ম্যাক্রোন ও ফুটবল
ফরাসি
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোন তখন শিশু। বেড়ে উঠছেন ফ্রান্সের
উত্তরাঞ্চলীয় শহর আমিয়েনসে। দক্ষিণের একটি ক্লাব অলিম্পিক ডি মার্সেল তখন
তার কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৯৩ সালে ওই ক্লাবটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লীগ
বিজয়ী হয়। এই ক্লাবের ক্যাপ্টেন অবশ্যই ছিলেন দিদিয়ে ডেশ্যাম্পস।
এবার ১৫ই জুলাই। রাশিয়াতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। তার মাঝে বিশ্বকাপ বিজয়ী ফ্রান্সের হাতে তুলে দেয়া হবে কাপ। এখানেই তিনি সেই ডেশ্যাম্পসকে শক্ত করে আলিঙ্গন করেছিলেন। এই সেই ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি দলের ক্যাপ্টেন। এখন তিনি চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স দলের ম্যানেজার।
মস্কোতে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারানোর পর ফ্রান্সে অভূতপূর্ব সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে জাতীয় দলকে। সূর্য ডোবা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্যারিসে ঢল নামে লাখ লাখ মানুষের। মেট্রোতে উপচে পড়ছিল মানুষ। এখানে ওখানে, বাসস্টপেজে- সর্বত্র শুধু মানুষ আর মানুষ। আতশবাজি, আলোকসজ্জা তো চলতেই থাকে। রাজধানী প্যারিস যেন গাড়িশূন্য হয়ে গিয়েছিল। চারদিকে শুধু তিন রঙা ফরাসি পতাকা উড়ছিল। মানুষের মুখে মুখে বিজয়ের গান। সোমবার বিকালে ফরাসি টিম চ্যাম্পস এলিসি প্রদক্ষিণ করে ছাদখোলা একটি বাসে। এরপরই তাদেরকে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে অভ্যর্থনা জানান প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোন। তাদের হৃদয় প্রশস্ত হয়ে গেছে। তারা ইতিহাস নির্মাণ করেছেন। একই সঙ্গে খেলোয়াড় এবং ম্যানেজার হিসেবে তৃতীয় ব্যক্তি হলেন ডেশ্যাম্পস।
প্যারিসের পাশে বন্ডির বানলিউতে বেড়ে উঠেছে তরুণ তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলায় টিনেজার হিসেবে পেলের পর গোল করা তিনিই দ্বিতীয় খেলোয়াড়। ফুটবল পাগল প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোন, খেলা চলাকালে প্রেসিডেন্সিয়াল বক্সে তার আনন্দকে ধরে রাখতে পারেন নি। তার কাছে ফুটবল শুধু একটি স্পোর্টসের চেয়ে বেশি কিছু। তিনি ছাত্র থাকা অবস্থায় লেফট-ব্যাক হিসেবে খেলতেন। তাই তিনি খেলাকে উপভোগ করেছেন। তিনি প্যারিসের সারসিলি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরু করেছিলেন। সেখানে কিশোর ফুটবলারদের সঙ্গে তিনি বলে লাথি দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছিলেন। হ্যাঁ, ফুটবল তার কাছে অন্য অর্থও বহন করে। নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক বিজয়ের জন্য তিনি ফুটবলকে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠতে পারে। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স যখন বিশ্বকাপ জেতে তখন প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক। ওই সময়ে আগস্ট মাসে তার জনপ্রিয়তা শতকরা ৪৫ থেকে বেড়ে ৫৯ ভাগে উঠে যায়। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পরবর্তী দেড় বছর পর্যন্ত এই জনপ্রিয়তা শতকরা ৫০ ভাগের উপরে ছিল।
ইমানুয়েল ম্যাক্রোনের জন্য এই বিজয় একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এরই মধ্যে। বলা হচ্ছে, তার চেয়ে যারা কম সৌভাগ্যবান তাদেরকে তিনি তেমন গণ্য করছেন না। এ ছাড়া রাজনৈতিক কারণ তো আছেই। ফ্রান্সে ফুটবল সামাজিক গতি নির্ধারণ করে। এবং তা তিনি প্রমাণ করেছেন। গত বছর নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি মার্সেইলিতে বলেছিলেন, যারা বানউরিয়াস থেকে সরে যেতে চাইছেন সেখানে ‘স্পোর্টস কিলস হাউজ অ্যারেস্ট’। গ্রেটার প্যারিসকে ঘিরে রেখেছে হাউজিং এস্টেটগুলো। বেশির ভাগ অভিবাসী বংশোদ্ভূত মানুষের বসবাস এখানে। স্কুল পরবর্তী বিভিন্ন ফুটবল ক্লাবের মধ্যে এখানে রয়েছে চমৎকার নেটওয়ার্ক। এসব ক্লাবই হয়ে উঠেছে জাতীয় টিমের বিশাল একটি স্থান। প্রশিক্ষণ এবং মেধা হলো ম্যাক্রোনের দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রে। কীভাবে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় সেই দৃষ্টিভঙ্গি। এক্ষেত্রে ফুটবল একটি উল্লেখ করার মতো প্রতীক।
দ্বিতীয় কারণ হলো, টিমটি নিজেরাই ফ্রান্সের জন্য একটি প্রচারক হয়ে উঠেছে। ১৯৯৮ সালেও এ দেশটি বহু সংস্কৃতির মানুষের হয়ে উঠবে সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত ছিল না। তখন টিমকে বলা হতো ‘ব্লাক, ব্লাংক, বিউর’ হিসেবে।
আট বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ ফুটবলে ফরাসি পক্ষ বড় এক ইগো নিয়ে বসলো। প্রশিক্ষণ সেশনের সময় তারা ধর্মঘটে গেল। তারপর তারা বিশ্বকাপে গেল এবং টুর্নামেন্ট থেকে আউট হয়ে যায়। এ বছর ডেশ্যাম্পস পছন্দের মতো খেলোয়াড়দের নিয়ে নিলেন। খেলার পরে ড্রেসিংরুমে তারা ছিলেন সুশৃঙ্খল। ফ্রান্সকে তো সবটুকু দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কথা বলেছিলেন এমবাপ্পে। আরেকজন গোলদাতা অ্যান্তোনি গ্রিজম্যান টুইট করে বলেছেন, চ্যাম্পিয়ন ডু মন্ডে। ভিভা লা ফ্রান্স।
রাশিয়াতে এই বিজয় উদযাপন করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এটাকে তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করতে পারেন। টিমকে এভাবে আলিঙ্গন করার চূড়ান্ত কারণ হয়তো এটাই। তিনি এ জন্য খেলোয়াড়দেরকে ডেমোক্রেটিক হিরো বা গণতান্ত্রিক বীর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
(দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে)
এবার ১৫ই জুলাই। রাশিয়াতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। তার মাঝে বিশ্বকাপ বিজয়ী ফ্রান্সের হাতে তুলে দেয়া হবে কাপ। এখানেই তিনি সেই ডেশ্যাম্পসকে শক্ত করে আলিঙ্গন করেছিলেন। এই সেই ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি দলের ক্যাপ্টেন। এখন তিনি চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স দলের ম্যানেজার।
মস্কোতে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারানোর পর ফ্রান্সে অভূতপূর্ব সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে জাতীয় দলকে। সূর্য ডোবা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্যারিসে ঢল নামে লাখ লাখ মানুষের। মেট্রোতে উপচে পড়ছিল মানুষ। এখানে ওখানে, বাসস্টপেজে- সর্বত্র শুধু মানুষ আর মানুষ। আতশবাজি, আলোকসজ্জা তো চলতেই থাকে। রাজধানী প্যারিস যেন গাড়িশূন্য হয়ে গিয়েছিল। চারদিকে শুধু তিন রঙা ফরাসি পতাকা উড়ছিল। মানুষের মুখে মুখে বিজয়ের গান। সোমবার বিকালে ফরাসি টিম চ্যাম্পস এলিসি প্রদক্ষিণ করে ছাদখোলা একটি বাসে। এরপরই তাদেরকে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে অভ্যর্থনা জানান প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোন। তাদের হৃদয় প্রশস্ত হয়ে গেছে। তারা ইতিহাস নির্মাণ করেছেন। একই সঙ্গে খেলোয়াড় এবং ম্যানেজার হিসেবে তৃতীয় ব্যক্তি হলেন ডেশ্যাম্পস।
প্যারিসের পাশে বন্ডির বানলিউতে বেড়ে উঠেছে তরুণ তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলায় টিনেজার হিসেবে পেলের পর গোল করা তিনিই দ্বিতীয় খেলোয়াড়। ফুটবল পাগল প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোন, খেলা চলাকালে প্রেসিডেন্সিয়াল বক্সে তার আনন্দকে ধরে রাখতে পারেন নি। তার কাছে ফুটবল শুধু একটি স্পোর্টসের চেয়ে বেশি কিছু। তিনি ছাত্র থাকা অবস্থায় লেফট-ব্যাক হিসেবে খেলতেন। তাই তিনি খেলাকে উপভোগ করেছেন। তিনি প্যারিসের সারসিলি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরু করেছিলেন। সেখানে কিশোর ফুটবলারদের সঙ্গে তিনি বলে লাথি দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছিলেন। হ্যাঁ, ফুটবল তার কাছে অন্য অর্থও বহন করে। নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক বিজয়ের জন্য তিনি ফুটবলকে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠতে পারে। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স যখন বিশ্বকাপ জেতে তখন প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক। ওই সময়ে আগস্ট মাসে তার জনপ্রিয়তা শতকরা ৪৫ থেকে বেড়ে ৫৯ ভাগে উঠে যায়। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পরবর্তী দেড় বছর পর্যন্ত এই জনপ্রিয়তা শতকরা ৫০ ভাগের উপরে ছিল।
ইমানুয়েল ম্যাক্রোনের জন্য এই বিজয় একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এরই মধ্যে। বলা হচ্ছে, তার চেয়ে যারা কম সৌভাগ্যবান তাদেরকে তিনি তেমন গণ্য করছেন না। এ ছাড়া রাজনৈতিক কারণ তো আছেই। ফ্রান্সে ফুটবল সামাজিক গতি নির্ধারণ করে। এবং তা তিনি প্রমাণ করেছেন। গত বছর নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি মার্সেইলিতে বলেছিলেন, যারা বানউরিয়াস থেকে সরে যেতে চাইছেন সেখানে ‘স্পোর্টস কিলস হাউজ অ্যারেস্ট’। গ্রেটার প্যারিসকে ঘিরে রেখেছে হাউজিং এস্টেটগুলো। বেশির ভাগ অভিবাসী বংশোদ্ভূত মানুষের বসবাস এখানে। স্কুল পরবর্তী বিভিন্ন ফুটবল ক্লাবের মধ্যে এখানে রয়েছে চমৎকার নেটওয়ার্ক। এসব ক্লাবই হয়ে উঠেছে জাতীয় টিমের বিশাল একটি স্থান। প্রশিক্ষণ এবং মেধা হলো ম্যাক্রোনের দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রে। কীভাবে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় সেই দৃষ্টিভঙ্গি। এক্ষেত্রে ফুটবল একটি উল্লেখ করার মতো প্রতীক।
দ্বিতীয় কারণ হলো, টিমটি নিজেরাই ফ্রান্সের জন্য একটি প্রচারক হয়ে উঠেছে। ১৯৯৮ সালেও এ দেশটি বহু সংস্কৃতির মানুষের হয়ে উঠবে সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত ছিল না। তখন টিমকে বলা হতো ‘ব্লাক, ব্লাংক, বিউর’ হিসেবে।
আট বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ ফুটবলে ফরাসি পক্ষ বড় এক ইগো নিয়ে বসলো। প্রশিক্ষণ সেশনের সময় তারা ধর্মঘটে গেল। তারপর তারা বিশ্বকাপে গেল এবং টুর্নামেন্ট থেকে আউট হয়ে যায়। এ বছর ডেশ্যাম্পস পছন্দের মতো খেলোয়াড়দের নিয়ে নিলেন। খেলার পরে ড্রেসিংরুমে তারা ছিলেন সুশৃঙ্খল। ফ্রান্সকে তো সবটুকু দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কথা বলেছিলেন এমবাপ্পে। আরেকজন গোলদাতা অ্যান্তোনি গ্রিজম্যান টুইট করে বলেছেন, চ্যাম্পিয়ন ডু মন্ডে। ভিভা লা ফ্রান্স।
রাশিয়াতে এই বিজয় উদযাপন করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এটাকে তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করতে পারেন। টিমকে এভাবে আলিঙ্গন করার চূড়ান্ত কারণ হয়তো এটাই। তিনি এ জন্য খেলোয়াড়দেরকে ডেমোক্রেটিক হিরো বা গণতান্ত্রিক বীর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
(দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে)
No comments