‘আদালতের নির্দেশ শুনে হতভম্ব হয়ে যাই’
আদালতের
জারি করা এক সমনের পরিপ্রেক্ষিতে বরগুনার ইউএনও গাজী তারেক সালমনকে
বরিশালের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছিল। যে
অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে, সেটি জামিনের অযোগ্য কোন অপরাধ
নয়। আর সরকারেরই একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা তিনি, একটি উপজেলার প্রধান
নির্বাহী কর্মকর্তা। তার জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়ে আদালত তাকে জেলে
পাঠানোর নির্দেশ দেবেন, সেটা তিনি ভাবতেই পারেন নি।
"আদালতের নির্দেশ শুনে আমি খুবই অবাক হই, হতভম্ব হয়ে যাই। আমি কল্পনা করিনি যে আমার জামিন নামঞ্জুর করা হবে। একটি জামিন-যোগ্য ধারায় মামলাটি করা হয়েছে এবং যথাযথভাবে আদালতের সামনে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করেছে আমার আইনজীবী। জামিন নামঞ্জুর করার পর আমাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। আমি খুবই অপমানিত বোধ করি।"
বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
বরগুনা সদরের ইউএনও-কে হাতকড়া পরিয়ে জেলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হওয়ছেন বাংলাদেশের আরও অনেক মানুষ। যে ধরণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছিল, সেরকম একটি মামলা যে করা যায়, আর সেই মামলায় একজন গুরুত্বপূর্ণ সরকারী কর্মকর্তাকে এভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া যায, তা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য ঠেকেছে।
বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হয়েছিল মারাত্মক। তাদের একটি সংগঠনের তরফ থেকে বিবৃতি দিয়ে এই ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কর্মকর্তারাও এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু কেমন করে এরকম একটি ঘটনা ঘটতে পারলো? এটি কি যা বলা হচ্ছে, আসলেই তাই? অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের 'বিকৃত ছবি' প্রকাশের কারণে হৃদয়ে আঘাত পাওয়া কোন মুজিব ভক্তের মামলা? নাকি এর পেছনে আছে অন্য কিছু?
বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গাজী তারিক সালমন বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন, কিভাবে শিশুদের এক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে শেষ পর্যন্ত এরকম একটি হেনস্থার শিকার হয়েছেন তিনি।
১৭ই মার্চ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিবসটি পালিত হয় জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে। সে উপলক্ষে আগৈলঝড়া উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস এইটের বাচ্চারা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
"তখনই ঘোষণা দিয়েছিলাম যে যারা প্রতিযোগিতায় প্রথম এবং দ্বিতীয় হবে তাদের ছবি ব্যবহার করেই ২৬শে মার্চের কার্ডটি ডিজাইন করা হবে। এই প্রতিযোগিতার থীম ছিল বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ।"
ঘোষণা অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া কার্ডটি ফ্রন্ট কাভারে এবং দ্বিতীয়টি ব্যাক কভারে ব্যবহার করে তার কার্ডটি ছাপান।
"আমি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবেই এই কার্ডটি ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেই। বাচ্চাদের একটা ছবি ব্যবহার করি বাচ্চাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য। আমি কল্পনাও করিনি যে এই কার্ডটি নিয়ে আমাকে এ ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। এবং আমার বিরুদ্ধে এরকম অমূলক একটি মামলা দায়ের করা হবে।"
গাজী তারিক সালমন জানান, কার্ডে তাদের পরিচিতিও লেখা ছিল তারা কোন ক্লাসে পড়ে। ছিল তারা যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তার নাম। বাচ্চাদের এই ছবি নিয়ে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ ছিল না।
পুরস্কার বিজয়ী যে ছবিটি নিয়ে এত বিতর্ক, প্রথম যখন তিনি সেই ছবিটি দেখেন, তাঁর কি মনে হয়েছিল?
"ছবিটি প্রথম দেখে মনে হয়েছিল খুবই দৃষ্টিনন্দন এবং খুবই সুন্দর একটা ছবি। ক্লাস ফাইভের একটি বাচ্চা এটি এঁকেছে, এবং তার বয়স বিবেচনায় খুবই সুন্দর একটি ছবি। এটিকে বিকৃত বলার কোন সুযোগ নেই। এবং এটিকে কেউ যদি বিকৃত বলে, সে নিজেই আসলে বিকৃত মনস্ক।
তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কেন এই মামলা হলো? তাঁর কি মনে হয়?
"আমি আট মাস বরিশালের আগৈলঝড়া উপজেলায় কর্মরত ছিলাম। এসময় আমাকে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ যাতে সঠিকভাবে যথাযথভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্যে আমি তৎপর ছিলাম। কঠোর অবস্থানে ছিলাম। আমি সেখানকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি। আমি অবৈধ স্থাপনা করতে দেই নি আমি যতদিন সেখানে ছিলাম। এসব কারণে সেখানকার প্রভাবশালীরা আমার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিল। আমার অনুমান, তারা আমাকে হয়রানি করার জন্য বাদীকে দিয়ে এই মামলাটি করিয়েছে।"
এই মামলার কিছুদিন পরে তারিক সালমনকে বরগুনা সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়।
যেদিন তিনি বরগুনা সদরে জয়েন করেন, সেদিন বরিশালের কয়েকটি আঞ্চলিক পত্রিকায় তাকে নিয়ে একটি খবর প্রকাশিত হয়।
"জুনের ৪ তারিখে প্রকাশিত সব কটি পত্রিকার রিপোর্টের ভাষা ছিল একই রকম। শিরোণামটি ছিল 'বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতকারী সেই ইউএনও অবশেষে বদলি'। এই খবরের প্রতিবাদ আমি সমস্ত পত্রিকায় পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু কোন পত্রিকা প্রতিবাদটি ছাপেনি।
আদালত প্রাঙ্গণে যা ঘটেছিল:
বিচারক যখন তার জামিনের আবেদন নাকচ করে দিলেন, কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়েছিলেন গাজী তারিক সালমন। তিনি বুঝতে পারেন নি, এরকম ঘটনা ঘটতে পারে।
"যখন আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়, তখনই আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তারা আমাকে বলেছিলেন মামলা যেহেতু হয়েছে, মামলাটি আইনগত-ভাবে মোকাবেলা করতে হবে।"
"আমাকে ঠিক গ্রেফতার করা হয়নি। আমার যে জামিনের আবেদন সেটি নামঞ্জুর করা হয়। তারপর আমাকে কোর্টের গরাদখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমাকে কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। তখন আমি পুলিশকে অনুরোধ করেছিলাম, দয়া করে আমাকে একটু সময় দিন। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানোর সুযোগ দিন।
গাজী তারিক সালমনের অনুরোধে পুলিশ তাকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ দেন। দু ঘণ্টা তিনি ছিলেন আদালতের গরাদখানায়। বেলা দেড়টার দিকে আদালতের বিচারক পিয়ন পাঠিয়ে তাকে ডেকে পাঠান। তাঁর আইনজীবীকেও ডেকে পাঠানো হয়।
"আমি আদালতে যাই। এজলাসে যাই। কিন্তু বিচারক আমার মুখোমুখি হননি। তিনি খাস কামরায় বসে আমার জামিন মঞ্জুর হয়েছে মর্মে একটি আদেশ দেন। আদালতের পেশকার, তিনি আমার জেল পরোয়ানাটি আমার সামনেই ছিঁড়ে ফেলেন। তিনি আমাকে বলেন, আপনার কোন চিন্তা নেই। আপনার জেল পরোয়ানাটি ছিঁড়ে ফেলেছি।"
গত তিন দিন ধরে সারা বাংলাদেশ জুড়ে তাঁকে নিয়ে যে আলোচনা-বির্তকের ঝড়, তারপর এখন তিনি কি করবেন? তিনি কি কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছেন?
"এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। এব্যাপারে আমাদের সার্ভিসের এসোসিয়েশন রয়েছে। সবার সঙ্গে পরামর্শ করে আমি পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।"
"আমাকে যে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে, এটি মিডিয়াতে প্রকাশ হওয়ার পর, যে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে, সমস্ত দেশবাসী আমার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। সংবাদকর্মীরা আমার পক্ষে কথা বলেছেন। আমি এজন্য কৃতজ্ঞ। এজন্যে আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।"
সূত্র: বিবিসি
"আদালতের নির্দেশ শুনে আমি খুবই অবাক হই, হতভম্ব হয়ে যাই। আমি কল্পনা করিনি যে আমার জামিন নামঞ্জুর করা হবে। একটি জামিন-যোগ্য ধারায় মামলাটি করা হয়েছে এবং যথাযথভাবে আদালতের সামনে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করেছে আমার আইনজীবী। জামিন নামঞ্জুর করার পর আমাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। আমি খুবই অপমানিত বোধ করি।"
বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
বরগুনা সদরের ইউএনও-কে হাতকড়া পরিয়ে জেলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হওয়ছেন বাংলাদেশের আরও অনেক মানুষ। যে ধরণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছিল, সেরকম একটি মামলা যে করা যায়, আর সেই মামলায় একজন গুরুত্বপূর্ণ সরকারী কর্মকর্তাকে এভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া যায, তা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য ঠেকেছে।
বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হয়েছিল মারাত্মক। তাদের একটি সংগঠনের তরফ থেকে বিবৃতি দিয়ে এই ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কর্মকর্তারাও এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু কেমন করে এরকম একটি ঘটনা ঘটতে পারলো? এটি কি যা বলা হচ্ছে, আসলেই তাই? অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের 'বিকৃত ছবি' প্রকাশের কারণে হৃদয়ে আঘাত পাওয়া কোন মুজিব ভক্তের মামলা? নাকি এর পেছনে আছে অন্য কিছু?
বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গাজী তারিক সালমন বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন, কিভাবে শিশুদের এক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে শেষ পর্যন্ত এরকম একটি হেনস্থার শিকার হয়েছেন তিনি।
১৭ই মার্চ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিবসটি পালিত হয় জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে। সে উপলক্ষে আগৈলঝড়া উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস এইটের বাচ্চারা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
"তখনই ঘোষণা দিয়েছিলাম যে যারা প্রতিযোগিতায় প্রথম এবং দ্বিতীয় হবে তাদের ছবি ব্যবহার করেই ২৬শে মার্চের কার্ডটি ডিজাইন করা হবে। এই প্রতিযোগিতার থীম ছিল বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ।"
ঘোষণা অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া কার্ডটি ফ্রন্ট কাভারে এবং দ্বিতীয়টি ব্যাক কভারে ব্যবহার করে তার কার্ডটি ছাপান।
"আমি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবেই এই কার্ডটি ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেই। বাচ্চাদের একটা ছবি ব্যবহার করি বাচ্চাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য। আমি কল্পনাও করিনি যে এই কার্ডটি নিয়ে আমাকে এ ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। এবং আমার বিরুদ্ধে এরকম অমূলক একটি মামলা দায়ের করা হবে।"
গাজী তারিক সালমন জানান, কার্ডে তাদের পরিচিতিও লেখা ছিল তারা কোন ক্লাসে পড়ে। ছিল তারা যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তার নাম। বাচ্চাদের এই ছবি নিয়ে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ ছিল না।
পুরস্কার বিজয়ী যে ছবিটি নিয়ে এত বিতর্ক, প্রথম যখন তিনি সেই ছবিটি দেখেন, তাঁর কি মনে হয়েছিল?
"ছবিটি প্রথম দেখে মনে হয়েছিল খুবই দৃষ্টিনন্দন এবং খুবই সুন্দর একটা ছবি। ক্লাস ফাইভের একটি বাচ্চা এটি এঁকেছে, এবং তার বয়স বিবেচনায় খুবই সুন্দর একটি ছবি। এটিকে বিকৃত বলার কোন সুযোগ নেই। এবং এটিকে কেউ যদি বিকৃত বলে, সে নিজেই আসলে বিকৃত মনস্ক।
তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কেন এই মামলা হলো? তাঁর কি মনে হয়?
"আমি আট মাস বরিশালের আগৈলঝড়া উপজেলায় কর্মরত ছিলাম। এসময় আমাকে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ যাতে সঠিকভাবে যথাযথভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্যে আমি তৎপর ছিলাম। কঠোর অবস্থানে ছিলাম। আমি সেখানকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি। আমি অবৈধ স্থাপনা করতে দেই নি আমি যতদিন সেখানে ছিলাম। এসব কারণে সেখানকার প্রভাবশালীরা আমার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিল। আমার অনুমান, তারা আমাকে হয়রানি করার জন্য বাদীকে দিয়ে এই মামলাটি করিয়েছে।"
এই মামলার কিছুদিন পরে তারিক সালমনকে বরগুনা সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়।
যেদিন তিনি বরগুনা সদরে জয়েন করেন, সেদিন বরিশালের কয়েকটি আঞ্চলিক পত্রিকায় তাকে নিয়ে একটি খবর প্রকাশিত হয়।
"জুনের ৪ তারিখে প্রকাশিত সব কটি পত্রিকার রিপোর্টের ভাষা ছিল একই রকম। শিরোণামটি ছিল 'বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতকারী সেই ইউএনও অবশেষে বদলি'। এই খবরের প্রতিবাদ আমি সমস্ত পত্রিকায় পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু কোন পত্রিকা প্রতিবাদটি ছাপেনি।
আদালত প্রাঙ্গণে যা ঘটেছিল:
বিচারক যখন তার জামিনের আবেদন নাকচ করে দিলেন, কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়েছিলেন গাজী তারিক সালমন। তিনি বুঝতে পারেন নি, এরকম ঘটনা ঘটতে পারে।
"যখন আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়, তখনই আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তারা আমাকে বলেছিলেন মামলা যেহেতু হয়েছে, মামলাটি আইনগত-ভাবে মোকাবেলা করতে হবে।"
"আমাকে ঠিক গ্রেফতার করা হয়নি। আমার যে জামিনের আবেদন সেটি নামঞ্জুর করা হয়। তারপর আমাকে কোর্টের গরাদখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমাকে কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। তখন আমি পুলিশকে অনুরোধ করেছিলাম, দয়া করে আমাকে একটু সময় দিন। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানোর সুযোগ দিন।
গাজী তারিক সালমনের অনুরোধে পুলিশ তাকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ দেন। দু ঘণ্টা তিনি ছিলেন আদালতের গরাদখানায়। বেলা দেড়টার দিকে আদালতের বিচারক পিয়ন পাঠিয়ে তাকে ডেকে পাঠান। তাঁর আইনজীবীকেও ডেকে পাঠানো হয়।
"আমি আদালতে যাই। এজলাসে যাই। কিন্তু বিচারক আমার মুখোমুখি হননি। তিনি খাস কামরায় বসে আমার জামিন মঞ্জুর হয়েছে মর্মে একটি আদেশ দেন। আদালতের পেশকার, তিনি আমার জেল পরোয়ানাটি আমার সামনেই ছিঁড়ে ফেলেন। তিনি আমাকে বলেন, আপনার কোন চিন্তা নেই। আপনার জেল পরোয়ানাটি ছিঁড়ে ফেলেছি।"
গত তিন দিন ধরে সারা বাংলাদেশ জুড়ে তাঁকে নিয়ে যে আলোচনা-বির্তকের ঝড়, তারপর এখন তিনি কি করবেন? তিনি কি কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছেন?
"এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। এব্যাপারে আমাদের সার্ভিসের এসোসিয়েশন রয়েছে। সবার সঙ্গে পরামর্শ করে আমি পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।"
"আমাকে যে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে, এটি মিডিয়াতে প্রকাশ হওয়ার পর, যে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে, সমস্ত দেশবাসী আমার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। সংবাদকর্মীরা আমার পক্ষে কথা বলেছেন। আমি এজন্য কৃতজ্ঞ। এজন্যে আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।"
সূত্র: বিবিসি
No comments