পাষণ্ড

নির্মম। মর্মান্তিক। হৃদয়বিদারক। কোনো শব্দেই বোঝানো যাবে না ঘটনার অভিব্যক্তি। শিশু জন্মের আনন্দ এখানে মৃত্যুর নির্মমতায় মোড়া। পাষণ্ডতার শিকার যেখানে নিষ্পাপ শিশু। এমনই এক ঘটনা গতকাল ঘটেছে রাজধানীতে। ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুসন্তানকে জন্মের পরই পাঁচতলা থেকে ছুড়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন এক মা। তার দাবি, নিজে অন্যের লালসার শিকার হয়ে সন্তান ধারণ করেছিলেন। আর শিশুটিকে এ কারণে জন্মের পর হত্যার চেষ্টা চালান। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল শিশুটির প্রতি। পাঁচতলা থেকে ফেলে দেয়া শিশুটি কিছুটা আহত হলেও তাকে নিয়ে তেমন শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
রাজধানীর বেইলি রোডে গতকাল দুপুরে ঘটে নির্মম ঘটনাটি। খবর পেয়ে ওই নবজাতক ও তার মাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ। নবজাতকের মায়ের নাম বিউটি আক্তার। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ষোল বছরের এই কিশোরী জানিয়েছে, এ সন্তানের জনক তার ভগ্নিপতি। সামাজিক মর্যাদার কথা চিন্তা করেই নবজাতককে জন্মের পরই জানালা দিয়ে ফেলে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ, মিডিয়াকর্মী ও আশপাশের লোকজন ওই বাড়ির সামনে ভিড় জমান।
নিউ বেইলি রোডের ২৬ নম্বর প্রপার্টি ম্যানসনের পাঁচতলায় থাকতেন বিউটি আক্তার। ভবন ঘেঁষে রাস্তার পাশেই দোতলা একটি মার্কেট। ওই মার্কেটের ছাদ থেকেই নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ওই মার্কেটের সায়মা ফ্যাশনের আবদুর রহমান জানান,  সময় তখন দুপুর সাড়ে ১২টা। হঠাৎ করে কিছু একটা ছুঁড়ে ফেলার শব্দ পান তিনি। সঙ্গে শিশুর কান্নার শব্দ। ভেতরের সিঁড়ি দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে দোতলায় ওঠেন তিনি। কান্নার শব্দ শুনে দোতলার বারান্দায় গিয়ে নবজাতককে দেখে কাঁপতে থাকেন আবদুর রহমান। তিনি বলেন, যা দেখলাম তা কল্পনা করিনি। বারান্দায় বাচ্চাটি কান্নাকাটি করছিল। তার শরীরে তখনও রক্ত লেগে আছে। পানির একটি ঝারের মধ্যে পড়েছিল ওই শিশু। যে কারণে শিশুটি বেঁচে গেছে বলে মনে করেন তিনি।
তাৎক্ষণিকভাবে আশপাশের লোকদের বিষয়টি জানানো হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নবজাতককে উদ্ধার করে মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এই শিশুকে। রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম জানান, নবজাতকের মা বিউটি একজন কিশোরী। প্রায় ১০ মাস আগে কুমিল্লায় তার বড় বোন লিপি আক্তারের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল বিউটি। সেখানে তার ভগ্নিপতি নীরব তাকে ধর্ষণ করেছে বলে দাবি করেছে সে। বিউটি দাবি করেছে, ঘুমের ওষুধ সেবন করিয়ে তাকে ধর্ষণ করেছে নীরব। পরবর্তীতে গর্ভবতী হয়ে পড়ে বিউটি। কিন্তু লজ্জায় একথা কাউকে জানায়নি সে।
গতকাল সকাল ৮টা থেকেই অসুস্থ ছিল বিউটি। বাসার কাজ না করে দরজা বন্ধ করে তার কক্ষে শুয়ে ছিল। দুপুরের আগে বাসার ওই রুমেই পুত্র সন্তান প্রসব করে। সামাজিক নানা বিষয় চিন্তা করে তাৎক্ষণিকভাবে নবজাতককে জানালা দিয়ে ফেলে দেয়। কিন্তু পাশের দ্বিতীয় তলার মার্কেটের খোলা বারন্দায় পানির ঝারে পড়ে বেঁচে যায় শিশুটি। খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাড়ি টার্গেট করে অনুসন্ধান চালিয়ে অসুস্থ অবস্থায় বিউটি আক্তারকে খুঁজে পায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি স্বীকার করে সে। পরবর্তীতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যদিকে নবজাতককে বড় মগবাজারের আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আসাদুর রহমান জানান, নবজাতককে এনআইসি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে সে আশঙ্কামুক্ত বলে জানান তিনি।
ওই বাড়ির গৃহকর্তা আজমল হকের স্ত্রী ফিরোজা হক জানান, বিউটি গর্ভবতী ছিল তা তারা বুঝতে পারেননি। এমনকি সন্তান প্রসব করেছে তাও টের পাননি তারা। ওই বাসায় পরিবারের সদস্য ছাড়া বাইরের কেউ থাকেন না বলে জানান তিনি। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী ইসমাইল জানান, রোববার সন্ধ্যায়ও বিউটিকে পাশের দোকানে আসা-যাওয়া করতে দেখেছেন তারা। তখনও মনে হয়নি সে গর্ভবতী।
বিউটি আক্তারের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার নওকর গ্রামে। বেইলী রোডের ২৬ নম্বর প্রপার্টি ম্যানননের আজমল হক ও ফিরোজা হকের বাসায় ৯ বছর ধরে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছে সে।

No comments

Powered by Blogger.