ডিজিটাল আইনের ৬টি ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের আপত্তি: তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
প্রস্তাবিত
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) ছয়টি ধারা নিয়ে
আপত্তি জানিয়েছে দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস
কাউন্সিল। সম্পাদকদের আপত্তিগুলো ‘অনেকাংশই যৌক্তিক’ বলে মত দিয়েছেন আইন,
বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। গতকাল আইন মন্ত্রণালয়ের
সভাকক্ষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এডিটরস কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক শেষে
আইনমন্ত্রী ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম আলাদাভাবে এসব তথ্য জানান।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কিছু ধারার বিষয়ে
এডিটরস কাউন্সিল আপত্তি জানিয়েছে। সেগুলো তারা আমাদের সামনে পেশ করেছে।
আমাদের মধ্যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আলোচনা শেষে আমরা
সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, যে আপত্তিগুলো তুলে ধরা হলো সেগুলো অনেকাংশেই
যৌক্তিক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এডিটরস
কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল ও দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারায় নিজেদের আপত্তির
কথা তুলে ধরেন। বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রস্তাবিত আইনের ২১, ২৫,
২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারায় আমাদের আপত্তি। আমরা এ ধারাগুলোকে মনে করেছি
বাকস্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি। বাংলাদেশে যে স্বাধীন
সাংবাদিকতা, সেটা নিয়ে আমরা খুবই গর্ববোধ করি। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনের
সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে গভীরভাবে ব্যাহত করবে। এ
বিষয়গুলো আমরা মন্ত্রীদের বুঝিয়েছি এবং তারা বিষয়গুলো সানন্দে গ্রহণ
করেছেন। মাহফুজ আনাম বলেন, আমরা আশা করি, যে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনটি
প্রণয়ন হবে, সেটা সত্যিকার অর্থে সাইবার ক্রাইমকেই প্রতিহত করবে।
সাংবাদিকতার কোনো স্বাধীনতা খর্ব করবে না। আমরা এটা বিশ্বাস করি যে,
বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে একটা সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রয়োজন। কেননা,
এখন যে ধরনের সাইবার ক্রাইম হচ্ছে, সোস্যাল মিডিয়া, অনিয়ন্ত্রিত অনলাইন
মিডিয়া- এগুলো আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। তাই আইনটি হোক, তবে যেন সেটা
সুষ্ঠু হয়; আসলেই সেটা যেন তার পারপাস সার্ভ করতে পারে। গতকাল আইন
মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে
সরকার পক্ষে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার,
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, লেজিসলেটিভ ও
সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মাদ শহিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় এডিটরস কাউন্সিলের পক্ষে দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম,
নিউজটুডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগীর
মহিউদ্দিন, দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত
সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম,
নিউএজের সম্পাদক নূরুল কবীর, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক এএইচএম
মোয়াজ্জেম হোসেন, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ
প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ইনকিলাবের সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন এবং
বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। আইনমন্ত্রী
আনিসুল হক বলেন, প্রস্তাবিত আইনটি এখন আইসিটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয়
স্থায়ী কমিটিতে রয়েছে। আগামী ২২শে এপ্রিল আইনটি নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই
সভায় এডিটরস কাউন্সিলের প্রতিনিধিকে রাখার জন্য প্রস্তাব করা হবে। ২২শে
এপ্রিলের পর যেকোনো সময়, একটা নির্ধারিত তারিখে আপত্তি বা উদ্বেগগুলো
এডিটরস কাউন্সিল লিখিতভাবে স্থায়ী কমিটিকে জানাবে। তিনি বলেন, সাইবার
ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল অ্যাক্ট করা হয়েছিল। বাকস্বাধীনতা বা স্বাধীন
সাংবাদিকতা বন্ধ করার জন্য নয়। সেই ক্ষেত্রে যদি এ আইনের মধ্যে ত্রুটি থেকে
থাকে বা ?দুর্বলতা থাকে সেগুলো যেন অপসারণ করা যায় সেই আলোকে এডিটরস
কাউন্সিলের সঙ্গে এ আলোচনা হয়েছে। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দুই পক্ষই
আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারি, তাদের (এডিটরস কাউন্সিল) যে উদ্বেগ সেগুলো দূর
করতে পারবো। এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা এমন একটা আইন করতে
চাই, যেটা শুধু গ্রহণযোগ্য নয়, যুগোপযোগী হবে। সেই ক্ষেত্রে টেলিভিশনের
সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসার জন্যও সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রস্তাব দেব।
আইসিটি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করে সেই ধারার বিষয়বস্তুগুলো ঘুরেফিরে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাখা হয়েছে- এমন অভিযোগ ছিল সর্বমহলে। গত
জানুয়ারিতে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
হওয়ার পর এটি নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার
আপত্তি ওঠা কিছু ধারা বাদ দেয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু গত ৯ই এপ্রিল জাতীয়
সংসদে আইনটি উত্থাপনের পর দেখা যায়, তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এমনকি
‘ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি’ বিষয়ক ৩২ ধারার মতো আরো কঠিন একটি ধারা জুড়ে দেয়া
হয়েছে। সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বিলটিতে আপত্তি জানায়। পরে সেটি চার
সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো
হয়।
No comments