স্পিনারদের নতুন চ্যালেঞ্জ
টি-টোয়েন্টি
বিশ্বকাপে এবার স্পিনারদেরই ছিল জয়জয়কার। মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, মিচেল
স্যান্টনার, ইশ সোধি, সাকিব আল হাসান—শীর্ষ ছয় বোলারের পাঁচজনই স্পিনার।
ভারতের স্পিনস্বর্গে স্পিনারদের এই সাফল্য অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু
বিশ্বকাপ স্পিনবান্ধব কন্ডিশনে হবে জেনেও মাশরাফি বিন মুর্তজার বাংলাদেশ
ভারতে গিয়েছিল পেস আক্রমণে আস্থা রেখে। পেসারদের সাম্প্রতিক সাফল্যই হয়তো
নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টকে উদ্বুদ্ধ করেছিল বিশ্বকাপেও বোলিংটাকে
পেসনির্ভর করতে। বিশ্বকাপের সেরা ১০ বোলারের তালিকায় বাংলাদেশ দলের পেসার
মুস্তাফিজুর রহমানের উপস্থিতি নিশ্চয়ই বলে যে, বাংলাদেশের পরিকল্পনা সফল।
তাই বলে বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্পিনারদের প্রভাব ভুলে গেলে চলবে না।
পেসারদের সাফল্য যতই থাকুক, স্পিন আক্রমণকেও ধারালো না করে তুললে চলবে না।
আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশন অবৈধ প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশের সামনের কাজটা
একটু কঠিন তো হয়ে পড়লই। সাকিব ছাড়া যে আর কোনো বিশেষজ্ঞ স্পিনারই নেই
এখন দলে! আবদুর রাজ্জাকের জন্য বাংলাদেশ দলের দরজা বন্ধ অনেক দিন ধরেই।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি এই বাঁহাতি স্পিনার এখনো
অবশ্য ফেরার অপেক্ষায় আছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসে তাইজুল ইসলামও কম
বিস্ময়ের জন্ম দেননি। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এই
বাঁহাতি স্পিনারের। ওয়ানডে অভিষেকেই হ্যাটট্রিকের প্রথম কৃতিত্বও তাঁর।
অনেক দিন ধরেই দৃশ্যপটে নেই তাইজুল। লেগ স্পিনের রোমাঞ্চ ছড়িয়ে
আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রাখা জুবায়ের হোসেনও আড়ালে। একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও
হ্যাটট্রিকের অনন্য কীর্তি গড়া সোহাগ গাজীর পথ বেঁকে গেছে ২০১৪ সালে
বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে
সেরা বোলিং কীর্তির মালিক ইলিয়াস সানির ক্যারিয়ারও এখন ঘরোয়া ক্রিকেটে
সীমাবদ্ধ। দলে ফেরার লড়াইয়ে এই স্পিনাররা এখন শুধু নিজেদের সঙ্গেই
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না, লড়াইটা তাঁদের পেসারদের সঙ্গেও। ইলিয়াস সানি
স্বীকার করলেন, ‘একটা সময়ে আমি, রাজ ভাই (রাজ্জাক) ও সাকিব, একসঙ্গে তিন
বাঁহাতি স্পিনার বাংলাদেশ দলে খেলেছি। তবে এখন চ্যালেঞ্জটা অন্য রকম।’ তবে
জুবায়েরকে আশাবাদী করছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লেগ স্পিনারদের
পারফরম্যান্স, ‘বিশ্বকাপে প্রায় সব দলেই লেগ স্পিনার ছিল। তার মানে
উপমহাদেশের কন্ডিশনে লেগ স্পিনারের চাহিদা আছে। শুধু টি-টোয়েন্টি নয়, অন্য
সংস্করণেও লেগ স্পিনাররা কার্যকর। এটা আমার কাছে অনুপ্রেরণাদায়ক।’ স্বপ্ন
দেখছেন অফ স্পিনার সোহাগও, ‘দলে পেসার না স্পিনারদের প্রাধান্য দেওয়া হবে,
এটা নির্বাচক ও বোর্ডের সিদ্ধান্ত। তবে আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে এখনো
শীর্ষ পাঁচ বোলারের চারজনই স্পিনার। আমি মনে করি, সুযোগ পেলে স্পিনাররাও
ভালো করবে।’ তাইজুলের ভাবনাটা একটু অন্য রকম। পেসারদের দাপটের মধ্যে
স্পিনারদের চ্যালেঞ্জটাকে ইতিবাচকই দেখছেন তিনি, ‘আমাদের বোলিংটা
পেসনির্ভর হয়ে ভালোই হয়েছে। এখন স্পিনারদের আরও ভালো করতে হবে। আরও অনেক
কিছু যোগ করতে হবে বোলিংয়ে।’ পেসারদের আধিপত্যের সময়ে তাইজুলের কথাটা
প্রেরণার উৎস হতে পারে সব স্পিনারের জন্যই।
No comments