নবীগঞ্জে লন্ডন প্রবাসীর স্ত্রী ও মা খুন, আটক ৪ by এম এ বাছিত
নবীগঞ্জে
বসতঘরেই খুন হলেন লন্ডন প্রবাসীর স্ত্রী গৃহবধূ রুমি বেগম (২২) ও শাশুড়ি
মালা বেগম (৫০)। রোববার রাত ১১টায় উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর
গ্রামে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটে। এনিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। খবর পেয়ে গতকাল
সকালে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা
ওই বাড়ি ঘিরে তদন্ত করেন। আলোচিত ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক
করেছে পুলিশ। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মম খুনের ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ
করছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন
আলামত সংগ্রহ করেন। নিহত গৃহবধূর ব্যবহৃত হাতঘড়ির সূত্র ধরে ঘটনার ক্লু
উদঘাটনের কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছার দাবি করেছে পুলিশ। এছাড়াও খুনিদের পায়ের
ছাপসহ বিভিন্ন আলামত শনাক্ত করেছে পুলিশের স্পেশাল ফোর্স। গতকাল দুপুরে
র্যাবের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। দ্রুত রহস্য
উদঘাটনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা। পুলিশ ও স্থানীয়
সূত্র জানায়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে নিহতদের মরদেহে ধারালো অস্ত্রের একাধিক
আঘাত রয়েছে। পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করেছে। এ
ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তালেব মিয়া (১৮), শুভ মিয়া
(৩০), আব্দুস সালাম (৬০) ও তার পুত্র শেবুল মিয়া (৩০)কে আটক করেছে পুলিশ।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামের রাজা
মিয়ার পুত্র আকলাক চৌধুরী ওরফে গুলজার দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন।
গত প্রায় ২ বছর আগে একই গ্রামের কুয়েত প্রবাসী সুজন চৌধুরীর কন্যা রুমি
বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর থেকে তার বাড়িতে শুধু মা মালা বেগম ও
স্ত্রী রুমি বেগম থাকতেন। দিনের বেলায়ও ঘরের সকল গেইটে তালা লাগানো থাকতো।
রোববার রাত ১১টার দিকে হঠাৎ গ্রামের লোকজন আর্তচিৎকার শুনতে পান। লোকজন এসে
দেখতে পান লন্ডন প্রবাসী আকলাক চৌধুরী ওরফে গুলজার মিয়ার বাড়ির আঙ্গিনায়
তার স্ত্রী রুমি বেগমের রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন ওই বাড়ির
ভেতরে গিয়ে তার শাশুড়ি মালা বেগমের ক্ষত-বিক্ষত নিথর দেহ উদ্ধার করে উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক পুত্রবধূ ও শাশুড়ি
মালা বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন। নবীগঞ্জ থানা পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে লাশ
দু’টির সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। লাশের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্রের
আঘাত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত গৃহবধূ রুমি বেগমের বড় ভাই পল্লী
চিকিৎসক নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই তিনি তার বোনের বাড়ির লোকজনের খোঁজখবর
রাখতেন। গতকাল রাতে বোন রুমি মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানায় চোখে আঘাত পেয়েছে
ওষুধ দেয়ার জন্য। পরে বোনের পাশের বাড়ির জনৈক তালেব মিয়ার মাধ্যমে রাত
১০টার দিকে বোনের জন্য ওষুধ দেই। এরপর রাত ১১টার দিকে নির্মম এ ঘটনার খবর
পাই। নিহত গৃহবধূর প্রতিবেশী মামাতো ভাই ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলী
আহমেদ মুসা বলেন, চিৎকার শুনে তার বাড়িতে গিয়ে দু’জনের নিথর দেহ দেখতে পাই।
এ সময় ঘরের একটি টেবিলে ৪টি চায়ের কাপও ছিল। ঘটনাস্থল থেকে এক জোড়া জুতা ও
১টি ঘড়ি উদ্ধার হয়েছে। তিনি দ্রুত এই নারকীয় খুনের ঘটনায় জড়িতদের
গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি করেন। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ধারণা,
হত্যাকারীরা ঘটনার পূর্বেই বাড়িতে অবস্থান করে চা-চক্রে মিলিত হয়। নৃশংস
হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূ ও শাশুড়ি নিহত হলেও ঘরের কোনো মালামাল লুট হয়নি।
পূর্ব পরিচিতরা পরিকল্পিতভাবে বউ-শাশুড়িকে হত্যা করেছে মর্মে মুখরোচক
আলোচনা চলছে। গ্রামবাসী নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
সুরতহাল রিপোর্টের সময় নিহতের শরীরে স্বর্ণের চেইন ও আংটি ছিল বলে জানা
গেছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ জনকে আটক করেছে
পুলিশ। এনিয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি এসএম আতাউর রহমান বলেন, ঘটনার পরপরই
বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। আটককৃতদের কাছ থেকে তথ্য উদঘাটন ও শিগগিরই
অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এ রিপোর্ট
লেখার সময় মামলার প্রস্তুতি চলছে মর্মে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও নিহত
গৃহবধূর স্বামী যুক্তরাজ্য প্রবাসী গুলজার মিয়া দেশের উদ্দেশে রওয়ানা
করেছেন। তিনি দেশে আসার পর মালা বেগম ও গৃহবধূ রুমি বেগমের লাশ দাফন করার
কথা জানিয়েছে নিহতদের পরিবারের লোকজন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় এলাকায় শোকের
ছায়া নেমে এসেছে।
No comments