রাজনৈতিক ঐক্যের ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ঐক্যের নজির খুব বেশি নেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রতি একধরনের আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক ঐক্যের ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে লিখেছেন সৈয়দা লাসনা কবীর, এস কে তৌফিক হকমোহাম্মাদ ঈসা ইবন বেলাল

বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঐক্যের ইতিহাস বরাবরই দুর্লভ। ঐক্যের অভাবে দেশ বিভিন্ন সময়ে গভীর সংকটে আবর্তিত হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর সমাধানে একমত হতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে ’৭১-এর স্বাধীনতা কিংবা ’৯০–এর গণ-অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কার, জনগণের প্রতি প্রশাসন ও রাজনীতিবিদদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা, বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রতিহত করা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে কোনো সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে রাজনৈতিক দলগুলো বারবার ব্যর্থ হয়েছে।

স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মাত্র একবারই বৃহৎ রাজনৈতিক ঐক্য প্রচেষ্টার নজির পাওয়া যায়, যা ঘটেছিল ১৯৯০ সালের এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়। সে সময় সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছিল যে স্বৈরাচার এরশাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। তবে সেই ঐক্যের বাস্তবায়ন কতটা হয়েছে এবং গণতন্ত্র কতটা সুসংহত হয়েছে, তা আজও বিতর্কের বিষয়।

তিন জোটের রূপরেখার ব্যর্থ পরিণতি

১৯৯০ সালের এরশাদবিরোধী আন্দোলন বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো যে রূপরেখা তৈরি করেছিল, তা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখালেও বাস্তবে তার বিপরীত চিত্রই প্রতিফলিত হয়েছে।

১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আটদলীয় জোট, বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাতদলীয় জোট এবং বামপন্থীদের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচদলীয় জোট একত্র হয়ে আন্দোলনে সক্রিয় হয়। জামায়াতে ইসলামীও পৃথকভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।

এদিন তিনটি জোট পৃথক সমাবেশ থেকে একই সময়ে একটি রূপরেখা ঘোষণা করে, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে একটি সার্বভৌম সংসদ গঠন করা এবং প্রেসিডেন্সিয়াল সরকারব্যবস্থা থেকে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা।

আন্দোলনের ফলে এরশাদ সরকারের পতন ঘটে এবং বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তবে পরবর্তী সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে নির্মূল করার রাজনীতিতে লিপ্ত হয়।

রূপরেখার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল, ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা ও একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা আরও বিতর্কিত হয়ে ওঠে। ১৯৯৪ সালের উপনির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ ওঠে, যার ফলে আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সামনে আসে। ১৯৯৬ সালে সংবিধানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সংসদীয় শাসনব্যবস্থা কার্যকর করা এবং সংসদকে শক্তিশালী করা ছিল রূপরেখার অন্যতম লক্ষ্য। কিন্তু ১৯৯৪ সালের উপনির্বাচনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা তীব্র হয় এবং বিরোধী দল সংসদ বর্জন করতে শুরু করে। এর ফলে সংসদ কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে, যা গণতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ আঘাত হয়ে দাঁড়ায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংসদ কার্যত ক্ষমতাসীন দলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের একটি মঞ্চে পরিণত হয়।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ এবং মৌলিক অধিকারবিরোধী আইন বাতিল করা। কিন্তু ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও তারা এ দাবির বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েই এমন কিছু আইন প্রণয়ন করেছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন দমনমূলক আইনের মাধ্যমে জনগণের বাক্‌স্বাধীনতা হরণ করা হয় এবং রাষ্ট্রের কর্তৃত্ববাদী রূপ আরও সুস্পষ্ট হয়।

ছাত্রদের ১০ দফার প্রতি অবহেলা

১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পেছনে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। এই ছাত্র আন্দোলনই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে গতি দেয় এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করে।

ছাত্রদের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলন ক্রমে স্বৈরাচার পতনের পথে এগিয়ে যায় এবং ১৯৯০ সালের গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করে। তাদের সংস্কারের দফায় সমাজ, অর্থনীতি, রাষ্ট্রব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধিতা—এ রকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ছিল। কিন্তু পরে দেখা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রদের এ দাবিগুলোর বেশির ভাগই বাস্তবায়ন করেনি; বরং রাজনৈতিক স্বার্থে তা উপেক্ষা করেছে।

ছাত্রদের ১০ দফার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যা সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সমতাভিত্তিক হবে। তারা চেয়েছিল, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বাংলা ভাষা প্রধান মাধ্যম হবে, তবে পাশাপাশি ইংরেজি শিক্ষাও চালু রাখা যেতে পারে। কিন্তু এ দাবির বাস্তবায়ন হয়নি; বরং শিক্ষাব্যবস্থা আরও বৈষম্যমূলক হয়ে উঠেছে এবং সাধারণ জনগণের জন্য মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ সংকুচিত হয়েছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা এবং শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও মর্যাদা প্রদান করা। কিন্তু এ দাবিও উপেক্ষিত হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলমান থেকেছে। ক্ষমতাসীন দলগুলোর ছত্রচ্ছায়ায়, বিশেষ করে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে রাজনৈতিক সহিংসতা ও গুম, খুনের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

ছাত্ররা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবিও তুলেছিল। কিন্তু বাস্তবে রাজনৈতিক দলগুলো এ দাবির প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন থেকেছে। দুর্নীতি আরও গভীরভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে এবং সরকারি সংস্থাগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এমনকি বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয়ই স্বৈরাচার এরশাদ ও তাঁর দল জাতীয় পার্টিকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে এবং কাছে টানার চেষ্টা করেছে, যা ছাত্রদের নৈতিক অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত।

ছাত্রদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবে এই স্বাধীনতা কখনোই অর্জিত হয়নি; বরং বিগত আওয়ামী শাসনামলে তিনটি টেলিভিশন চ্যানেল নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং যেসব সংবাদপত্র ও সাংবাদিক সরকারের সমর্থনমূলক সংবাদ প্রচার করেনি, তাদের হয়রানি, জেল ও আইনের অপব্যবহার করে দমন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলন সব সময় সমতা ও বৈষম্যহীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০—প্রতিটি গণ–আন্দোলনে ছাত্ররা বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্কারের রূপরেখা উপস্থাপন করেছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রদের এসব সংস্কার প্রস্তাবকে বরারবই উপেক্ষা করে গেছে। এর ফলে সময়ে–সময়ে ছাত্রদের নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয়েছে।

তবে এবার সবাই আশা করছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা রাজনৈতিক দলগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

রাজনৈতিক ঐক্যের সম্ভাব্য ধাপগুলো

যদিও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ঐক্যের নজির খুব বেশি নেই, তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রতি একধরনের আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। সক্রিয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলই বুঝতে পারছে যে যদি তারা ঐক্যবদ্ধ না থাকে এবং দেশ পুনর্গঠনে একসঙ্গে কাজ না করে, তাহলে দেশ আবারও স্বৈরাচারের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এই বাস্তবতায় রাষ্ট্র পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য চারটি ধাপে কাজ করা যেতে পারে।

প্রথম ধাপে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদি সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। যেসব সংস্কার সরকার কেবল সরকারি পরিপত্রের মাধ্যমে কার্যকর করতে পারে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত। অন্যদিকে সংস্কারের যেসব প্রস্তাবের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি থাকবে, সেগুলো সংস্কার প্রস্তাব থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে।

দ্বিতীয় ধাপে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি সম্মিলিত রূপরেখা প্রণয়ন করা যেতে পারে। এই রূপরেখায় সব সক্রিয় রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষরসহ সম্মতিপত্র সংযুক্ত থাকবে, যাতে ভবিষ্যতে দলীয় মতবিরোধ এড়িয়ে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। জাতীয় নির্বাচনের পর দলীয় সরকার পার্লামেন্টে বিল পাসের মাধ্যমে এসব সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারে।

তৃতীয় ধাপে যেসব সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলো পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারেনি অথবা যেসব বিষয়ে আংশিক ঐকমত্য ও আংশিক মতভেদ রয়েছে, সেগুলোকে আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা উচিত। ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে আরও গবেষণা, বিচার-বিশ্লেষণ ও রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন করা যেতে পারে।

সংস্কারের চতুর্থ ধাপ হতে পারে গণভোট। সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ বাকি সংস্কার কমিশনগুলোও বেশ কিছু সুপারিশ প্রদান করেছে, যার বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধন অনিবার্য। যেহেতু জাতীয় সংসদ বর্তমানে কার্যকর নয়, তাই রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে একটি গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে জনগণের মতামত নিয়ে সংবিধান সংশোধন অনুমোদন করা সম্ভব হবে। এটা সংস্কারপ্রক্রিয়াকে বিলম্বিত হওয়া থেকে রক্ষা করবে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও সংবিধান সংশোধনের অভাবে সংস্কার বাস্তবায়নে বাধাপ্রাপ্ত হবে না।

এই চার ধাপে সংস্কারপ্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা গেলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি ঐক্য গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হবে, যা গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ও জাতীয় পুনর্গঠনের জন্য সহায়ক হতে পারে।

আশঙ্কা ও সম্ভাবনা

এত কিছুর পরও এবারের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে কিছু আশঙ্কা থেকেই যায়। কেননা ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজনৈতিক দলগুলো যে সংস্কার প্রস্তাব নিজেরাই নির্ধারণ করেছিল, পরবর্তী সময়ে তারা সেই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়। একইভাবে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত বিভিন্ন কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক দলগুলো স্মরণে রাখবে কি না বা বাস্তবায়ন করবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলো যদি শুধু ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ ও ভবিষ্যৎ স্বার্থ রক্ষার চিন্তা থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতায় যায়, তাহলে সংস্কারের বিষয়টি গৌণ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। কারণ, এই সংস্কারগুলোর বেশির ভাগই রাষ্ট্রের পুনর্গঠন ও রাজনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার ওপর ভিত্তি করে প্রস্তাবিত হয়েছে, যেন ভবিষ্যতে কেউ আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে না পারে।

তবে আশার দিকও রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাম্প্রতিক বৈঠকে সংস্কারের প্রতি দলটির সমর্থন প্রকাশ পেয়েছে। পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কারের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু একটি চূড়ান্ত প্রশ্ন থেকে যায়—নির্বাচনের পর এই দলগুলো আদৌ এসব সংস্কার বাস্তবায়ন করবে কি না?

তাই এ আশঙ্কা দূর করতে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ও আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের দাবি ও সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেওয়া। রাজনৈতিক দলগুলো যদি সত্যিকার অর্থে সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে, তাহলে তারা ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে দলীয় স্বার্থ নয়; বরং দেশপ্রেম, জনসেবা, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং স্বৈরাচারী ব্যবস্থা নির্মূল করাই হওয়া উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য। 

# সৈয়দা লাসনা কবীর অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

# এস কে তৌফিক হক প্রফেসর ও ডিরেক্টর, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

# মোহাম্মাদ ঈসা ইবন বেলাল গবেষণা সহযোগী, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

রাজনৈতিক ঐক্যের ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

No comments

Powered by Blogger.