বিয়ের পিড়িতে না বসলে বিড়ম্বনা -বিবিসি
অনেকদিন পর এক আত্মীয়র বিয়েতে গেছেন ৩৭ বছর বয়সী ব্যবসায়ী জর্জ ডি কস্তা।
বিয়ের দাওয়াতে গিয়ে কিছুক্ষণ পর তিনি নিজেই হয়ে গেলেন সম্ভাব্য একজন পাত্র।
অপরিচিত এক অবিবাহিত নারীকে তার পাশে বসিয়ে দিয়ে গায়েব হয়ে গেলেন আত্মীয়রা।
পাত্রী দেখতে আসেননি কিন্তু তবুও চালিয়ে যেতে হলও অস্বস্তিকর আলাপচারীতা।
কিছুক্ষণ পর আত্মীয়দের প্রশ্ন-- মেয়ে পছন্দ হয়েছে? মি: কস্তার না উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন-- কেন?
বাংলাদেশে জর্জ ডি কস্তার মতো অবিবাহিত মানুষদের প্রায়ই বিয়ে নিয়ে অযাচিত সব প্রশ্নের জবাব দিতে হয়।
এখনো বিয়ে করোনি? কেন? কবে করবে? ইত্যাদি।
পাড়ার চাচা অথবা দুঃসম্পর্কের খালাকে হাসিমুখে এসব প্রশ্নের জবার দিয়ে উতরে গেলেও জর্জ ডি কস্তা পার পাননি ঢাকা শহরে বাড়ি ভাড়া নিতে গিয়ে।
“প্রথমেই শুনতে হয় পরিবার নিয়ে থাকবো কিনা সেই প্রশ্ন। একা থাকবো শুনলেই বাড়িওয়ালাদের মধ্যে বিরূপ একধরনের মনোভাব দেখা যায়। বিষয়টা যেন একটা খুবই দৃষ্টিকটু ব্যাপার”
বাড়িভাড়া জোটে না বলে শেষ-মেষ আত্মীয় বা বাবা মায়ের সাথেই তাই থাকেন অনেক অবিবাহিত নারী পুরুষ।
বাংলাদেশে সামাজিক রীতিতে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেননি এমন মানুষদের জীবনাচরণের উল্টোটাই স্বাভাবিক।
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ একটি নির্দিষ্ট বয়সে বিয়ে করে সংসারী হবেন তেমনটাই এখানে নিয়ম।
আর বিয়ের কদিন পর ছেলেপুলের দায়িত্ব নেবেন সেটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু ইদানীং এই সামাজিক রীতি বদলে বিয়ের পিড়িতে না বসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে বাংলাদেশের শহরগুলোতে।
একটু বেশি বয়সে বিয়ের প্রবণতা পুরুষদের মধ্যে যেমন বাড়ছে তেমনি পড়াশোনা শেষ করে বিয়ের বদলে অনেক নারীও আগ্রহী হচ্ছেন পেশার দিকে।
তবে সামাজিক রীতেতে এই পরিবর্তনের সাথে সাথে বাড়ছে বিড়ম্বনায়ও।
৩৯ বছর বয়সী ঢাকার একজন আইনজীবী বলছিলেন, যত যোগ্যতাই তার থাকুক না কেন বাড়ি ভাড়া নিতে গিয়ে মিথ্যে বলতে হয়েছে অনেকবার।
সামাজিক প্রথার ব্যত্যয় করেছেন বলে তাকে পরতে হয়েছে সন্দেহের তালিকায়।
তিনি বলছিলেন, “প্রথমত মিথ্যা বলে বাসা নিতে হয়েছিল যে আমার সাথে আমার মা থাকবে। পরে যখন আমার বাসায় কোন বন্ধু বা পুরুষ সহকর্মী কাজে আসত তখন খেয়াল করতাম বাড়িওয়ালা বা প্রতিবেশীরা নজর রাখছে”
ভাল রোজগেরে এবং অনেকগুলো ডিগ্রিধারী এই নারী নিজের পাড়াতেই কখনো হয়ে উঠেছেন গুজব বা রসালো কানকথার উৎস।
“অনেকেই মনে করে বিয়ে হচ্ছে না তাহলে বোধহয় মেয়ের কোন খুত আছে। আবার ইচ্ছে করে বিয়ে করছি না এমন বুঝতে পারলে তারা ভাবতে থাকে কারণটা কি? সেগুলো নিয়ে পেছনে কথা বলা বা নানান নেতিবাচক চিন্তা তাদের মনের মধ্যে চলে আসে”
ভাড়া বাড়িতে পাড়ার ছেলেদের কাছে হয়রানির শিকার হয়ে এই আইনজীবী শেষ মেষ ফিরে গেছেন পরিবারের কাছে।
তবে সেই সুবিধা নেই জীবিকার তাগিদে ঢাকার বাইরে থেকে শহরে আসা অনেকের।
সেরকম একজন বলছিলেন বিয়ের আগে ঢাকায় একটা বাড়িতে উঠেছিলেন।
সেই বাড়িতে তাকে ব্যাচেলর বলে অনেক নিয়মকানুন দিয়ে দেয়া হয়েছিল।
“বাড়ির বারান্দায় যেতে পারতাম না। ছাদে যেতে পারতাম না। এমনকি জানালা খোলাও বারণ ছিল। তাই অফিস শেষ করে বন্ধ ঘরে থাকতে হতো। সেটাই এখানে নিয়ম”
নটা পাঁচটা অফিস আর তারপর জানালা বন্ধ ঘরে থাকা এইসব ব্যাচেলরদের প্রায়ই দেখতে হয় ‘এখানে ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া দেয়া হয়না’ এমন নোটিশ।
ঢাকার প্রায় সব বাড়িওয়ালাদের কাছে অবিবাহিত মানেই উটকো ব্যাচেলর মাত্র।
ঢাকার মগবাজারের নয়াটোলায় একটি বাড়ির মালিক রাজিয়া সুলতানা বলছিলেন অবিবাহিত ভাড়াটে নিয়ে তাদের বেশ আপত্তি কারণ অন্য ভাড়াটেদের বিষয়টা পছন্দ না।
তিনি বলছিলেন, “ওরা দেরি করে ঘরে ফেরে। প্রায়ই বান্ধবীরা রাত করে থাকত আর আমাদের বলা হতো বোন। এসব নিয়ে পরে আমার অন্য ভাড়াটেরা আপত্তি করলে ওদের বিদায় করে দিতে হয়েছে”
কোন বাড়িওয়ালা বিদায় করে দিলেও এই মানুষগুলো বাংলাদেশের সমাজেই থাকেন।
সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরিন বলছেন বাংলাদেশের সমাজ এখন একটি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
এই মানুষদের উপস্থিতি তারই নমুনা।
জীবনের প্রয়োজনেই প্রথাগত জীবনধারায় এই ধরনের পরিবর্তন আসছে।
ইদানীং শিক্ষায় পরিবর্তন হয়েছে সেটাও একটা কারণ।
অনেকক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কারণেও বাড়ছে দেরিতে বিয়ে করা মানুষের সংখ্যা।
মাহবুবা নাসরিনের মতে এই পরিবর্তন শুরু হলেও মানুষের মনোভাব অবশ্য বদলাচ্ছে বেশ ধীরে ধীরে।
একই সাথে বাংলাদেশের সমাজে রয়েছে ভিন্নতায় অরুচি।
নতুন ধরনের এই জীবনাচরণের জন্য প্রস্তুতও নয় বাংলাদেশের সমাজ।
অধ্যাপক নাসরিনের মতে সেখানেই দ্বন্দ্ব।
“বাংলাদেশে সামাজিকীকরণটাই হলও একটি বয়সের পর বিয়ে করে মানুষ সংসারী হবে। সবাই একই রকম হবে। অবিবাহিত নারী পুরুষের সংখ্যা বাড়লেও সমাজ বা রাষ্ট্র তাদের কোন ক্যাটাগরিতে ফেলে না”
অধ্যাপক নাসরিনের মতে বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে তৈরি হয়েছে অবিশ্বাসের সংস্কৃতি।
নিরাপত্তার আশংকা থেকে একটু ভিন্ন ধরনের মানুষের প্রতি তাই নেতিবাচক মনোভাব।
সেই মনোভাব না বদলানো পর্যন্ত জর্জ ডি কস্তার মতো মানুষেরা রয়ে যাবেন উটকো ব্যাচেলরের তালিকায়।
বিয়ের দাওয়াতে গিয়ে কিছুক্ষণ পর তিনি নিজেই হয়ে গেলেন সম্ভাব্য একজন পাত্র।
অপরিচিত এক অবিবাহিত নারীকে তার পাশে বসিয়ে দিয়ে গায়েব হয়ে গেলেন আত্মীয়রা।
পাত্রী দেখতে আসেননি কিন্তু তবুও চালিয়ে যেতে হলও অস্বস্তিকর আলাপচারীতা।
কিছুক্ষণ পর আত্মীয়দের প্রশ্ন-- মেয়ে পছন্দ হয়েছে? মি: কস্তার না উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন-- কেন?
বাংলাদেশে জর্জ ডি কস্তার মতো অবিবাহিত মানুষদের প্রায়ই বিয়ে নিয়ে অযাচিত সব প্রশ্নের জবাব দিতে হয়।
এখনো বিয়ে করোনি? কেন? কবে করবে? ইত্যাদি।
পাড়ার চাচা অথবা দুঃসম্পর্কের খালাকে হাসিমুখে এসব প্রশ্নের জবার দিয়ে উতরে গেলেও জর্জ ডি কস্তা পার পাননি ঢাকা শহরে বাড়ি ভাড়া নিতে গিয়ে।
“প্রথমেই শুনতে হয় পরিবার নিয়ে থাকবো কিনা সেই প্রশ্ন। একা থাকবো শুনলেই বাড়িওয়ালাদের মধ্যে বিরূপ একধরনের মনোভাব দেখা যায়। বিষয়টা যেন একটা খুবই দৃষ্টিকটু ব্যাপার”
বাড়িভাড়া জোটে না বলে শেষ-মেষ আত্মীয় বা বাবা মায়ের সাথেই তাই থাকেন অনেক অবিবাহিত নারী পুরুষ।
বাংলাদেশে সামাজিক রীতিতে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেননি এমন মানুষদের জীবনাচরণের উল্টোটাই স্বাভাবিক।
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ একটি নির্দিষ্ট বয়সে বিয়ে করে সংসারী হবেন তেমনটাই এখানে নিয়ম।
আর বিয়ের কদিন পর ছেলেপুলের দায়িত্ব নেবেন সেটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু ইদানীং এই সামাজিক রীতি বদলে বিয়ের পিড়িতে না বসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে বাংলাদেশের শহরগুলোতে।
একটু বেশি বয়সে বিয়ের প্রবণতা পুরুষদের মধ্যে যেমন বাড়ছে তেমনি পড়াশোনা শেষ করে বিয়ের বদলে অনেক নারীও আগ্রহী হচ্ছেন পেশার দিকে।
তবে সামাজিক রীতেতে এই পরিবর্তনের সাথে সাথে বাড়ছে বিড়ম্বনায়ও।
৩৯ বছর বয়সী ঢাকার একজন আইনজীবী বলছিলেন, যত যোগ্যতাই তার থাকুক না কেন বাড়ি ভাড়া নিতে গিয়ে মিথ্যে বলতে হয়েছে অনেকবার।
সামাজিক প্রথার ব্যত্যয় করেছেন বলে তাকে পরতে হয়েছে সন্দেহের তালিকায়।
তিনি বলছিলেন, “প্রথমত মিথ্যা বলে বাসা নিতে হয়েছিল যে আমার সাথে আমার মা থাকবে। পরে যখন আমার বাসায় কোন বন্ধু বা পুরুষ সহকর্মী কাজে আসত তখন খেয়াল করতাম বাড়িওয়ালা বা প্রতিবেশীরা নজর রাখছে”
ভাল রোজগেরে এবং অনেকগুলো ডিগ্রিধারী এই নারী নিজের পাড়াতেই কখনো হয়ে উঠেছেন গুজব বা রসালো কানকথার উৎস।
“অনেকেই মনে করে বিয়ে হচ্ছে না তাহলে বোধহয় মেয়ের কোন খুত আছে। আবার ইচ্ছে করে বিয়ে করছি না এমন বুঝতে পারলে তারা ভাবতে থাকে কারণটা কি? সেগুলো নিয়ে পেছনে কথা বলা বা নানান নেতিবাচক চিন্তা তাদের মনের মধ্যে চলে আসে”
ভাড়া বাড়িতে পাড়ার ছেলেদের কাছে হয়রানির শিকার হয়ে এই আইনজীবী শেষ মেষ ফিরে গেছেন পরিবারের কাছে।
তবে সেই সুবিধা নেই জীবিকার তাগিদে ঢাকার বাইরে থেকে শহরে আসা অনেকের।
সেরকম একজন বলছিলেন বিয়ের আগে ঢাকায় একটা বাড়িতে উঠেছিলেন।
সেই বাড়িতে তাকে ব্যাচেলর বলে অনেক নিয়মকানুন দিয়ে দেয়া হয়েছিল।
“বাড়ির বারান্দায় যেতে পারতাম না। ছাদে যেতে পারতাম না। এমনকি জানালা খোলাও বারণ ছিল। তাই অফিস শেষ করে বন্ধ ঘরে থাকতে হতো। সেটাই এখানে নিয়ম”
নটা পাঁচটা অফিস আর তারপর জানালা বন্ধ ঘরে থাকা এইসব ব্যাচেলরদের প্রায়ই দেখতে হয় ‘এখানে ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া দেয়া হয়না’ এমন নোটিশ।
ঢাকার প্রায় সব বাড়িওয়ালাদের কাছে অবিবাহিত মানেই উটকো ব্যাচেলর মাত্র।
ঢাকার মগবাজারের নয়াটোলায় একটি বাড়ির মালিক রাজিয়া সুলতানা বলছিলেন অবিবাহিত ভাড়াটে নিয়ে তাদের বেশ আপত্তি কারণ অন্য ভাড়াটেদের বিষয়টা পছন্দ না।
তিনি বলছিলেন, “ওরা দেরি করে ঘরে ফেরে। প্রায়ই বান্ধবীরা রাত করে থাকত আর আমাদের বলা হতো বোন। এসব নিয়ে পরে আমার অন্য ভাড়াটেরা আপত্তি করলে ওদের বিদায় করে দিতে হয়েছে”
কোন বাড়িওয়ালা বিদায় করে দিলেও এই মানুষগুলো বাংলাদেশের সমাজেই থাকেন।
সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরিন বলছেন বাংলাদেশের সমাজ এখন একটি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
এই মানুষদের উপস্থিতি তারই নমুনা।
জীবনের প্রয়োজনেই প্রথাগত জীবনধারায় এই ধরনের পরিবর্তন আসছে।
ইদানীং শিক্ষায় পরিবর্তন হয়েছে সেটাও একটা কারণ।
অনেকক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কারণেও বাড়ছে দেরিতে বিয়ে করা মানুষের সংখ্যা।
মাহবুবা নাসরিনের মতে এই পরিবর্তন শুরু হলেও মানুষের মনোভাব অবশ্য বদলাচ্ছে বেশ ধীরে ধীরে।
একই সাথে বাংলাদেশের সমাজে রয়েছে ভিন্নতায় অরুচি।
নতুন ধরনের এই জীবনাচরণের জন্য প্রস্তুতও নয় বাংলাদেশের সমাজ।
অধ্যাপক নাসরিনের মতে সেখানেই দ্বন্দ্ব।
“বাংলাদেশে সামাজিকীকরণটাই হলও একটি বয়সের পর বিয়ে করে মানুষ সংসারী হবে। সবাই একই রকম হবে। অবিবাহিত নারী পুরুষের সংখ্যা বাড়লেও সমাজ বা রাষ্ট্র তাদের কোন ক্যাটাগরিতে ফেলে না”
অধ্যাপক নাসরিনের মতে বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে তৈরি হয়েছে অবিশ্বাসের সংস্কৃতি।
নিরাপত্তার আশংকা থেকে একটু ভিন্ন ধরনের মানুষের প্রতি তাই নেতিবাচক মনোভাব।
সেই মনোভাব না বদলানো পর্যন্ত জর্জ ডি কস্তার মতো মানুষেরা রয়ে যাবেন উটকো ব্যাচেলরের তালিকায়।
No comments