মা-বাবা-সন্তানের সম্পর্কের দূরত্ব বাড়াচ্ছে ফেসবুক
কী
বললে, ফেসবুক বন্ধ করব? মাথা খারাপ! আমাকে অন্য কিছু বাদ দিতে বল, ফেসবুক
না। এ কথা আপনার সন্তানদের মুখেই অহরহ শুনতে পারবেন। ইন্টারনেট ছাড়া যেন
জীবন অচল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য এখন খুবই জনপ্রিয় ফেসবুক।এত এত
বন্ধু, অনুসারী, আর কতশত পোস্ট; এসব নিয়ে সে এক আজব রঙের দুনিয়া। ফেসবুক
যেন এখন আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। ফেসবুকের টানে উঠতি বয়সে শিশু-কিশোররা এখন
কৃত্রিম আড্ডার দুনিয়ায় ডুবে আছেন। মা-বাবা যতই বারণ করেন, সন্তানরা যেন
কোনো কথাই শুনতে নারাজ। ফেসবুকে সন্তানের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ও থাকে
বাবা-মায়ের। কৃত্রিম এই সম্পর্কে মা-বাবা-সন্তানের সম্পর্ক চিড় ধরাচ্ছে।
আবার বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের বন্ধুত্ব হওয়ার পর তাদের মধ্যে সম্পর্ক
পাল্টে যাচ্ছে। আপনার সন্তান ফেসবুকে কী করছে, কী দেখছে, কী পোস্ট করছে—
তা জানতে বাবা-মায়ের উঠেপড়ে লাগাই স্বাভাবিক। কারণ তার সন্তান কোনো ধরনের
সমস্যায় পড়ুক- তা চান না বাবা-মা। এ কারণে ফেসবুক ব্যবহার নিয়ে হয়তো
প্রতিদিনই বাবা-মায়ের জেরার সম্মুখীন হতে হয় সন্তানদের। ফেসবুকের বিষয়ে
বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী মুহিত কামাল যুগান্তরকে বলেন, ফেসবুকের ফলে মা-বাবার
বন্ধু হচ্ছে সন্তান। এতে করে আপনার সন্তান কী করছে, কোথায় যাচ্ছে -সাবই
আপনি জানতে পারছেন। এতে করে সন্তানের আপত্তিকর কোনো পোস্ট দিতে বা কোনো
বন্ধুর সঙ্গে মিশতে বারণ করায় সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই তো কয়েক দিন আগের ঘটনা। এক অভিভাবক অভিযোগ করেন, তার ছেলে
ফেসবুকে আপত্তিকর একটি ছবি পোস্ট করে। এ সময় তিনি বাধা দেন। সেই থেকেই
সন্তানের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। ফলে ঘটে সম্পর্কের অবনতি।
তিনি আরো
বলেন, উঠতি বয়সে শিশু-কিশোরীদের জন্য ফেসবুকিং একটি ভয়াবহ আসক্তি।
শিশু-কিশোররা যেন ফেসবুকে আসক্তি হয়ে না পড়ে সেজন্য বাবা-মাকে সচেতন হতে
হবে। আর এক্ষেত্রে পরিবারই হতে পারে প্রতিরোধের প্রথম হাতিয়ার।
মা-বাবা-সন্তানের সম্পর্ক ভালো রাখতে ও ফেসবুকের আসক্তি কমাতে বিশিষ্ট
মনোবিজ্ঞানী মুহিত কামাল কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। নিচে অভিভাবকদের জন্য কিছু
পরামর্শ তুলে ধরা হলো - শিশুদের সময় দিন শিশুদের ফেসবুকের আসক্তি কমাতে
অভিভাবকরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।সন্তানকে অবশ্যই সময়
দিতে হবে। সন্তান কখন কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে চলছে- সে বিষয়ে
খোঁজ নিতে হবে। সপ্তাহে অন্তত একদিন তাকে বাইরে বেড়াতে নিয়ে যান। স্কুলে
সচেতনতামূলক কর্মশালা ফেসবুকের আসক্তি কমাতে স্কুলে স্কুলে সচেতনতা প্রচার
শুরু করলে এখনকার তরুণ প্রজন্মকে ওই কুপ্রভাব থেকে রক্ষা করা যাবে।
স্কুলগুলোতে কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে। কর্মশালায় ইন্টারনেট ও সোশাল
মিডিয়ার কুফল নিয়ে আলোচনা, পাঠচক্র করা যেতে পারে। খেলাধুলা মনোরোগ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টারনেটের কুফল থেকে সন্তানদের বাঁচাতে বিকল্প হিসেবে
খেলাধুলা বা পরিবারের সদস্যদের সময় দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। প্রতিদিন বিকেলে
পড়া শেষে তাকে খেলাধুলার সময় দিতে হবে। শিশুদের বন্ধু হোন শিশুদের সঙ্গে
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। সবকিছু খোলামেলা আলোচনা করুন। তাহলে অনেক
সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে। শিশুদের বই উপহার দিন জন্মদিন কিংবা বিশেষ দিনে
শিশুদের বই উপহার দিন। তাকে আস্তে আস্তে বই পড়ার অভ্যাস নিয়ে যান। বই পড়লে
এক তো জ্ঞান বাড়বে অন্যদিকে ফেসবুকের আসক্তি কমবে।
নাগালের বাইরে রাখুন মোবাইল
সম্ভব হলে শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন মোবাইল। শিশুদের হাতে মোবাইল না দেয়া গেলেই ভালো।
নাগালের বাইরে রাখুন মোবাইল
সম্ভব হলে শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন মোবাইল। শিশুদের হাতে মোবাইল না দেয়া গেলেই ভালো।
No comments