এসপি হলেন বাবুল আক্তার, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দেশ সেবার প্রত্যয়
পুলিশ
বিভাগের সাহসী ও মেধাবী হিসেবে সবমহলে প্রশংসিত কর্মকর্তা বাবুল আক্তার
বিপিএম, পিপিএম (বার) এবার পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন।
মঙ্গলবার (০৫ এপ্রিল) বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন
জারি করে। বাবুল আক্তারসহ ৭০ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এই প্রজ্ঞাপনের
মাধ্যমে পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেলেন।
সন্ত্রাস বিরোধী একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে চীনে রয়েছেন বাবুল আক্তার। সেখানে এই পদোন্নতির খবর পাওয়ার পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বাংলানিউজকে বলেছেন, ‘শেষ নিঃশ্বাসটি পর্যন্ত দেশের সেবা করে যেতে চাই।’
বাবুল আক্তার সর্বশেষ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগে অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) পদে উত্তর-দক্ষিণ জোনে কর্মরত রয়েছেন।
সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা আর সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন বলেই অল্প সময়ের এ চাকরিজীবনে একবার পুলিশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল-বিপিএম (সাহসিকতা), দু’বার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম), একবার আইজি ব্যাজ ও চারবার চট্টগ্রাম রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার নির্বাচিত হয়েছেন বাবুল আক্তার।
২৪তম বিসিএস থেকে পুলিশ বিভাগে যোগ দিয়ে ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সাহসী অফিসার হিসেবেই সুনাম কুড়ান বাবুল আক্তার।
দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তি মিশনেও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
২০০৫ সালে জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মোজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সিরিজ বোমা হামলায় কেঁপে উঠেছিল চট্টগ্রাম। এরপর চট্টগ্রাম আদালত ভবনেও দফায় দফায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিল জেএমবি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি জঙ্গি আস্তানারও সেসময় সন্ধান পেয়েছিল পুলিশ। কিন্তু গত সাত-আট বছরে জেএমবির দৃশ্যমান কোন কর্মকাণ্ড না থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে নিয়েছিল উগ্রপন্থী এ সংগঠনটি নির্মূল হয়ে গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে জেএমবি ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে আবারও নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়েছে। চট্টগ্রামে ল্যাংটা ফকিরকে কুপিয়ে খুন, ছিনতাই করতে গিয়ে ব্যবসায়ীকে বোমা মেরে হত্যার মতো সহিংস ঘটনা জেএমবি ঘটিয়েছে।
তবে জেএমবি শক্ত ঘাঁটি গড়ে বড় কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানোর আগেই তাদের সংগঠিত উত্থান ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর থেকে হাটহাজারীর আমানবাজার পর্যন্ত জেএমবির আস্তানা খুঁজে তাদের উত্থান ঠেকানোর নেপথ্যে ছিলেন একজন আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল আক্তার। ‘অপরাধীদের আতংক’ হিসেবেই সারাদেশে যার পরিচিতি।
চট্টগ্রামে জেএমবির উত্থান এবং সেটা ঠেকানোর জন্য বাবুল আক্তারের ভূমিকা ২০১৫ সালের শেষদিকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে গণমাধ্যমে স্থান পেয়েছিল।
বাবুল আক্তার এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেছিলেন, সদরঘাটে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা অনুসন্ধান করতে নেমে জেএমবির সন্ধান পেয়েছি। এরপর তাদের দু’টি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল অস্ত্র-বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে আট জঙ্গিকে। জেএমবির অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য আমরা উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি।
২০১৪ সালের ১৪ জুলাই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যোগ দিয়ে দক্ষিণ সুদান গিয়েছিলেন চৌকস এই পুলিশ কর্মকর্তা। ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই তিনি দেশে ফেরেন। পুলিশ সদর দপ্তরে যোগদানের পর ২৭ আগস্ট বাবুল আক্তারকে পাঠানো হয় সিএমপিতে। আবারও নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার পদেই বসানো হয় তাকে।
২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ বোস্তামি থানার বাংলাবাজারে মাজারে ঢুকে ল্যাংটা ফকির ও আব্দুল কাদের নামে দু’জনকে নৃশংসভাবে জবাই করে খুন করা হয়।
এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর সদরঘাট থানার মাঝিরঘাটে সত্যগোপাল ভৌমিক নামে এক ব্যবসায়ী ছিনতাইকারীদের বোমার আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে মারা যান। নিজের ছোড়া বোমার আঘাতে দুই ছিনতাইকারীও মারা যায়।
দু’টি ঘটনা কোনো জঙ্গি সংগঠন ঘটাতে পারে এমন ধারণা পুলিশ কর্মকর্তাদের ছিল না। শুধু একজন বাবুল আক্তার শুরু থেকেই জঙ্গিদের টার্গেট করে অনুসন্ধানে নামেন। একপর্যায়ে তিনি দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। তাদের কাছ থেকেই বাবুল আক্তার তথ্য পান ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটিয়েছে জেএমবি। জঙ্গি তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই জেএমবি এ ঘটনা ঘটায়। আট বছর পর বাবুল আক্তারের অনুসন্ধানেই বেরিয়ে আসে, জেএমবি আবারও চট্টগ্রামে ঘাঁটি গেড়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, বিভিন্ন পর্যায়ে সোর্সদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বাবুল আক্তার ৫ অক্টোবর পৌঁছে যান নগরীর কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর এলাকায় জেএমবির একটি আস্তানায়। সেখান থেকে আটটি হ্যান্ডগ্রেনেড ও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ জেএমবির সামরিক প্রধান জাবেদসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। জাবেদ ৬ অক্টোবর ভোরে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে আরেকটি অভিযানে গিয়ে গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হয়। আটক বাকি চারজন হলো বুলবুল আহমেদ ওরফে ফুয়াদ, সদস্য মো. সুজন ওরফে বাবু, মাহবুব এবং শাহজাহান কাজল।
চারজনকে বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। সুজন ওরফে বাবু স্বীকার করে, মাজারে ঢুকে ল্যাংটা ফকির ও আব্দুল কাদেরকে খুন করেছে সে। কাফেরকে খুন করলে জান্নাতবাসী হওয়া যাবে এমন ধারণা থেকেই সুজন ল্যাংটা ফকিরকে খুন করে। আর তাকে বাঁচাতে এসে খুন হয়েছে খাদেম আব্দুল কাদেরও।
দু’টি চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়ে যাওয়ায় হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন সিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তারা। এরপর বাবুল আক্তার প্রশিক্ষণে চীনে চলে যান। জেএমবিবিরোধী অভিযানে ভাটা পড়ে যায়।
দেড় মাসেরও বেশি সময় পর ফিরে এসে আবারও তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বাবুল আক্তার। গভীর রাতে টিম নিয়ে চলে যান হাটহাজারী থানার আমানবাজারে। জেএমবির সামরিক কমান্ডার ফারদিনের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেন অত্যাধুনিক রাইফেল, বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর নথিপত্র। এর আগেই অবশ্য গ্রেফতার করা হয় জেএমবির তিন সদস্যকে।
তখন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে বলেছিলেন, বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা নিয়েই জেএমবি অত্যাধুনিক অস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুদ করেছিল। আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। সময়মত অভিযানের কারণে তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে গেছে।
বাবুল আক্তার ২০০৮ সালে নগর পুলিশের কোতয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি জেলা পুলিশের হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার পদেও কর্মরত ছিলেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে বাবুল আক্তার দীর্ঘদিন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে কর্মরত ছিলেন। ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর বদলি হয়ে সিএমপিতে যোগ দেন।
হাটহাজারী এবং কক্সবাজারে কর্মরত থাকার সময়ও বারবার গণমাধ্যমে আলোচনার শীর্ষে ছিলেন বাবুল আক্তার। কক্সবাজারে জলদস্যু দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০১৩ সালে বেশ কয়েকজন শীর্ষ জলদস্যুকে গ্রেফতারের পর কক্সবাজারের এলাকায় এলাকায় জেলেরা মিষ্টি বিতরণ করেছিল।
কক্সবাজারে বৌদ্ধমন্দিরে হামলার ঘটনা তদন্ত এবং সেখানকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার অন্যতম অবলম্বন হয়ে উঠেছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। হাটহাজারীতে দরিদ্র, অসহায় মানুষ বিশেষ করে নারীদের আইনগত সহায়তা দিয়েও প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন বাবুল আক্তার। অবস্থা এমন হয়েছিল, হাটহাজারী এবং কক্সবাজার থেকে বাবুল আক্তারের বদলি ঠেকাতে জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল।
সন্ত্রাস বিরোধী একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে চীনে রয়েছেন বাবুল আক্তার। সেখানে এই পদোন্নতির খবর পাওয়ার পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বাংলানিউজকে বলেছেন, ‘শেষ নিঃশ্বাসটি পর্যন্ত দেশের সেবা করে যেতে চাই।’
বাবুল আক্তার সর্বশেষ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগে অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) পদে উত্তর-দক্ষিণ জোনে কর্মরত রয়েছেন।
সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা আর সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন বলেই অল্প সময়ের এ চাকরিজীবনে একবার পুলিশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল-বিপিএম (সাহসিকতা), দু’বার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম), একবার আইজি ব্যাজ ও চারবার চট্টগ্রাম রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার নির্বাচিত হয়েছেন বাবুল আক্তার।
২৪তম বিসিএস থেকে পুলিশ বিভাগে যোগ দিয়ে ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সাহসী অফিসার হিসেবেই সুনাম কুড়ান বাবুল আক্তার।
দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তি মিশনেও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
২০০৫ সালে জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মোজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সিরিজ বোমা হামলায় কেঁপে উঠেছিল চট্টগ্রাম। এরপর চট্টগ্রাম আদালত ভবনেও দফায় দফায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিল জেএমবি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি জঙ্গি আস্তানারও সেসময় সন্ধান পেয়েছিল পুলিশ। কিন্তু গত সাত-আট বছরে জেএমবির দৃশ্যমান কোন কর্মকাণ্ড না থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে নিয়েছিল উগ্রপন্থী এ সংগঠনটি নির্মূল হয়ে গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে জেএমবি ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে আবারও নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়েছে। চট্টগ্রামে ল্যাংটা ফকিরকে কুপিয়ে খুন, ছিনতাই করতে গিয়ে ব্যবসায়ীকে বোমা মেরে হত্যার মতো সহিংস ঘটনা জেএমবি ঘটিয়েছে।
তবে জেএমবি শক্ত ঘাঁটি গড়ে বড় কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানোর আগেই তাদের সংগঠিত উত্থান ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর থেকে হাটহাজারীর আমানবাজার পর্যন্ত জেএমবির আস্তানা খুঁজে তাদের উত্থান ঠেকানোর নেপথ্যে ছিলেন একজন আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল আক্তার। ‘অপরাধীদের আতংক’ হিসেবেই সারাদেশে যার পরিচিতি।
চট্টগ্রামে জেএমবির উত্থান এবং সেটা ঠেকানোর জন্য বাবুল আক্তারের ভূমিকা ২০১৫ সালের শেষদিকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে গণমাধ্যমে স্থান পেয়েছিল।
বাবুল আক্তার এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেছিলেন, সদরঘাটে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা অনুসন্ধান করতে নেমে জেএমবির সন্ধান পেয়েছি। এরপর তাদের দু’টি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল অস্ত্র-বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে আট জঙ্গিকে। জেএমবির অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য আমরা উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি।
২০১৪ সালের ১৪ জুলাই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যোগ দিয়ে দক্ষিণ সুদান গিয়েছিলেন চৌকস এই পুলিশ কর্মকর্তা। ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই তিনি দেশে ফেরেন। পুলিশ সদর দপ্তরে যোগদানের পর ২৭ আগস্ট বাবুল আক্তারকে পাঠানো হয় সিএমপিতে। আবারও নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার পদেই বসানো হয় তাকে।
২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ বোস্তামি থানার বাংলাবাজারে মাজারে ঢুকে ল্যাংটা ফকির ও আব্দুল কাদের নামে দু’জনকে নৃশংসভাবে জবাই করে খুন করা হয়।
এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর সদরঘাট থানার মাঝিরঘাটে সত্যগোপাল ভৌমিক নামে এক ব্যবসায়ী ছিনতাইকারীদের বোমার আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে মারা যান। নিজের ছোড়া বোমার আঘাতে দুই ছিনতাইকারীও মারা যায়।
দু’টি ঘটনা কোনো জঙ্গি সংগঠন ঘটাতে পারে এমন ধারণা পুলিশ কর্মকর্তাদের ছিল না। শুধু একজন বাবুল আক্তার শুরু থেকেই জঙ্গিদের টার্গেট করে অনুসন্ধানে নামেন। একপর্যায়ে তিনি দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। তাদের কাছ থেকেই বাবুল আক্তার তথ্য পান ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটিয়েছে জেএমবি। জঙ্গি তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই জেএমবি এ ঘটনা ঘটায়। আট বছর পর বাবুল আক্তারের অনুসন্ধানেই বেরিয়ে আসে, জেএমবি আবারও চট্টগ্রামে ঘাঁটি গেড়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, বিভিন্ন পর্যায়ে সোর্সদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বাবুল আক্তার ৫ অক্টোবর পৌঁছে যান নগরীর কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর এলাকায় জেএমবির একটি আস্তানায়। সেখান থেকে আটটি হ্যান্ডগ্রেনেড ও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ জেএমবির সামরিক প্রধান জাবেদসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। জাবেদ ৬ অক্টোবর ভোরে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে আরেকটি অভিযানে গিয়ে গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হয়। আটক বাকি চারজন হলো বুলবুল আহমেদ ওরফে ফুয়াদ, সদস্য মো. সুজন ওরফে বাবু, মাহবুব এবং শাহজাহান কাজল।
চারজনকে বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। সুজন ওরফে বাবু স্বীকার করে, মাজারে ঢুকে ল্যাংটা ফকির ও আব্দুল কাদেরকে খুন করেছে সে। কাফেরকে খুন করলে জান্নাতবাসী হওয়া যাবে এমন ধারণা থেকেই সুজন ল্যাংটা ফকিরকে খুন করে। আর তাকে বাঁচাতে এসে খুন হয়েছে খাদেম আব্দুল কাদেরও।
দু’টি চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়ে যাওয়ায় হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন সিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তারা। এরপর বাবুল আক্তার প্রশিক্ষণে চীনে চলে যান। জেএমবিবিরোধী অভিযানে ভাটা পড়ে যায়।
দেড় মাসেরও বেশি সময় পর ফিরে এসে আবারও তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বাবুল আক্তার। গভীর রাতে টিম নিয়ে চলে যান হাটহাজারী থানার আমানবাজারে। জেএমবির সামরিক কমান্ডার ফারদিনের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেন অত্যাধুনিক রাইফেল, বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর নথিপত্র। এর আগেই অবশ্য গ্রেফতার করা হয় জেএমবির তিন সদস্যকে।
তখন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে বলেছিলেন, বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা নিয়েই জেএমবি অত্যাধুনিক অস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুদ করেছিল। আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। সময়মত অভিযানের কারণে তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে গেছে।
বাবুল আক্তার ২০০৮ সালে নগর পুলিশের কোতয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি জেলা পুলিশের হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার পদেও কর্মরত ছিলেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে বাবুল আক্তার দীর্ঘদিন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে কর্মরত ছিলেন। ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর বদলি হয়ে সিএমপিতে যোগ দেন।
হাটহাজারী এবং কক্সবাজারে কর্মরত থাকার সময়ও বারবার গণমাধ্যমে আলোচনার শীর্ষে ছিলেন বাবুল আক্তার। কক্সবাজারে জলদস্যু দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০১৩ সালে বেশ কয়েকজন শীর্ষ জলদস্যুকে গ্রেফতারের পর কক্সবাজারের এলাকায় এলাকায় জেলেরা মিষ্টি বিতরণ করেছিল।
কক্সবাজারে বৌদ্ধমন্দিরে হামলার ঘটনা তদন্ত এবং সেখানকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার অন্যতম অবলম্বন হয়ে উঠেছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। হাটহাজারীতে দরিদ্র, অসহায় মানুষ বিশেষ করে নারীদের আইনগত সহায়তা দিয়েও প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন বাবুল আক্তার। অবস্থা এমন হয়েছিল, হাটহাজারী এবং কক্সবাজার থেকে বাবুল আক্তারের বদলি ঠেকাতে জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল।
No comments