সমৃদ্ধির জন্য তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা অপরিহার্য
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ১ হাজার ৬১০ ডলার। গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত আছে পরপর দু’বছর ধরে। বিদেশি পত্রিকাগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিস্ময়কর বলে উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রয়েছে রেমিটেন্স, তৈরি পোশাক শিল্প, চামড়া শিল্প, পাটজাত দ্রব্য প্রভৃতির। রফতানির এই ধারায় নতুন করে সংযুক্ত হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। বাংলাদেশে এই ধারণাটি একেবারে নতুন হলেও উন্নত বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির ধারণা ’৮০-৯০-এর দশক থেকেই চালু রয়েছে। বাংলাদেশের এখন ৬৬ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষম। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান শুধু প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অসম্ভব। এ সমস্যার সমাধান হতে পারে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। বাংলাদেশের শিক্ষা ও অর্থনীতির একটি খারাপ দিক হল, উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে অন্তত ৪৭ শতাংশই বেকার। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ অবস্থানে রয়েছে শুধু আফগানিস্তান। এই বিশাল বেকারত্বের কারণ হল, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা, যা শুধু মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এসব বিষয়ে চাকরির সুযোগ সীমিত। যার ফলে বাংলাদেশের একটি বিশাল কর্মক্ষম শিক্ষিত জনশক্তি চাকরির পেছনে ছুটে তাদের তারুণ্যকে নষ্ট করছে। এজন্য দায়ী মূলত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। তবে এ চিত্র পরিবর্তন করা সম্ভব, যদি আমরা তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।
তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আইসিটি খাতে বাংলাদেশের আয় ২০০৮ সালে ছিল ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৫ সালে দাঁড়ায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০১৮ সালে গিয়ে দাঁড়াবে ১ বিলিয়নে ও ২০২১ সালে গিয়ে দাঁড়াবে ৫ বিলিয়ন ডলারে। বর্তমানে এ সেক্টরে কর্মরত আছে ২ লাখ ৫০ হাজারেরও অধিক জনশক্তি, যা ২০২১ সালে গিয়ে দাঁড়াবে ৬ লাখেরও বেশি। তরুণদের মধ্যে এ সেক্টরটি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বেশি। আর তাই সরকার জনগণকে প্রশিক্ষিত করার জন্য ফ্রি প্রশিক্ষণের সুযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি দিবস, হাইটেক পার্ক, তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন উৎসব আইসিটি মেলা, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতাসহ নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। যার ফলে এ সেক্টরটি দিনদিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তবে এ সেক্টরকে আরও বেশি কার্যকর করা যাবে, যদি সরকার মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে দেয়। ইতিমধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বাধ্যতামূলকভাবে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা চালু করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়টিকেও মুখস্থ করে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনের চেষ্টা করে। এজন্য বর্তমান পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটিয়ে তা ব্যবহারিক শিক্ষা হিসেবে চালু করলে বিষয়টিতে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি উপকৃত হবে। স্নাতক পর্যায়ের সব বিষয়েও যদি সরকার তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে তা আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিন্দ্য মজুমদার সার্চ ইঞ্জিন গুগলে চাকরি পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের বিবৃতিতে উপাচার্য তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। দেশের গণমাধ্যম এটাকে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে তুলে ধরছেন। অথচ এ গুগলেরই সিইও সুন্দর পিচাই আমাদের প্রতিবেশী ভারতের নাগরিক। শুধু কী গুগল, মাইক্রোসফটের প্রধান সত্য নাদেলাও ভারতের নাগরিক। আমেরিকার প্রযুক্তি খাতের ২৭ শতাংশ জনশক্তি ভারতীয় নাগরিক। ফেসবুক, গুগল, অ্যাপল ও মাইক্রোসফটের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের শাখা অফিসগুলো স্থাপন করা হচ্ছে ভারতে। কারণ ভারত তথ্যপ্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করছে। সময়ক্ষেপণ না করে বাংলাদেশেও সব স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা উচিত। তাহলে আগামী দিনের তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বকে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরাও নেতৃত্ব দিতে পারবে।
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
bijoydu8@gmail.com
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
bijoydu8@gmail.com
No comments