দুই শিশুর রিকশার প্যাডেলে অসুস্থ মায়ের জীবন by আমিনুল ইসলাম লিটন
তিন
মাস মায়ের পেটে থাকতে বাবা শাহাদত হোসেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। শোকে
মুহ্যমান সদ্য বিধবা মা হাসিনা খাতুন স্বামীর ভিটে ত্যাগ করেন কিছুদিন পরই।
ওঠেন নানা বাড়ি ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়ায়। হাসিনার কোলজুড়ে আসে দুই যমজ
ভাই হাসান ও খায়রুল। বাবা মায়ের নতুন বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে
পরের বাড়ি ঝির কাজ করে দুই ছেলেকে পড়ালেখা করাতেন হাসিনা। কিন্তু বিধি বাম!
মাত্র ৩২ বছর বয়সে কিডনি, হার্ট ও অ্যাজমায় আক্রান্ত হন হাসিনা। মায়ের
জীবন বাঁচাতে ১০ বছর বয়সে রিকশার প্যাডেলে পা রাখে দুই ভাই হাসান ও খায়রুল।
তিন বছর ধরে তারা দু’ভাই ঝিনাইদহ শহরে ভাড়া করা রিকশা চালিয়ে মায়ের হাতে
যৎসামান্য টাকা তুলে দিচ্ছে। তাই দিয়ে মায়ের চিকিৎসা ও সংসার চালানো দুরূহ
হয়ে পড়েছে। হাসান ও খায়রুল রোববার বেলা তিনটা পর্যন্ত দুই রিকশার ভাড়া
হিসেবে চারশ’ টাকা তুলতে পারেনি। এইচএসএস সড়কে তারা ভাবছিল কিভাবে আজকে
মালিককে ভাড়ার টাকা দিবে। এ প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হলে হাসান ও খায়রুল তাদের
কলাবাগানপাড়ার বস্তিতে নিয়ে যান। তারা ভাড়া থাকেন বাসন্তি নামে এক হিন্দু
মহিলার বাড়িতে। ঘিঞ্জি পরিবেশে মা হাসিনা তখন দুপরের খাবার তৈরি করছিলেন।
সাংবাদিক পরিচয় জেনে হাসিনা বেগম তার অসহায়ত্বের কথা জানান। তিনি বলেন,
দীর্ঘ ৫ বছর তিনি কিডনি, হার্ট ও অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত। দুই ছেলের শিশু
বয়স হলেও তারাই সংসারের হাল ধরেছে। আমি আর পরের বাড়িতে কাজ করতে পারি না।
ওদের পড়ালেখা করানোর শখ থাকলেও বেঁচে থাকার তাগিদে আর তা হয়ে উঠছে না।
ডাক্তাররা যে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন তাতে প্রতি সপ্তায় হাসিনা খাতুনের এক
হাজার টাকার ওষুধ লাগে। মায়ের এই চিকিৎসা খরচ উঠাতেই কাকডাকা ভোর থেকে
রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে হাসান ও খায়রুল। যে বয়সে বই হাতে স্কুলে যাওয়ার কথা,
সহপাঠীদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় করে খেলা করার সময়, সেই বয়সে জীবনযুদ্ধের এক
কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত শিশু হাসান ও খায়রুল। সমাজের কোনো বিত্তবান ও দানশীল
ব্যক্তি ০১৭৭৯-৬১৭০১১ হাসিনা খাতুনের এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।
No comments