রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জোরদারে তাগিদ দেবে ঢাকা: জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক কাল
প্রায়
৪ মাস বিরতির পর কাল জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ
ও মিয়ানমার। ঢাকায় হবে সেই বৈঠক। বৈঠকে যোগ দিতে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল আজ
বাংলাদেশে পৌঁছবে। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতেই পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল
হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত
হবেন তারা। গত বছরের নভেম্বরে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের বাসিন্দাদের
নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়।
চুক্তি সইয়ের পর প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এখনো রোহিঙ্গা
প্রত্যাবাসনে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় আজকের বৈঠকটি খুবই
তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বৈঠক সংশ্লিষ্টরা এটা নিশ্চিত করেই বলছেন
যে, কালকের বৈঠকে বাংলাদেশের মূল ফোকাসে থাকছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া
জোরদার করা। এ নিয়ে ঢাকার তরফে জোর তাগিদ থাকছে। তাছাড়া রাখাইনের আগস্ট
পরবর্তী নৃশংসতার অভিযোগে সেখানকার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহির
বিষয়টিও বিশ্বব্যাপী যথেষ্ট আলোচিত। যদিও মিয়ানমার সরকার বরাবরই তাদের
নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযুক্ত লোকজনকে জবাবদিহিতে আনার প্রসঙ্গটি এড়িয়ে
চলছে। ঢাকার বৈঠকে প্রত্যাবাসন চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার
বিষয়টি যেমন আসবে তেমনি রাখাইনে নৃশংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারেরও
তাগিদ দেয়া হবে। যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যায়। এ বিষয়ে
জেডব্লিউজি’র দায়িত্বশীল এক সদস্য বলেন- ‘প্রত্যাবাসনের জন্য যেসব কাজ করা
দরকার, বাংলাদেশ চুক্তি সইয়ের পর থেকে সেগুলো করেছে। সর্বশেষ ইউএনএইচসিআরকে
যুক্ত করা হয়েছে। মিয়ানমারকে তালিকা দেয়া হয়েছে। আবার বর্ষাকে সামনে রেখে
রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। প্রত্যাবাসনের
জন্য সম্ভাব্য সব পদক্ষেপই নিচ্ছে বাংলাদেশ। এখনো রাখাইনে রোহিঙ্গাদের
সহায়ক পরিবেশ ফিরিয়ে, প্রত্যাবাসন টেকসই করার দায়িত্ব মিয়ানমারের। ঢাকার
বৈঠকে মিয়ানমারকে তাদের সেই দায়িত্বের কথা স্মরণ করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া
দ্রুততর এবং জোরদার করার কথাই বলা হবে। অন্য এক কর্মকর্তা বলেন-
রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানো শুরুর জন্য ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারকে আট
হাজারের বেশি লোকের তালিকা দেয়ার পর দেশটি তিন মাস ধরে সাত ধাপে
যাচাই-বাছাই করে মাত্র ৮৭৮ জনকে গ্রহণে সম্মতি দিয়েছে। সীমান্তের ওপারে
রোহিঙ্গাদের ফেরানোর পরিবেশ হয়েছে কিনা, সেটাও নিশ্চিত নয়। এমন এক
পরিস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বা সমঝোতা মতে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের
(জেডব্লিউজি) আজকের বৈঠকটি হচ্ছে। তাছাড়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ
প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে
রোহিঙ্গা নির্যাতনের তদন্তের বিষয়টি আলোচিত হওয়ার প্রেক্ষাপটেও কালকের
বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ঘুরে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরজমিন
দেখার পর গত সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে।
তবে সেখানেও কোন রেজুলেশনের বিষয়ে একমত হতে পারেননি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর
প্রতিনিধিরা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য গত বছরের ২৩শে নভেম্বর বাংলাদেশ ও
মিয়ানমার চুক্তি সই করে। ওই চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর থেকে
পরের কয়েক মাস এবং গত বছরের ২৫শে আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত আসা
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়। সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী,
২০১৬ সালের অক্টোবরের পর ৮৭ হাজার এবং ২০১৭ সালের ২৫শে আগস্টের পর থেকে ৬
লাখ ৯২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। সংখ্যায় কম হলে এখনো রোহিঙ্গারা
বাংলাদেশে আসছে। ২৩শে নভেম্বর সই হওয়া চুক্তির ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবাসনের
বিষয়টি তত্ত্বাবধানের জন্য পরের মাসে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের নেতৃত্বে
জেডব্লিউজি গঠন করা হয়। এ বছরের জানুয়ারিতে মিয়ানমারের নেপিডোতে
জেডব্লিউজির প্রথম বৈঠক হয়। আর প্রত্যাবাসনের কাজে সহায়তার জন্য জানুয়ারি
এবং এপ্রিলে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সঙ্গে দুটি আলাদা
সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় দুই দেশের
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের সময় প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের কাছে ৮
হাজার ৩২ জনের তালিকা পাঠায় বাংলাদেশ। দফায় দফায় ওই তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের
পর এক হাজারের কম ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করে। তবে কখন কীভাবে তাদের গ্রহণ
করতে চায় বা আদৌ গ্রহণ করতে চায় কি-না সেটি না স্পষ্ট করেই তালিকায়
অসম্পূর্ণ তথ্য থাকার ধুয়া তুলে বাংলাদেশের সমালোচনায় মুখর রয়েছে বর্মী
কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতেও বাংলাদেশ বসে নেই। শরণার্থী, ত্রাণ ও পুনর্বাসন
কমিশনারের কার্যালয় জানিয়েছে- তালিকা যাচাই-বাছাই’র পাশাপাশি প্রত্যাবাসন
কেন্দ্রসহ অন্যান্য কাজও এগিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে নৌপথে
প্রত্যাবাসনের জন্য টেকনাফের কেরনতলীতে একটি কেন্দ্র নির্মাণের কাজ প্রায়
শেষ পর্যায়ে। এ ছাড়া স্থলপথে প্রত্যাবাসনের জন্য বান্দরবানের গুমদুমে জমি
অধিগ্রহণসহ প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হয়েছে। কালকের বৈঠকে আরেক দফা একটি
(নতুন) তালিকা হস্তান্তরের প্রস্তুতি রয়েছে ঢাকার।
No comments