হাসিনা-আবে বৈঠক -নিরাপত্তা পরিষদে জাপানকে সমর্থন বাংলাদেশের
জাপানকে সমর্থন দিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা
পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদ থেকে বাংলাদেশ তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছে
বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা সফররত জাপানের প্রধানমন্ত্রী
শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে অনুষ্ঠিত যৌথ সংবাদ
সম্মেলনে গতকাল এ ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল
দুপুরে ১৬৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে সস্ত্রীক ঢাকায় আসেন বাংলাদেশে
উন্নয়ন অংশীদার জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। বিমানবন্দরে লাল গালিচায়
তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরের
আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির বীর সন্তানদের প্রতি
শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে সফরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন তিনি। ফেরার পথে
তিনি ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। হোটেল
সোনারগাঁওয়ে পৌঁছে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বিষয়ক এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা করেন
আবে। বিকালে যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে শুরুতে দুই
প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠক এবং পরে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ও
কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। বৈঠক সম্পন্ন হওয়ার পর যৌথ
ঘোষণায় সই করেন হাসিনা-আবে। অংশ নেন যৌথ সংবাদ সম্মেলনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা তার বক্তৃতায় স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের উন্নয়নে জাপানের অব্যাহত
সহযোগিতা ও বলিষ্ঠ সমর্থনের প্রেক্ষিতে ২০১৬-১৭ মেয়াদে জাতিসংঘের অস্থায়ী
সদস্য পদে জাপানের প্রার্থিতার পক্ষে সমর্থন ও বাংলাদেশের প্রার্থিতা
প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। জবাবে শিনজো আবে তার বক্তৃতায় বাংলাদেশের ওই
সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি জাপানের
গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেন, এশিয়া ও
প্রশান্ত মহাসাগরীয় গ্রুপের প্রতি সংহতি ও একাত্মতা জানিয়ে বাংলাদেশ
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদ নির্বাচনে জাপানের প্রার্থিতা
সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধু জাপানের জন্য নিজ
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও নিয়েছে। জাতিসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
ফোরাম নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি দেশ স্থায়ী সদস্য, যাদের ভেটো ক্ষমতা
রয়েছে। তারা হলো- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন ও ফ্রান্স। বাকি
১০টি পদে ভোটাভুটি করে সদস্য নির্বাচিত হয়, যার একটি পদে ২০১৬-১৭ মেয়াদে
নির্বাচনে কয়েক বছর আগেই প্রার্থিতা ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ২০১১ সালে জাপানও
একই গ্রুপ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন
পর্যায়ে বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের আলোচনা চলে। ওই আলোচনার প্রেক্ষিতে জাপান
বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। জবাবে
জাপানের প্রধানমন্ত্রী তার উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়ার
অঙ্গীকার করেন। বাংলাদেশকে আগামী ৪-৫ বছরে ৬০০ কোটি ডলার সহায়তা দেয়ার কথা
পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে জাপান: বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে জাপানি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে জাপান সরকার। সফরের প্রথম দিনে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক বক্তৃতায় একথা জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অরগানাইজেশন (জেট্রো) ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক ছিল বিনিয়োগ বোর্ড ও এফবিসিসিআই। শিনজো আবে বলেন, জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণে যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ, সেটাকে জাপান স্বাগত জানায়। বিগ-বি (বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট) হিসেবে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন শিনজো আবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মে মাসে জাপান সফর করেন। বিষয়টি উল্লেখ করে জাপানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে ৬০০ কোটি ডলারের সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে ১২০ কোটি ডলারের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় তিনি দেশের বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও উন্নত করার আহ্বানও জানান। ঢাকা সফরের প্রথম বক্তৃতায় জাপানকে এগিয়ে নিতে নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন শিনজো আবে। ১৪ বছর পর জাপানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঢাকায় আসা আবে তার দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নিজের নীতি তুলে ধরেন। মন্দাক্রান্ত জাপানি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আবে যে নীতি গ্রহণ করেছেন, তা ‘আবেনোমিকস’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাপানের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আমি আবেনোমিকসের প্রয়োগ ঘটাচ্ছি। এ জন্য জাপানের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি আজ বাংলাদেশ সফর করছি। বঙ্গোপসাগরের তীরে বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা (বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট-বিগ বি) প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ অগ্রাধিকারে থাকবে বলে জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী। জাপান ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে ‘ভাই-বোনের’ সম্পর্ক হিসেবে অভিহিত করে দুই দেশের উন্নয়নে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের সহায়তা প্রত্যাশা করেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে এক্ষেত্রে নিজের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। ব্যবসায়ীদের অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় আবে শেখ হাসিনার টোকিও সফরের চার মাসের মধ্যে নিজের ঢাকা সফরের কথা তুলে ধরে বলেন, এই বছরটি বাংলাদেশ ও জাপানের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে, এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হলো।
কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে জাপানি সহায়তার কথা উল্লেখ করেন আবে। বাংলাদেশকে সহযোগিতায় জাপানের বাজারে বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি। অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে উভয় দেশের পণ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরা হয়। জাপানের অবকাঠামো নির্মাণ, গার্মেন্টস, মেডিকেল, খাদ্যপণ্য, নিরাপদ পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মসূচি সম্পন্ন হওয়ার পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করতে যান। এরপর হোটেলে ফিরে সংসদে বিরোধী দলের নেতা ও রাজপথের বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে পৃথক বৈঠকে অংশ নেন। রাতে সোনারগাঁও হোটেলে শেখ হাসিনার দেয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি। আজ সকালে ঢাকা ছাড়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করার কথা রয়েছে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর। জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইয়োশিরো মোরির পর আবেই ঢাকায় এলেন। ২০০০ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে এসেছিলেন মোরি।
জাপানি প্রধানমন্ত্রীর জন্য রওশনের ক্রেস্ট: ঢাকা সফররত জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেরের সঙ্গে গতকাল বৈঠক করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। রওশনের পক্ষ থেকে জাপানি প্রধানমন্ত্রীকে কয়েকটি ক্রেস্ট উপহার দেয়া হয়েছে। সন্ধ্যা সোয়া ৭টা থেকে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আধা ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক হয়। বৈঠকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উপস্থিত না থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে দেয়া ডিনারে ছিলেন। বৈঠক শেষে সংসদের বিরোধীদলীয় হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নির্বাচন নিয়ে শিনজো আবের কোন আলোচনা করেননি। আমরাও আগ্রহ দেখাইনি। আমরা মনে করি দেশে কোন সঙ্কট নেই। তবে গার্মেন্ট, টেক্সটাইল সেক্টরের পাশাপাশি নারী ও শিশুদের উন্নয়নের জন্য জাপান বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। আশা করি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ভাল খবর পাওয়া যাবে। এদিকে জাপা সূত্র জানায়, সফররত জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেরের সঙ্গে বৈঠক শুরুর একঘণ্টা আগেই রওশন এরশাদ সোনারগাঁও হোটেলে পৌঁছেন এবং অপেক্ষা করেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সেলিম উদ্দিন এমপি, রওশন আরা মান্নান এমপি, নূরে হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি ও বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ।
বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে জাপান: বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে জাপানি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে জাপান সরকার। সফরের প্রথম দিনে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক বক্তৃতায় একথা জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অরগানাইজেশন (জেট্রো) ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক ছিল বিনিয়োগ বোর্ড ও এফবিসিসিআই। শিনজো আবে বলেন, জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণে যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ, সেটাকে জাপান স্বাগত জানায়। বিগ-বি (বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট) হিসেবে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন শিনজো আবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মে মাসে জাপান সফর করেন। বিষয়টি উল্লেখ করে জাপানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে ৬০০ কোটি ডলারের সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে ১২০ কোটি ডলারের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় তিনি দেশের বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও উন্নত করার আহ্বানও জানান। ঢাকা সফরের প্রথম বক্তৃতায় জাপানকে এগিয়ে নিতে নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন শিনজো আবে। ১৪ বছর পর জাপানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঢাকায় আসা আবে তার দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নিজের নীতি তুলে ধরেন। মন্দাক্রান্ত জাপানি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আবে যে নীতি গ্রহণ করেছেন, তা ‘আবেনোমিকস’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাপানের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আমি আবেনোমিকসের প্রয়োগ ঘটাচ্ছি। এ জন্য জাপানের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি আজ বাংলাদেশ সফর করছি। বঙ্গোপসাগরের তীরে বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা (বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট-বিগ বি) প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ অগ্রাধিকারে থাকবে বলে জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী। জাপান ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে ‘ভাই-বোনের’ সম্পর্ক হিসেবে অভিহিত করে দুই দেশের উন্নয়নে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের সহায়তা প্রত্যাশা করেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে এক্ষেত্রে নিজের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। ব্যবসায়ীদের অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় আবে শেখ হাসিনার টোকিও সফরের চার মাসের মধ্যে নিজের ঢাকা সফরের কথা তুলে ধরে বলেন, এই বছরটি বাংলাদেশ ও জাপানের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে, এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হলো।
কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে জাপানি সহায়তার কথা উল্লেখ করেন আবে। বাংলাদেশকে সহযোগিতায় জাপানের বাজারে বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি। অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে উভয় দেশের পণ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরা হয়। জাপানের অবকাঠামো নির্মাণ, গার্মেন্টস, মেডিকেল, খাদ্যপণ্য, নিরাপদ পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মসূচি সম্পন্ন হওয়ার পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করতে যান। এরপর হোটেলে ফিরে সংসদে বিরোধী দলের নেতা ও রাজপথের বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে পৃথক বৈঠকে অংশ নেন। রাতে সোনারগাঁও হোটেলে শেখ হাসিনার দেয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি। আজ সকালে ঢাকা ছাড়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করার কথা রয়েছে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর। জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইয়োশিরো মোরির পর আবেই ঢাকায় এলেন। ২০০০ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে এসেছিলেন মোরি।
জাপানি প্রধানমন্ত্রীর জন্য রওশনের ক্রেস্ট: ঢাকা সফররত জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেরের সঙ্গে গতকাল বৈঠক করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। রওশনের পক্ষ থেকে জাপানি প্রধানমন্ত্রীকে কয়েকটি ক্রেস্ট উপহার দেয়া হয়েছে। সন্ধ্যা সোয়া ৭টা থেকে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আধা ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক হয়। বৈঠকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উপস্থিত না থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে দেয়া ডিনারে ছিলেন। বৈঠক শেষে সংসদের বিরোধীদলীয় হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নির্বাচন নিয়ে শিনজো আবের কোন আলোচনা করেননি। আমরাও আগ্রহ দেখাইনি। আমরা মনে করি দেশে কোন সঙ্কট নেই। তবে গার্মেন্ট, টেক্সটাইল সেক্টরের পাশাপাশি নারী ও শিশুদের উন্নয়নের জন্য জাপান বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। আশা করি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ভাল খবর পাওয়া যাবে। এদিকে জাপা সূত্র জানায়, সফররত জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেরের সঙ্গে বৈঠক শুরুর একঘণ্টা আগেই রওশন এরশাদ সোনারগাঁও হোটেলে পৌঁছেন এবং অপেক্ষা করেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সেলিম উদ্দিন এমপি, রওশন আরা মান্নান এমপি, নূরে হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি ও বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ।
বীর শহীদদের প্রতি জাপানের প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
এদিকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, গতকাল দুপুরে ঢাকা পৌঁছানোর পর সফরসঙ্গীদের নিয়ে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান জাপানের প্রধানমন্ত্রী। দুপুর আনুমানিক ২টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছে ফুল দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন তিনি। পরে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দুপুর সোয়া ২টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন শিনজো আবে। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও এর আশপাশের এলাকা ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। বন্ধ রাখা হয় দর্শনার্থীদের প্রবেশ। এছাড়া ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও প্রায় আধাঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল।
No comments