বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা ১০ হাজার ছুঁই ছুঁই
সরকারি
ও বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শাখা ১০ হাজার ছুঁই ছুঁই করছে।
বিদায়ী বছরের নভেম্বর শেষের তথ্যে জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর মোট শাখার সংখ্যা
৯ হাজার ৮৪৩টি। ডিসেম্বরের হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। এদিকে বাণিজ্যিক শাখা
খোলায় শহর-গ্রামে বৈষম্যের অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।
সূত্র জানায়, শাখা খোলায়
বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। সরকারি
ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি শাখা গ্রামে। আবার বেসরকারি ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি
শাখা শহরে। অন্যদিকে বিদেশি ব্যাংকের শাখা পুরোপুরি শহরকেন্দ্রিক। তাদের
গ্রামে কোনো শাখা-ই নেই। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম বলছে, শহরে একটি শাখা
খুললে গ্রামেও একটি শাখা খুলতে হবে। কিন্তু বাস্তবে তার মিল খুঁজে পাওয়া
যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের
নভেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মোট শাখার সংখ্যা ৯ হাজার ৮৪৩টি। যা আগের বছরের
ডিসেম্বরে ছিল ৯ হাজার ৬৫৪টি। এর মধ্যে গ্রামে ৫ হাজার ৫৬৩টি। আর শহরে ৪
হাজার ২৮০টি। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি আট
ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ৫ হাজার ১২৫টি। এর মধ্যে গ্রামে ৩ হাজার ৬৪৩টি ও
শহরে ১ হাজার ৪৮২টি। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওবায়েদ
উল্লাহ আল মাসুদ যুগান্তরকে বলেন, সরকারি ব্যাংকের শাখা শহরের চেয়ে গ্রামে
বেশি। কারণ একটি শাখা শহরে খুললে অপর শাখাটি গ্রামে খোলার যে বাধ্যবাধকতা
দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তা সরকারি ব্যাংকগুলো ভালোভাবে পরিপালন করে। এ
ছাড়া সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনার উদ্যোগের পাশাপাশি
প্রান্তিক এলাকার নাগরিকদের বিভিন্ন সেবাও দিয়ে যাচ্ছে সরকারি ব্যাংক। তবে
বেসরকারি ব্যাংক এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, জেলা
পর্যায়ে শহরে শাখা খুলে দেখানো হচ্ছে গ্রামে। একটি বেসরকারি ব্যাংকের
ডিএমডি যুগান্তরকে বলেন, তথ্যটি সঠিক নয়। শহরে খুলে গ্রামে শাখা দেখানোর
সুযোগ নেই। এ ছাড়া শাখা খোলায় বৈষম্যের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বর্তমানে কোনো
বৈষম্য নেই। যা হওয়ার আগে হয়েছে। এখন একটি শাখা শহরে খুললে অপরটি খোলা
হচ্ছে গ্রামে। আগের ব্যবধান থাকায় এমনটি মনে হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আরফান আলী যুগান্তরকে বলেন,
বিদায়ী বছরে ৭টি নতুন শাখা খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি শহরে, বাকি ৪টি শাখা
খোলা হয়েছে গ্রামে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত
বেসরকারি খাতের ৪০টি ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ৪ হাজার ৬৪৯টি। এর মধ্যে গ্রামে
মাত্র ১ হাজার ৯২০টি ও শহরে ২ হাজার ৭২৯টি। এ ছাড়া এ সময় বিদেশি ৯
ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ৬৯টি। বিদেশি ব্যাংকের সব শাখা শহরে। সংশ্লিষ্টরা
জানান, একসময় গ্রামের তুলনায় শহরে কয়েকগুণ বেশি শাখা খুলত ব্যাংকগুলো। তবে
২০০৬ সালে এক নির্দেশনায় বেসরকারি ব্যাংকের শহরাঞ্চলে চারটি শাখার বিপরীতে
গ্রামাঞ্চলে অন্তত একটি শাখা খোলার বিধান করা হয়। পরে ২০১২ সাল থেকে গ্রামে
একটির বিপরীতে শহরে একটি শাখা খোলার অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাপ্ত
তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে ব্যাংকগুলো মোট ৯৬৯টি শাখা খোলার অনুমতি পেয়েছে।
এর মধ্যে সরকারি ৮ ব্যাংক খুলেছে মাত্র ১০৩টি শাখা। বাকি শাখা দেয়া হয়েছে
বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে। গত বছর ব্যাংকগুলো যে ২১৯টি শাখা খুলেছে তার মধ্যে
সরকারি ব্যাংকগুলোকে বিশেষ ব্যবস্থায় ৪টি শাখা খোলার অনুমতি দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোন ব্যাংক কত শাখা খুলতে চায় সে বিষয়ে বছরের শুরুতে
বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে হয়। এরপর ব্যাংকগুলোর ব্যবসায়িক পরিকল্পনা,
মূলধন পরিস্থিতি, খেলাপি ঋণের হারসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শাখা খোলার
অনুমতি দেয়া হয়। যেসব ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি (ক্যামেলস রেটিং) যত ভালো
সেসব ব্যাংককে তত বেশি শাখা খোলার অনুমতি দেয়া হয়। সরকারি ব্যাংকগুলোর
আর্থিক পরিস্থিতি ভালো না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিশেষ
বিবেচনা ছাড়া এসব ব্যাংকের নতুন শাখা খোলার অনুমতি দেয়া হয় না।
No comments