সমালোচিত ইসির ভূমিকা by অমর সাহা
ভারতের
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণের প্রথম দিনে নির্বাচন কমিশনের
(ইসি) ভূমিকা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন উঠল। ভোটদাতারা যাতে নির্ভয়ে ভোট
দিতে পারেন, সে জন্য নির্বাচন কমিশন এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর
বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করেছিল। কিন্তু ভোটের সময় তাঁদের সক্রিয়
উপস্থিতি না দেখে বিরোধী দলের মতো সাধারণ ভোটাররাও হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এ
সুযোগে ভোটকেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের ভয়ভীতি
দেখানো, মারধর বা জাল ভোটের ঘটনা ঘটেছে। তবে বড় ধরনের সংঘর্ষ বা রক্তক্ষয়
হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯৪টি আসনের নির্বাচনের গতকাল সোমবার ছিল
প্রথম পর্ব। এদিন ভোট নেওয়া হয় মাওবাদী উপদ্রুত তিন জেলা পশ্চিম
মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায়। এই তিন জেলার ১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩টিই
মাওবাদী প্রভাবিত জঙ্গলমহলে। জঙ্গলমহলে সকাল সাতটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে
শেষ হয় বিকেল চারটায়। আর বাকি পাঁচটি আসনে ভোট গ্রহণ শেষ হয় বিকেল ছয়টায়।
মূল লড়াই হয়েছে যথারীতি তৃণমূলের সঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোটের। নির্বাচন
শুরুর আগে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন থেকে বারবার ঘোষণা করা হয়েছিল, এবারের
নির্বাচন হবে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ। সেই লক্ষ্যে এবার জঙ্গলমহলসহ
১৮টি আসনে মোতায়েন করা হয় কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ২৫৫ কোম্পানি
সদস্য। ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসিম জাইদির আশ্বাসে অনেকটাই
আশ্বস্ত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। ঘোষণা করা হয়েছিল, প্রতিটি
ভোটকেন্দ্রে থাকবেন আটজন করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য। রাজ্যের স্থানীয়
পুলিশ নিয়োজিত থাকবে শুধু ভোটারের লাইন সামাল দেওয়ার জন্য। কিন্তু সকাল
সাতটায় জঙ্গলমহলে ভোট শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর
ভূমিকা। সাংবাদিকেরা ঘুরে ঘুরে দেখেছেন বহু এলাকায় অনুপস্থিত কেন্দ্রীয়
বাহিনী। আবার অনেক ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ঢুকে খবরদারি করছে। এর আগের
বছরগুলোতে ভোটের সময় রাজ্য পুলিশকে প্রকাশ্যেই শাসক দলের হয়ে কাজ করতে
দেখা গিয়েছে। এমনকি শাসক দলের গুন্ডারা যখন ভোটদাতাদের এবং বিরোধী দলের
প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট ও কর্মীদের ওপর হামলা চালায়, তখনো রাজ্য পুলিশকে
শাসক দলের পক্ষ নিতে দেখা গেছে। তাই রাজ্য পুলিশের বদলে বুথ ও বুথের বাইরে
কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার জন্য দাবি ছিল নাগরিক সমাজ ও বিরোধী
দলগুলোর তরফে। অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যরা কোনো কোনো
ক্ষেত্রে দায়িত্বে ফাঁকি দিয়ে কেনাকাটা ও ঘোরাফেরা করে সময় কাটিয়েছেন।
সকালে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে ভোটে কারচুপির খবর পেয়ে সাংবাদিকেরা
ছুটে গেলে সেখানে সরকারি দলের সমর্থকেরা তাঁদের মারধর করে কেন্দ্রীয়
বাহিনীর সামনেই।
No comments