সিলেটে নিখোঁজের ৩ দিন পর জব্বারের লাশ উদ্ধার
ফজরের
নামাজের পর হাঁটতে বের হয়েছিলেন সিলেটের শেখঘাটের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার।
আর বাসায় ফিরেননি তিনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। গতকাল
দুপুরে সিলেটের টুকেরবাজারের সুরমা নদীতে মিললো জব্বারের লাশ। মৃতদেহ
স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। স্থানীয় জেলেরা লাশ দেখে তীরে নিয়ে আসেন। লাশ
উদ্ধারের পর মাতম চলছে জব্বারের বাড়িতে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা
হয়েছে, খুন করে সুরমায় ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে জব্বারের লাশ। নগরীর শেখঘাট
পয়েন্টের কাছেই আব্দুল জব্বারের বাসা। কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক তিনি।
দুই ছেলেই বসবাস করেন প্রবাসে। সম্পত্তির কারণেই আব্দুল জব্বারকে খুন করা
হতে পারে এমন ধারণা এলাকাবাসীরও। সিলেট নগরীর শেখঘাটের জিতু মিয়ার পয়েন্টের
কাছে মঈনুন্নেছা স্কুল রুটের সওদাগরটুলা এলাকার শুভেচ্ছা ৬৭ নম্বর বাসার
বাসিন্দা আব্দুল জব্বার। মরহুম ডা. সাজিদ আলী বড় ভুঁইয়ার ছেলে তিনি।
শেখঘাটে ব্রিজ করার সময় তাদের জমি সরকার থেকে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। এতে করে
টাকাও পান আব্দুল জব্বারের পরিবার। জমি অধিগ্রহণের পর তারা রাস্তা লাগোয়া
স্থানে মার্কেট নির্মাণ করেছেন। ৮-১০টি দোকান রয়েছে তাদের। ওসব দোকান ছাড়াও
রয়েছে প্রচুর সম্পত্তি। আব্দুল জব্বার খুব সাদাসিধে জীবনের অধিকারী ছিলেন।
তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে আদায় করতেন। সবার সঙ্গে সখ্যতা ছিল।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- রোববার প্রতিদিনের মতো ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে আসেন
আব্দুল জব্বার। তিনি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ থেকে
বেরিয়ে বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেন। ওই সময় তার সঙ্গে মুসল্লিরা ছিলেন। কিন্তু
বাসার দুটি প্রধান গেট বন্ধ থাকার কারণে তিনি ভেতরে ঢুকতে পারেননি। এরপর
হাঁটতে বের হন। প্রায় সময় তিনি কাজীরবাজার সেতুর ওপর হাঁটাহাঁটি করতেন।
আবার কখনো কখনো রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করতেন। তবে, ১৫ মিনিট হাঁটার পর তিনি
বাসায় ফিরতেন। রোববার সকালে একা একা হাঁটতে বের হয়ে নিখোঁজ হন আব্দুল
জব্বার। পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা ঘুম থেকে উঠে দেখেন জব্বার নেই। তার
খোঁজ করেন শেখঘাট পয়েন্টে। কিন্তু পাওয়া যায়নি। এরপর পরিচিত আত্মীয়-স্বজনের
বাসায়ও তার খোঁজ করা হয়। কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। কোথাও না পেয়ে এ ঘটনায়
তার বড় ভাই মো. আব্দুর রাজ্জাক কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি জিডি (নং ৮৭৮, ১৩ই
মে ২০১৮) করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আব্দুল জব্বার প্রতিদিনের মতো ফজরের
নামাজ পড়তে বের হন। পরে দীর্ঘ সময় ধরে বাসায় না ফেরায় স্বজনরা আত্মীয়দের
বাসায় খোঁজ নেন। কিন্তু কোথাও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ আব্দুল
জব্বারের খোঁজ পাওয়া গেলে ০১৭৪৬-০৪৭২২১ এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে অনুরোধ
জানিয়েছেন তার স্বজনরা। আব্দুল জব্বার বড় ভুইয়ার খোঁজ চালায় পুলিশও। কিন্তু
পাওয়া যায়নি। এদিকে, গতকাল দুপুরে শহরতলীর টুকেরবাজারে সুরমা নদীতে আব্দুল
জব্বার বড় ভুইয়ার লাশ ভেসে যেতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। তারা লাশটি তীরে
ভিড়িয়ে আনেন। খবর পেয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানা পুলিশ সেখানে যায়। লাশ ভেসে
যাওয়ার খবর শুনে শেখঘাট থেকে টুকেরবাজারে যান আব্দুল জব্বারের স্বজনরা।
তারা গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। শেখঘাট এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন জানান,
আমরা গিয়ে লাশ শনাক্ত করি। লাশ তেমন বিকৃত হয়নি। পুরোপুরি চেনা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের জানা মতে তার সঙ্গে কারো শত্রুতা নেই। কেউ তাকে খুন করতে
পারে সেটি আমরা কল্পনা করতে পারছি না। সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসি
জানিয়েছেন, তারা লাশ উদ্ধারের সময় সুরতহাল রিপোর্ট করেছেন। এ সময় তারা
লাশের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাননি। তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি হত্যা না
অন্য কিছু পরিষ্কার হবে বলে জানান তিনি। এদিকে, লাশ উদ্ধারের পর আব্দুল
জব্বারের বাড়িতে মাতম চলছে। পিতা নিখোঁজের খবর পেয়ে তার বড় ছেলে আজমান সাউথ
আফ্রিকা থেকে দেশের পথে রয়েছেন।
No comments