“বাবা প্যারালাইজড মা অসুস্থ”- শহীদ সবুজের পরিবারের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ/স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি/আঠারো বছর বয়সেই অহরহ/বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি”- এটি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা “আঠারো বছর বয়স”- কবিতার কয়েকটি লাইন। ঠিক এই কবিতার মতো যেন শহীদ সবুজ মিয়ার ছোট্ট জীবনের গল্প। শান্ত ও ভদ্র প্রকৃতির কিশোর সবুজ মিয়া। বয়স ১৮ বছর। এইচএসসি পরীক্ষা যখন দিচ্ছিলেন, তখন সারা দেশে শুরু হয় ছাত্র-জনতার প্রতিবাদ, গণবিক্ষোভ। শুরু হয় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান। সবুজের মন বসছিল না পড়ায়, বই-খাতা ছেড়ে যোগ দেন দেশের ডাকে গণআন্দোলনে। অতঃপর ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহীদ হন কিশোর সবুজ মিয়া। সমপ্রতি বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে শহীদ সবুজ মিয়া এবং তার অসহায় পরিবারের বিস্তারিত খবর ছাপা হয়।

এমন খবর দেখে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাৎক্ষণিকভাবে দলের “আমরা বিএনপি পরিবার”-এর সদস্যবৃন্দকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এদিকে, প্যারালাইজড পিতার একমাত্র সম্বল সবুজ মিয়াকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় পরিবারটি। সেই শহীদ সবুজ মিয়ার পিতার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও “আমরা বিএনপি পরিবার”-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান।
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজীরচর ইউনিয়নের রুপারপাড়া গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে সবুজ মিয়া। গতকাল শহীদ সবুজ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার পিতা আজাহার আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে “আমরা বিএনপি পরিবার”-এর একটি প্রতিনিধিদল।
অসুস্থ আজাহার আলীকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে প্রয়োজনীয় টেস্ট শেষে চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা করে দেন এবং যেকোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থাকবেন বলে জানানো হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ময়মনসিংহ বিভাগীয় জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সহ-সভাপতি ও “আমরা বিএনপি পরিবার”-এর সিনিয়র সদস্য মাসুদ রানা লিটন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাবেক সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মো. আলী হাসান, শ্রীবরদী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান রুকন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শামীম মিয়া।

একনজরে শহীদ সবুজ মিয়ার ছোট্ট জীবন: চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে গত ৪ঠা আগস্ট শহীদ হন সবুজ মিয়া। আন্দোলনের কথা শুনে মা নিষেধ করেছিলেন। বলেছিলেন, “বাবা যাসনে। তোকে হারালে যে আমাদের দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যাবে।”
ছেলে কথা শোনেনি। জীবিত আর ঘরে ফেরা হলো না তার। মায়ের দুনিয়া সত্যিই অন্ধকার হয়ে গেল।
শহীদ সবুজ মিয়া শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজীরচর ইউনিয়নের রুপারপাড়া গ্রামের আজহার আলী (৫০) ও সমেজা খাতুন (৩৮) দম্পতির ছেলে। তিনি চলতি বছর শ্রীবরদী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। পরীক্ষায় জিপিএ-৪ দশমিক ৩৩ (‘এ’ গ্রেড) পেয়ে উত্তীর্ণও হয়েছেন।
শহীদ সবুজের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবুজ মিয়া দ্বিতীয়। বোনের বিয়ের পর বাবা প্যারালাইজড হয়ে পড়েন। এরপর পরিবারের সকল দায়িত্ব নেন সবুজ মিয়া। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি ফার্মেসিতে কাজ করতেন। পরিবারের খরচ চালানোর পাশাপাশি নিজের আয়ে পড়াশোনাও করতেন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.