বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বে দক্ষিণাঞ্চল অচলের আশঙ্কা
ঝালকাঠি
বাস মালিক সমিতি ও বরিশাল বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের মধ্যে চলমান বিরোধ
এবার চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে। প্রশাসনের সকল বিভাগের সমঝোতার চেষ্টাকে
নাকচ করে দিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে নিজেদের রুট থেকেই পটুয়াখালী-কুয়াকাটা এবং
ঝালকাঠি থেকে পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া, বাগেরহাট ও খুলনা রুটে বাস
সার্ভিস শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে ঝালকাটি বাস মালিক সমিতির নেতারা। বরিশাল
বাস মালিক সমিতির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি
রায়াপুরা থেকে বাস চালু করলে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে বাস ধর্মঘটের ডাক দিবে
বরিশাল বাস মালিক সমিতি। বরিশাল বাস মালিক সমিতির নেতারা জানান, ঝালকাঠি
বাস মালিক সমিতির নেতারা গায়ের জোরে দখলদারিত্ব নিতে চাচ্ছে। বিভাগের ছয়
জেলার (পিরোজপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি এবং বরিশাল) শ্রমিক
সংগঠনের নেতাদের সাথে এবং বাস মালিক সমিতির নেতাদের সাথে কথা বলে জানা
গেছে, ঝালকাঠি এবং বরিশালের বাস মালিক সমিতির মুখোমুখি অবস্থানের কারনে
গোটা বিভাগজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির নেতারা
জানান, তাদের ন্যায্য অধিকার পেতে তারা সক্রিয় অবস্থানে রয়েছেন। যতক্ষণে
বরিশাল বাস মালিক সমিতির নেতারা তাদের অধিকার ফিরিয়ে না দিবে ততক্ষনে তাদের
একট্টা হওয়া মালিক সমিতি ঝালকাঠি ও পিরোজপুর এলাকায় বরিশাল বাস মালিক
সমিতির কোন যানবাহন প্রবেশ করতে দেয়া হবেনা। বরিশাল বাস মালিক সমিতির
নেতারা জানান, ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি গায়ের জোরে কোন কিছু করতে গেলে
তাদের প্রতিহত করা হবে। ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির নেতারা জানান, তারা বসে
বসে মার খাবেন না, আজ থেকে পাল্টা মার দেয়া হবে বলেও হুমকি প্রদর্শণ করা
হয়।
দুই বাস মালিক সমিতির নেতাদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে রক্তক্ষয়ী
সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। খবর নিয়ে জানা গেছে, পরিবহন নিয়ে ঝালকাঠি
বাস মালিক সমিতি দক্ষিণাঞ্চলের সকল রুটে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ
করেছে। নলছিটির দপদপিয়া, রায়াপুরায় চলছে ভুড়িভোজ এবং আনন্দ উল্লাসের আয়োজন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, দক্ষিণাঞ্চলের সকল রুটে বাস ঢুকানোর
সময়ে বরিশাল বাস মালিক সমিতি যদি বাধা দেয় তা শক্ত হাতে প্রতিহত করতে
সংর্ঘষের জন্য শতাধিক রিজার্ভ লোক রাখা হয়েছে। আর তাদের জন্যই আয়োজন করা
হয়েছে ভুড়িভোজ। অপরদিকে বরিশাল বাস মালিক সমিতিও প্রস্তুতি নিচ্ছে ঝালকাঠি
মালিক সমিতিকে প্রতিহত করার জন্য। ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক
নাছির উদ্দিন বলেন, প্রশাসনের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে দাবির কথা জানানো
হয়েছিলো। তারা তা ভ্রক্ষেপ করেননি। ফলে আমাদের মতো করে আমরা বাস চলাচল শুরু
করাবো। তিনি আরও বলেন, এতে আমাদের কেউ মারধর করতে আসলে প্রয়োজনে মার খাবো,
তবুও দাবি বাস্তবায়ন করবো। ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির সকল দাবি ভিত্তিহীন
দাবি করে বরিশাল বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন,
তারা (ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি) গায়ের জোরে কথা বলছেন। মূলত তারা বরিশাল
বিভাগের অন্যান্য জেলার তুলনায় বেশি সুবিধা ভোগ করেও বর্তমানে কতিপয়
রাজনৈতিক নেতার মদদে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। নিয়ম ভেঙে ঝালকাঠি বাস
মালিক সমিতি কিছু করতে গেলে তার কঠোর জবাব দেয়া হবে। শিপন আরও বলেন, ১৮
ডিসেম্বর বিভাগীয় কমিশনার নিজে মোবাইল ফোনে ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতিকে
অনুরোধ করেছিলেন যেন ঝালকাঠি বরিশাল রুটের অবরোধ তুলে নেয়া হয়। যেহেতু ২০
ডিসেম্বর তাদের জন্য সমন্বয় সভার আহবান করা হয়েছে।
বিভাগীয় কমিশনারের
অনুরোধ উপেক্ষা করে তারা তাদের অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। বরিশাল বাস মালিক
সমিতির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি রায়াপুরা
থেকে বাস চালু করলে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে বাস ধর্মঘটের ডাক দিবে বরিশাল বাস
মালিক সমিতি। পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ মৃধা ঝালকাঠির
অবরোধকে যুক্তিহীন দাবি করে বলেন, আমাদের সমন্বয় বরিশাল এবং বরগুনা বাস
মালিক সমিতির সাথে। এর বাইরে আমাদের রুটে কাউকে ঢুকতে দেয়া হবেনা। পিরোজপুর
বাস মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি আলতাফ হোসেন নান্না বলেন, যেহেতু
ঝালকাঠি অতিক্রম করে আমাদের চলাচল করতে হয়। সে কারণে ঝালকাঠি জেলার নেতাদের
সাথে সাংর্ঘষিক কোনো সিদ্ধান্তে যাবো না। বরগুনা বাস মালিক সমিতির সভাপতি
গোলাম মোস্তফা কিসলু বলেন, ঝামেলাটা বরিশাল এবং ঝালকাঠির। তবে সমন্বয় ছাড়া
নতুন করে কেউ আমাদের রুটে প্রবেশ করতে পারবে না। ঝালকাঠি শ্রমিক ইউনিয়নের
সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর চৌধুরী বলেন, আমরা সকল রুটে প্রবেশ করার জন্য
প্রস্তুত। কেউ বাধা দিলে সেখানেই জবাব দেয়া হবে।
No comments