একটি পরিবারে কয়টি গাড়ি, আইন আসছে
পরিবারপ্রতি গাড়ি সংখ্যার ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করে দিয়ে ‘সড়ক পরিবহন আইন’ করতে যাচ্ছে সরকার। গতকাল সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মোটর ভেহিক্যাল অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩ এর পরিবর্তে দুটি ভিন্ন আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়ার কথা জানান। সংসদ সদস্য হাজি সেলিম মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন, একটি পরিবারে একটির বেশি গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না- মর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে কি-না? রাজধানীর যানজটের জন্য ব্যক্তিগত গাড়িকেই প্রধানত দায়ী করা হয়। অনেকেই বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে যানজট সহনীয় হয়ে আসবে। হাজি সেলিমের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, একটি পরিবারে একটির বেশি গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না- মর্মে নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। তবে খসড়া সড়ক পরিবহন আইনে পরিবারপ্রতি গাড়ির সংখ্যার ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। মন্ত্রী আরও জানান, বহু প্রত্যাশিত ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক আগামী মে মাসে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের কাজ একদম শেষ পর্যায়ে। মন্ত্রী আরও জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের ১৯২ কিলোমিটারের পুরোটাই শেষ হয়েছে। এটা গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে। আমি নিজেই রোববার প্লেনের টিকিট বাতিল করে রাতে বাসে এসেছি। পথে পথে প্রকৌশলীদের দ্রুত ফিনিশিং লেয়ারের কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়েছি। তিনি জানান, এই প্রকল্পের মধ্যে ২৫৪টি কালভার্ট, ১৪টি বাইপাস (৩২ কি.মি.) পথ রয়েছে। ওবায়দুল কাদের প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে নিজ নিজ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার তালিকা জমা দিতে বলেছেন। তালিকা অনুযায়ী বর্ষা মৌসুমের আগেই ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করে যানচলাচলের উপযোগী করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমের আগেই সব ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করা হবে। যেসব রাস্তা যান চলাচলের অনুপযোগী আছে, সেগুলো যানচলাচলের উপযোগী করা হবে। এ জন্য সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে তালিকা চাই। আপনারা তালিকা দিলে আমরা কাজ করতে পারবো। যানজট নিরসনে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী জানান, ঢাকা শহরের যানজট নিরসন ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য ২০ বছরের অধিক পুরাতন বাস-মিনিবাস ও ২৫ বছরের অধিক পুরনো পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পুরাতন জরাজীর্ণ ট্যাক্সিক্যাবের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরীতে আধুনিক মানসম্মত ট্যাক্সিক্যাব চালু করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, রাজধানীর যানজট নিরসনে জাল বা ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী গাড়িচালক, যান্ত্রিক ত্রুটিপূর্ণ, রংচটা ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে জরুরি সতর্কীকরণ গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হচ্ছে। বিআরটিএ ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে পরিচালিত মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবারও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মামলা দায়ের, জরিমানা আদায় ও গাড়ি ডাম্পিং স্টেশনে পাঠানো হচ্ছে। সংরক্ষিত নারী আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী জানান, গত বছরের ১৫ই জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালের মধ্যে পরিবহন সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এ চুক্তির ফলে চার দেশের মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি, যাত্রীবাহী যানবাহন ও পণ্য পরিবহনের জন্য পণ্যবাহী যান চলাচল করতে পারবে। ইতিমধ্যে ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল চুক্তিটি অনুসমর্থন করেছে। ভুটানও খুব শিগগিরই চুক্তিটি অনুসমর্থন করবে। চার দেশের অনুসমর্থনের পর চুক্তিটি বাস্তবায়ন হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
No comments