‘সমাধান হতে হবে মানবিকভাবে’
আন্দামান
সাগরের বিভিন্ন নৌকায় ভাসছে প্রায় ৮ হাজার বাংলাদেশী অভিবাসী ও মিয়ানমারের
রোহিঙ্গা। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা জরুরি ভিত্তিতে এসব
শরণার্থীদের জন্য আঞ্চলিক মানবিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। থাইল্যান্ড,
মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াই মূলত ছিল ওই শরণার্থীদের গন্তব্যস্থল। কিন্তু
তিনটি দেশই সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কোন নৌকাকেই তাদের দেশের সীমানায় ভিড়তে দেয়া
হবে না। অপরদিকে সাগরে আটকে থাকা নৌকাতেই মানুষ মারা যাচ্ছে। হাজারো
অভিবাসী রয়েছে জীবনের ঝুঁকিতে। এ জটিল সংকটের কি কোন সমাধান নেই? থাকলে
সেটি কি? বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান এ ইস্যু নিয়ে চার
বিশেষজ্ঞের মতামত প্রকাশ করেছে।
লিলিয়ান ফ্যান: ব্যাংকক ভিত্তিক লিলিয়ান ফ্যান এশিয়ার মানবিক ও সংঘর্ষ সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যের ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (ওডিই) নামের একটি সংগঠনে রিসার্স অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কর্মরত। আন্দামান সাগরে চলমান অভিবাসী সংকট নিয়ে তিনি বলেন, এর সমাধানটি হতে হবে মানবিকভাবে। নিশ্চিত করতে হবে, কোন জীবনহানি যাতে না ঘটে। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় সাময়িক সহায়তার পথ খুঁজতে হবে। তার ভাষ্য, আপনাকে আঞ্চলিক পর্যায়ে একটি সমন্বিত সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে আপনাকে বার্মিজ সরকারের সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে। বিশেষ করে দেশটির রাখাইন প্রদেশটি নিয়ে। সেখানে একটি পর্যায় পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে সেখান থেকে জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের পালিয়ে যেতে না হয়। তার মতে, এটি মূলত রাষ্ট্রহীনতা ও নাগরিকত্ব সমপর্কিত একটি ইস্যু। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংগঠন আসিয়ানের এখনই উচিত হবে না, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের ইস্যুতে মিয়ানমারকে বেশি চাপ দেয়া। একে বরং মানবিকতা ও উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে অবস্থার উন্নতির লক্ষ্য হিসেবে ভাবতে হবে। শর্ত আরোপের দিকে নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে চূড়ান্ত নাগরিকত্ব ও মর্যাদার আলোচনাও চলতে থাকবে। এটি একটি লম্বা আলোচনা হবে; সহজও হবে না।
লিলিয়ান ফ্যান আরও বলেন, সাময়িক সমাধান হচ্ছে, যেসব দেশে শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীরা যাচ্ছে, সেখানে তাদের বসবাসের সংস্থান করা। একই সঙ্গে সমন্বিত এ ব্যবস্থার ওপর আসিয়ান অঞ্চলের দেশগুলোর নজর রাখার উপায়ও থাকতে হবে। একটি কর্মকৌশল ঠিক করতে হবে যাতে করে আগত অভিবাসীদের ব্যবস্থাপনার উপায় বের করা যায়। প্রত্যেক দেশে এ প্রচেষ্টা হয়তো কিছুটা ভিন্ন হবে। কিন্তু সামগ্রীক কৌশল হতে হবে এক। বাংলাদেশী অভিবাসীদের নিয়ে আলাদা চিন্তা করতে হবে। তাদের ব্যবস্থাপনা করতে হবে ভিন্ন উপায়ে।
তিনি বলেন, একটি জিনিস পরিষ্কার। সেটি হচ্ছে, তিনটি দেশই, অর্থাৎ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া এ ইস্যুটি অত্যন্ত কঠিনভাবে নিয়েছে। তারা বলছে, আমরা কোন অভিবাসী বোঝাই নৌকা দেখতে চাই না। এটা অত্যন্ত কঠিন একটি সিদ্ধান্ত। এটা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।
চার্লস সান্টিয়াগো: আসিয়ান পার্লামেন্টেরিয়ান ফর হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর)-এর চেয়ারম্যান চার্লস সান্টিয়াগো। এপিএইচআর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতের পক্ষে সেসব দেশের সাংসদদের একটি জোট। এপিএইচআর চেয়ারম্যান চার্লস সান্টিয়াগো মত দিয়েছেন, আসিয়ানের উচিত বিষয়টি মোকাবিলা করা। তার মতে, এটি এখন আর মিয়ানমারের একার ইস্যু নয়। এটি এখন আঞ্চলিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। আঞ্চলিক পর্যায়েই এ ইস্যুটি মোকাবিলা করা উচিত। বার্মার ওপর চাপ প্রয়োগের কথা যদি বলি, তাহলে অনেক উপায়ই রয়েছে।
তার ভাষ্য, সমস্যাটির শুরু হয়েছে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানে বার্মিজ সরকার অস্বীকৃতি জানানোয়। রোহিঙ্গাদের অনেকের স্থান হয়েছে বিভিন্ন বন্দিশিবিরে। তাদের জাত, গায়ের রঙ ও ধর্মের কারণে তারা নির্যাতিত হয়। এর শেষ হতে হবে।
তিনি বলেন, আসিয়ানকে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। যাতে করে রাখাইন প্রদেশের মানুষের জীবনে কিছুটা পরিবর্তন আসে। এটি হবে একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল। স্বল্পমেয়াদী কৌশল হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডকে আশ্রয়প্রার্থী মানুষকে সাময়িকভাবে হলেও গ্রহণ করতে হবে। এ মুহূর্তে আপনাকে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে আগে।
চার্লস সান্টিয়াগো বলেন, আসিয়ানের হস্তক্ষেপ না করার নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সেকেলে নীতিতে পড়ে থাকতে পারে না আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো। আমাদের চোখের সামনে এখন একটি মানবিক বিপর্যয় ঘটছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর উচিত দায়িত্বশীল আচরণ করা।
ড্যাভিড ম্যানি: ডেভিড ম্যানি অস্ট্রেলিয়ার রিফিউজি অ্যান্ড ইমিগ্রেশন লিগাল সেন্টারের পরিচালক। তিনিও মত দিলেন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার উচিত অভিবাসী বোঝাই নৌকাগুলোকে ফিরিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকা। বরং তাদের উদ্ধার করে মানবিক সাহায্য প্রদান করা। তার ভাষ্য, মানবিকতা হতে হবে রাজনীতির ঊর্ধ্বে। সীমান্ত বলপ্রয়োগের আগে সমুদ্রে উদ্ধারাভিযান পরিচালনা করা উচিত। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াকে আঞ্চলিক নেতৃত্ব প্রদর্শন করতে হবে। নিজের সমস্ত ক্ষমতা ও সামর্থ্য দিয়ে হলেও সাগরে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। একই সঙ্গে অভিবাসীদের প্রদান করতে হবে আর্থিক ও মানবিক সহায়তা। বহু আশ্রয়প্রার্থী বর্তমানে সাগরে আটকে আছে। তারা ক্ষুদায় ভুগছে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
ওই মানুষদের উদ্ধারে যৌথ অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগ নেয়া উচিত। এরপর অন্যান্য দেশের সঙ্গে যৌথভাবে শরণার্থীদের মৌলিক সহায়তা প্রদান করে; তাদের প্রতি মানবিক আচরণ নিশ্চিত করা উচিত। তাদের ফেরত পাঠালেই তারা যে বিপদ ও হতাশা থেকে অন্যদেশে পাড়ি জমাতে চায়, তার সমাধান হবে না। এটা কেবল মানুষকে এক জায়গা থেকে আরেক মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে। এ অঞ্চলের দেশগুলোকে সীমান্তে দুর্গ বানানো থামাতে হবে। সেসব দেশ ও আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের উচিত, একসঙ্গে ওই আশ্রয়প্রার্থী মানুষদের মূল সমস্যার সমাধানে কাজ করা। একই সঙ্গে তাদের উচিত মানবিক মর্যাদা, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে কর্মকৌশল শক্তিশালী করা।
জেফ লাবোভিটজ: জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর থাইল্যান্ড চীফ অফ মিশন হিসেবে কর্মরত আছেন জেফ লাবোভিটজ। তার চোখেও প্রথম সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে এলো, সমুদ্রে ভেসে থাকা মানুষদের অনুসন্ধান ও উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অভিযান। একই সঙ্গে অভিবাসী বোঝাই নৌকাগুলোকে তীরে ভিড়তে অনুমোদন দেয়া। তার মতে, দেশগুলোর উচিত একসঙ্গে অনুসন্ধান চালিয়ে অভিবাসী বোঝাই নৌকাগুলো উদ্ধার করা। ২৯শে মে থাইল্যান্ডে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সেটি হতে এখনও ২ সপ্তাহ বাকি। কিন্তু আমাদের আরও দ্রুত কাজ করতে হবে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার উচিত তথ্য ও স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি প্রকাশ করা। তারা এসব তথ্য নিয়ে আইওএমসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে পারে। এর দ্বারা অভিবাসীদের জন্য সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
জেফ লাবোভিটজ আরও বলেন, এ অঞ্চলের সব দেশকে দেখতে হবে, সমস্যার মূল কোথায় রয়েছে। তারা মানবপাচারের বিভিন্ন নেটওয়ার্ক সমপর্কে পরসপরের সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি করে। কিন্তু সেসব যথেষ্ট নয়। আমাদের যোগাযোগ, নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, যৌথ অভিযান, তথ্য ভাগাভাগি করা প্রয়োজন।
লিলিয়ান ফ্যান: ব্যাংকক ভিত্তিক লিলিয়ান ফ্যান এশিয়ার মানবিক ও সংঘর্ষ সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যের ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (ওডিই) নামের একটি সংগঠনে রিসার্স অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কর্মরত। আন্দামান সাগরে চলমান অভিবাসী সংকট নিয়ে তিনি বলেন, এর সমাধানটি হতে হবে মানবিকভাবে। নিশ্চিত করতে হবে, কোন জীবনহানি যাতে না ঘটে। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় সাময়িক সহায়তার পথ খুঁজতে হবে। তার ভাষ্য, আপনাকে আঞ্চলিক পর্যায়ে একটি সমন্বিত সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে আপনাকে বার্মিজ সরকারের সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে। বিশেষ করে দেশটির রাখাইন প্রদেশটি নিয়ে। সেখানে একটি পর্যায় পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে সেখান থেকে জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের পালিয়ে যেতে না হয়। তার মতে, এটি মূলত রাষ্ট্রহীনতা ও নাগরিকত্ব সমপর্কিত একটি ইস্যু। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংগঠন আসিয়ানের এখনই উচিত হবে না, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের ইস্যুতে মিয়ানমারকে বেশি চাপ দেয়া। একে বরং মানবিকতা ও উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে অবস্থার উন্নতির লক্ষ্য হিসেবে ভাবতে হবে। শর্ত আরোপের দিকে নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে চূড়ান্ত নাগরিকত্ব ও মর্যাদার আলোচনাও চলতে থাকবে। এটি একটি লম্বা আলোচনা হবে; সহজও হবে না।
লিলিয়ান ফ্যান আরও বলেন, সাময়িক সমাধান হচ্ছে, যেসব দেশে শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীরা যাচ্ছে, সেখানে তাদের বসবাসের সংস্থান করা। একই সঙ্গে সমন্বিত এ ব্যবস্থার ওপর আসিয়ান অঞ্চলের দেশগুলোর নজর রাখার উপায়ও থাকতে হবে। একটি কর্মকৌশল ঠিক করতে হবে যাতে করে আগত অভিবাসীদের ব্যবস্থাপনার উপায় বের করা যায়। প্রত্যেক দেশে এ প্রচেষ্টা হয়তো কিছুটা ভিন্ন হবে। কিন্তু সামগ্রীক কৌশল হতে হবে এক। বাংলাদেশী অভিবাসীদের নিয়ে আলাদা চিন্তা করতে হবে। তাদের ব্যবস্থাপনা করতে হবে ভিন্ন উপায়ে।
তিনি বলেন, একটি জিনিস পরিষ্কার। সেটি হচ্ছে, তিনটি দেশই, অর্থাৎ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া এ ইস্যুটি অত্যন্ত কঠিনভাবে নিয়েছে। তারা বলছে, আমরা কোন অভিবাসী বোঝাই নৌকা দেখতে চাই না। এটা অত্যন্ত কঠিন একটি সিদ্ধান্ত। এটা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।
চার্লস সান্টিয়াগো: আসিয়ান পার্লামেন্টেরিয়ান ফর হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর)-এর চেয়ারম্যান চার্লস সান্টিয়াগো। এপিএইচআর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতের পক্ষে সেসব দেশের সাংসদদের একটি জোট। এপিএইচআর চেয়ারম্যান চার্লস সান্টিয়াগো মত দিয়েছেন, আসিয়ানের উচিত বিষয়টি মোকাবিলা করা। তার মতে, এটি এখন আর মিয়ানমারের একার ইস্যু নয়। এটি এখন আঞ্চলিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। আঞ্চলিক পর্যায়েই এ ইস্যুটি মোকাবিলা করা উচিত। বার্মার ওপর চাপ প্রয়োগের কথা যদি বলি, তাহলে অনেক উপায়ই রয়েছে।
তার ভাষ্য, সমস্যাটির শুরু হয়েছে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানে বার্মিজ সরকার অস্বীকৃতি জানানোয়। রোহিঙ্গাদের অনেকের স্থান হয়েছে বিভিন্ন বন্দিশিবিরে। তাদের জাত, গায়ের রঙ ও ধর্মের কারণে তারা নির্যাতিত হয়। এর শেষ হতে হবে।
তিনি বলেন, আসিয়ানকে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। যাতে করে রাখাইন প্রদেশের মানুষের জীবনে কিছুটা পরিবর্তন আসে। এটি হবে একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল। স্বল্পমেয়াদী কৌশল হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডকে আশ্রয়প্রার্থী মানুষকে সাময়িকভাবে হলেও গ্রহণ করতে হবে। এ মুহূর্তে আপনাকে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে আগে।
চার্লস সান্টিয়াগো বলেন, আসিয়ানের হস্তক্ষেপ না করার নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সেকেলে নীতিতে পড়ে থাকতে পারে না আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো। আমাদের চোখের সামনে এখন একটি মানবিক বিপর্যয় ঘটছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর উচিত দায়িত্বশীল আচরণ করা।
ড্যাভিড ম্যানি: ডেভিড ম্যানি অস্ট্রেলিয়ার রিফিউজি অ্যান্ড ইমিগ্রেশন লিগাল সেন্টারের পরিচালক। তিনিও মত দিলেন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার উচিত অভিবাসী বোঝাই নৌকাগুলোকে ফিরিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকা। বরং তাদের উদ্ধার করে মানবিক সাহায্য প্রদান করা। তার ভাষ্য, মানবিকতা হতে হবে রাজনীতির ঊর্ধ্বে। সীমান্ত বলপ্রয়োগের আগে সমুদ্রে উদ্ধারাভিযান পরিচালনা করা উচিত। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াকে আঞ্চলিক নেতৃত্ব প্রদর্শন করতে হবে। নিজের সমস্ত ক্ষমতা ও সামর্থ্য দিয়ে হলেও সাগরে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। একই সঙ্গে অভিবাসীদের প্রদান করতে হবে আর্থিক ও মানবিক সহায়তা। বহু আশ্রয়প্রার্থী বর্তমানে সাগরে আটকে আছে। তারা ক্ষুদায় ভুগছে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
ওই মানুষদের উদ্ধারে যৌথ অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগ নেয়া উচিত। এরপর অন্যান্য দেশের সঙ্গে যৌথভাবে শরণার্থীদের মৌলিক সহায়তা প্রদান করে; তাদের প্রতি মানবিক আচরণ নিশ্চিত করা উচিত। তাদের ফেরত পাঠালেই তারা যে বিপদ ও হতাশা থেকে অন্যদেশে পাড়ি জমাতে চায়, তার সমাধান হবে না। এটা কেবল মানুষকে এক জায়গা থেকে আরেক মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে। এ অঞ্চলের দেশগুলোকে সীমান্তে দুর্গ বানানো থামাতে হবে। সেসব দেশ ও আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের উচিত, একসঙ্গে ওই আশ্রয়প্রার্থী মানুষদের মূল সমস্যার সমাধানে কাজ করা। একই সঙ্গে তাদের উচিত মানবিক মর্যাদা, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে কর্মকৌশল শক্তিশালী করা।
জেফ লাবোভিটজ: জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর থাইল্যান্ড চীফ অফ মিশন হিসেবে কর্মরত আছেন জেফ লাবোভিটজ। তার চোখেও প্রথম সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে এলো, সমুদ্রে ভেসে থাকা মানুষদের অনুসন্ধান ও উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অভিযান। একই সঙ্গে অভিবাসী বোঝাই নৌকাগুলোকে তীরে ভিড়তে অনুমোদন দেয়া। তার মতে, দেশগুলোর উচিত একসঙ্গে অনুসন্ধান চালিয়ে অভিবাসী বোঝাই নৌকাগুলো উদ্ধার করা। ২৯শে মে থাইল্যান্ডে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সেটি হতে এখনও ২ সপ্তাহ বাকি। কিন্তু আমাদের আরও দ্রুত কাজ করতে হবে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার উচিত তথ্য ও স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি প্রকাশ করা। তারা এসব তথ্য নিয়ে আইওএমসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে পারে। এর দ্বারা অভিবাসীদের জন্য সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
জেফ লাবোভিটজ আরও বলেন, এ অঞ্চলের সব দেশকে দেখতে হবে, সমস্যার মূল কোথায় রয়েছে। তারা মানবপাচারের বিভিন্ন নেটওয়ার্ক সমপর্কে পরসপরের সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি করে। কিন্তু সেসব যথেষ্ট নয়। আমাদের যোগাযোগ, নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, যৌথ অভিযান, তথ্য ভাগাভাগি করা প্রয়োজন।
No comments