ওয়ার্নকে এভাবে জবাব!
অনেক
দিনের হিসাব-নিকাশ বুঝি বাকি রয়ে গিয়েছিল। ৬৬ বলে ৯ চার আর ২ ছক্কায়
অপরাজিত ৮৫ রানের ইনিংস খেলে পরশু রাতের ইডেনে ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে
গিয়ে মারলন স্যামুয়েলসের মনে হলো, শেন ওয়ার্নের সঙ্গে পুরোনো হিসাব এবার
একটু চুকিয়ে নেওয়া যাক। প্রথমে ক্ষোভ ঝাড়লেন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে।
পরে সংবাদ সম্মেলনে এসে একেবারে ধুয়েই দিলেন ওয়ার্নকে। ক্ষোভের আগুনে
ওয়ার্নকে পোড়াতে গিয়ে কিছুটা পোড়ালেন ইংলিশ বোলার বেন স্টোকসকেও। ম্যাচের
পর সংবাদ সম্মেলনে গিয়েছিলেন প্যাড পরেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা
জয়ের উদ্যাপনে এতটাই মত্ত ছিলেন, হয়তো সেগুলো খুলে রাখারও সময় পাননি
স্যামুয়েলস। ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও ম্যাচসেরা হয়েছিলেন,
এবারও তা-ই। চোখ-মুখ থেকে যেন ঠিকরে বেরোচ্ছিল একধরনের ঔদ্ধত্য। আর সেটা
প্রকাশ করতে স্যামুয়েলস বেছে নিলেন সংবাদ সম্মেলনটা। ইংল্যান্ড অধিনায়ক
এউইন মরগানের ব্রিফিং তখনো চলছিল, একটু আগেভাগেই চলে এসেছিলেন স্যামুয়েলস।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। মরগানের ব্রিফিং শেষে তিনি যখন চেয়ারে বসলেন তখন
সবার চক্ষু চড়কগাছ! একি, স্যামুয়েলস যে প্যাড পরা পা দুখানা তুলে দিয়েছেন
সামনের টেবিলে! পরে বোঝা গেল, প্যাড পরা থাকায় টেবিলের নিচে পা রাখতে
অসুবিধা হচ্ছিল তাঁর। কিন্তু তাই বলে টেবিলে পা তুলে দিয়ে সাংবাদিকদের
প্রশ্নের জবাব কবে কোন খেলোয়াড় দিয়েছেন! আইসিসির মিডিয়া কর্তাও যেন তখন
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট। হজম করে গেলেন পুরো বিষয়টা! ‘আর ইউ
কমফর্টেবল?’—সাংবাদিকদের প্রশ্ন করলেন স্যামুয়েলস। পরের ১০ মিনিট যেন ঝড়ই
বয়ে গেল ইডেনের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে। ক্যারিবীয় এই তারকার মুখ যেন
আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ, আর তা থেকে বেরিয়ে এল লাভা। সেই লাভায় পুড়লেন শেন
ওয়ার্ন, বেন স্টোকসরা। মাঠেই স্যামুয়েলসের সঙ্গে একচোট হয়ে গিয়েছিল বেন
স্টোকসের। শেষ ওভারে দুজনের কথা-কাটাকাটি হয়েছে। পরে ইংলিশ অলরাউন্ডার
কার্লোস ব্রাফেটের কাছে পরপর চারটি ছয় খাওয়ার পর স্টোকসকে ভীষণ খেপিয়েছেন
স্যামুয়েলস। ম্যাচ শেষে প্রায় ছুটেই যাচ্ছিলেন ইংলিশ ডাগ-আউটের দিকে।
ভাগ্যিস, সতীর্থরা টেনে ধরেছিলেন তাঁকে। সংবাদ সম্মেলনেও স্টোকসকে ফালি
ফালি করলেন স্যামুয়েলস, ‘ওর শিক্ষা হয় না কখনো। সব সময় বেশি কথা বলে। আরে,
কতবার সবাই বলেছে, আমার বিপক্ষে খেলার সময় বেশি কথা না বলতে। কারণ আমি
পারফর্ম করবই। কিন্তু আমি ব্যাট করার আগেই বকবক করতে শুরু করল। এখন বোঝো,
শেষ পর্যন্ত কী হলো!’ ওয়ার্নের সঙ্গে তাঁর শত্রুতা অবশ্য আরও পুরোনো। বছর
তিনেক আগে বিগ ব্যাশে সেই ঝগড়ার পর থেকে সম্পর্কটা খুবই তিক্ত। তার ওপর
কয়েক দিন আগে ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে আউট হওয়ার পর ধারাভাষ্যকক্ষে বসে
থাকা ওয়ার্নের মন্তব্য আরও তাতিয়ে দেয় স্যামুয়েলসকে। পরশু ম্যাচসেরা হওয়ার
পরই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে নাসের হুসেইনের কাছে প্রতিক্রিয়া জানানোর
সময় হঠাৎ করেই সেই ওয়ার্নের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন, ‘আজ সকালে ঘুম থেকে ওঠার
পর একটি ব্যাপারই আমার মাথায় ছিল। শেন ওয়ার্ন খুব বেশি বকবক করছে। এই
ম্যাচসেরার ট্রফি তার জন্য। আমি ব্যাট হাতে জবাব দিই, মাইক্রোফোনে নয়।’ পরে
সংবাদ সম্মেলনে এসে সরাসরিই বললেন, ‘আমি যখনই খেলতে নামি, ওয়ার্নের যেন
কোনো একটা সমস্যা হয়। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ খেলার সময়ও ওয়ার্ন আমাকে
নিয়ে অনেক কিছু বলেছে। আমি তাকে কখনোই অশ্রদ্ধা করিনি। কিন্তু মনে হয়, তার
ভেতরে অনেক কিছু জমা হয়ে আছে যেগুলো সে বারবার বের করে দিতে চাইছে। জানি না
সে কেন এসব করছে। হয়তো আমার চেহারাটা আসল, ওরটা আসল নয়—এ কারণেই!’ এসব
মন্তব্য ওয়ার্নের কানেও গেছে হয়তো। তবে পাল্টা ঝাল ঝেড়ে তিনি কিছু বলেছেন
কি না, সেটি এখনো জানা যায়নি। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেই কিন্তু ওয়ার্ন টুইট করেছিলেন, ‘দুই দলকেই অভিনন্দন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দারুণ খেলেছে। মারলন ও ব্রাফেট দুর্দান্ত। এবার তাহলে একটু
নাচ দেখা যাক।’ স্যামুয়েলসরা নেচেছেন ঠিকই। কিন্তু নাচের পর যে ওয়ার্নকে
এভাবে ধুয়ে দেবেন স্যামুয়েলস, সেটা কে ভাবতে পেরেছিল! ক্রিকইনফো।
No comments