অতীত ঢাকতে পুরস্কার চালু করেছিলেন আলফ্রেড নোবেল?
কেউ
কিভাবে, কী কাজের মাধ্যমে বিখ্যাত হলো সেটার ওপর নির্ভর করে তার জন্য
খ্যাতি ভালো না হয়ে বিড়ম্বনারও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ নোবেল পুরস্কারের
স্রষ্টা আলফ্রেড নোবেলের গল্প তুলে ধরা যায়। বর্তমানে শান্তি, বিজ্ঞান,
সাহিত্য ও অর্থনীতির জন্য নোবেল পুরস্কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের,
শ্রেষ্ঠত্বের এক মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু নোবেলকে জীবদ্দশায় গণমাধ্যম
তাকে ‘মৃত্যুদূত’ নাম দিয়েছিল।
নোবেল ১৯ শতকের সফলতম রসায়নবিদদের একজন ছিলেন। সুইডিশ এই নাগরিকের বিস্ফোরক সফলতাই পরবর্তী জীবনে তার জন্য আক্ষেপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে বেশিকিছু বলেননি তিনি। কিন্তু অতীতে তার নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কাজের ইতিহাস ঘাটলে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
নোবেল সফলতার শিখরে পৌঁছেন ‘ডাইনামাইট’ আবিষ্কার করে। তার এই আবিষ্কার তাকে এনে দিয়েছিল বিশ্বজোড়া খ্যাতি আর সফলতা। কিন্তু ডাইনামাইট আবিষ্কার নিয়ে বেশ আক্ষেপ ছিল নোবেলের। তিনি চাননি মানুষ তাকে এই ধ্বংসকারী বস্তু আবিষ্কারের জন্য মনে রাখুক।
নোবেল মারা যান ১৮৯৬ সালে। মৃত্যুর আগে নোবেল পুরস্কারের জন্য একটি বিশাল অঙ্কের তহবিল রেখে যান তিনি। তার রেখে যাওয়া তহবিল দিয়ে ১৯০১ সাল থেকে শুরু হয় নোবেল পুরস্কার প্রদান। পুরো বিশ্ব থেকে যাচাই-বাছাই করে বিশেষ কয়েকটি বিভাগে এই পুরস্কার দেয়া হয়। নোবেল তার উইল-এ লিখে গিয়েছিলেন, বিশ্বের মধ্যে ওই বিভাগগুলোয় সমসাময়িক কালে শ্রেষ্ঠ কাজ, শান্তির প্রচারণায় মুখ্য ভূমিকা রাখা ও সামরিক বাহিনীর নিশ্চিহ্নকরণ বা হ্রাসকরণের কৃতিত্ব হিসেবে এই পুরস্কার দেয়া হবে। ধ্বংসলীলাকে পূর্ণতা দিতে পারা ব্যক্তির কাছ থেকে এমন কথা কিছুটা বেমানান শোনায়।
আঠারো শতকের ষাটের দশকে শিল্প খাতে ব্যবহারের জন্য নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন নোবেল। ওই পরীক্ষার অংশ হিসেবে নাইট্রোগ্লিসারিন ও ব্ল্যাক পাওডার এর এক করে ডাইনামাইট আবিষ্কার করেন এই বিজ্ঞানী। অবশ্য পরীক্ষার শুরুতেই সফলতা পাননি তিনি। ১৮৬৪ সালে এই পরীক্ষায় একবার এক নাইট্রোগ্লিসারিন কারখানা বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় তার এক ভাইও মারা যান। কিন্তু নোবেল অনুধাবন করতে পারছিলেন যে, তিনি এমন কিছু আবিষ্কারের কাছাকাছি আছেন যা পুরো বিশ্বকে পাল্টে দেবে। ভাইয়ের মৃত্যুর পরও তিনি কাজ থামাননি। ১৮৬৭ সালে নোবেল আবিষ্কার করেন যে, নাইট্রোগ্লিসারিনের সঙ্গে ‘ডিয়াটোমাইট’ মেশালে নাইট্রোগ্লিসারিন নিরাপত্তার মাত্রা বেড়ে যায় ও তা আরো ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তিনি নিজের এই আবিষ্কারের নাম দিলেন ‘ডাইনামাইট’। গ্রিক শব্দ ডাইনামিস (শক্তি) থেকে ডাইনামাইট শব্দটির উৎপত্তি। আবিষ্কারের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এর তীব্র চাহিদা দেখা দেয়।
ডাইনামাইটের বাণিজ্য করে বিপুল অর্থ আয় করেন নোবেল। বিশ্বজুড়ে খাল কাটায়, রাস্তা নির্মাণে, সুরঙ্গ তৈরি সহ নানাভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে ডাইনামাইট। নোবেল ডাইনামাইটের একাধিক কারখানা নির্মাণ করেন। প্রতিনিয়ত ডাইনামাইট আরো শক্তিশালী করার কাজ চালিয়ে যান। ১৮৭৫ সালে তৈরি করেন ডাইনামাইটের চেয়েও শক্তিশালী বিস্ফোরক- বিস্ফোরক জেলাটিন। এই ব্যবসায় অকল্পনীয় লাভ করেন তিনি।
ডাইনামাইট ছাড়া অন্যান্য বস্তু নিয়েও কাজ করেছিলেন নোবেল। যেমন, আর্টিফিসিয়াল সিল্ক ও লেদার। লিখেছিলেন উপন্যাসও। যদিও সেগুলোর কোনটিই প্রকাশ পায়নি। ডাইনামাইটই ছিল নোবেলের সবচেয়ে বড় ব্যবসা। এই ব্যবসার সূত্র ধরেই একসময় প্রবেশ করেছিলেন যুদ্ধের সরঞ্জাম তৈরির কাজে। কিন্তু নোবেল ফাউন্ডেশন অনুযায়ী, নিজেকে শান্তিবাদী দাবি করতেন নোবেল। উনবিংশ শতকের অস্ট্রীয় শান্তিকর্মী, ঔপন্যাসিক বার্থা ভন সুটনারের লেখা অনুসারে, নোবেলের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৮৭৬ সালে। সেসময় নোবেল তাকে বলেছিলেন, তিনি এমন একটি বিস্ফোরক আবিষ্কার করতে চান, যেটি সব যুদ্ধ শেষ করে দেবে। ১৮৯১ সালের মধ্যে নোবেলের ৯০টি বিস্ফোরক ও যুদ্ধের সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী কারখানা ছিল নোবেলের। সেসময় কারখানাগুলোর সমর্থনে শান্তিকর্মীদের তিনি বলেছিলেন, যেদিন দুটি সামরিক পক্ষ একে অপরকে সেকেন্ডের মধ্যে নিঃশেষ করে দেয়ার ক্ষমতা অর্জন করবে, সেদিন সব সভ্য রাষ্ট্র নিশ্চিতভাবেই আতঙ্কে ভীত হয়ে তাদের সব সামরিক বাহিনী বিলুপ্ত করে দেবে।
কিন্তু নোবেল ভুল হিসেব করেছিলেন। যুদ্ধ চলতেই থাকলো। কোনো জাতি ভীত হয়ে পিছু হটেনি। বিলুপ্ত হয়নি সামরিক বাহিনী। পরবর্তীতে বিখ্যাত নোবেলজয়ীদের কেউ কেউ বলেছেন, নোবেল তার জীবনের সেরা কাজ নিয়ে অনুশোচনায় ভুগতেন। আর সে আক্ষেপ ঢাকতেই নোবেল পুরষ্কার চালু করেছিলেন তিনি। এদের মধ্যে ১৯২১ সালে পদার্থে নোবেল পাওয়া আলবার্ট আইনস্টাইনও রয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে ফেলা আনবিক বোমাগুলো তৈরিতে তার গবেষণার ভূমিকা ছিল।
১৯৪৫ সালে দেয়া এক ভাষণে আলবার্ট আইনস্টাইন বলেন, নোবেল তার সময়কালের সবচেয়ে শক্তিশালী বিস্ফোরক আবিষ্কার করেছিলেন। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর কার্যকরী একটি উপায় বের করেছিলেন। নিজের এই অর্জনের প্রায়শ্চিত্ত করতে ও নিজেকের বিবেককে স্বস্তি দিতে তিনি শান্তির প্রচারণায় পুরষ্কার চালু করেছিলেন।
নোবেল ১৯ শতকের সফলতম রসায়নবিদদের একজন ছিলেন। সুইডিশ এই নাগরিকের বিস্ফোরক সফলতাই পরবর্তী জীবনে তার জন্য আক্ষেপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে বেশিকিছু বলেননি তিনি। কিন্তু অতীতে তার নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কাজের ইতিহাস ঘাটলে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
নোবেল সফলতার শিখরে পৌঁছেন ‘ডাইনামাইট’ আবিষ্কার করে। তার এই আবিষ্কার তাকে এনে দিয়েছিল বিশ্বজোড়া খ্যাতি আর সফলতা। কিন্তু ডাইনামাইট আবিষ্কার নিয়ে বেশ আক্ষেপ ছিল নোবেলের। তিনি চাননি মানুষ তাকে এই ধ্বংসকারী বস্তু আবিষ্কারের জন্য মনে রাখুক।
নোবেল মারা যান ১৮৯৬ সালে। মৃত্যুর আগে নোবেল পুরস্কারের জন্য একটি বিশাল অঙ্কের তহবিল রেখে যান তিনি। তার রেখে যাওয়া তহবিল দিয়ে ১৯০১ সাল থেকে শুরু হয় নোবেল পুরস্কার প্রদান। পুরো বিশ্ব থেকে যাচাই-বাছাই করে বিশেষ কয়েকটি বিভাগে এই পুরস্কার দেয়া হয়। নোবেল তার উইল-এ লিখে গিয়েছিলেন, বিশ্বের মধ্যে ওই বিভাগগুলোয় সমসাময়িক কালে শ্রেষ্ঠ কাজ, শান্তির প্রচারণায় মুখ্য ভূমিকা রাখা ও সামরিক বাহিনীর নিশ্চিহ্নকরণ বা হ্রাসকরণের কৃতিত্ব হিসেবে এই পুরস্কার দেয়া হবে। ধ্বংসলীলাকে পূর্ণতা দিতে পারা ব্যক্তির কাছ থেকে এমন কথা কিছুটা বেমানান শোনায়।
আঠারো শতকের ষাটের দশকে শিল্প খাতে ব্যবহারের জন্য নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন নোবেল। ওই পরীক্ষার অংশ হিসেবে নাইট্রোগ্লিসারিন ও ব্ল্যাক পাওডার এর এক করে ডাইনামাইট আবিষ্কার করেন এই বিজ্ঞানী। অবশ্য পরীক্ষার শুরুতেই সফলতা পাননি তিনি। ১৮৬৪ সালে এই পরীক্ষায় একবার এক নাইট্রোগ্লিসারিন কারখানা বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় তার এক ভাইও মারা যান। কিন্তু নোবেল অনুধাবন করতে পারছিলেন যে, তিনি এমন কিছু আবিষ্কারের কাছাকাছি আছেন যা পুরো বিশ্বকে পাল্টে দেবে। ভাইয়ের মৃত্যুর পরও তিনি কাজ থামাননি। ১৮৬৭ সালে নোবেল আবিষ্কার করেন যে, নাইট্রোগ্লিসারিনের সঙ্গে ‘ডিয়াটোমাইট’ মেশালে নাইট্রোগ্লিসারিন নিরাপত্তার মাত্রা বেড়ে যায় ও তা আরো ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তিনি নিজের এই আবিষ্কারের নাম দিলেন ‘ডাইনামাইট’। গ্রিক শব্দ ডাইনামিস (শক্তি) থেকে ডাইনামাইট শব্দটির উৎপত্তি। আবিষ্কারের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এর তীব্র চাহিদা দেখা দেয়।
ডাইনামাইটের বাণিজ্য করে বিপুল অর্থ আয় করেন নোবেল। বিশ্বজুড়ে খাল কাটায়, রাস্তা নির্মাণে, সুরঙ্গ তৈরি সহ নানাভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে ডাইনামাইট। নোবেল ডাইনামাইটের একাধিক কারখানা নির্মাণ করেন। প্রতিনিয়ত ডাইনামাইট আরো শক্তিশালী করার কাজ চালিয়ে যান। ১৮৭৫ সালে তৈরি করেন ডাইনামাইটের চেয়েও শক্তিশালী বিস্ফোরক- বিস্ফোরক জেলাটিন। এই ব্যবসায় অকল্পনীয় লাভ করেন তিনি।
ডাইনামাইট ছাড়া অন্যান্য বস্তু নিয়েও কাজ করেছিলেন নোবেল। যেমন, আর্টিফিসিয়াল সিল্ক ও লেদার। লিখেছিলেন উপন্যাসও। যদিও সেগুলোর কোনটিই প্রকাশ পায়নি। ডাইনামাইটই ছিল নোবেলের সবচেয়ে বড় ব্যবসা। এই ব্যবসার সূত্র ধরেই একসময় প্রবেশ করেছিলেন যুদ্ধের সরঞ্জাম তৈরির কাজে। কিন্তু নোবেল ফাউন্ডেশন অনুযায়ী, নিজেকে শান্তিবাদী দাবি করতেন নোবেল। উনবিংশ শতকের অস্ট্রীয় শান্তিকর্মী, ঔপন্যাসিক বার্থা ভন সুটনারের লেখা অনুসারে, নোবেলের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৮৭৬ সালে। সেসময় নোবেল তাকে বলেছিলেন, তিনি এমন একটি বিস্ফোরক আবিষ্কার করতে চান, যেটি সব যুদ্ধ শেষ করে দেবে। ১৮৯১ সালের মধ্যে নোবেলের ৯০টি বিস্ফোরক ও যুদ্ধের সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী কারখানা ছিল নোবেলের। সেসময় কারখানাগুলোর সমর্থনে শান্তিকর্মীদের তিনি বলেছিলেন, যেদিন দুটি সামরিক পক্ষ একে অপরকে সেকেন্ডের মধ্যে নিঃশেষ করে দেয়ার ক্ষমতা অর্জন করবে, সেদিন সব সভ্য রাষ্ট্র নিশ্চিতভাবেই আতঙ্কে ভীত হয়ে তাদের সব সামরিক বাহিনী বিলুপ্ত করে দেবে।
কিন্তু নোবেল ভুল হিসেব করেছিলেন। যুদ্ধ চলতেই থাকলো। কোনো জাতি ভীত হয়ে পিছু হটেনি। বিলুপ্ত হয়নি সামরিক বাহিনী। পরবর্তীতে বিখ্যাত নোবেলজয়ীদের কেউ কেউ বলেছেন, নোবেল তার জীবনের সেরা কাজ নিয়ে অনুশোচনায় ভুগতেন। আর সে আক্ষেপ ঢাকতেই নোবেল পুরষ্কার চালু করেছিলেন তিনি। এদের মধ্যে ১৯২১ সালে পদার্থে নোবেল পাওয়া আলবার্ট আইনস্টাইনও রয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে ফেলা আনবিক বোমাগুলো তৈরিতে তার গবেষণার ভূমিকা ছিল।
১৯৪৫ সালে দেয়া এক ভাষণে আলবার্ট আইনস্টাইন বলেন, নোবেল তার সময়কালের সবচেয়ে শক্তিশালী বিস্ফোরক আবিষ্কার করেছিলেন। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর কার্যকরী একটি উপায় বের করেছিলেন। নিজের এই অর্জনের প্রায়শ্চিত্ত করতে ও নিজেকের বিবেককে স্বস্তি দিতে তিনি শান্তির প্রচারণায় পুরষ্কার চালু করেছিলেন।
No comments