ঘুষের হাটে টাকার খেলা
ঘুষের হাটে পরিণত হয়েছে গোয়ালন্দ সাবরেজিস্ট্রি অফিস। জমি দলিলে এখানে ঘাটে ঘাটে টাকা খরচ করতে হয় জনসাধারণকে। সাবরেজিস্ট্রি অফিস ও দলিল লেখক সমিতির যোগসাজশে প্রতিটি দলিল ও দানপত্র থেকে বাধ্যতামূলকভাবে ১ শতাংশ হারে ঘুষ আদায় করে বলে বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্র মতে, এলাকার লোকজন দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে থাকলেও এর প্রতিকারে দায়িত্বশীল কাউকেই এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। সম্প্রতি দলিল লেখক আ. সালাম এই বাধ্যতামূলক ঘুষ আদায়ের প্রতিবাদ করে উল্টো বিপদে পড়েছেন। সাবরেজিস্ট্রি অফিস তাকে শোকজ করা ছাড়াও তার লাইসেন্স বাতিল করার হুমকি দিচ্ছে বলে ওই দলিল লেখক অভিযোগ করেন। সপ্তাহে প্রতি বুধবার একদিন এখানে দলিল সম্পাদিত হয়। প্রতিটি দলিল ও দানপত্র হতে দলিল লেখকরা অফিস বা সাবরেজিস্ট্রারের কথা বলে ১ শতাংশ হারে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন। এছাড়া দলিল সম্পাদনের সময় অফিসে দাতা-গ্রহীতাদের কাছ থেকে প্রতিটি টিপসই বাবদ ৫০-২০০ টাকা, বায়নাপত্র বাবদ ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। এর বাইরেও দলিল লেখক সমিতির নামে দলিল প্রতি আদায় করা হয় বিভিন্ন অঙ্কের টাকা। অতিরিক্ত আদায়কৃত টাকা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের প্রধান করনিক আ. সালাম আদায় করে থাকেন। পরে তারা অফিসের পদ-পদবি অনুযায়ী নিজেদের মধ্যে এ টাকা ভাগ করে নেন।
এছাড়া দলিল লেখকরা তাদের আদায়কৃত টাকাও নিজেদের মধ্যে সপ্তাহ শেষে আনুপাতিক হারে ভাগ করে নেন। শুধু অফিসের নামেই সপ্তাহে এখানে ২ হতে আড়াই লাখ টাকা ঘুষ আদায় হয় বলে নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করে। উপজেলার উত্তর দৌলতদিয়া তাহের কাজীপাড়ার মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে আজিজুল মণ্ডল জানান, আমার বাবার মৃত্যু হওয়ায় ভাই বোনেরা আমাকে ২২ শতাংশ ৮৫ পয়েন্ট জমি দান সত্ত্বে (হেবা দলিল) দলিল করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দলিলে জমির আর্থিক মূল্য রয়েছে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী হেবা দলিলে সর্বসাকুল্যে ৬৫০ টাকা সরকারি ফিস আদায়ের নিয়ম আছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমার কাছ থেকে আদায় করা হয় ৩৬শ’ টাকা। ঈদুল ফিতরের আগের বুধবার দলিল লেখক আ. সালামের মাধ্যমে তিনি এ দলিল সম্পাদন করেন। এ বিষয়ে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আরশাদ শেখ ও সাধারণ সম্পাদক আ. জলিল মুন্সি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ঘুষের টাকা আদায় করে দেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। বরং অভিযোগকারীর বিরুদ্ধেই আমাদের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ আছে। এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সাবরেজিস্ট্রার মো. মনিরুজ্জামানের বক্তব্য জানতে তার অফিসে গিয়ে ছবি তুললে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। পরে কথা বলতে রাজী করানোর পর তিনি জানান, এখানকার নিয়মিত সাবরেজিস্ট্রার রুবেল পারভেজ ট্রেনিংয়ে থাকায় আমি বালিয়াকান্দি উপজেলা হতে সপ্তাহে বুধবার একদিন এসে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। এখানে কি হয় না হয় আমি তার কিছুই জানি না। আমি নিজে কোনো টাকা আদায় করি না। অফিস কিংবা আমার নামে কেউ বাড়তি টাকা আদায় করে কিনা সেটাও আমার জানা নেই।
No comments