যেসব কারণে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় মাছ by শফিকুল ইসলাম
একসময়
দেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছে গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারগুলো সয়লাব হয়ে যেত। এখন
আর সেসব মাছ দেখা যায় না। জেলেদের জালেও ধরা পড়ে না। দেশীয় এসব মাছের
মধ্যে রয়েছে— কৈ, মাগুর, শিং, পাবদা, টেংরা, পুঁটি, ডারকা, মলা, ঢেলা,
চেলা, শাল চোপরা, শৌল, বোয়াল, আইড়, ভ্যাদা, বুড়াল, বাইম, খলিসা, ফলি,
চিংড়ি, মালান্দা, খরকাটি, গজার, শবেদা, চেং, টাকি, চিতল, গতা, পোয়া,
বালিয়া, উপর চকুয়া, কাকিলা, গুত্তুম, বৌরানীসহ প্রায় ৫০টিরও বেশি মিঠা
পানির বিভিন্ন ধরনের মাছ।এসব মাছ হারিয়ে যাওয়ার পেছনে অন্তত ১৪টি কারণকে
চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ।
গ্রাম বাংলায় পৌষ-মাঘ মাসে পুকুর, খাল, ডোবা, ঘেরের পানি কমতে থাকলে দেশি মাছ ধরার ধুম পড়ে যেত। এখন সেসব দেখা যায় না। বর্ষাকালে ধানের জমিতে কইয়া জাল, বড়শি ও চাই পেতে মাছ ধরার রীতিও হারিয়ে গেছে অনেক এলাকা থেকে। যারা একসময় পুকুর, খাল-বিল, ডোবা, নালায় মাছ ধরে পরিবারের চাহিদা পূরণ করতেন, তাদের অনেকেই এখন বাজার থেকে চাষের মাছ কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,দেশীয় মাছ ক্রমশ হারিয়ে যাওয়ার জন্য মূলত অনেকগুলো কারণই দায়ী। এরমধ্যে মধ্যে জলবায়ুর প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কারেন্ট জালের অবৈধ ব্যবহার, ফসলি জমিতে অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহার, জলাশয় দূষণ, নদ-নদীর নব্যতা হ্রাস, উজানে বাঁধ নির্মাণ, নদী সংশ্লিষ্ট খাল-বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ডোবা ও জলাশয় ভরাট করা, মা মাছের আবাসস্থলের অভাব, ডিম ছাড়ার আগেই মা মাছ ধরে ফেলা, ডোবা-নালা- পুকুর ছেঁকে মাছ ধরা, বিদেশি রাক্ষুসে মাছের চাষ ও মাছের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটানো। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই ১৪টি কারণে ৫০ টির বেশি দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে।
মৎস্য অধিদফতরের সূত্র বলছে, হারিয়ে যাওয়া দেশি প্রজাতির মাছের সংখ্যা আড়াইশ’র বেশি। হাটবাজার, পুকুর, খাল, বিল কোথায়ও এখন আর মিঠাপানির সুস্বাদু সেসব মাছ মিলছে না। দেশি মাছের বদলে এখন বাজারে জায়গা দখল করে নিয়েছে চাষের পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, ক্রস ও কার্প জাতীয় মাছ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি ও চাষাবাদ ব্যবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। একই সঙ্গে পোনা আহরণ, নেটজাল ও মশারি জাল ব্যবহার করে খালে-বিলে -সাগরে মাছ ধরার কারণেও দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। মৎস্য অধিদফতর সূত্রও বলছে, দুই দশক আগে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে প্রায় আড়াইশ’ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ পাওয়া যেত।
রাজধানীর শান্তিনগর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী বরগুনা জেলার আমতলীর বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৫-১৬ বছর আগেও আমাদের এলাকায় মাছ কিনে খাওয়ার তেমন রেওয়াজ ছিল না। কেনার মধ্যে শুধু ইলিশ মাছ কেনার কথাই মনে পড়ে। মাছের প্রয়োজন হলে সবাই বাড়ির সামনে খালে বা নদীতে চলে যেত। খালে, পুকুরে তখন এত মাছ ছিল যে, পানিতে নেমে খালি হাতেও মাছ ধরতে পারতো।’
এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৎস্য খামারি সালাউদ্দিন মুফতির সঙ্গে কথা হয় মোবাইল ফোনে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘বাড়িতে দু’টি পুকুর আছে। জন্মের পর থেকেই এই পুকুর দু’টি দেখছি। ২০ বছর আগেও সারাবছর ধরে বাড়ির সবাই পুকুর থেকে মাছ ধরত। শীতের মৌসুমে পুকুর ‘আউড়ান’ (অনেক মানুষ একসঙ্গে পুকুরে নেমে পানি ঘোলা করা, যেন ঘোলা পানি খেয়ে মাছ দুর্বল হয়ে ওপরে ভেসে উঠে এবং সহজে সেগুলো ধরা যায়) হতো। এরপর জাল, ডালা, খুচন নিয়ে মাছ ধরতে নেমে যেত ছোট-বড় সবাই। কেউ কেউ খালি হাতেও মাছ ধরত। শোল, গজার, টাকি, চিংড়ি, শিং, কই, টেংরা, পাবদা, ফলিসহ বিভিন্ন জাতের মাছ ধরা পড়ত। তবে এখন ওই দুই পুকুরে চেলা, পুঁটি, বেলে ছাড়া কোনও মাছ নেই।’’
পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের কলার দোয়ানিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আসলাম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘স্থানীয় কলার দোয়ানিয়া বাজারেও হাটের দিন দেশি প্রজাতির অনেক মাছ উঠত। এখন আর সেসব মাছ ওঠে না। বাজার ভরা থাকে চাষের পাঙ্গাস আর তেলাপিয়ায়। মাঝে-মধ্যে সিজনে জাটকাও ওঠে।’
দেশি মাছ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি ইরি ধান ও অন্যান্য সবজিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারকে দায়ী করেন।
গতবছর মার্চ মাসে নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হাওর এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠেছিল। সংশ্লিষ্ট জেলার মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, ধান পঁচে হাওরের পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি হয়ে অক্সিজেন কমে যাওয়ার কারণেই মাছ মরে গেছে। তবে হাওর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উদ্ভিদ পঁচে অ্যামোনিয়া তৈরি হয় না। অন্য কোনও কারণ আছে। সেগুলোকে খুঁজে বের করতে খুব দ্রুত বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে হবে বলা হলেও তা এখনও করা হয়নি। জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে কোনও গবেষণার পরিকল্পনাও নেই।
এ প্রসঙ্গে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহম্মদ গোলজার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা বিষয়টি গভীরভাবে মনিটর করছি। বিভিন্ন কারণেই দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। যে মাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে অনেক প্রজাতির মাছ রক্ষায় গবেষণা চলছে। পাবদা, টেংরা, বোয়াল, আইড় মাছ এখন চাষ হচ্ছে। পাঙ্গাসের চাষ হচ্ছে আগে থেকেই। কৈ মাছেরও চাষ হচ্ছে। আরও গবেষণা হবে। দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষায় মৎস্য অধিদফতর প্রতিবছরই মৎস্য মেলার আয়োজন করে। একই কর্মসূচি জেলা, উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
পিরোজপুরের কয়েকজন প্রবীণ জানান, একসময় এলাকার বলেশ্বর, সন্ধ্যা ও পায়রা নদীতে দুই কেজি ওজনের ইলিশ পাওয়া যেত। পাওয়া যেত পাঁচ থেকে ছয় কেজি ওজনের বোয়াল ও আইড় মাছ। এমন কোনও মাছ ছিল না যা এ অঞ্চলের বিলে পাওয়া যেত না। এলাকার নলামারা বিলে তারা জাল দিয়ে ১২ কেজি ওজনের কালবাউশ মাছ ধরেছেন। এক সময় ছিল বেলে, ডগরি, কাজলি, ভাঙ্গান, ভোলা প্রভৃতি মাছ খাওয়ার অযোগ্য মনে করে ধরার পর ফেলে দিতেন। এখন আর সেদিন নেই বলে জানান তারা।
দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য অনুষদের অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণেই দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে মানুষের সচেতনতার অভাবও রয়েছে। হারিয়ে যাওয়া দেশি মাছ রক্ষায় ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এখন পাবদা, টেংরা, বোয়াল, আইড়, পাঙ্গাস ও কৈ মাছের চাষ হচ্ছে।’
গ্রাম বাংলায় পৌষ-মাঘ মাসে পুকুর, খাল, ডোবা, ঘেরের পানি কমতে থাকলে দেশি মাছ ধরার ধুম পড়ে যেত। এখন সেসব দেখা যায় না। বর্ষাকালে ধানের জমিতে কইয়া জাল, বড়শি ও চাই পেতে মাছ ধরার রীতিও হারিয়ে গেছে অনেক এলাকা থেকে। যারা একসময় পুকুর, খাল-বিল, ডোবা, নালায় মাছ ধরে পরিবারের চাহিদা পূরণ করতেন, তাদের অনেকেই এখন বাজার থেকে চাষের মাছ কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,দেশীয় মাছ ক্রমশ হারিয়ে যাওয়ার জন্য মূলত অনেকগুলো কারণই দায়ী। এরমধ্যে মধ্যে জলবায়ুর প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কারেন্ট জালের অবৈধ ব্যবহার, ফসলি জমিতে অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহার, জলাশয় দূষণ, নদ-নদীর নব্যতা হ্রাস, উজানে বাঁধ নির্মাণ, নদী সংশ্লিষ্ট খাল-বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ডোবা ও জলাশয় ভরাট করা, মা মাছের আবাসস্থলের অভাব, ডিম ছাড়ার আগেই মা মাছ ধরে ফেলা, ডোবা-নালা- পুকুর ছেঁকে মাছ ধরা, বিদেশি রাক্ষুসে মাছের চাষ ও মাছের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটানো। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই ১৪টি কারণে ৫০ টির বেশি দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে।
মৎস্য অধিদফতরের সূত্র বলছে, হারিয়ে যাওয়া দেশি প্রজাতির মাছের সংখ্যা আড়াইশ’র বেশি। হাটবাজার, পুকুর, খাল, বিল কোথায়ও এখন আর মিঠাপানির সুস্বাদু সেসব মাছ মিলছে না। দেশি মাছের বদলে এখন বাজারে জায়গা দখল করে নিয়েছে চাষের পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, ক্রস ও কার্প জাতীয় মাছ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি ও চাষাবাদ ব্যবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। একই সঙ্গে পোনা আহরণ, নেটজাল ও মশারি জাল ব্যবহার করে খালে-বিলে -সাগরে মাছ ধরার কারণেও দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। মৎস্য অধিদফতর সূত্রও বলছে, দুই দশক আগে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে প্রায় আড়াইশ’ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ পাওয়া যেত।
রাজধানীর শান্তিনগর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী বরগুনা জেলার আমতলীর বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৫-১৬ বছর আগেও আমাদের এলাকায় মাছ কিনে খাওয়ার তেমন রেওয়াজ ছিল না। কেনার মধ্যে শুধু ইলিশ মাছ কেনার কথাই মনে পড়ে। মাছের প্রয়োজন হলে সবাই বাড়ির সামনে খালে বা নদীতে চলে যেত। খালে, পুকুরে তখন এত মাছ ছিল যে, পানিতে নেমে খালি হাতেও মাছ ধরতে পারতো।’
এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৎস্য খামারি সালাউদ্দিন মুফতির সঙ্গে কথা হয় মোবাইল ফোনে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘বাড়িতে দু’টি পুকুর আছে। জন্মের পর থেকেই এই পুকুর দু’টি দেখছি। ২০ বছর আগেও সারাবছর ধরে বাড়ির সবাই পুকুর থেকে মাছ ধরত। শীতের মৌসুমে পুকুর ‘আউড়ান’ (অনেক মানুষ একসঙ্গে পুকুরে নেমে পানি ঘোলা করা, যেন ঘোলা পানি খেয়ে মাছ দুর্বল হয়ে ওপরে ভেসে উঠে এবং সহজে সেগুলো ধরা যায়) হতো। এরপর জাল, ডালা, খুচন নিয়ে মাছ ধরতে নেমে যেত ছোট-বড় সবাই। কেউ কেউ খালি হাতেও মাছ ধরত। শোল, গজার, টাকি, চিংড়ি, শিং, কই, টেংরা, পাবদা, ফলিসহ বিভিন্ন জাতের মাছ ধরা পড়ত। তবে এখন ওই দুই পুকুরে চেলা, পুঁটি, বেলে ছাড়া কোনও মাছ নেই।’’
পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের কলার দোয়ানিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আসলাম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘স্থানীয় কলার দোয়ানিয়া বাজারেও হাটের দিন দেশি প্রজাতির অনেক মাছ উঠত। এখন আর সেসব মাছ ওঠে না। বাজার ভরা থাকে চাষের পাঙ্গাস আর তেলাপিয়ায়। মাঝে-মধ্যে সিজনে জাটকাও ওঠে।’
দেশি মাছ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি ইরি ধান ও অন্যান্য সবজিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারকে দায়ী করেন।
গতবছর মার্চ মাসে নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হাওর এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠেছিল। সংশ্লিষ্ট জেলার মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, ধান পঁচে হাওরের পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি হয়ে অক্সিজেন কমে যাওয়ার কারণেই মাছ মরে গেছে। তবে হাওর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উদ্ভিদ পঁচে অ্যামোনিয়া তৈরি হয় না। অন্য কোনও কারণ আছে। সেগুলোকে খুঁজে বের করতে খুব দ্রুত বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে হবে বলা হলেও তা এখনও করা হয়নি। জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে কোনও গবেষণার পরিকল্পনাও নেই।
এ প্রসঙ্গে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহম্মদ গোলজার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা বিষয়টি গভীরভাবে মনিটর করছি। বিভিন্ন কারণেই দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। যে মাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে অনেক প্রজাতির মাছ রক্ষায় গবেষণা চলছে। পাবদা, টেংরা, বোয়াল, আইড় মাছ এখন চাষ হচ্ছে। পাঙ্গাসের চাষ হচ্ছে আগে থেকেই। কৈ মাছেরও চাষ হচ্ছে। আরও গবেষণা হবে। দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষায় মৎস্য অধিদফতর প্রতিবছরই মৎস্য মেলার আয়োজন করে। একই কর্মসূচি জেলা, উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
পিরোজপুরের কয়েকজন প্রবীণ জানান, একসময় এলাকার বলেশ্বর, সন্ধ্যা ও পায়রা নদীতে দুই কেজি ওজনের ইলিশ পাওয়া যেত। পাওয়া যেত পাঁচ থেকে ছয় কেজি ওজনের বোয়াল ও আইড় মাছ। এমন কোনও মাছ ছিল না যা এ অঞ্চলের বিলে পাওয়া যেত না। এলাকার নলামারা বিলে তারা জাল দিয়ে ১২ কেজি ওজনের কালবাউশ মাছ ধরেছেন। এক সময় ছিল বেলে, ডগরি, কাজলি, ভাঙ্গান, ভোলা প্রভৃতি মাছ খাওয়ার অযোগ্য মনে করে ধরার পর ফেলে দিতেন। এখন আর সেদিন নেই বলে জানান তারা।
দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য অনুষদের অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণেই দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে মানুষের সচেতনতার অভাবও রয়েছে। হারিয়ে যাওয়া দেশি মাছ রক্ষায় ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এখন পাবদা, টেংরা, বোয়াল, আইড়, পাঙ্গাস ও কৈ মাছের চাষ হচ্ছে।’
No comments