস্তায় হাঁটু সমান পানি জমে থাকে এবং দোকানপাঠসহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে
পানি ঢুকে পড়ে। বর্তমান সময়ে বানিয়াচংয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে
জলাবদ্ধতা। ভূমি খেকোরা খাল-নালা দখল করে ভরাট ও পরিকল্পিত ড্রেনেজ
ব্যবস্থা না থাকায় সড়ক পথ এমনকি বাজারের অলিগলি পর্যন্ত জলমগ্ন হয়ে পড়ছে।
এতে জন দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে। গত অর্ধযুগ ধরে বানিয়াচংয়ে গড়ের খাল ও
সুনারু খাল দখলের রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ
ভূমিখেকো গ্রাস করে ফেলেছে। গত কয়েক বছর আগে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে কিছু
জায়গা দখল মুক্ত করা হলেও আবারও তা বেদখল হয়ে গেছে। ফলে বিশাল বানিয়াচং
গ্রামের পানি নিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই অনেক
রাস্তা জলমগ্ন হয়ে যানবাহন ও জন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বানিয়াচং সদরের নতুন
বাজার, হাসপাতাল সড়ক, বড়বাজার, জনাব আলী কলেজ সড়ক, আদর্শ বাজার সড়ক, বড়
বাজারের পোস্ট অফিস রোড, শহীদ মিনার রোড, দারুল কোরআন মাদরাসা রোড এবং
দোকানটুলা রোড, বড়বাজার এবং ৫/৬নং বাজাররোডসহ বেশ কয়েকটি রাস্তা একেবারেই
নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই এসব রাস্তায় পানি জমে জলাবদ্ধতা
তৈরি হয়। ফলে জনদুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। এই জলমগ্নতার কারণে পাকা রাস্তাগুলো
দ্রুত নষ্ট হয়ে খানাখন্দকের সৃষ্টি হচ্ছে। এলজিইডি প্রতি বছরই সড়কগুলোতে
সংস্কারের কাজ করছে। এতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। শুধু শুধু সরকারের
বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছা যাচ্ছে। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে না তোলে
এলজিইডি এসব বিচ্ছিন্ন কাজে অনেকেই প্রশ্ন তোলছেন। পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম
বানিয়াচংয়ের খাল-বিলগুলো এক শ্রেণির ভূমি খেকোর দখলে চলে গেছে। এগুলো ভরাট
হওয়ার ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই ঐতিহ্যবাহী গ্রামের বিভিন্ন জনপদে জলাবদ্ধতা
সৃষ্টি হচ্ছে। চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এখানকার জনসাধারণ। এ দিকে বড়বাজারের
পশ্চিমের দোকানটুলা সংলগ্ন রাস্তাটি অবস্থা একেবারেই নাজেহাল। সামান্য
বৃষ্টি হলেই এ এলাকার হাজার হাজার মানুষের চলাচলের রাস্তাটি প্রায় বন্ধ
হওয়ার উপক্রম হয়। সামান্য একটি ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এ রাস্তাটি
সামান্য বৃষ্টি হলেই জলে একাকার হয়ে যায়। দ্রুত এ রাস্তাটির পানি
নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে অত্রালাকার হাজার হাজার মানুষের চলাচলের
রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া জরুরি। এছাড়া বড়বাজারের মেইন রোড থেকে ১০০
গজ দূরবর্তী নতুনবাজার অভিমুখী রাস্তায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায়
নতুন রাস্তাটি ভেঙ্গে মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সব সময়ই বৃষ্টির
পানি জমে থাকে এবং স্যাঁত স্যাঁতে অবস্থা বিরাজ করছে। বড়বাজার হতে আদর্শ
বাজার রোডে ও বড়বাজার আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায়
যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে রাস্তায় ময়লা আবর্জনা, কাঁদা ও পানি জমে
থাকে। এতে বাজার ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসাধারণ চরম দূুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
দীর্ঘদিন ধরে এসব স্থানের এ অবস্থা দেখে মনে হয় দেখার যেন কেউ নেই। এ বিষয়ে
উপজেলা পরিষদের চেয়রাম্যান শেখ বশির আহমদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি
জানান, যে সকল রাস্তায় কাজ করা হবে, সেসব রাস্তার কাজের পাশাপামি ড্রেনেজ
ব্যবস্থাও থাকা দরকার। তিনি আক্ষেপ করে আরো জানান, আমি নিজে বেশ কয়েকটি
রাস্তায় ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ কাজ করার সুপারিশ করেছি। কর্তৃপক্ষ রাস্তার কাজ
অনুমোদন করলেও ড্রেনের কাজের অনুমোদন দেয়নি। ফলে ওই সকল রাস্তা মেরামত
হলেও অল্প দিনের মধ্যেই আবার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। তিনি আরো জানান,
দ্রুত সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে প্রভাবশালীদের কবল থেকে খালগুলো
পুনরুদ্ধার করতে না পারলে বানিয়াচংয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার
আশঙ্কা রয়েছে। জনস্বার্থ বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ বিষয়ে এখনই
উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় জনবিস্ফোরণ ঘটার সমূহ সম্ভাবনা
রয়েছে।
No comments