সম্পর্কে কি আধিপত্য থাকতে পারে by রাফিয়া আলম

দুটি মানুষের মনের মিল যতই থাক, শতভাগ বিষয়ে সহমত হওয়া প্রায় অসম্ভব এক ব্যাপার। অনেকেই নিজের ভাবনা চাপিয়ে দিতে চান অপরজনের ওপর, বিশেষ করে নিজের জীবনসঙ্গীর বেলায়। কেউ যদি সঙ্গীর ওপর আধিপত্য বিস্তার করেন, তাহলে কি সম্পর্কটাকে সুস্থ বলা যায়? ভালো লাগা এবং ভালোবাসার ভিত্তির ওপর যে সম্পর্ক দাঁড়িয়ে থাকে, আদতে কি তাতে আধিপত্য থাকতে পারে?

পারিবারিক এবং সামাজিক পরিসরে প্রত্যেকেরই অবস্থান এবং দায়িত্ব আলাদা। সেই অবস্থান থেকেই একজন ব্যক্তি তাঁর জীবনসঙ্গীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও ভাবেন। সঙ্গীর খাদ্যাভ্যাস, পোশাক, ঘুমের সময়সহ বহু বিষয় নিয়েই তাঁর কিছু বলার থাকতে পারে। পারিবারিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও দুজনের ভাবনা দুই রকম হতে পারে। এসব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেকে সঙ্গীর ওপর আধিপত্য বিস্তার করে ফেলেন। মতের ভিন্নতা নিয়ে তো আলাপ করা যেতেই পারে। কিন্তু কথার ধরনের ওপরই নির্ভর করছে, সম্পর্কটা কেমন। এ প্রসঙ্গে বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী এবং পিএইচডি গবেষক হাজেরা খাতুন।

যদি হয় মতের অমিল

ধরুন, আপনার সঙ্গীকে নির্দিষ্ট কোনো রঙের পোশাকে দেখতে ইচ্ছা করে আপনার। কিন্তু রঙটা আপনার সঙ্গীর আবার অপছন্দ। এমন পরিস্থিতিতে আপনার ইচ্ছার প্রকাশ কিন্তু সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারেন তাঁর কাছে। আপনার অনুরোধে হয়তো তিনি কখনো ওই রঙের পোশাক পরবেন। কিংবা হয়তো কখনোই পরবেন না। এটি তাঁর ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। যদি না-ই পরেন, আপনার অভিমান হওয়াও আবার অস্বাভাবিক নয়। তবে এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে আধিপত্যমূলক আচরণ করা ঠিক নয়। নিজের ইচ্ছা তাঁর ওপর চাপিয়ে দেবেন না। বহু বিষয়েই কিন্তু দুজনের ভাবনার অমিল থাকতে পারে। সেসব নিয়ে আলাপও হতে পারে। তবে সবক্ষেত্রেই একে অন্যের ভাবনা এবং ইচ্ছাকে সম্মান করা জরুরি। সম্মানবোধ থাকলে আধিপত্যের প্রশ্ন আসে না।

আধিপত্যে সমাধান নয়

সামাজিক কারণেই অনেক ক্ষেত্রে পুরুষেরা নানা বিষয়ে আধিপত্য বিস্তার করেন সঙ্গীর ওপর। তবে উল্টোটাও দেখা যায় অনেক পরিবারে। দুটির কোনোটিই স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক নয় বলে জানালেন হাজেরা খাতুন। বরং পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রতি জোর দিলেন তিনি। কারও ওপর আধিপত্য দেখানো হলে তাঁর হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। বঞ্চনার অনুভূতি কাজ করতে পারে ভেতরে ভেতরে। নিজেকে পরাধীন মনে করতে পারেন। নেতিবাচক অনুভূতির চক্রে ঘুরপাক খেতে পারেন। অন্যদিকে, যিনি আধিপত্য বিস্তার করেন, তিনিও কিন্তু সম্পর্কের মধুরতা থেকে বঞ্চিত হতে থাকেন। অর্থাৎ সম্পর্কটা দুজনের কারও জন্যই সুখকর থাকে না। এমনকি ধীরে ধীরে সম্পর্কটা বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। তা ছাড়া তৃতীয় কারও সামনে আধিপত্য দেখালে সঙ্গী হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারেন।

কথার ধরন হোক বন্ধুত্বময়

যেকোনো বিষয়ে যদি আপনার জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা আপনার সঙ্গীর চেয়ে বেশি থাকে, সেটির ভালোমন্দ দিক আপনি সঙ্গীকে বলতেই পারেন। কিংবা ধরা যাক, সঙ্গী কোনো বিষয়ে ঝুঁকি নিচ্ছেন। হয়তো তিনি কম ঘুমিয়ে বেশি কাজ করছেন কিংবা হুট করে কঠিন খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করে ওজন কমাতে চাইছেন। ওই বিষয়ে হয়তো তাঁর এবং আপনার একই রকম জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা আছে। তবে তারপরও আপনি সঙ্গীর জন্য বাড়তি শঙ্কা অনুভব করছেন। অর্থাৎ সব ভাবনাই আপনার ভেতর কাজ করছে কেবল আপনার সঙ্গীর ভালোর জন্য। সেটিও আপনি তাঁকে নিঃসন্দেহেই বলতে পারেন। তবে যে পরিস্থিতিতেই সঙ্গীকে আপনার ভিন্ন মতের কথা বলুন না কেন, আপনার কথা এবং আচরণে প্রকাশ করুন ভালোবাসা। এমনভাবে কখনোই কিছু বলবেন না, যাতে আপনার একক আধিপত্য প্রকাশ হয়। বরং একজন যোগ্য সঙ্গী হিসেবে বন্ধুত্বময় কথার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করুন নিজেকে।

বহু বিষয়েই কিন্তু দুজনের ভাবনার অমিল থাকতে পারে, সেসব নিয়ে আলাপও হতে পারে
বহু বিষয়েই কিন্তু দুজনের ভাবনার অমিল থাকতে পারে, সেসব নিয়ে আলাপও হতে পারে। মডেল: সুস্মি ও রেহান। প্রতীকী ছবি: প্রথম আলো

No comments

Powered by Blogger.