মিয়ানমারে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু- সু চির সামনে চার চ্যালেঞ্জ by সোহরাব হাসান
পার্লামেন্ট থেকে ফেরার পথে অং সান সু চি। তাঁর দল এনএলডির বিপুল নির্বাচনী জয়ের পর নেপিডোতে গতকাল পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসে |
নতুন
পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরুর মাধ্যমে মিয়ানমারে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত
গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হলো গতকাল। নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির দল
ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) গত নভেম্বরে নির্বাচনে বিপুল ভোটে
জয়লাভ করলেও গণতন্ত্রে উত্তরণের সংগ্রাম শেষ হয়নি।
২০০৮ সালের সংবিধান অনুযায়ী, ৬৬৪ সদস্যের পার্লামেন্টে শতকরা ২৫ ভাগ আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত আছে। গতকাল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের প্রথম অধিবেশনটি ছিল বিজয়ী এনএলডি ও ইউএসডিপির সদস্যদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর। উভয় দলের সাংসদেরা মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক ধারাকে এগিয়ে নেওয়া এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
তবে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, অং সান সু চি এক নজিরবিহীন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার প্রথম ধাপ শেষ করেছেন। গতকালের অধিবেশনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধাপ শুরু হলো। এ মুহূর্তে তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে এমন একজনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা, যাঁর প্রতি জনগণ ও সেনাবাহিনী উভয়ই আস্থা রাখতে পারবে। কাজটি মোটেই সহজ নয়।
কেননা সেনাবাহিনীর আস্থা ছাড়া এনএলডির পক্ষে সরকার পরিচালনা সম্ভব নয়। পার্লামেন্টের উভয় পরিষদে দলটি ৮০ শতাংশ আসনে জয়ী হলেও সশস্ত্র বাহিনীর জন্য সংরক্ষিত ২৫ শতাংশ আসন থাকায় তাদের নাখোশ করা যাবে না। সংবিধান অনুযায়ী সু চি নিজে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সংবিধানের ৫৯(এফ) ধারায় বলা আছে, কোনো নাগরিক বিদেশিকে বিয়ে করলে তিনি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। অবশ্য প্রেসিডেন্ট যে-ই হোন না কেন, ক্ষমতার চাবি যে সু চির হাতেই থাকবে, তা এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ইয়াঙ্গুনের কূটনৈতিক মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, সু চির সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। প্রথমত, তিনি জনগণের কাছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে ওয়াদা করেছেন, সেটি পূরণ করতে শাসনকাঠামোয় দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে হবে। দ্বিতীয়ত, পার্লামেন্টে যতটা সম্ভব সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কমাতে হবে। বর্তমান পার্লামেন্ট সম্পর্কে জনগণের উৎসাহ প্রচুর। আগের পার্লামেন্টের নির্বাচিতদের বেশির ভাগই সেনাবাহিনী থেকে আসায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁদের তেমন যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু এবার এনএলডি থেকে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশা থেকে এসেছেন। এঁদের একটি বড় অংশ প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য হয়েছে।
মিয়ানমারে কাজ করেন এমন একটি বিদেশি সংস্থার প্রধান প্রথম আলোকে টেলিফোনে জানান, বিজয়ী দলটির সঙ্গে সেনাবাহিনীর অধিকারীদের আলোচনা চলছে। আশা করা হচ্ছে, এই আলোচনা একটি যৌক্তিক পর্যায়ে যাবে। যিনিই প্রেসিডেন্ট হোন না কেন, তাঁকে সেনাবাহিনীর আস্থা অর্জন করতে হবে। তবে প্রথমেই এনএলডি হোঁচট খেয়েছে উচ্চ পরিষদের ডেপুটি স্পিকার পদে একজন জাতীয়তাবাদী আরাকানকে মনোনীত করে, যা সংখ্যালঘুদের ভীতির কারণ হতে পারে।
এনএলডির সূত্র জানায়, প্রেসিডেন্ট পদে এখন পর্যন্ত দুজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এঁদের একজন হলেন এনএলডির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৯৮৮ সালের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের নেতা টিন উ, যিনি নে উইন সরকারের আমলে সেনাপ্রধান ছিলেন। বর্তমানে তাঁর বয়স ৯০। দ্বিতীয় জন সু চির ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিন মিও উইন। তিনি এনএলডির প্রভাবশালী নেতা হলেও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। তাঁকে সেনা নেতৃত্ব মেনে নেবেন কি না, সেই প্রশ্ন থাকছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির, গবেষণাসূত্রে মিয়ানমারের সঙ্গে যাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে, দেশটির নতুন পার্লামেন্টের যাত্রা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মিয়ানমারের এই নবযাত্রা উৎসাহব্যঞ্জক। কেননা এই যাত্রায় এমন একজন নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যিনি সারা বিশ্বে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের জন্য প্রশংসিত। কিন্তু তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জটিও ছোট নয়। সু চির বড় চ্যালেঞ্জ হবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কীভাবে সমঝোতা করেন এবং কীভাবে জনগণকে দেওয়া গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম করার ওয়াদা পূরণ করেন। মিয়ানমারে যে জাতিগত সমস্যা আছে, তা কীভাবে মোকাবিলা করেন। সর্বোপরি মিয়ানমারে যে উগ্রপন্থার উত্থান ঘটছে, সেটি মোকাবিলা করে তিনি কীভাবে রোহিঙ্গাসহ সব সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করেন, তাঁর ওপরই সু চির সাফল্য নির্ভর করছে।
বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এনএলডির কয়েক শ এমপি শপথ নেওয়ার পর গতকাল মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোয় পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশনও শুরু হয়। দলটির এমপিরা হালকা গেরুয়া রঙের পোশাক পরেছিলেন। তবে তাঁদের নেতা সু চি পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কোনো কথা না বলেই। তাই নতুন পার্লামেন্টের যাত্রা এবং এর ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তাঁর বক্তব্য শুনতে পারেননি তাঁরা।
১৯৬২ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর এবারই প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পার্লামেন্টে নেতৃত্বের আসনে বসলেন। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে পার্লামেন্টে আসন গ্রহণ করলেও এনএলডি সরকারের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটবে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর, এপ্রিলে।
এনএলডির বিপুল বিজয়ের পরও জান্তা প্রণীত সংবিধানের আওতায় দলটিকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেই দেশ চালাতে হবে। মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্র, সীমান্ত ও প্রতিরক্ষা-বিষয়ক পদগুলোও সেনাবাহিনীর জন্য নির্ধারিত। তবে এনএলডির নেতৃত্বে পার্লামেন্টের এই যাত্রা মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণে আরেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সামরিক সরকারবিরোধী সংগঠন ‘৮৮ জেনারেশন স্টুডেন্টস’-এর নেতা এবং দীর্ঘ ২০ বছর কারাবন্দী থাকা এমপি পেয়ন চো শপথ নেওয়ার পর বলেন, ‘বহু বছর পর মিয়ানমারের জনগণের পছন্দে নির্বাচিত এক পার্লামেন্টের যাত্রা শুরু হলো। এখন আমাদের কাজ হলো প্রতিশ্রুতি পূরণ করা এবং জনগণের জীবনে পরিবর্তন আনা।’
আগামী মার্চের শেষে পদত্যাগ করবেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন। নতুন পার্লামেন্টের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজই হবে তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচন। এনএলডির কিছু সদস্য জানান, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মনোনয়ন-প্রক্রিয়া এ মাসের শেষ দিকে শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এ সপ্তাহেই পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার নিয়োগে মনোযোগ দিচ্ছে এনএলডি। গত সপ্তাহে এসব পদের জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করা হয়। মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্যে উইন মিন্টকে নিম্নকক্ষের স্পিকার এবং উইন খাইং থানকে উচ্চকক্ষের স্পিকার হিসেবে এনএলডির পছন্দের কথা নিশ্চিত করেছেন সু চি।
নতুন পার্লামেন্ট একজন নতুন চেয়ারম্যানও বাছাই করবে। এসবের বাইরে ৮ ফেব্রুয়ারি প্রাদেশিক ও আঞ্চলিক পরিষদের অধিবেশন শুরুর প্রস্তুতি নেবে এনএলডি। পরিষদগুলোর বেশ কটিই জাতিগত সংখ্যালঘুদের দখলে।
নতুন পার্লামেন্টের এ যাত্রা শুরুর সঙ্গে মিয়ানমারের প্রায় সোয়া পাঁচ কোটি মানুষের প্রত্যাশার পাহাড়ও বড় হচ্ছে। তাঁরা চান, সামরিক শাসনের জাঁতাকলে স্থবির হয়ে যাওয়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধার থেকে শুরু করে জাতিগত সংঘাতে অস্থিতিশীল হয়ে পড়া দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার মতো সবকিছু রাতারাতি করবে এনএলডি।
এ প্রসঙ্গে পার্লামেন্টের বিদায়ী স্পিকার এবং সু চির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রাজনীতিক শোয়ে মান বলেন, মানুষের পাহাড়সম প্রত্যাশার এই চ্যালেঞ্জ পূরণে এনএলডিকে সঠিক লোক বাছাই এবং তাঁকে সঠিক স্থানে বসাতে হবে। আর এটাই নির্ধারণ করবে সরকারের দক্ষতা।
২০০৮ সালের সংবিধান অনুযায়ী, ৬৬৪ সদস্যের পার্লামেন্টে শতকরা ২৫ ভাগ আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত আছে। গতকাল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের প্রথম অধিবেশনটি ছিল বিজয়ী এনএলডি ও ইউএসডিপির সদস্যদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর। উভয় দলের সাংসদেরা মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক ধারাকে এগিয়ে নেওয়া এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
তবে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, অং সান সু চি এক নজিরবিহীন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার প্রথম ধাপ শেষ করেছেন। গতকালের অধিবেশনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধাপ শুরু হলো। এ মুহূর্তে তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে এমন একজনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা, যাঁর প্রতি জনগণ ও সেনাবাহিনী উভয়ই আস্থা রাখতে পারবে। কাজটি মোটেই সহজ নয়।
কেননা সেনাবাহিনীর আস্থা ছাড়া এনএলডির পক্ষে সরকার পরিচালনা সম্ভব নয়। পার্লামেন্টের উভয় পরিষদে দলটি ৮০ শতাংশ আসনে জয়ী হলেও সশস্ত্র বাহিনীর জন্য সংরক্ষিত ২৫ শতাংশ আসন থাকায় তাদের নাখোশ করা যাবে না। সংবিধান অনুযায়ী সু চি নিজে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সংবিধানের ৫৯(এফ) ধারায় বলা আছে, কোনো নাগরিক বিদেশিকে বিয়ে করলে তিনি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। অবশ্য প্রেসিডেন্ট যে-ই হোন না কেন, ক্ষমতার চাবি যে সু চির হাতেই থাকবে, তা এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ইয়াঙ্গুনের কূটনৈতিক মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, সু চির সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। প্রথমত, তিনি জনগণের কাছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে ওয়াদা করেছেন, সেটি পূরণ করতে শাসনকাঠামোয় দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে হবে। দ্বিতীয়ত, পার্লামেন্টে যতটা সম্ভব সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কমাতে হবে। বর্তমান পার্লামেন্ট সম্পর্কে জনগণের উৎসাহ প্রচুর। আগের পার্লামেন্টের নির্বাচিতদের বেশির ভাগই সেনাবাহিনী থেকে আসায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁদের তেমন যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু এবার এনএলডি থেকে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশা থেকে এসেছেন। এঁদের একটি বড় অংশ প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য হয়েছে।
মিয়ানমারে কাজ করেন এমন একটি বিদেশি সংস্থার প্রধান প্রথম আলোকে টেলিফোনে জানান, বিজয়ী দলটির সঙ্গে সেনাবাহিনীর অধিকারীদের আলোচনা চলছে। আশা করা হচ্ছে, এই আলোচনা একটি যৌক্তিক পর্যায়ে যাবে। যিনিই প্রেসিডেন্ট হোন না কেন, তাঁকে সেনাবাহিনীর আস্থা অর্জন করতে হবে। তবে প্রথমেই এনএলডি হোঁচট খেয়েছে উচ্চ পরিষদের ডেপুটি স্পিকার পদে একজন জাতীয়তাবাদী আরাকানকে মনোনীত করে, যা সংখ্যালঘুদের ভীতির কারণ হতে পারে।
এনএলডির সূত্র জানায়, প্রেসিডেন্ট পদে এখন পর্যন্ত দুজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এঁদের একজন হলেন এনএলডির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৯৮৮ সালের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের নেতা টিন উ, যিনি নে উইন সরকারের আমলে সেনাপ্রধান ছিলেন। বর্তমানে তাঁর বয়স ৯০। দ্বিতীয় জন সু চির ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিন মিও উইন। তিনি এনএলডির প্রভাবশালী নেতা হলেও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। তাঁকে সেনা নেতৃত্ব মেনে নেবেন কি না, সেই প্রশ্ন থাকছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির, গবেষণাসূত্রে মিয়ানমারের সঙ্গে যাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে, দেশটির নতুন পার্লামেন্টের যাত্রা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মিয়ানমারের এই নবযাত্রা উৎসাহব্যঞ্জক। কেননা এই যাত্রায় এমন একজন নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যিনি সারা বিশ্বে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের জন্য প্রশংসিত। কিন্তু তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জটিও ছোট নয়। সু চির বড় চ্যালেঞ্জ হবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কীভাবে সমঝোতা করেন এবং কীভাবে জনগণকে দেওয়া গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম করার ওয়াদা পূরণ করেন। মিয়ানমারে যে জাতিগত সমস্যা আছে, তা কীভাবে মোকাবিলা করেন। সর্বোপরি মিয়ানমারে যে উগ্রপন্থার উত্থান ঘটছে, সেটি মোকাবিলা করে তিনি কীভাবে রোহিঙ্গাসহ সব সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করেন, তাঁর ওপরই সু চির সাফল্য নির্ভর করছে।
বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এনএলডির কয়েক শ এমপি শপথ নেওয়ার পর গতকাল মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোয় পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশনও শুরু হয়। দলটির এমপিরা হালকা গেরুয়া রঙের পোশাক পরেছিলেন। তবে তাঁদের নেতা সু চি পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কোনো কথা না বলেই। তাই নতুন পার্লামেন্টের যাত্রা এবং এর ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তাঁর বক্তব্য শুনতে পারেননি তাঁরা।
১৯৬২ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর এবারই প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পার্লামেন্টে নেতৃত্বের আসনে বসলেন। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে পার্লামেন্টে আসন গ্রহণ করলেও এনএলডি সরকারের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটবে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর, এপ্রিলে।
এনএলডির বিপুল বিজয়ের পরও জান্তা প্রণীত সংবিধানের আওতায় দলটিকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেই দেশ চালাতে হবে। মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্র, সীমান্ত ও প্রতিরক্ষা-বিষয়ক পদগুলোও সেনাবাহিনীর জন্য নির্ধারিত। তবে এনএলডির নেতৃত্বে পার্লামেন্টের এই যাত্রা মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণে আরেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সামরিক সরকারবিরোধী সংগঠন ‘৮৮ জেনারেশন স্টুডেন্টস’-এর নেতা এবং দীর্ঘ ২০ বছর কারাবন্দী থাকা এমপি পেয়ন চো শপথ নেওয়ার পর বলেন, ‘বহু বছর পর মিয়ানমারের জনগণের পছন্দে নির্বাচিত এক পার্লামেন্টের যাত্রা শুরু হলো। এখন আমাদের কাজ হলো প্রতিশ্রুতি পূরণ করা এবং জনগণের জীবনে পরিবর্তন আনা।’
আগামী মার্চের শেষে পদত্যাগ করবেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন। নতুন পার্লামেন্টের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজই হবে তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচন। এনএলডির কিছু সদস্য জানান, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মনোনয়ন-প্রক্রিয়া এ মাসের শেষ দিকে শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এ সপ্তাহেই পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার নিয়োগে মনোযোগ দিচ্ছে এনএলডি। গত সপ্তাহে এসব পদের জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করা হয়। মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্যে উইন মিন্টকে নিম্নকক্ষের স্পিকার এবং উইন খাইং থানকে উচ্চকক্ষের স্পিকার হিসেবে এনএলডির পছন্দের কথা নিশ্চিত করেছেন সু চি।
নতুন পার্লামেন্ট একজন নতুন চেয়ারম্যানও বাছাই করবে। এসবের বাইরে ৮ ফেব্রুয়ারি প্রাদেশিক ও আঞ্চলিক পরিষদের অধিবেশন শুরুর প্রস্তুতি নেবে এনএলডি। পরিষদগুলোর বেশ কটিই জাতিগত সংখ্যালঘুদের দখলে।
নতুন পার্লামেন্টের এ যাত্রা শুরুর সঙ্গে মিয়ানমারের প্রায় সোয়া পাঁচ কোটি মানুষের প্রত্যাশার পাহাড়ও বড় হচ্ছে। তাঁরা চান, সামরিক শাসনের জাঁতাকলে স্থবির হয়ে যাওয়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধার থেকে শুরু করে জাতিগত সংঘাতে অস্থিতিশীল হয়ে পড়া দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার মতো সবকিছু রাতারাতি করবে এনএলডি।
এ প্রসঙ্গে পার্লামেন্টের বিদায়ী স্পিকার এবং সু চির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রাজনীতিক শোয়ে মান বলেন, মানুষের পাহাড়সম প্রত্যাশার এই চ্যালেঞ্জ পূরণে এনএলডিকে সঠিক লোক বাছাই এবং তাঁকে সঠিক স্থানে বসাতে হবে। আর এটাই নির্ধারণ করবে সরকারের দক্ষতা।
No comments