এনআরসি: 'বাবার মৃতদেহ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিক সরকার, আমরা নেব না' by অমিতাভ ভট্টশালী
দুলাল পাল ও তার জামির দলিল |
'বিদেশি' হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আটক-শিবিরে বন্দী আসামের এক প্রবীণ ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার পরিবার বলছে, তারা মৃতদেহ নিতে চান না।
"বাবাকে
যখন বিদেশি বলেই ঘোষণা করা হয়েছে, তাহলে বাংলাদেশেই পাঠিয়ে দিক দেহ,
আমরা নেব না," বলছিলেন দু'বছর আটক থেকে মারা যাওয়া দুলাল পালের ছেলে আশিস।
প্রশাসন
নিশ্চিত করেছে যে মৃত ব্যক্তিকে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল বিদেশি বলে ঘোষণা
করার পরেই তাকে আটক করে তেজপুর জেলের ভেতরে যে আটক-শিবির রয়েছে, সেখানে
রাখা হয়েছিল।
শোনিতপুরের ডেপুটি কমিশনার মানবেন্দ্র প্রতাপ সিং
বিবিসিকে জানিয়েছেন, "মাস-খানেক আগে মি. পাল আটক-শিবিরে অসুস্থ হয়ে পড়লে
হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার মানসিক ব্যাধি ছিলই, এর সঙ্গে যোগ হয়
ডায়াবেটিসও। গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে তার চিকিৎসা চলছিল। সেখানেই তিনি
গত রবিবার মারা যান।"
শোনিতপুর জেলার আলিসিঙ্গা-রবারতলার বাসিন্দা দুলাল পাল যে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন, সেটা জানিয়েছে তার পরিবারও।
সেই অবস্থাতেই তাকে আটক করে রাখা হয়েছিল ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে।
"১৯৬৫
সালে জমি কেনার দলিল রয়েছে আমদের। সেটাই তো প্রমাণ যে আমার বাবা ৭১-এর
আগে এসেছিলেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সেটা মানল না। বাবা বা আমাদের ভাইদের
কারও নামই এনআরসিতে ওঠে নি," বলছিলেন আশিস পাল।
মি. পালের মা ঘরেই মাটির জিনিসপত্র তৈরি করেন, আর তিনি নিজে গ্যারেজে কাজ করেন।
জমি
আর মায়ের সামান্য সোনার গয়না বিক্রি করে বাবাকে ভারতীয় বলে প্রমাণ করার
জন্য মামলা লড়তে হয়েছে তাদের। কোনদিনই তিন-বেলা ভরপেট খেতে পারেন না
তারা।
"কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে আমাদের। এত কিছু করেও বাবাকে ভারতীয় বলে প্রমাণ করতে পারি নি।"
জীবিত
অবস্থায় যখন তাকে বিদেশি বলে ঘোষণা করা হয়েছে, তাহলে আমরা কেন দেহ নেব?
আগে লিখিতভাবে প্রশাসন জানাক যে আমার বাবা ভারতীয় ছিলেন, তবেই দেহ নেব,"
ক্ষোভ আশিস পালের।
এ নিয়ে প্রশাসন পড়েছে এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে।
ডেপুটি
কমিশনার মি. সিং বলছিলেন, "তাকে বিদেশি বলে ঘোষণা করেছিল ফরেনার্স
ট্রাইব্যুনাল। যে কোনও কারণেই হোক তিনি একবারও ভোট দেন নি। সে জন্যই তার
নাম প্রথমে 'ডি-ভোটার' করা হয়েছিল, তারপরে ট্রাইব্যুনালেও তিনি প্রমাণ
দিতে পারেন নি যে তিনি বিদেশি নন। সেক্ষেত্রে আমাদের তো করার কিছু নেই।
আমরা তো ট্রাইব্যুনালের আদেশ বদলাতে পারি না।"
গত তিন দিন ধরে প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা আশিস পাল আর তার পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আইনি
সহায়তা, মরদেহ গুয়াহাটি থেকে শোনিতপুরে নিয়ে আসার ব্যবস্থাসহ নানা
সাহায্য করতেও তারা প্রস্তুত বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
একই
সঙ্গে কীভাবে আটক অবস্থাতেই মৃত্যু হল দুলাল পালের, তা তদন্ত করে দেখার
নির্দেশ জারি করেছেন শোনিতপুরের ডেপুটি কমিশনার মানবেন্দ্র প্রতাপ সিং।
এখনও
দুলাল পালের মৃতদেহ গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজের মর্গেই রাখা রয়েছে। আর
ওদিকে তার বাড়িতে পরিবার পরিজন হিন্দু শাস্ত্র মতে অশৌচও পালন করতে পারছেন
না দেহ সৎকার না হওয়ায়।
তার ছেলে বলছিলেন, "বাবাকে দাহ করা হয় নি, তাই আমরা শুধু ফলটল খেয়ে আছি।"
প্রয়াত দুলাল পালের পরিবারের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন স্থানীয় কর্মকর্তারা |
No comments