গরমের শুরুতেই ডায়রিয়ার প্রকোপ by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
গত
২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৭০৮ জন। আর সাত দিনে ডায়রিয়া
আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৯৮৭ জন রোগী। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এখন চৈত্র মাস।
বেড়েছে গরমের তীব্রতা। আর এ গরমের সঙ্গে বাড়ছে রাজধানীতে ডায়রিয়া আক্রান্ত
রোগীর সংখ্যা। হাসপাতাগুলোতে দিন দিন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীও আসছে বেশি।
মার্চ মাসে সারা দেশে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আড়াই লাখ ছাড়িয়ে যেতে
পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র’
জানায়, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর,বি) মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন
সাড়ে ৪শ’র উপরে রোগী ভর্তি হচ্ছে। এসব রোগীর মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই
বেশি। আইসিডিডিআর,বি’র তথ্যানুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৪শ’ থেকে
সোয়া ৪শ’ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে
এ সংখ্যা সাড়ে ৪শ’ ছাড়িয়েছে। মার্চের শুরতে আক্রান্ত রোগীদের শিশু রোগী
বেশি ছিল এবং সকলেই ভাইরাল ডায়রিয়াতে আক্রান্ত। রাজধানীতে হঠাৎ ডায়রিয়ায়
আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও এটাকে স্বাভাবিক বলে মনে করছেন
আইসিডিডিআর,বি’র চিকিৎসকরা। বলেন, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। বর্তমানে
তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময় বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে।
তারা আরও বলেন, তীব্র গরমে ঘন ঘন পিপাসা পাওয়ায় রাস্তাঘাটে আইসক্রিম বা
বিভিন্ন ধরনের শরবত পান করা হয়। এসব খাদ্যে যে খাবার পানি বা বরফ ব্যবহৃত
হয় তা বিশুদ্ধ না হলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া বেশি
গরমে বিভিন্ন ধরনের নষ্ট খাবার খেলেও ডায়রিয়া হয়। প্রতি বছর মার্চ থেকে মে
মাসে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ
ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য মতে, ২৪
ঘণ্টায় ডায়রিয়া রোগীর আক্রান্তের সংখ্যা ৭০৮ জন। আর সাত দিনের ডায়রিয়ায়
আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৯৮৭ জন। ৩০ দিনে ১২ হাজার ৮শ’ ৪৩ জন। এই তথ্য
আইসিডিডিআর,বিসহ প্রধান প্রধান ৭/৮টি জেলার সংখ্যা। তবে সারা দেশের পুরো
মার্চ মাসে আড়াই লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৩০শে
মার্চ ৬৭১ জন, ২৯শে মার্চ ৮৬৮ জন, ২৮শে মার্চ ৭৭৫ জন, ২৭শে মার্চ ৭৮৯ জন,
২৬শে মার্চ ৮৪২ জন, ২৫শে মার্চ ৬৪৯ জন, ২৪শে মার্চ ৫৪৯ জন, ২৩শে মার্চ ৭৭৩
জন, ২২শে মার্চ ৮০২ জন, ২১শে মার্চ ৭০৯ জন এবং ২০শে মার্চ ৭৮১ জন ডায়রিয়ায়
আক্রান্ত হয়েছেন। জানুয়ারি মাসে সারা দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৪৬ হাজার
৬৭ জন, ফেব্রুযারি মাসে ১ লাখ ৭০ হাজার ১৩১ জন। কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা.
আয়েশা আকতার মানবজমিনকে গতকাল জানান, গরমের কারণে ডায়রিয়া একটু বাড়ছে।
কারণ এটি পানি বাহিত রোগ। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাস পর্যন্ত ডায়রিয়ার রোগীর
সংখ্যা বাড়তে থাকে। তারপর কমে আসে। তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে বিশুদ্ধ পানি
পান করতে হবে। রাস্তার খাবার ও পানির শরবত গ্রহণের ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক
হওয়ার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। চিকিৎসকরা জানান, মূলত বিশুদ্ধ
পানির অভাব বা ভালোভাবে হাত না ধৌত করে খাবার গ্রহণই ডায়রিয়ার মূল কারণ।
ডায়রিয়া থেকে মুক্ত থাকতে বিশুদ্ধ পানি পান ও সকলকে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার
করে খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন তারা। একই সঙ্গে কেউ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে
তাকে স্যালাইন খাওয়ান। বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান।
এই বিষয়ে ডায়রিয়ার আইসিডিডিআর,বি’র বিশেষজ্ঞ এবং সংস্থাটির হাসপাতালের
প্রধান ডা. আজহারুল ইসলাম খান মানবজমিনকে বলেন, এই সময় ডায়রিয়ার প্রকোপ
অন্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকে। গরম পড়ছে। এটি পানিবাহিত রোগ। মূলত পানিবাহিত
জীবাণু থেকেই ডায়রিয়া ও কলেরা দেখা দেয়। পাশাপাশি পচা-বাসি ও খোলা খাবারের
মাধ্যমে এ রোগের বিস্তৃতি ঘটে। তাই অবশ্যই নিরাপদ ও জীবাণুমুক্ত পানি পানের
ব্যাপারে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। একই সঙ্গে রাস্তা-ঘাটে পানি শরবত ও
খাবার খাওয়ার গ্রহণের পূর্বে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
No comments