রক্তাক্ত ক্যাম্পাস: সনি থেকে আবরার by মরিয়ম চম্পা
বুয়েট
ক্যাম্পাসে সাবিকুন নাহার সনি স্মৃতিফলক ফিরিয়ে নেয় প্রায় দেড় যুগ আগে।
বুয়েটে সে সময় ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে প্রাণ হারান মেধাবী
শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি। সনির রক্তমাখা দেহ হয়ে উঠেছিল সন্ত্রাসের
বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক অনির্বাণ আলোকবর্তিকা। ২০০২ সালের ৮ই জুন
টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধের মধ্যে
গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন সনি। কেমিকৌশল বিভাগের ছাত্রী সাবেকুন নাহার
সনির মৃত্যুতে সেদিনও জ্বলে উঠেছিল গোটা দেশ। শোকে, বেদনায় স্তব্ধ হয়ে যায়
সবাই। এরপর ২০১৩ সালে যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ রায়হান দ্বীপ
হত্যার মধ্য দিয়ে নতুন করে আলোচনায় আসে বুয়েট। আর সম্প্রতি গভীর রাতে বুয়েট
ছাত্রলীগের নেতাকর্মী তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার
ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার মধ্যে দিয়ে নতুন করে যুক্ত হলো এক কালো অধ্যায়।
২০০২ সালে সনি হত্যার বিচারের দাবিতে এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
দেশের সচেতন মানুষ এই আন্দোলনে সমর্থন জানান। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবিরাম প্রতিবাদ ও আন্দোলনের একপর্যায়ে গঠিত হয় ‘সন্ত্রাস বিরোধী বুয়েট ছাত্র ঐক্য’। ৬৩ দিন বন্ধ থেকে বুয়েট খোলার পরে শুরু হয় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। একদিকে ধারাবাহিকভাবে মানববন্ধন, মিছিল-মিটিং, সমাবেশ, ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। অন্যদিকে আন্দোলনে পুলিশের বেপরোয়া লাঠিপেটা, ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে আন্দোলন না করার জন্য শিক্ষকদের হুমকি, কিছু শিক্ষার্থীর আন্দোলনের বিরোধিতা ছিল প্রকাশ্যে। এতকিছুর পরও সনির হত্যাকারীদের শাস্তি আজও হয়নি। হাইকোর্টে দন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি এখনো রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সে সময় টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বুয়েট ছাত্রদল সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকিত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের টগর গ্রুপ। দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে বুয়েটের আহসান উল্লাহ হলের সামনে সাবেকুন নাহার সনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। নিম্ন আদালতে মুকিত, টগর ও সাগরের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। ২০০৬ সালের ১০ মার্চ হাইকোর্ট মুকিত, টগর ও সাগরের মৃত্যুদন্ডাদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত এসএম মাসুম বিল্লাহ ও মাসুমকে খালাস দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ প্রাপ্ত মোকাম্মেল হায়াত খান মুকিত পালিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ায়। পলাতক রয়েছেন নুরুল ইসলাম সাগর ওরফে শুটার নুরু। জেলে রয়েছেন টগর।
২০১৩ সালে এক সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে বুয়েটের শিক্ষার্থী আরিফ রায়হান দ্বীপকে। দ্বীপ বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষে পড়তেন। তিনি বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়কও ছিলেন। বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। দ্বীপের ওপর হামলার ঘটনায় চকবাজার থানায় তার ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। পুলিশ এ ঘটনায় বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মেজবাহকে আটক করে। গ্রেপ্তারের পর থেকে মেজবাহ কারাগারে আছেন।
সর্বশেষ গত ৬ অক্টোবর গভীর রাতে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষের ভেতরে তাকে হত্যা করা হয়। কক্ষটিতে ছাত্রলীগের নেতারা থাকতেন। বুয়েটের শেরেবাংলা হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারী একদল নেতাকর্মী তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। হল শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, আবরারকে জেরা ও পেটানোর সময় ওই কক্ষে অমিত সাহা, মুজতাবা রাফিদ, ইফতি মোশারফ ওরফে সকালসহ তৃতীয় বর্ষের আরও কয়েক শিক্ষার্থী ছিলেন। একই কক্ষে এসে দ্বিতীয় দফায় আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম জিয়নসহ অনেকে। ইতোমধ্যে আবরার হত্যার অভিযোগে পুলিশ ১৬ জনকে আটক করেছে।
এ ব্যাপারে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সত্যিকার অর্থে যারা বুয়েটের মত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র তারা তো অনেক মেধাবী। মেডিকেল ইঞ্চিনিয়ারিং এ ভর্তি হওয়াটা একটি কঠিন ব্যাপার। ভাল ছাত্র না হলে পারে না। সেখানে ভিসি বা অন্যান্য শিক্ষক যারা আছেন তাদের অজান্তে এই ধরনের ঘটনা ঘটে এটা তো দুঃখজনক। আমার মনে হয় আবরার হত্যাকান্ডের বিষয়টি প্রশাসন খুব শক্ত হাতে গ্রহণ করেছেন। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিচার হবে। সেটা আমরা প্রত্যাশা করছি। এসকল হত্যাকান্ডের ক্ষেত্রে বিচার না হওয়াটাই দুঃখজনক। আমি মন্ত্রী থাকা অবস্থায় একটি পদক্ষেপ নিয়েছিলাম যে, নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে হবে। বিচার একবার শুরু হলে কোনো অবস্থায় মূলতবি করা যাবে না। এবং সাক্ষী হাজির করা যার দায়িত্ব তাকে অবস্যই সঠিক সময়ে হাজির করতে হবে। না হলে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এবং তারাতারি বিচার কাজ শেষ করা হবে। মনে হচ্ছে, তদন্তকারী সংস্থা অতি দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে দিবেন। এবং বিচার কার্য শুরু হবে।
অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতার যে আধিপত্য, সরকারের যে ভূমিকা সেখান থেকেই সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকার সবসময়ই ভয় পায়। এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তরুণ শিক্ষার্থীদের যে শক্তি সেটার যে কোনো ধরনের বিকাশকে তারা সবসময় রুদ্ধ করতে চেষ্টা করে। শিক্ষকদের স্বাধীন মত যেন না থাকে সেটার বিষয়েও তাদের একটি উদ্বেগ থাকে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তারা কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার চেষ্টা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যে কোনো ক্ষমতাশীল ছাত্র সংগঠনের অনুমোদিত হয়ে থাকে। তার মানে সরকারের ভূমিকাটা হচ্ছে এখানে কেন্দ্রীয়। এক্ষেত্রে সরকারি ছাত্র সংগঠন এবং দুর্নীতিবাজ প্রশাসনের সঙ্গে একটি জোট তৈরি হয়। যেখানে সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জিম্মি হয়ে পরে। সমস্ত স্বাধীন তৎপরতা বাধাগ্রস্ত হয়। সেটার কারনে আমরা দেখি আবরার হত্যাকান্ডের আগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের নির্যাতন নীপিড়নের অসংখ্য উদাহরণ আছে। যেহেতু সরকার এবং ক্ষমতাবানদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে এগুলো হয়। তাদের নীরব সম্মতিতে এই ঘটনাগুলো ঘটে। অপরাধিরা যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকার থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পায় সে কারনে এই হত্যাকান্ডের বিচার হয় না।
সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, এটা যেহেতু একটি ক্রিমিনাল কেইস কাজেই সেখানে তো রাজনৈতিক কোনো কিছু কাজ করার কথা না। এক্ষেত্রে সরকারি বা বেসরকারি কোনো দলই মনে হয় না বাধার সৃষ্টি করবে। একটি মামলা ট্রায়ালে উঠলে বিচারিক প্রক্রিয়াটা একটু দীর্ঘমেয়াদি হয়। তবে আবরার হত্যাকান্ডের ঘটনাটি আসলেই দুঃখজনক। এখানে পুলিশ কিংবা তদন্ত কার্যের গাফিলতি হওয়ার কথা না। বা এখানে রাজনৈতিকভাবে কেউ ইন্টারফেয়ার করবে এটা আমার মনে হয় না।
২০০২ সালে সনি হত্যার বিচারের দাবিতে এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
দেশের সচেতন মানুষ এই আন্দোলনে সমর্থন জানান। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবিরাম প্রতিবাদ ও আন্দোলনের একপর্যায়ে গঠিত হয় ‘সন্ত্রাস বিরোধী বুয়েট ছাত্র ঐক্য’। ৬৩ দিন বন্ধ থেকে বুয়েট খোলার পরে শুরু হয় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। একদিকে ধারাবাহিকভাবে মানববন্ধন, মিছিল-মিটিং, সমাবেশ, ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। অন্যদিকে আন্দোলনে পুলিশের বেপরোয়া লাঠিপেটা, ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে আন্দোলন না করার জন্য শিক্ষকদের হুমকি, কিছু শিক্ষার্থীর আন্দোলনের বিরোধিতা ছিল প্রকাশ্যে। এতকিছুর পরও সনির হত্যাকারীদের শাস্তি আজও হয়নি। হাইকোর্টে দন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি এখনো রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সে সময় টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বুয়েট ছাত্রদল সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকিত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের টগর গ্রুপ। দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে বুয়েটের আহসান উল্লাহ হলের সামনে সাবেকুন নাহার সনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। নিম্ন আদালতে মুকিত, টগর ও সাগরের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। ২০০৬ সালের ১০ মার্চ হাইকোর্ট মুকিত, টগর ও সাগরের মৃত্যুদন্ডাদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত এসএম মাসুম বিল্লাহ ও মাসুমকে খালাস দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ প্রাপ্ত মোকাম্মেল হায়াত খান মুকিত পালিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ায়। পলাতক রয়েছেন নুরুল ইসলাম সাগর ওরফে শুটার নুরু। জেলে রয়েছেন টগর।
২০১৩ সালে এক সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে বুয়েটের শিক্ষার্থী আরিফ রায়হান দ্বীপকে। দ্বীপ বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষে পড়তেন। তিনি বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়কও ছিলেন। বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। দ্বীপের ওপর হামলার ঘটনায় চকবাজার থানায় তার ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। পুলিশ এ ঘটনায় বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মেজবাহকে আটক করে। গ্রেপ্তারের পর থেকে মেজবাহ কারাগারে আছেন।
সর্বশেষ গত ৬ অক্টোবর গভীর রাতে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষের ভেতরে তাকে হত্যা করা হয়। কক্ষটিতে ছাত্রলীগের নেতারা থাকতেন। বুয়েটের শেরেবাংলা হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারী একদল নেতাকর্মী তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। হল শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, আবরারকে জেরা ও পেটানোর সময় ওই কক্ষে অমিত সাহা, মুজতাবা রাফিদ, ইফতি মোশারফ ওরফে সকালসহ তৃতীয় বর্ষের আরও কয়েক শিক্ষার্থী ছিলেন। একই কক্ষে এসে দ্বিতীয় দফায় আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম জিয়নসহ অনেকে। ইতোমধ্যে আবরার হত্যার অভিযোগে পুলিশ ১৬ জনকে আটক করেছে।
এ ব্যাপারে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সত্যিকার অর্থে যারা বুয়েটের মত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র তারা তো অনেক মেধাবী। মেডিকেল ইঞ্চিনিয়ারিং এ ভর্তি হওয়াটা একটি কঠিন ব্যাপার। ভাল ছাত্র না হলে পারে না। সেখানে ভিসি বা অন্যান্য শিক্ষক যারা আছেন তাদের অজান্তে এই ধরনের ঘটনা ঘটে এটা তো দুঃখজনক। আমার মনে হয় আবরার হত্যাকান্ডের বিষয়টি প্রশাসন খুব শক্ত হাতে গ্রহণ করেছেন। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিচার হবে। সেটা আমরা প্রত্যাশা করছি। এসকল হত্যাকান্ডের ক্ষেত্রে বিচার না হওয়াটাই দুঃখজনক। আমি মন্ত্রী থাকা অবস্থায় একটি পদক্ষেপ নিয়েছিলাম যে, নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে হবে। বিচার একবার শুরু হলে কোনো অবস্থায় মূলতবি করা যাবে না। এবং সাক্ষী হাজির করা যার দায়িত্ব তাকে অবস্যই সঠিক সময়ে হাজির করতে হবে। না হলে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এবং তারাতারি বিচার কাজ শেষ করা হবে। মনে হচ্ছে, তদন্তকারী সংস্থা অতি দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে দিবেন। এবং বিচার কার্য শুরু হবে।
অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতার যে আধিপত্য, সরকারের যে ভূমিকা সেখান থেকেই সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকার সবসময়ই ভয় পায়। এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তরুণ শিক্ষার্থীদের যে শক্তি সেটার যে কোনো ধরনের বিকাশকে তারা সবসময় রুদ্ধ করতে চেষ্টা করে। শিক্ষকদের স্বাধীন মত যেন না থাকে সেটার বিষয়েও তাদের একটি উদ্বেগ থাকে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তারা কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার চেষ্টা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যে কোনো ক্ষমতাশীল ছাত্র সংগঠনের অনুমোদিত হয়ে থাকে। তার মানে সরকারের ভূমিকাটা হচ্ছে এখানে কেন্দ্রীয়। এক্ষেত্রে সরকারি ছাত্র সংগঠন এবং দুর্নীতিবাজ প্রশাসনের সঙ্গে একটি জোট তৈরি হয়। যেখানে সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জিম্মি হয়ে পরে। সমস্ত স্বাধীন তৎপরতা বাধাগ্রস্ত হয়। সেটার কারনে আমরা দেখি আবরার হত্যাকান্ডের আগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের নির্যাতন নীপিড়নের অসংখ্য উদাহরণ আছে। যেহেতু সরকার এবং ক্ষমতাবানদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে এগুলো হয়। তাদের নীরব সম্মতিতে এই ঘটনাগুলো ঘটে। অপরাধিরা যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকার থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পায় সে কারনে এই হত্যাকান্ডের বিচার হয় না।
সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, এটা যেহেতু একটি ক্রিমিনাল কেইস কাজেই সেখানে তো রাজনৈতিক কোনো কিছু কাজ করার কথা না। এক্ষেত্রে সরকারি বা বেসরকারি কোনো দলই মনে হয় না বাধার সৃষ্টি করবে। একটি মামলা ট্রায়ালে উঠলে বিচারিক প্রক্রিয়াটা একটু দীর্ঘমেয়াদি হয়। তবে আবরার হত্যাকান্ডের ঘটনাটি আসলেই দুঃখজনক। এখানে পুলিশ কিংবা তদন্ত কার্যের গাফিলতি হওয়ার কথা না। বা এখানে রাজনৈতিকভাবে কেউ ইন্টারফেয়ার করবে এটা আমার মনে হয় না।
No comments