হ্যানয় শহরের রেলপথ হয়ে উঠেছে ছবি তোলার স্পট! by নাদিয়া নাহরিন
ঔপনিবেশিক যুগের রেলপথের সুবাদে হ্যানয়ের ওল্ড কোয়ার্টার পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ |
বেড়াতে গেলে সেলফি বা ছবি তুলতে এখন ভুল হয় না কারও। সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যম কেন্দ্রিক কিছু গন্তব্য তাই পর্যটকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এ তালিকায়
ওপরের দিকে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয় শহর। সেখানে রয়েছে আধুনিকতা ও
পুরনোর সম্মিলন। ফলে দৃশ্যপট হিসেবে এই জায়গা দারুণ।
হ্যানয়ে পর্যটকদের মধ্যে ছবি তোলার জনপ্রিয় স্পট হলো ওল্ড কোয়ার্টার।
এমন সেলফিবান্ধব জায়গা খুব কমই আছে দুনিয়ায়। সেখানে গেলে মন কাড়বে
ফরাসি ঔপনিবেশিক যুগের রেলপথ। এর সুবাদে হ্যানয়ের ওল্ড কোয়ার্টার পর্যটকদের
অন্যতম আকর্ষণ। এ কারণে সেলফি বা ছবি তোলার সময় ফুটপাত দখল হয়ে যায়।
স্থানীয়রা এ নিয়ে কিছুটা বিরক্ত।
সবচেয়ে
বড় বিষয় হলো, সেখানে প্রায় সারাদিনই রেলগাড়ি চলাচল করে। এ কারণে রেলপথে
দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা হাঁটার সময় একটু অসাবধানতার কারণে পর্যটক ও এলাকাবাসীর
জীবনের ঝুঁকির আশঙ্কা রয়ে যায়। তাই স্থানীয়দের মধ্যে যারা ট্রেনের সময়সূচি
জানেন, তাদের অনেকে মন থেকেই দর্শনার্থীদের গাইড করে থাকেন। অবশ্য ছবি
তোলার মোক্ষম সময়ের জন্য পর্যটকদের অপেক্ষা করতে হয় বেশ।
ঔপনিবেশিক
যুগের রেলপথে যাওয়া প্রসঙ্গে সিএনএন ট্রাভেলকে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী
ক্রিস্টাবেল বলেন, ‘আমরা ছবি তুলতে গিয়েছিলাম দিনের একেবারে শুরুতে। সেই
সময়ে ওল্ড কোয়ার্টারে ছিল নীরবতা।’ বোঝা যাচ্ছে, কোনোরকম ভিড়ভাট্টা ছাড়াই
মনের মতো ছবি তুলতে পেরেছিলেন ক্রিস্টাবেল। গত ২৯ অক্টোবর এই নারী বেশ
কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন। তার মতে, ‘স্থানীয়রা অনেক বন্ধুভাবাপন্ন। তারাই
আমাদের ট্রেন আসা-যাওয়ার সূচি বলে দিয়েছিলেন।’
ক্রিস্টাবেলের
মতো হাজারও মানুষ হ্যানয়ের রেলপথে তোলা ছবি শেয়ার করেছেন ইনস্টাগ্রামে। এই
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের কাছে ওল্ড কোয়ার্টার হয়ে উঠেছে
হ্যানয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানগুলোর অন্যতম। কেউ কেউ তো এককাঠি অতিরিক্ত
সরেস! ইনস্টাগ্রামে দেওয়ার মতো পুরোপুরি নিখুঁত ছবি তোলার জন্য পেশাদার
আলোকচিত্রী ভাড়া করে নিয়ে গেছেন তারা। নতুন একটি কথাও প্রচলিত হয়ে গেছে এর
মধ্যে। পর্যটকদের ভাষায় তা হলো ‘ডু ইট ফর গ্রাম’। অর্থাৎ ইনস্টাগ্রামে
শেয়ার দেওয়ার জন্য ছবি তোলো!
কোনও
জায়গা পছন্দ হলে সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনার সুবিধার্থে এ বছর ইনস্টাগ্রামে
সেভ বাটন যুক্ত হয়েছে। তাই ওল্ড কোয়ার্টারের ছবি পাওয়া যাচ্ছে অসংখ্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুঁজে দেখা গেছে, ওল্ড কোয়ার্টারে বিভিন্ন ভঙ্গিতে
ছবি তুলেছেন পর্যটকরা। কেউ হয়তো বসে আছেন, কেউবা দৌড়াচ্ছেন। আবার কেউ লাফ
দিচ্ছেন সমান্তরাল রেলপথের ওপর। নাচ, চুম্বন, পড়ে যাওয়ার ভানরত অবস্থায়ও
ছবি তোলা হয়েছে।
ভিয়েতনামের
লেখক ডেভ ফক্স ২০১০ সালে প্রথমবার ওল্ড কোয়ার্টারে ঘুরেছেন। তখনই তার চোখে
পড়েছে, রেলপথে দাঁড়িয়ে ক্যামেরা কিংবা গোপ্রো দিয়ে পর্যটকদের ছবি তোলা
নিয়ে পাগলামি! তার মন্তব্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে এই জায়গা
লোকারণ্যে পরিণত হয়েছে। পর্যটকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন,
‘অনুমতি নিয়ে মানুষের ছবি তোলা খারাপ কিছু নয়। কারণ ভিয়েতনামের বেশিরভাগ
মানুষই দারুণ মনের। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না
তারা কোনও জাদুঘরের বস্তু নয়।’
No comments