২৪ আগস্ট ইয়াসমিন হত্যা দিবস by আবু তালহা
২৪ আগস্ট দিনাজপুরের ইয়াসমিন হত্যা দিবস।
১৯৯৫ সালের এই দিনে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশের হাতে ধর্ষণের পর
হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন দিনাজপুরের কিশোরী ইয়াসমিন।
১৯৯৫
সালের ২৩ আগস্ট ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। ভুল গাড়িতে উঠে পড়ার পর
দিনাজপুরের দশমাইল মোড়ে ভোরের আলো ফোঁটার আগেই ইয়াসমিনকে নামিয়ে দিয়ে চলে
যায় বাসটি। যাওয়ার সময় চায়ের দোকানদারকে কন্ডাক্টর বলে যান, পরে যেন
ইয়াসমিনকে গাড়িতে তুলে দেন।
এর কিছুক্ষণ পর পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিয়ে যায় ইয়াসমিনকে। কিন্তু, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার নামে পুলিশ সদস্যরাই পালাক্রমে ধর্ষণ এবং পরে হত্যা করে কিশোরী ইয়াসমিনকে।
দিনাজপুর শহরের রামনগর এলাকার গরিব ঘরের মা শরীফা বেগমের মেয়ে ইয়াসমিন। গরিব পরিবারে জন্ম নেওয়ায় চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়তে পেরেছিলেন তিনি। টাকা জমিয়ে আবার লেখাপড়া করার স্বপ্ন বুকে নিয়েই পাড়ি জমান ঢাকায়। ঢাকায় এসে একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ নেন তিনি।
ইয়াসমিন আট-নয় মাস কাজ করার পর নিজের বাড়িতে যেতে যান। কিন্তু যার বাসায় তিনি কাজ করতেন, তিনি দূর্গা পূজায় যেতে বলেন। কিন্তু মায়ের জন্য মন ছুটে যায় ইয়াসমিনের।
আর সে কারণেই হয়ত ২৩ আগস্ট ওই পরিবারের ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে একাই দিনাজপুরের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে যায় ইয়াসমিন।
ভুল করে ঠাকুরগাঁওগামী নৈশকোচ হাছনা এন্টারপ্রাইজে উঠে পড়েন। বাসটি ২৪ আগস্ট ভোররাত তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে দিনাজপুর শহরে যাওয়ার জন্য দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁ-রংপুরের সংযোগ মোড় দশমাইল এলাকায় এসে পৌঁছায়।
এখানে চায়ের স্টল, খাবারের দোকান প্রায়ই খোলা থাকে। কোচের সুপারভাইজার খোরসেদ আলম ও হেলপার সিদ্দিকুর রহমান ইয়াসমিনকে জোবেদ আলীর চায়ের দোকানে নামিয়ে দেয়। তারা দোকান মালিককে অনুরোধ করেন যেন ইয়াসমিনকে দিনাজপুরগামী কোনো গাড়িতে উঠিয়ে দেন।
জানা যায়, সে সময় জয়ন্ত নামে একজন যাত্রীও বাস থেকে নামেন। বাস থেকে নেমে জয়ন্ত ও ইয়াসমিন জোবেদ আলীর চায়ের দোকানের পাশেই একটি দোকানে নাস্তা খান।
আবদুর রহিম নামে এক পান দোকানদার ইয়াসমিন কীভাবে দিনাজপুরের রামনগরে যাবে জানতে চাইলে জয়ন্ত তাকে পৌঁছে দেবে বলে জানান। এ সময় উপস্থিত কয়েকজন আপত্তি জানিয়ে ইয়াসমিনকে তারাই দিনাজপুরগামী গাড়িতে তুলে দিতে চান।
এ সময় বীরগঞ্জ থেকে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানের (নং-ম-০২-০০০৭) চালক অমৃতলাল বিষয়টি জানতে চান। পিকআপ ভ্যানে আরো দুইজন উপপরিদর্শক (এসআই) মইনুল এবং আব্দুস সাত্তার বসে ছিলেন। অমৃতলাল এ সময় ইয়াসমিনকে তাদের সঙ্গে যাওয়ার প্রস্তাব দেন।
তবে ইয়াসমিন সকাল না হওয়ায় যেতে সাহন পান না। এরপর অমৃতলাল ধমক দিয়ে তাকে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিয়ে যান।
এরপ পিকআপ ভ্যানটি আনুমানিক তিনশ গজ দূরে সাধনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে দাঁড় করিয়ে পুলিশ টর্চ দিয়ে কিছু একটা বা কাউকে খুঁজতে থাকে।
এ সময় ওই স্কুলের দিক থেকে ধান বোঝাই দুটি রিকশাচালককে পুলিশ জানতে চায়, তাদের পিকআপ ভ্যান থেকে যে মেয়েটি লাফ দিয়েছে, তাকে তারা দেখেছে কিনা? ঠিক ওই মুহূর্তে ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী একটি নৈশ কোচের হেডলাইটের আলোয় পুলিশ এবং রিকশা চালকরা ইয়াসমিনকে রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখতে পান। এরপর পুলিশ আবার ইয়াসমিনকে পিকআপ ভ্যানে তুলে নেয়।
পরবর্তীতে ওই এলাকার লোকজন রাস্তায় রক্তের দাগ, পাশে ইয়াসমিনের জুতা, রুমাল, হাতপাখা ও ভাঙা চুড়িও পড়ে থাকতে দেখেন। এর ঘণ্টা তিনেক পরে গোবিন্দপুর সড়কে ব্র্যাক অফিসের সামনে ইয়াসমিনের মৃতদেহ পাওয়া যায়।
এরপর উত্তর গোবিন্দপুর এলাকায় পড়ে থাকা ইয়াসমিনের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির উদ্দেশ্যে কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন কুমার প্রকাশ্যে লাশ বিবস্ত্র করে ফেললে উৎসুক জনতার মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং ঘটনার পরদিনই দিনাজপুরে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং হত্যা ও ধর্ষণের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দিনাজপুর কোতোয়ালি পুলিশ বিষয়টি সামাল দেওয়ার জন্য ‘একজন অজ্ঞাতপরিচয় যুবতীর লাশ উদ্ধার’ মর্মে ঘটনাটি সাজিয়ে থানায় একটি ইউডি মামলা করে। লাশের তড়িঘড়ি ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমানে মফিদুলের মাধ্যমে বালুবাড়ি শেখ জাহাঙ্গীর গোরস্থানে দাফন করা হয়। লাশের কোনো ধরনের গোসল ও জানাজা পড়ানো হয়নি।
২৫ আগস্টের বিক্ষোভে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান আরো সাতজন। এ সময় বিভিন্ন মহল থেকে ইয়াসমিনের পরিবারকে হুমকিও দেওয়া হয় অনেকবার।
পরে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে ধর্ষক ও খুনিদের ফাঁসির রায় দেয় আদালত। ২০০৪ সালে রায় কার্যকর করা হয় এবং সম্মিলিত নারী সমাজের পক্ষ থেকে ‘২৪ আগস্ট নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
দিনটি উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামসহ নারী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে।
এর কিছুক্ষণ পর পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিয়ে যায় ইয়াসমিনকে। কিন্তু, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার নামে পুলিশ সদস্যরাই পালাক্রমে ধর্ষণ এবং পরে হত্যা করে কিশোরী ইয়াসমিনকে।
দিনাজপুর শহরের রামনগর এলাকার গরিব ঘরের মা শরীফা বেগমের মেয়ে ইয়াসমিন। গরিব পরিবারে জন্ম নেওয়ায় চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়তে পেরেছিলেন তিনি। টাকা জমিয়ে আবার লেখাপড়া করার স্বপ্ন বুকে নিয়েই পাড়ি জমান ঢাকায়। ঢাকায় এসে একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ নেন তিনি।
ইয়াসমিন আট-নয় মাস কাজ করার পর নিজের বাড়িতে যেতে যান। কিন্তু যার বাসায় তিনি কাজ করতেন, তিনি দূর্গা পূজায় যেতে বলেন। কিন্তু মায়ের জন্য মন ছুটে যায় ইয়াসমিনের।
আর সে কারণেই হয়ত ২৩ আগস্ট ওই পরিবারের ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে একাই দিনাজপুরের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে যায় ইয়াসমিন।
ভুল করে ঠাকুরগাঁওগামী নৈশকোচ হাছনা এন্টারপ্রাইজে উঠে পড়েন। বাসটি ২৪ আগস্ট ভোররাত তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে দিনাজপুর শহরে যাওয়ার জন্য দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁ-রংপুরের সংযোগ মোড় দশমাইল এলাকায় এসে পৌঁছায়।
এখানে চায়ের স্টল, খাবারের দোকান প্রায়ই খোলা থাকে। কোচের সুপারভাইজার খোরসেদ আলম ও হেলপার সিদ্দিকুর রহমান ইয়াসমিনকে জোবেদ আলীর চায়ের দোকানে নামিয়ে দেয়। তারা দোকান মালিককে অনুরোধ করেন যেন ইয়াসমিনকে দিনাজপুরগামী কোনো গাড়িতে উঠিয়ে দেন।
জানা যায়, সে সময় জয়ন্ত নামে একজন যাত্রীও বাস থেকে নামেন। বাস থেকে নেমে জয়ন্ত ও ইয়াসমিন জোবেদ আলীর চায়ের দোকানের পাশেই একটি দোকানে নাস্তা খান।
আবদুর রহিম নামে এক পান দোকানদার ইয়াসমিন কীভাবে দিনাজপুরের রামনগরে যাবে জানতে চাইলে জয়ন্ত তাকে পৌঁছে দেবে বলে জানান। এ সময় উপস্থিত কয়েকজন আপত্তি জানিয়ে ইয়াসমিনকে তারাই দিনাজপুরগামী গাড়িতে তুলে দিতে চান।
এ সময় বীরগঞ্জ থেকে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানের (নং-ম-০২-০০০৭) চালক অমৃতলাল বিষয়টি জানতে চান। পিকআপ ভ্যানে আরো দুইজন উপপরিদর্শক (এসআই) মইনুল এবং আব্দুস সাত্তার বসে ছিলেন। অমৃতলাল এ সময় ইয়াসমিনকে তাদের সঙ্গে যাওয়ার প্রস্তাব দেন।
তবে ইয়াসমিন সকাল না হওয়ায় যেতে সাহন পান না। এরপর অমৃতলাল ধমক দিয়ে তাকে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিয়ে যান।
এরপ পিকআপ ভ্যানটি আনুমানিক তিনশ গজ দূরে সাধনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে দাঁড় করিয়ে পুলিশ টর্চ দিয়ে কিছু একটা বা কাউকে খুঁজতে থাকে।
এ সময় ওই স্কুলের দিক থেকে ধান বোঝাই দুটি রিকশাচালককে পুলিশ জানতে চায়, তাদের পিকআপ ভ্যান থেকে যে মেয়েটি লাফ দিয়েছে, তাকে তারা দেখেছে কিনা? ঠিক ওই মুহূর্তে ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী একটি নৈশ কোচের হেডলাইটের আলোয় পুলিশ এবং রিকশা চালকরা ইয়াসমিনকে রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখতে পান। এরপর পুলিশ আবার ইয়াসমিনকে পিকআপ ভ্যানে তুলে নেয়।
পরবর্তীতে ওই এলাকার লোকজন রাস্তায় রক্তের দাগ, পাশে ইয়াসমিনের জুতা, রুমাল, হাতপাখা ও ভাঙা চুড়িও পড়ে থাকতে দেখেন। এর ঘণ্টা তিনেক পরে গোবিন্দপুর সড়কে ব্র্যাক অফিসের সামনে ইয়াসমিনের মৃতদেহ পাওয়া যায়।
এরপর উত্তর গোবিন্দপুর এলাকায় পড়ে থাকা ইয়াসমিনের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির উদ্দেশ্যে কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন কুমার প্রকাশ্যে লাশ বিবস্ত্র করে ফেললে উৎসুক জনতার মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং ঘটনার পরদিনই দিনাজপুরে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং হত্যা ও ধর্ষণের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দিনাজপুর কোতোয়ালি পুলিশ বিষয়টি সামাল দেওয়ার জন্য ‘একজন অজ্ঞাতপরিচয় যুবতীর লাশ উদ্ধার’ মর্মে ঘটনাটি সাজিয়ে থানায় একটি ইউডি মামলা করে। লাশের তড়িঘড়ি ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমানে মফিদুলের মাধ্যমে বালুবাড়ি শেখ জাহাঙ্গীর গোরস্থানে দাফন করা হয়। লাশের কোনো ধরনের গোসল ও জানাজা পড়ানো হয়নি।
২৫ আগস্টের বিক্ষোভে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান আরো সাতজন। এ সময় বিভিন্ন মহল থেকে ইয়াসমিনের পরিবারকে হুমকিও দেওয়া হয় অনেকবার।
পরে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে ধর্ষক ও খুনিদের ফাঁসির রায় দেয় আদালত। ২০০৪ সালে রায় কার্যকর করা হয় এবং সম্মিলিত নারী সমাজের পক্ষ থেকে ‘২৪ আগস্ট নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
দিনটি উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামসহ নারী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে।
No comments