ওরা ৭ জন, স্যার স্যার শব্দ শোনা গেছে ফেলে দেয়ার দুই ঘণ্টা আগে by দীন ইসলাম
ফেলে
দেয়ার দুই ঘণ্টা আগে ‘স্যার স্যার’ শব্দ শুনেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও
সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ। এ সময় একজনের মুখ থেকে ‘সাত
জন’ এক সঙ্গে যাওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা এ বিষয়টিও শুনেছেন। গতকাল দ্বিতীয়
দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদে মেঘালয় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তাকে
এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। এদিন বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সিভিল হাসপাতালের
আন্ডার ট্রায়াল প্রিজনার (ইউটিপি) রুমে গিয়ে গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর
জ্যোতিমালা সালাহউদ্দিনকে প্রায় আধাঘণ্টা জেরা করেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে টানা
দ্বিতীয় দিনেরমতো জানতে চান নানা বিষয়। এ সময় সালাহউদ্দিন বৃহস্পতিবারের
মতো পুরনো ঘটনা উল্লেখ করে নতুন করে আরও কিছু তথ্য দেন গোয়েন্দা সংস্থার
সদস্যকে। তবে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে গতকালও সাক্ষাৎ করেন সালাহউদ্দিনের
আত্মীয় আইয়ুব আলী ও বাবলু। মানবজমিনকে তারা জানান, ভাই আমাদের নিষেধ করে
দিয়েছেন যেন টুঁ শব্দটিও না করি। তাহলে নাকি তার (সালাহউদ্দিন) ক্ষতি হতে
পারে। আমরা ভাইকে বিষয়গুলো বাইরের কাউকে জানাবো না বলে নিশ্চয়তা দিয়েছি।
তারা বলেন, হাসিনা ভাবী আমাদের পাঠিয়েছেন যেন ভাইকে ঠিকভাবে দেখা শোনা করি।
তার খোঁজ-খবর নিই। এ দায়বদ্ধতার কারণে ছুটে এসেছি। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা
ভয় পাচ্ছি। আমাদের কপালে অন্য কোন খারাপ বিষয় আছে কিনা। সেটা দেশে ফেরার পর
টের পাবো। দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদে সালাহউদ্দিন কি বলেছেন এমন প্রশ্নের
জবাবে বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় আমরা পাশে ছিলাম না।
দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদেও নানা তথ্য: চোখ বেঁধে শিলং নিয়ে আসার বিষয়ে দ্বিতীয় দিনও গোয়েন্দা সদস্যকে বলেছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাকে নিয়ে আসার সময় কয়েক দফা গাড়ি বদলের কথাও বলেছেন তিনি। যে জায়গায় তাকে ফেলে যাওয়া হয় ওই জায়গাটি তিনি নিজেই উদ্ধার করেছেন। ফেলে যাওয়ার এক ঘণ্টা পর তিনি জানতে পারেন এলাকাটি শিলং গলফ লিংক এলাকা। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় নিজেই পুলিশ স্টেশনে গিয়ে নিজের পরিচয় দেন বলে জানান। সালাহউদ্দিন জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, একটা জায়গায় গাড়ি বদলের সময় ‘স্যার স্যার’ শব্দ শোনা গেছে। এছাড়া সাত জনের বেশি দরকার নেই বলে কাউকে কাউকে বলতে শোনা গেছে। সালাহউদ্দিনের সঙ্গে ফেলে যাওয়া ব্যক্তিরা কেমন আচরণ করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা সদস্যকে তিনি জানান, আমার চোখ বন্ধ ছিল। তাই আচরণ কিভাবে বুঝবো। তবে ফেলে যাওয়ার আগের ঘণ্টাগুলোতে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি তারা। সালাহউদ্দিনের আত্মীয়-স্বজনরা জানান, শিলংয়ে ফেলে যাওয়া ও পূর্বাপর কয়েক ঘণ্টা সম্পর্কেই জানতে চাইছেন গোয়েন্দারা। এর বাইরে গুম হওয়ার ৬২ দিন সম্পর্কে কিছুই জানতে চাইছেন না ভারতীয় গোয়েন্দারা।
ভীত সালাহউদ্দিন ও তার শুভানুধ্যায়ীরা: উত্তরার বাসা থেকে তুলে নেয়ার টানা দুই মাস পর সীমান্তের ওপারে ‘মুক্ত’ সালাহউদ্দিন আহমেদের মনোবল ফিরতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসা স্বজনরা। দীর্ঘদিন আটকে রাখা ও মেঘালয়ে ‘চোখ বাঁধা’ অবস্থায় ছেড়ে দেয়ার পর শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বিএনপির এ যুগ্ম মহাসচিব। এ কারণে তাকে প্রথমে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করেছিল মেঘালয় পুলিশ। পুলিশের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কয়েকজন আত্মীয় সাক্ষাৎ করেছেন। তারা জানিয়েছেন ধীরে ধীরে তিনি মনোবল ফিরে পাচ্ছেন। তুলে নেয়ার পর থেকে তিনি কোথায় কিভাবে ছিলেন এ বিষয়েও তিনি কথা বলেছেন। কিছুক্ষণ কথা বলার পর এক অজানা আতঙ্ক তাকে ভর করছে। রাজনৈতিক সহকর্মীদের সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন, কাউকে কোন কথা বলবি না। এমন কথার টের পাওয়া গেল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে। সিভিল হাসপাতালের প্রিজন সেলের দিকে ওষুধ ও খাবার নিয়ে আসেন আইয়ুব আলী, বাবলু ও আরেকজন (নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যক্তিটির অনুরোধে নাম গোপন রাখা হলো)। এ সময় মিডিয়াকর্মীরা তাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিটি রেগে গিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভাই আপনারা এইভাবে আমাদের ছবি তুলছেন কেন? আপনারা এভাবে ছবি তুলে বাংলাদেশে প্রকাশ করলে দেশে আমরা চলাফেরা করতে পারবো না। ভাইয়ের (সালাহউদ্দিন) মতো আমাদেরও গুম হয়ে যেতে হবে। ভাইকে দয়া করে ফেলে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের কেউ দয়া করে ফেলে যাবে না।
আইনজীবীকে নিয়ে সহ-দপ্তর সম্পাদক জনির মামলা মোকাবিলার প্রস্তুতি: মেঘালয় বারের আইনজীবী রাকেশ মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপি’র সহ- দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি। ওই সাক্ষাতেই শিলং সদর পুলিশ স্টেশনে দায়ের করা মামলা নং- ১৪৩, তারিখ ১১ই মে ২০১৫ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এরপর প্রিজন সেল থেকে বাইরে বেরিয়ে মিডিয়া কর্মীদের দেখে অনেকটা জড়োসড়ো হয়ে যান জনি। আইয়ুব আলীকে সামনে এগিয়ে দিয়ে মিডিয়াকে এড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে যান। এরপর থেকে প্রায় একদিন লাপাত্তা হয়ে যান তিনি। সিভিল হসপিটালের কাছে পূর্বাশা হোটেলে প্রথমদিন উঠে ওই হোটেলটিও ছেড়ে দেন।
সোমবার সালাহউদ্দিনকে কোর্টে উঠানোর সম্ভাবনা বেশি: আজ ও কাল ভারতে সরকারি ছুটি। তাই অতি জরুরি না হলে মেঘালয়ে কোন নিম্ন আদালত বসবে না। রোববার ভিসা পেয়ে শিলংয়ে আসতে পারেন সালাহউদ্দিনের স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ। তাই সব মিলিয়ে সোমবারের আগে সালাহউদ্দিনকে কোর্টে উঠানোর সম্ভাবনা কম। মেঘালয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) এম. খাখরান এ বিষয়ে মানবজমিনকে জানালেন, ডাক্তারদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি মিললেই আমরা তাকে (সালাহউদ্দিন) কোর্টে তুলবো। এর বাইরে কিছু করতে পারছি না। কবে নাগাদ সেটা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাল (আজ) ও পরশু (কাল) সরকারি ছুটি। তাই রোববার বা সোমবারই তাকে কোর্টে উঠানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
সালাহউদ্দিনের সুস্থ বা অসুস্থতার সার্টিফিকেট দেবে ডাক্তার: সালাহউদ্দিন পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। চর্ম, কিডনি, হার্টসহ নানা অসুখ তাকে ভোগাচ্ছে। এ কারণে তাকে কোর্টে হাজির করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার (সিটি) বিবেক সিয়াম মানবজমিনকে জানান, সুস্থ বা অসুস্থতার সার্টিফিকেট দেবেন একমাত্র ডাক্তার। আমরা কিভাবে এর সার্টিফিকেট দেবো। ডাক্তারের সুস্থতার সার্টিফিকেট পেলে তাকে কোর্টে হাজির করা হবে। এর বাইরে আপাতত কিছু ভাবছি না।
ঘুপচি ঘরে থাকায় সালাহউদ্দিনের চর্মরোগ, গলব্লাডারে স্টোন
ঘুপচি ঘরে টানা দুই মাস থাকায় সালাহউদ্দিনের চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। এছাড়া গলব্লাডারে বড় সাইজের স্টোন দেখা গেছে। গতকাল সিভিল হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এমনটাই ধরা পড়েছে বলে সালাহউদ্দিনের আত্মীয় আইয়ুব আলী মানবজমিনকে জানালেন। তিনি বলেন, ভাইয়ের কিডনি সমস্যা খুব একটা গুরুতর নয়। তবে হার্টের সমস্যাটা খুব বেশি গুরুতর। শিলংয়ের সিভিল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চর্মরোগের জন্য পাঁচ ধরনের ওষুধ দেয়া হয়েছে সালাহউদ্দিনকে। গতকাল এ ওষুধগুলো প্রথমবারের মতো তাকে দেয়া হয়। এর মধ্যে কয়েকটি ওষুধ বাহ্যিকভাবে লাগাতে হবে। আর কয়েকটি খেতে হবে। গতকাল বেলা সোয়া ১২টার দিকে সরেজমিন সিভিল হাসপাতালের আন্ডার ট্রায়াল প্রিজনার (ইউটিপি) রুমের সামনে গিয়ে দেখা যায়, এক নার্স সালাহউদ্দিনের কোন আত্মীয়-স্বজনকে ওষুধ কিনে এনে দেয়ার জন্য খুঁজছে। তবে ওই সময় সালাহউদ্দিনের কোন আত্মীয়- স্বজনকে খুঁজে পায়নি। পৌনে একটার দিকে সালাহউদ্দিনের আত্মীয়-স্বজনরা খাবার ও ওষুধ নিয়ে আসেন। সালাহউদ্দিনের আত্মীয় আইয়ুব আলী মানবজমিনকে জানান, প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ কিনে দেয়া হয়েছে। এগুলো সবই চর্ম রোগের ওষুধ। ভাইয়ের গলব্লাডারে স্টোনও ধরা পড়েছে। ডাক্তাররা বলেছেন, বদ্ধ ছোট ঘরের মধ্যে থাকলে এমন ধরনের চর্মরোগ হয়। তিনি বলেন, সিভিল হাসপাতাল বেশির ভাগ ওষুধই কিনে দেয়। হাসপাতালে যে ওষুধ নেই তা বাইরে থেকে কিনে দিতে হচ্ছে। বেলা দেড়টার দিকে সিভিল হাসপাতালের সামনে সরজমিনে দেখা যায়, প্লেট ও গ্লাস নিয়ে এসেছেন সালাহউদ্দিনের আত্মীয়-স্বজনরা। এরপর তাকে একটি খাওয়ার চামচও এনে দেয়া হয়।
‘ওজন কমেছে ১৫ কেজি’
তুলে নেয়ার পর দুই মাস নিখোঁজ ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। এই সময়ে তিনি কোথায় কিভাবে ছিলেন এ প্রশ্নের জবাব মিলেনি এখনও। তবে এই সময়ে তিনি যে খুব ভাল ছিলেন না তা প্রমাণ হয় শারীরিক অবস্থা থেকে। ঘুপচি পরিবেশে থাকায় তার শরীরে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। খাবার স্বল্পতা আর দুশ্চিন্তায় এই সময়ে ওজন কমেছে ১৫ কেজি। গতকাল বিকালে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসে এ তথ্য জানিয়েছেন। হাসপাতালের বাইরে তিনি মানবজমিনকে বলেন, তিনি এখনও শারীরিকভাবে অসুস্থবোধ করছেন। তার বুকে ব্যথা বেড়েছে। কিডনি সমস্যা দেখা দিয়েছে। ওজন ১৫ কেজি কমেছে। তিনি বলেন, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা দেয়ায় সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। অপহরণ ও কারা তাকে মেঘালয়ে ফেলে গেছে এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ এখনও স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। ভারতে আইনী লড়াইয়ের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ শিলং আসবেন। তিনি আসলে এ বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদেও নানা তথ্য: চোখ বেঁধে শিলং নিয়ে আসার বিষয়ে দ্বিতীয় দিনও গোয়েন্দা সদস্যকে বলেছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাকে নিয়ে আসার সময় কয়েক দফা গাড়ি বদলের কথাও বলেছেন তিনি। যে জায়গায় তাকে ফেলে যাওয়া হয় ওই জায়গাটি তিনি নিজেই উদ্ধার করেছেন। ফেলে যাওয়ার এক ঘণ্টা পর তিনি জানতে পারেন এলাকাটি শিলং গলফ লিংক এলাকা। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় নিজেই পুলিশ স্টেশনে গিয়ে নিজের পরিচয় দেন বলে জানান। সালাহউদ্দিন জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, একটা জায়গায় গাড়ি বদলের সময় ‘স্যার স্যার’ শব্দ শোনা গেছে। এছাড়া সাত জনের বেশি দরকার নেই বলে কাউকে কাউকে বলতে শোনা গেছে। সালাহউদ্দিনের সঙ্গে ফেলে যাওয়া ব্যক্তিরা কেমন আচরণ করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা সদস্যকে তিনি জানান, আমার চোখ বন্ধ ছিল। তাই আচরণ কিভাবে বুঝবো। তবে ফেলে যাওয়ার আগের ঘণ্টাগুলোতে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি তারা। সালাহউদ্দিনের আত্মীয়-স্বজনরা জানান, শিলংয়ে ফেলে যাওয়া ও পূর্বাপর কয়েক ঘণ্টা সম্পর্কেই জানতে চাইছেন গোয়েন্দারা। এর বাইরে গুম হওয়ার ৬২ দিন সম্পর্কে কিছুই জানতে চাইছেন না ভারতীয় গোয়েন্দারা।
ভীত সালাহউদ্দিন ও তার শুভানুধ্যায়ীরা: উত্তরার বাসা থেকে তুলে নেয়ার টানা দুই মাস পর সীমান্তের ওপারে ‘মুক্ত’ সালাহউদ্দিন আহমেদের মনোবল ফিরতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসা স্বজনরা। দীর্ঘদিন আটকে রাখা ও মেঘালয়ে ‘চোখ বাঁধা’ অবস্থায় ছেড়ে দেয়ার পর শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বিএনপির এ যুগ্ম মহাসচিব। এ কারণে তাকে প্রথমে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করেছিল মেঘালয় পুলিশ। পুলিশের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কয়েকজন আত্মীয় সাক্ষাৎ করেছেন। তারা জানিয়েছেন ধীরে ধীরে তিনি মনোবল ফিরে পাচ্ছেন। তুলে নেয়ার পর থেকে তিনি কোথায় কিভাবে ছিলেন এ বিষয়েও তিনি কথা বলেছেন। কিছুক্ষণ কথা বলার পর এক অজানা আতঙ্ক তাকে ভর করছে। রাজনৈতিক সহকর্মীদের সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন, কাউকে কোন কথা বলবি না। এমন কথার টের পাওয়া গেল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে। সিভিল হাসপাতালের প্রিজন সেলের দিকে ওষুধ ও খাবার নিয়ে আসেন আইয়ুব আলী, বাবলু ও আরেকজন (নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যক্তিটির অনুরোধে নাম গোপন রাখা হলো)। এ সময় মিডিয়াকর্মীরা তাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিটি রেগে গিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভাই আপনারা এইভাবে আমাদের ছবি তুলছেন কেন? আপনারা এভাবে ছবি তুলে বাংলাদেশে প্রকাশ করলে দেশে আমরা চলাফেরা করতে পারবো না। ভাইয়ের (সালাহউদ্দিন) মতো আমাদেরও গুম হয়ে যেতে হবে। ভাইকে দয়া করে ফেলে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের কেউ দয়া করে ফেলে যাবে না।
আইনজীবীকে নিয়ে সহ-দপ্তর সম্পাদক জনির মামলা মোকাবিলার প্রস্তুতি: মেঘালয় বারের আইনজীবী রাকেশ মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপি’র সহ- দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি। ওই সাক্ষাতেই শিলং সদর পুলিশ স্টেশনে দায়ের করা মামলা নং- ১৪৩, তারিখ ১১ই মে ২০১৫ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এরপর প্রিজন সেল থেকে বাইরে বেরিয়ে মিডিয়া কর্মীদের দেখে অনেকটা জড়োসড়ো হয়ে যান জনি। আইয়ুব আলীকে সামনে এগিয়ে দিয়ে মিডিয়াকে এড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে যান। এরপর থেকে প্রায় একদিন লাপাত্তা হয়ে যান তিনি। সিভিল হসপিটালের কাছে পূর্বাশা হোটেলে প্রথমদিন উঠে ওই হোটেলটিও ছেড়ে দেন।
সোমবার সালাহউদ্দিনকে কোর্টে উঠানোর সম্ভাবনা বেশি: আজ ও কাল ভারতে সরকারি ছুটি। তাই অতি জরুরি না হলে মেঘালয়ে কোন নিম্ন আদালত বসবে না। রোববার ভিসা পেয়ে শিলংয়ে আসতে পারেন সালাহউদ্দিনের স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ। তাই সব মিলিয়ে সোমবারের আগে সালাহউদ্দিনকে কোর্টে উঠানোর সম্ভাবনা কম। মেঘালয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) এম. খাখরান এ বিষয়ে মানবজমিনকে জানালেন, ডাক্তারদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি মিললেই আমরা তাকে (সালাহউদ্দিন) কোর্টে তুলবো। এর বাইরে কিছু করতে পারছি না। কবে নাগাদ সেটা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাল (আজ) ও পরশু (কাল) সরকারি ছুটি। তাই রোববার বা সোমবারই তাকে কোর্টে উঠানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
সালাহউদ্দিনের সুস্থ বা অসুস্থতার সার্টিফিকেট দেবে ডাক্তার: সালাহউদ্দিন পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। চর্ম, কিডনি, হার্টসহ নানা অসুখ তাকে ভোগাচ্ছে। এ কারণে তাকে কোর্টে হাজির করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার (সিটি) বিবেক সিয়াম মানবজমিনকে জানান, সুস্থ বা অসুস্থতার সার্টিফিকেট দেবেন একমাত্র ডাক্তার। আমরা কিভাবে এর সার্টিফিকেট দেবো। ডাক্তারের সুস্থতার সার্টিফিকেট পেলে তাকে কোর্টে হাজির করা হবে। এর বাইরে আপাতত কিছু ভাবছি না।
ঘুপচি ঘরে থাকায় সালাহউদ্দিনের চর্মরোগ, গলব্লাডারে স্টোন
ঘুপচি ঘরে টানা দুই মাস থাকায় সালাহউদ্দিনের চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। এছাড়া গলব্লাডারে বড় সাইজের স্টোন দেখা গেছে। গতকাল সিভিল হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এমনটাই ধরা পড়েছে বলে সালাহউদ্দিনের আত্মীয় আইয়ুব আলী মানবজমিনকে জানালেন। তিনি বলেন, ভাইয়ের কিডনি সমস্যা খুব একটা গুরুতর নয়। তবে হার্টের সমস্যাটা খুব বেশি গুরুতর। শিলংয়ের সিভিল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চর্মরোগের জন্য পাঁচ ধরনের ওষুধ দেয়া হয়েছে সালাহউদ্দিনকে। গতকাল এ ওষুধগুলো প্রথমবারের মতো তাকে দেয়া হয়। এর মধ্যে কয়েকটি ওষুধ বাহ্যিকভাবে লাগাতে হবে। আর কয়েকটি খেতে হবে। গতকাল বেলা সোয়া ১২টার দিকে সরেজমিন সিভিল হাসপাতালের আন্ডার ট্রায়াল প্রিজনার (ইউটিপি) রুমের সামনে গিয়ে দেখা যায়, এক নার্স সালাহউদ্দিনের কোন আত্মীয়-স্বজনকে ওষুধ কিনে এনে দেয়ার জন্য খুঁজছে। তবে ওই সময় সালাহউদ্দিনের কোন আত্মীয়- স্বজনকে খুঁজে পায়নি। পৌনে একটার দিকে সালাহউদ্দিনের আত্মীয়-স্বজনরা খাবার ও ওষুধ নিয়ে আসেন। সালাহউদ্দিনের আত্মীয় আইয়ুব আলী মানবজমিনকে জানান, প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ কিনে দেয়া হয়েছে। এগুলো সবই চর্ম রোগের ওষুধ। ভাইয়ের গলব্লাডারে স্টোনও ধরা পড়েছে। ডাক্তাররা বলেছেন, বদ্ধ ছোট ঘরের মধ্যে থাকলে এমন ধরনের চর্মরোগ হয়। তিনি বলেন, সিভিল হাসপাতাল বেশির ভাগ ওষুধই কিনে দেয়। হাসপাতালে যে ওষুধ নেই তা বাইরে থেকে কিনে দিতে হচ্ছে। বেলা দেড়টার দিকে সিভিল হাসপাতালের সামনে সরজমিনে দেখা যায়, প্লেট ও গ্লাস নিয়ে এসেছেন সালাহউদ্দিনের আত্মীয়-স্বজনরা। এরপর তাকে একটি খাওয়ার চামচও এনে দেয়া হয়।
‘ওজন কমেছে ১৫ কেজি’
তুলে নেয়ার পর দুই মাস নিখোঁজ ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। এই সময়ে তিনি কোথায় কিভাবে ছিলেন এ প্রশ্নের জবাব মিলেনি এখনও। তবে এই সময়ে তিনি যে খুব ভাল ছিলেন না তা প্রমাণ হয় শারীরিক অবস্থা থেকে। ঘুপচি পরিবেশে থাকায় তার শরীরে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। খাবার স্বল্পতা আর দুশ্চিন্তায় এই সময়ে ওজন কমেছে ১৫ কেজি। গতকাল বিকালে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসে এ তথ্য জানিয়েছেন। হাসপাতালের বাইরে তিনি মানবজমিনকে বলেন, তিনি এখনও শারীরিকভাবে অসুস্থবোধ করছেন। তার বুকে ব্যথা বেড়েছে। কিডনি সমস্যা দেখা দিয়েছে। ওজন ১৫ কেজি কমেছে। তিনি বলেন, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা দেয়ায় সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। অপহরণ ও কারা তাকে মেঘালয়ে ফেলে গেছে এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ এখনও স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। ভারতে আইনী লড়াইয়ের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ শিলং আসবেন। তিনি আসলে এ বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
No comments