গৃহকর্মী-শিক্ষার্থীদের ভিক্ষুক সাজিয়ে ভিক্ষুক সমাবেশ!
ভিক্ষুক সমাবেশের ব্যানার। ছবি: মানসুরা হোসাইন |
ভিক্ষুক মোতাহার সমাবেশের পুরো সময় সিঁড়ির কাছে বসে কাটান। ছবি: মানসুরা হোসাইন |
ভিক্ষুক সমাবেশের উপস্থিতি (অতিথিসহ)। ছবি: সংগৃহীত |
নিজেদের ভিক্ষুক হিসেবে পরিচয় দেওয়া কয়েকজন |
অন্যদের ছবি তুলতে দেখে এগিয়ে এলেন একজন প্রবীণ নারী। ছবি তোলার পর জানালেন তিনি ভিক্ষুক নন। ছবি: মানসুরা হোসাইন |
সমাবেশে স্কুল পড়ুয়া কয়েকজন শিশু। ছবি: মানসুরা হোসাইন |
আপনি
কি ভিক্ষা করেন? প্রশ্ন শুনে চমকে উঠলেন ফুলজান বিবি। সজোরে মাথা নেড়ে
বললেন, ‘না বাবা, আমি ভিক্ষা করি না’। শহরবানু বললেন, ‘আমি বাসা বাড়িতে
কাজ কইরা খাই। কী লজ্জার কথা! ভিক্ষা করব ক্যান? ’
তাহলে এ অনুষ্ঠানে এসেছেন কেন? মাথায় কাগজের যে ক্যাপ লাগিয়েছেন তাতেও লেখা আছে-‘ভিক্ষার হাত বাড়াব না, কর্মে নিব শিক্ষা’। এ কথা শুনে তাঁরা জানালেন, এলাকার অনেকেই এখানে আনা হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে তাঁরাও এসেছেন।
ক্যাপে কী লেখা আছে তা তাঁরা জানেন না। ‘এইডা কি মাথা থেইক্যা খুইল্যা ফালামু’ বলে একজন উল্টো প্রশ্ন করলেন।
ফুলজান বিবি, শহরবানু এসেছেন ‘জাতীয় ভিক্ষুক সমাবেশে’। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো পাশে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনে এ সমাবেশের আয়োজন করে ‘উৎস-উন্নয়ন ত্বরান্বিত সংস্থা’। তবে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁদের বেশির ভাগই ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত নন।
অনুষ্ঠান শুরুর কথা ছিল সকাল ১০টায়, শুরু হয় দুপুর ১২টায়। এ সময় প্রতিবেদক অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের পরে টেলিফোনে উৎস-উন্নয়ন ত্বরান্বিত সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস প্রথম আলোকে জানান, অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ১০০ জন। আর ভিক্ষুক ছিলেন ৪০০ জন। এই ৪০০ জনের সবাই কি ভিক্ষুক?—এ পশ্নের জবাবে জান্নাতুল বলেন, ‘জি, সবাই প্রফেশনাল ভিক্ষুক।’
প্রথম আলোর কাছে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই জানিয়েছেন তাঁরা ভিক্ষুক নন, এবং আজকের আয়োজন সম্পর্কেও কিছু জানেন না—এমন কথা বলার পর জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘সবাই তো আর আসেনি। আর আমিও সবাইকে চিনি না।’
ভিক্ষুক সমাবেশকে কেন্দ্র করে আয়োজক সংস্থা একটি র্যালির আয়োজন করে। র্যালিতে পাঁচটি ঘোড়ার গাড়ি ছিল। ছিল ব্যান্ডের বাজনাও। তবে ঘোড়ার গাড়িতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নুরুল কবীর, উৎসের নির্বাহী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌসসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা ওঠেন। আর ভিক্ষুকদের কয়েকজন ঘোড়ার গাড়ির সামনে হেঁটে যান।
এ র্যালিতে ‘অজনা মাশরুম ফুড প্রোডাক্টস’ এর মোবাইল ভ্যানও অংশ নেয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নারীরা বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁরা রাজধানীতে ভ্যানে করে মাশরুম বিক্রি করবেন। তবে সবুজ জমিনে ও লাল পাড়ের শাড়ি ও সাদা সবুজ পোশাক পরা নারীরা জানালেন, তাঁরা এ বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ পাননি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। এর বাইরে প্রায় ২৫ জনের নাম ছিল বিশেষ অতিথির তালিকায়। তবে শেষ পর্যন্ত সবাই উপস্থিত হননি এবং সময় স্বল্পতার কারণে বক্তব্যও দেননি। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল ইসলামসহ বিশেষ অতিথির হাতে উৎস সম্মাননা ২০১৫ তুলে দেওয়া হয়।
ভিক্ষুক সমাবেশে শিশু কিশোরের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। সমাবেশে মাথায় ক্যাপ লাগানো সজিব, রবিউলসহ বেশ কয়েকজন শিশু ও কিশোরীও জানাল, তারা স্কুলে পড়াশোনা করে। তাদের কেউ বা পরিবারের কেউ ভিক্ষা করে না।
ঝর্ণা মিরপুর ১২ নম্বরে একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা খেতে কাজ করেন আর মা মানুষের বাসায় কাজ করেন। ঝর্ণাও অন্যদের মতোই এখানে কিছু না জেনেই এসেছে। তাদের সবাইকে গাড়ি ভাড়া করে আনা হয়েছে। আবার গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দেওয়া হবে।
তবে উৎসের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করা পারভীন আক্তার বললেন, বাচ্চারা ভিক্ষা না করলেও তাদের বাবা, মা, দাদি, নানি কেউ না কেউ ভিক্ষা করে। তারা দেখতে এসেছে।
সমাবেশে স্বল্প সংখ্যক ভিক্ষুকও উপস্থিত ছিলেন। মিরপুরের কালাপানি এলাকার রূপবানকে ভিক্ষা করেন কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘কাইল যে ঘরে খাওন ছিল না কেউ তো জিগাইনি আমি খাইছি কি না? ’
উৎস তো আপনাদের বিভিন্ন সহায়তা দিচ্ছে যাতে করে আপনাদের আর ভিক্ষা করতে না হয়-এ প্রশ্নের উত্তরে রূপবান বলেন, ‘তিন বছর আগে পাঁচ হাজার ট্যাহা দিছিল। কিন্তু এই ট্যাহা দিয়া কি কিছু করন যায়? ’
নাদিম জানালেন, তিনি রিকশা চালান, তবে তাঁর মা ভিক্ষা করেন। তাঁর ভাষায় ‘পেট তো চালাইতে হইবো।’ মারুফার এক হাত ও পায়ে শক্তি নেই। দেড় মাস বয়সী সন্তান কোলে নিয়েই তিনি ভিক্ষা করেন বলে জানালেন।
হাইকোর্ট এলাকা থেকে এসেছেন মোতাহার। ঠেলাগাড়িতেই বলতে গেলে তাঁর পুরো সংসার। তাঁর পাশেই বসা একই এলাকার শাহিদা ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটেন। আরও কয়েকজন প্রবীণ ভিক্ষুক বিএমএ ভবনের সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতেই পারেননি। তাঁরা সিঁড়ির কাছেই বসে থাকেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী বলেন, ‘মন্ত্রী হিসেবে যেদিন শপথ নেই তার তিন দিনের মাথায় এই মহিলার (জান্নাতুল ফেরদৌস) সঙ্গে পরিচয়। এ মহিলাকে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তিনি কারও কাছ থেকে কোনো সাহায্য না নিয়ে মাশরুম বিক্রি করে মনের আবেগ দিয়ে কাজ করছেন। তাঁর আরাধনা পূরণ হোক সেই আশীর্বাদ করি। আমার মন্ত্রণালয় এই মহিলাকে সর্বোত্তমভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত।’
মন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের সামান্য কিছুতে খুঁত না ধরে বৃহত্তম স্বার্থে জান্নাতুল ফেরদৌসের কার্যক্রম প্রচারের জন্য আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘বেতন ভাতা দিতে হবে না, স্বেচ্ছাশ্রম দেব। আমি ভিক্ষুকদের নিয়ে সরকারের শেল্টার হোম পরিচালনার দায়িত্ব চাই। কীভাবে দেবেন তা আমি জানি না।’
মন্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের বক্তব্যের মধ্যে মঞ্চে বসেই জান্নাতুল ফেরদৌসকে দায়িত্ব দেওয়ার ঘোষণা দেন।
নির্বাহী পরিচালকের বক্তব্য: উৎস এনজিও ১৯৯৯ সাল থেকে কাজ করছে বলেও জানালেন জান্নাতুল ফেরদৌস। তবে এ পর্যন্ত কতজন ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়েছে তা ‘লিস্টে লেখা নেই’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে ভিক্ষুকসহ এ পর্যন্ত ৩ হাজারের বেশি মানুষের পুনর্বাসন করেছেন।
ভিক্ষুকদের দিয়ে মাশরুম চাষ করিয়ে সেই মাশরুম থেকে যে আয় তা দিয়েই ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করেন বলেও জানালেন জান্নাতুল। তবে আজকের অনুষ্ঠানে যাঁরা মাশরুমের ভ্যান পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে কেউ ভিক্ষুক নন। কেউ কেউ শিক্ষিত। কয়েকজন জান্নাতুল ফেরদৌসের আত্মীয়। একজন জানালেন, তাঁকে আনসারের প্রশিক্ষণের কথা বলে আনা হয়েছে। বাসাবাড়িতে কাজ করা মিরপুরের এক নারী জানালেন, তিনি আজকেই প্রথম এসেছেন। তবে জান্নাতুল ফেরদৌস দাবি করেন, তাঁদের সবাইকে মাশরুম চাষ নিয়ে সাত দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
তাহলে এ অনুষ্ঠানে এসেছেন কেন? মাথায় কাগজের যে ক্যাপ লাগিয়েছেন তাতেও লেখা আছে-‘ভিক্ষার হাত বাড়াব না, কর্মে নিব শিক্ষা’। এ কথা শুনে তাঁরা জানালেন, এলাকার অনেকেই এখানে আনা হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে তাঁরাও এসেছেন।
ক্যাপে কী লেখা আছে তা তাঁরা জানেন না। ‘এইডা কি মাথা থেইক্যা খুইল্যা ফালামু’ বলে একজন উল্টো প্রশ্ন করলেন।
ফুলজান বিবি, শহরবানু এসেছেন ‘জাতীয় ভিক্ষুক সমাবেশে’। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো পাশে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনে এ সমাবেশের আয়োজন করে ‘উৎস-উন্নয়ন ত্বরান্বিত সংস্থা’। তবে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁদের বেশির ভাগই ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত নন।
অনুষ্ঠান শুরুর কথা ছিল সকাল ১০টায়, শুরু হয় দুপুর ১২টায়। এ সময় প্রতিবেদক অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের পরে টেলিফোনে উৎস-উন্নয়ন ত্বরান্বিত সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস প্রথম আলোকে জানান, অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ১০০ জন। আর ভিক্ষুক ছিলেন ৪০০ জন। এই ৪০০ জনের সবাই কি ভিক্ষুক?—এ পশ্নের জবাবে জান্নাতুল বলেন, ‘জি, সবাই প্রফেশনাল ভিক্ষুক।’
প্রথম আলোর কাছে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই জানিয়েছেন তাঁরা ভিক্ষুক নন, এবং আজকের আয়োজন সম্পর্কেও কিছু জানেন না—এমন কথা বলার পর জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘সবাই তো আর আসেনি। আর আমিও সবাইকে চিনি না।’
ভিক্ষুক সমাবেশকে কেন্দ্র করে আয়োজক সংস্থা একটি র্যালির আয়োজন করে। র্যালিতে পাঁচটি ঘোড়ার গাড়ি ছিল। ছিল ব্যান্ডের বাজনাও। তবে ঘোড়ার গাড়িতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নুরুল কবীর, উৎসের নির্বাহী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌসসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা ওঠেন। আর ভিক্ষুকদের কয়েকজন ঘোড়ার গাড়ির সামনে হেঁটে যান।
এ র্যালিতে ‘অজনা মাশরুম ফুড প্রোডাক্টস’ এর মোবাইল ভ্যানও অংশ নেয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নারীরা বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁরা রাজধানীতে ভ্যানে করে মাশরুম বিক্রি করবেন। তবে সবুজ জমিনে ও লাল পাড়ের শাড়ি ও সাদা সবুজ পোশাক পরা নারীরা জানালেন, তাঁরা এ বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ পাননি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। এর বাইরে প্রায় ২৫ জনের নাম ছিল বিশেষ অতিথির তালিকায়। তবে শেষ পর্যন্ত সবাই উপস্থিত হননি এবং সময় স্বল্পতার কারণে বক্তব্যও দেননি। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল ইসলামসহ বিশেষ অতিথির হাতে উৎস সম্মাননা ২০১৫ তুলে দেওয়া হয়।
ভিক্ষুক সমাবেশে শিশু কিশোরের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। সমাবেশে মাথায় ক্যাপ লাগানো সজিব, রবিউলসহ বেশ কয়েকজন শিশু ও কিশোরীও জানাল, তারা স্কুলে পড়াশোনা করে। তাদের কেউ বা পরিবারের কেউ ভিক্ষা করে না।
ঝর্ণা মিরপুর ১২ নম্বরে একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা খেতে কাজ করেন আর মা মানুষের বাসায় কাজ করেন। ঝর্ণাও অন্যদের মতোই এখানে কিছু না জেনেই এসেছে। তাদের সবাইকে গাড়ি ভাড়া করে আনা হয়েছে। আবার গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দেওয়া হবে।
তবে উৎসের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করা পারভীন আক্তার বললেন, বাচ্চারা ভিক্ষা না করলেও তাদের বাবা, মা, দাদি, নানি কেউ না কেউ ভিক্ষা করে। তারা দেখতে এসেছে।
সমাবেশে স্বল্প সংখ্যক ভিক্ষুকও উপস্থিত ছিলেন। মিরপুরের কালাপানি এলাকার রূপবানকে ভিক্ষা করেন কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘কাইল যে ঘরে খাওন ছিল না কেউ তো জিগাইনি আমি খাইছি কি না? ’
উৎস তো আপনাদের বিভিন্ন সহায়তা দিচ্ছে যাতে করে আপনাদের আর ভিক্ষা করতে না হয়-এ প্রশ্নের উত্তরে রূপবান বলেন, ‘তিন বছর আগে পাঁচ হাজার ট্যাহা দিছিল। কিন্তু এই ট্যাহা দিয়া কি কিছু করন যায়? ’
নাদিম জানালেন, তিনি রিকশা চালান, তবে তাঁর মা ভিক্ষা করেন। তাঁর ভাষায় ‘পেট তো চালাইতে হইবো।’ মারুফার এক হাত ও পায়ে শক্তি নেই। দেড় মাস বয়সী সন্তান কোলে নিয়েই তিনি ভিক্ষা করেন বলে জানালেন।
হাইকোর্ট এলাকা থেকে এসেছেন মোতাহার। ঠেলাগাড়িতেই বলতে গেলে তাঁর পুরো সংসার। তাঁর পাশেই বসা একই এলাকার শাহিদা ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটেন। আরও কয়েকজন প্রবীণ ভিক্ষুক বিএমএ ভবনের সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতেই পারেননি। তাঁরা সিঁড়ির কাছেই বসে থাকেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী বলেন, ‘মন্ত্রী হিসেবে যেদিন শপথ নেই তার তিন দিনের মাথায় এই মহিলার (জান্নাতুল ফেরদৌস) সঙ্গে পরিচয়। এ মহিলাকে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তিনি কারও কাছ থেকে কোনো সাহায্য না নিয়ে মাশরুম বিক্রি করে মনের আবেগ দিয়ে কাজ করছেন। তাঁর আরাধনা পূরণ হোক সেই আশীর্বাদ করি। আমার মন্ত্রণালয় এই মহিলাকে সর্বোত্তমভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত।’
মন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের সামান্য কিছুতে খুঁত না ধরে বৃহত্তম স্বার্থে জান্নাতুল ফেরদৌসের কার্যক্রম প্রচারের জন্য আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘বেতন ভাতা দিতে হবে না, স্বেচ্ছাশ্রম দেব। আমি ভিক্ষুকদের নিয়ে সরকারের শেল্টার হোম পরিচালনার দায়িত্ব চাই। কীভাবে দেবেন তা আমি জানি না।’
মন্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের বক্তব্যের মধ্যে মঞ্চে বসেই জান্নাতুল ফেরদৌসকে দায়িত্ব দেওয়ার ঘোষণা দেন।
নির্বাহী পরিচালকের বক্তব্য: উৎস এনজিও ১৯৯৯ সাল থেকে কাজ করছে বলেও জানালেন জান্নাতুল ফেরদৌস। তবে এ পর্যন্ত কতজন ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়েছে তা ‘লিস্টে লেখা নেই’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে ভিক্ষুকসহ এ পর্যন্ত ৩ হাজারের বেশি মানুষের পুনর্বাসন করেছেন।
ভিক্ষুকদের দিয়ে মাশরুম চাষ করিয়ে সেই মাশরুম থেকে যে আয় তা দিয়েই ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করেন বলেও জানালেন জান্নাতুল। তবে আজকের অনুষ্ঠানে যাঁরা মাশরুমের ভ্যান পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে কেউ ভিক্ষুক নন। কেউ কেউ শিক্ষিত। কয়েকজন জান্নাতুল ফেরদৌসের আত্মীয়। একজন জানালেন, তাঁকে আনসারের প্রশিক্ষণের কথা বলে আনা হয়েছে। বাসাবাড়িতে কাজ করা মিরপুরের এক নারী জানালেন, তিনি আজকেই প্রথম এসেছেন। তবে জান্নাতুল ফেরদৌস দাবি করেন, তাঁদের সবাইকে মাশরুম চাষ নিয়ে সাত দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
No comments